রাষ্ট্রপতি সেই হাস্য রসাত্মক বক্তব্য নিয়ে গোলাম মোর্তজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ

গোলাম মোর্তোজা : মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আমাদের বহু পরিচিত রাজনীতিবিদ। সহজ-সরল বন্ধুবৎসল মানুষ তিনি। এলাকায় জনপ্রিয়ও। গত সাত আট বারের টানা এমপি। সেই মানুষটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে কথা বললেন।
তিনি ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ’ ‘হার্টলেস’ ‘কর্মকর্তাদের লিখে দেয়া বক্তব্য পড়বেন’ ‘একবার রিডিংও পড়ে দেখেননি’ ‘এসএসএফ-সিকিউরিটি’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বললেন। উপস্থিত ছাত্রছাত্রী ,শিক্ষক,অভিভাবকসহ অন্যরা তুমুল করতালি দিলেন। বোঝা গেল সবাই খুবই আনন্দ পেয়েছেন।
প্রশ্ন হলো এই কী কনভোকেশন অনুষ্ঠানের বক্তব্য?
ছাত্রছাত্রীদের সামনে কনভোকেশনের দিন এমন মানুষেরাই কথা বলেন, এমন কথা বলেন- যা তারা সারাজীবন মনে রাখেন, রাখার চেষ্টা করেন। উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপের দিকে তাকানোর দরকার নেই। পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকান। তাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের কনভোকেশনের বক্তব্যগুলো দেখুন। মাহাথীর মোহাম্মদ তো ঢাকায়ও বক্তৃতা করে উদাহরণ রেখে গেছেন। এপিজে আবদুল কলামও ঢাকায় এসে বক্তব্য রেখে গেছেন।
এপিজে আবদুল কালামের আত্মজীবনী পড়ে দেখেন, একটি কনভোকেশনের বক্তব্য তৈরি করতে কি পরিমাণ সময় তিনি ব্যয় করতেন, কতটা গুরুত্ব দিয়ে নিতেন বিষয়টি। কয়েকদিন আগে সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনের বক্তা ছিলেন। কি অসাধারণ বক্তৃতা! কর্মকর্তারা খসড়া তৈরি করে দিতেই পারেন। তাই বলে না দেখে পড়বেন, তাও কনভোকেশনের বক্তব্য!
এই বক্তব্যে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকরা হাসবেন, সামান্যতম গুরুত্ব দিয়েও শুনবেন না, মানবেন না। তাদের মনোজগতে নাড়া পড়বে না। এটা একজন রাষ্ট্রপতির জন্যে মোটেই সম্মানজনক নয়।
এটাই হয়ত আমাদের স্টান্ডার্ড!
আমাদের চারিদিকে যে অবক্ষয়, অসত্য-অর্ধসত্যের জয়গান, ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষা-শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অধপতিত সাংবিধানিক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো, শিক্ষা বিষয়ে গত ৪৩ বছরের ভুল পথ ও নীতি আমাদের আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। দর্শন তত্ত্ব বা মননশীলতার অনুপস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একজন তথাকথিত সৎ নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত দিয়ে শিক্ষার যে সর্বনাশ সাধিত হচ্ছে তার ফল আমরা পাব আরও পনের বিশ বছর পরে। অনেকেই বলেন, বলবেন- আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই এগিয়ে যাবে। মানসম্পন্ন শিক্ষাবিহীন একটি দেশের, একটি জাতির এগিয়ে যাওয়ার গতি প্রকৃতি কেমন হবে?
আমরা নিরক্ষর, অদক্ষ-আংশিক দক্ষ মানুষের অমানবিক শ্রমের বিনিময়ে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছি। দক্ষতা-শিক্ষা বাদ দিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার এই ধারাই অব্যাহত রাখতে চাইছি? এই পথে আসলে কতদূর এগুনো যাবে?

Loading

উড়ন্ত পাখি

About উড়ন্ত পাখি

আমি কোন লেখক বা সাংবাদিক নই। অর্ন্তজালে ঘুরে বেড়াই আর যখন যা ভাল লাগে তা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *