সফলতার মানে কি?

সফলতা (বা success) –এই শব্দটি অতি পুনরাবৃত্ত একটি শব্দ। এটি সকলের মুখে। এটি সকলেরই কাম্য। আমরা সবাই সফলতা চাই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই শব্দের মধ্যে কি নিহিত তা কি ভালভাবে আমরা চিন্তা করি? তবে হ্যাঁ, অনেকে করেন এবং অনেকে তা তেমন করেন না। এখানে আমি এ নিয়ে কিছু কথা বলব।

সফলতা সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। কারো মতে সফলকাম হওয়া মানে লক্ষ্য অর্জন। কেউ বলেন সফলতা হচ্ছে আপনি সততার সাথে ও আপনার প্রচেষ্টা দ্বারা নির্দিষ্ট  সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে আপনার অভ্যন্তরীণ সুখ অনুভূতি লাভ করবেন। তবে আমার কাছে ভাল লেগেছে এই কথাগুলো, “Success is a way of life. It is not a place of reflective glory or a destination. A person’s success should be judged by his constant journey towards a better attitude towards hard work and commitment, in which he can strive to achieve his lifelong goals and objectives. Therefore the road to success is never complete, as there is always a stone unturned.”  অর্থাৎ “সাফল্য হচ্ছে জীবনের একটা উপায় এটা যশ প্রতিফলনের কোন স্থান অথবা একটি গন্তব্য স্থল নয়। কোন একজন ব্যক্তির সাফল্য বিচার করা উচিত শুভ আচরণের উদ্দেশ্যে তার অঙ্গীকার ও বিরামহীন কঠিন পরিশ্রমের যাত্রাকে যা তিনি জীবনব্যাপী সংগ্রাম করতে পারেন সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে । অতএব সাফল্যের যাত্রা  কখনই  সম্পূর্ণ সমাপ্ত হবার নয় এবং  সে পথে চলতে সবসময়ই প্রয়োজন হবে সামনে আরো কিছু করার” (সূত্র ইন্টারনেট)।

আসলে আমরা দুনিয়াবি জীবনের কোনো ‘বস্তুগত’ (material) সফলতাকে কখনই ‘পরিপূর্ণ’ বলতে পারি না। বরং পরিপূর্ণের সংজ্ঞাটাই এমন যে তা মূল বস্তুতে সবসময় আরও অধিক গ্রহণ করতে পারে। এর কোনো শেষ নেই।

জীবনের খ্যাতি এবং ক্ষমতা ও বৈষয়িক ভাগ্য অর্জনটাই কি সত্যিকার সাফল্য?

উত্তর হচ্ছে, না। আসলেই যে তা ‘না’ সেটা আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। অনেক বিখ্যাত মানুষের লাগাতার বিষণ্ণতা, ডিপ্রেশন, মাদক ব্যবহার, এমনকি আত্মহত্যার কাহিনী শুনা যায়। তাই অর্থসম্পদ ও খ্যাতি কিংবা ক্ষমতার দাপট সত্যিকার সফলতা হতে পারে না।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সফল বা সার্থক ব্যক্তিকে ‘মুফলিহুন’ বলেছেন।  আর এ সাফল্যের অর্থ ও গুরুত্ব বুঝা কোন অবিশ্বাসী বস্তুতান্ত্রিক মানসিকতার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই একজন সত্যিকার মুসলিমের  কাছে মুফলিহুন  হওয়াটাই হচ্ছে সত্যিকার সফলতা।  কোরআনে শুরুতেই ‘সফলকাম’ বুঝাতে আল্লাহ পাক বলেন,

‘‘যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে, আর আমি তাদেরকে যে রিজেক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে,যারা বিশ্বাস স্থাপন করে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি [মুহাম্মদের সা.] অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম (সুরা বাকারা ৩‌-৫)।

‘মুফলিহুনের’ কাতারে শামিল হতে একজন  মুসলিমের প্রতিটি কর্মের লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

অতএব একজন মুসলিমের জীবনের লক্ষ্য অবশ্যই হতে হবে মুফলিহুন বা সফলকাম হওয়া এবং সেটাই হবে তার জীবনব্যাপী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের সংগ্রাম। এখানে জয় পরাজয়ের গুরুত্বের চেয়ে আদর্শ ভিত্তিক শুভ কর্মের ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য (Legacy) বজায় রেখে যাওটাই হচ্ছে বড় প্রাপ্য এবং সেটাই হচ্ছে তার সাফল্যের সোপান। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (স:) আমাদেরকে বলেছেন যে যখন কেউ ভাল কাজ করে আনন্দ পায় এবং কোন মন্দ কাজ করে কেউ অনুশোচনা করে তখনই বুঝতে হবে তার ঈমান আছে। ঈমানটাই হল সাফল্যের একটি বড় দিগন্ত। আর এই ঈমানের পথে চলার জন্য আমাদেরকে বলা হয়েছে। তাই শুভ কাজ করে যাওয়ার মনোবল এবং সে উদ্দেশ্যে তার অঙ্গীকার ও বিরামহীন কঠিন পরিশ্রমের যাত্রা চালিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে সাফল্য। বস্তুত বিশ্ব ইতিহাসে ইসলামের সফলতাই তার প্রমাণ।

ব্যক্তিগত সফলতা ও সামাজিক সফলতা:

মুসলিম হিসাবে সফলকাম হতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি সর্বপ্রথম শুরু করতে হবে তা হল কোরআনের জ্ঞানার্জন। সে জ্ঞান দিয়েই নির্মিত হবে ব্যক্তির তাকওয়া ও চরিত্র। নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে যে বিষয়টি প্রাধান্য বা প্রায়োরিটি পেয়েছিল তা হল কোরআনি জ্ঞানের প্রসার। কিন্তু আজকাল মুসলিম সমাজে তার কোন প্রয়োজন আছে বলে স্বীকার করতে চান না অনেকে।

ব্যক্তিগত সফলতা বুঝতে হলে ব্যক্তি জীবনের আসল শত্রু কে তা জানতে হবে। ইসলামি আইনজ্ঞ, পণ্ডিত ও খ্যাতমান লেখক শেখ  ইবনে জাওযী  তাঁর ‘তালবীসে ইবলিস’ (শয়তানের ধোঁকা) বইয়ে লিখেছেন, “মানুষের মাঝে সৃষ্টিগতভাবে নাফসানী বা প্রবৃত্তির খায়েশ বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণেই সে এমন বস্তুর অন্নেষন করে যাদ্বারা মনের শান্তি ও আনন্দ দেয়। মানুষের মাঝে ক্রোধও রাখা হয়েছে। তাই সে যন্ত্রনাদায়ক বিষয়কে প্রতিহত করে। এমনি তাকে বিবেকও দান করা হয়েছে যা নফসের জন্য মুআল্লিম বা শিক্ষক সদৃশ। সে নফসকে শিক্ষা দেয় যে তুমি যা অর্জন করবে বা প্রতিহত করবে এবং তা যেন সীমার ভিতর থেকে হয়। আর শয়তান তার পরম শত্রু  হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে উত্তেজিত করতে থাকে  অর্জন ও প্রতিহত করার ব্যপারে যেন মানুষ সীমা লঙ্গন করে ফেলে। হুকামায়ে রাব্বানী অর্থাৎ আল্লাহ ভীরু মহা মননীষীগণ বলেছেন, আকল বা বিবেকের উচিৎ এরূপ শত্রু থেকে সর্বদা সাবধান থাকা যার শত্রুতা হযরত আদম (আ:) এর সময় থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। শয়তান তার আপন জীবন আদম সন্তানকে ধ্বংশ করার জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছে। আল্লাহ মানুষকে শয়তানকে দেখার শক্তি দান করেননি বটে কিন্তু এর পরিবর্তে তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং তার চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের বিভিন্ন সুরাতে এ সম্পর্কে বলেছেন। যেমন:

১) হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (সুরা বাকারা ২০৮)।

২) শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ (সুরা বাকারা ২৬৮)।

সামাজিক সফলতা

সামাজিক সফলতা বুঝতে সহজ হবে যদি সমসাময়িক কিছু ঘটনা প্রবাহের প্রতি আমরা লক্ষ্য করি। সামাজিক সফলতার ব্যাপারে কোন সাফল্য যদি সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে হয় এবং তা দীর্ঘ মেয়াদী ও স্থায়ী রূপ নিতে পারে তাহলে তাকে সাফল্য বলা যেতে পারে। আর কিছু কিছু  বিষয় আছে  তা যদি  জোরে প্রতিষ্ঠিত করা হয় তবে তা শেষ পর্যন্ত ঠিকে থাকতে পারে না। যেমন মাত্র ৬৫ বছরে লেলিনিষ্ট ষ্টেলিনিষ্ট কমিউষ্ট সেকুলার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। তবে  বিশ্ব ইতিহাসে সামাজিক সাফল্যে ইসলাম যে দীর্ঘ মেয়াদী এক বিস্ময়কর অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। যদিও ৩০ বছরের মাথায় ইসলামী খিলাফতের পতন হয়ে রাজতন্ত্র শুরু হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ইসলামী আদর্শের প্রভাব এখনও বিদ্যমান বিশ্ব জুড়ে আছে। আর নবীর (সা.) আদর্শিক খিলাফত বিলোপ করা হলেও  সে সময়কার রাজা বাদশারাও সরাসরি ইসলামী শরিয়ার বিপক্ষে কোন বিরাট পরিবর্তন আনতে সাহস করে নাই। আর ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার প্রভাব ব্যক্তি জীবনে এখনও বিদ্যমান এবং তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা শত বাধা বিপত্তির ও অত্যাচারের পরেও বন্ধ করা যায় নাই। একেই বলে সামাজিক সফলতা। এখানে অর্থের লোভ, ক্ষমতার লিপ্সা বা বলপ্রয়োগ তথা  জোরাজুরির ব্যাপার নয়। এটি ঈমানী চেতনার ব্যাপার যা আসে মন থেকে এবং এ চেতনায় যে বলীয়ান সে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত। যেমন মিশরের মুসলিম ব্রাদাহুড আন্দোলনের কথাই ধরা যাক। ১৯২৮ সালে যাত্রা শুরু করে তাদের মিশনে তারা সফল এ জন্য যে, তাদের আন্দোলনের শুরু থেকে অনেক নেতা কর্মীদের শাহাদত ও নানা ত্যাগের মধ্য দিয়ে সে  আন্দোলনকে বন্ধ করা যায় নাই।  তারা গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েও কেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে পড়েননি, কাদের কুচক্র কার্যকর ছিল  তা আমরা জানি। সাম্রাজ্যবাদী ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সহায়ক সামরিক বাহিনীর অবৈধ হস্তক্ষেপে একটি বিশেষ গুষ্ঠি  ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে অস্ত্রের জোরে। আর এ বিশেষ গুষ্ঠি  তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে  শক্তির ব্যবহার করছে। তাই এটাকে বলতে হবে সামাজিক ব্যর্থতা। তাদের অবৈধ ও অশুভ কর্মের ফল কোনো অবস্থাতেই সফলকাম হবার মত নয়। এসব দাপট। এটা সময়ের গর্ভে বিলীন হতে বাধ্য।

বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে  দেখা যায়  সেকুলার জড়বাদী ও পৌত্তলিকতার জীবনদর্শনের প্রভাবে বাংলাদেশে  সৃষ্টিশীল সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির নামে যা চলছে তা হল নিরেট মিথ্যাচার। এ সমাজে নিরোত্সাহী করা করা হয় ইসলামী শিক্ষার সাহিত্য, কোরআনের তাফসির, হাদীসগ্রন্থ, নবী-চরিত্র, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি। কিন্তু এসবের চেয়ে বহুগুণ বেশী উত্সাহিত করা হয় সেই সব কবিতা, গল্প ও উপন্যাস যার উপাদান নিছক নারী-পুরুষের যৌন ক্ষুধায় উত্তেজনা সৃষ্টির লক্ষ্যে তৈরি। আদর্শবান চরিত্রের ও সুষ্ঠু চেতনায় পুষ্টির পরিবর্তে  মিথ্যাচারকে বলা হয় সৃজনশীলতা বা ক্রিয়েটিভিটি। তাই অতীতে যেমন বাংলা সাহিত্যে  উপন্যাসের নামে মিথ্যার জাল বুনেছিলেন ও মুসলিম চরিত্র হননে (এমনকি রবীন্দ্রনাথও সৃষ্টিশীলতার নামে দরিদ্র মুসলিম প্রজা অসিমদ্দিনকে হিন্দু জমিদারের জারজ বানিয়েছেন), আজও সেটি হচ্ছে অনেক সেকুলারবাদী ও তথাকথিত চেতনা ব্যবসায়ী লেখকদের গল্প সাহিত্যে!  সে দিন নেটে দেখলাম জনৈক ব্লগার সেকুলারবাদীদের আধ্যাত্মিক গুরু জনাব মুহম্মদ জাফর ইকবালের লিখিত ‘জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়’ বইয়ে এর কিছু অংশের হালকা পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে প্রকাশ করেছেন তার ইসলাম বিদ্বেষ। বইয়ের প্রধান চরিত্র ও গল্প-কথক বার বছরের মুনিরের বাবার যে বৈশিষ্ট্যগুলো সেই শিশুদের জন্য লেখা বই য়ে বর্ণনা করা হয়েছে তা হল,

মুনিবের বাবা

১-নিয়মিত নামায পড়েন। কখনো নামায ক্বাযা করেন না।

২-তার থুতনিতে এক গোছা দাড়ি আছে। এই কারণে তাকে পশু মনে হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।

৩- সন্তানদের পিটিয়ে খুব মজা পান। তাই কোন দোষ না পাওয়া গেলেও নিজ সন্তানদের প্রচণ্ড মারধর করেন।

৪-ওষুধের কোম্পানিতে চাকরী করেন। সেখান থেকে ওষুধ চুরি করেন আর ভেজাল ওষুধের ব্যবসা করেন।

৫- সন্তানদের ‘শুওরের বাচ্চা’ এবং ‘হারামজাদা’ ছাড়া অন্য কিছু বলে ডাকেন না।

৬- নিয়মিত সুর করে কোরআন তেলাওয়াত করেন।

(এই কথাগুলো বইয়ের পাঁচ থেকে আট নম্বর পৃষ্ঠায় রয়েছে।)

জাফর ইকবালের মত তথাকথিত বুদ্ধিজীদের যদি কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান থাকত কিংবা আল্লাহর পবিত্র কালাম কোরআনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকত তাহলে কি এ রকম ধৃষ্টতা দেখাতে পারতেননা।

আমরা দেখতে পাই গালাগালি তো দূরের কথা কাউকে মন্দ নামে ডাকার অনুমতিও  নাই কোরআনে। সুরা হুজরাতে আল্লাহ ঘোষনা দিয়েছেন: “মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।” ( সূরা হুজরাত 049.011)। একিভাবে হিল্লাহ বিয়ে বলতে ইসলামে কিছু না থাকলেও সে কথা বলে নারীবাদীকে ক্ষ্যপানো হয় ইসলামী শরিয়াহর বিরুদ্ধে।

তাই অনেকে বলেন বাংলাদেশের তথাকথিত সিভিল সমাজে বুদ্ধিবৃত্তির নামে জ্ঞানচর্চা নয়, বরং মিথ্যা উৎপাদনের বিশাল শিল্প (industry of lies and deception)  হয়ে গড়ে উঠেছে। সৃষ্টি হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষী তথা খোদা বিমুখ যুব সমাজ। তারই প্রতিফলন দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা, অরাজকতা ও ধর্ষনের সেন্চুরী। এ সবই হচ্ছে সামাজিক ‘সফলতার’ ব্যর্থতা। তাই সে সমাজে সম্পদের সুসম বণ্টন, দরিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুর্নীতিমুক্ত, পেশী শক্তি ও  সন্ত্রাস মুক্ত শান্তিপূর্ণ  গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক  সমাজ গঠনের পরিবর্তে  সে সমাজের সরকারের  কাছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসই হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান বিশ্বের প্রচলিত প্রথাবিরোধী ব্যতিক্রমী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক  নোয়াম চমস্কির  কিছু কথা উল্লখ করতে চাই। তার জ্ঞানগর্ভ লেখাগুলো  বিশ্বব্যাপী পঠিত এবং আলোচিত। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার “ব্যর্থ রাষ্ট্রে” তথা “ফেইল্ড স্টেটস” গ্রন্থে ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রাথমিক কিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন। যার একটি হলো সহিংসতা ও ধ্বংস থেকে জনগণকে রক্ষা করার অক্ষমতা বা অনিচ্ছা। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইনের ঊর্ধ্বে নিজেদের বিবেচনা করা এবং ফল হিসেবে যে কোনো আগ্রাসন ও সহিংসতা ঘটানোর অধিকার বোধ করা।”  নিচের ভিডিওটা দেখলে বুঝা যায় বাংলাদেশে রাস্ট্রীয় সন্ত্রাসের নমুনা এবং সহিংসতা ও ধ্বংস থেকে জনগণকে রক্ষা করার সরকারের অক্ষমতা বা অনিচ্ছা।[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=jovck1HBCtY]

পরিশেষে একথা বলা যায় যে মানব ইতিহাসের অতীত বর্তমান ঘটনা প্রবাহের দিকে লক্ষ্য করলে যদিও বাহ্যত দেখা যায় অশুভ চরিত্রের যালেমরা জয়ী হচ্ছে শক্তি ও ক্ষমতার দাপটে তথা তাগুতি শক্তি বলে কিন্তু তাদের বিজয় হয় ক্ষণস্থায়ী এবং তাদের পরিনতি হয় করুন। তারই বর্ণনা এসেছে কোরআনে ভিন্ন জায়গায় যেমন সুরা ফজরে আল্লাহ বলেন,

 “(১১) এরা [ সকলেই ] দেশে সীমালংঘন করেছিলো, (১২) অশান্তির [ উপরে অশান্তি ] বৃদ্ধি করেছিলো। (১৩) সুতারাং তোমার প্রভু তাদের উপরে শাস্তির কশাঘাত হানলেন। (১৪) নিশ্চয়ই তোমার প্রভু সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।”

তবে ইতিহাস থেকে যালেমরা কখনই শিক্ষা নেয় না এটাই হচ্ছে তাদের চরম ব্যর্থতা!

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *