মিসরের সামরিক সরকার ও ব্রাদারহুড

সবাই জানেন, ২০১১ সালে জনগণের আন্দোলনের মুখে হোসনি মোবারক সরকার পদত্যাগ করেছিল। এরপর মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ইখওয়ানুল মুসলেমিন বা মুসিলম ব্রাদারহুড সমর্থিত ড. মুহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার সময়ে নতুন সংবিধান রচিত এবং তা পার্লামেন্টে পাস হয়। পার্লামেন্টের নিম্ন পরিষদের নির্বাচনও হয়। উচ্চ পরিষদের নির্বাচন না হওয়ার জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সাময়িকভাবে তিনি নিজের হাতে নেন। পরে আপত্তির মুখে তিনি এ ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেন। মোবারক আমলের বৈরী প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, সংবাদমাধ্যম ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নিয়েই তিনি কাজ করতে থাকেন। এরপর বৈরী মোবারকপন্থী এবং সমাজের একটি সেকুলার অংশ সামরিক বাহিনীর একটি অংশের উসকানিতে আন্দোলন শুরু করে। ড. মুরসি এটা দমনে শক্তি প্রয়োগ করেননি। এ সুযোগে তারা নানা অরাজকতা সৃষ্টি করে এবং শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ সিসি ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেন। এ ব্যাপারে জেনারেল সিসি ইসরাইল, পাশ্চাত্যের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা এবং উপসাগরীয় কিছু দেশের সহায়তা পেলেন। এটা এ থেকেও বুঝা যায় যে, পাশ্চাত্যের দেশগুলো এই সামরিক অভ্যুত্থানকে ‘ক্যু’ পর্যন্ত বলেনি।
সামরিক সরকার প্রধান সিসি প্রশাসন মুরসি, ইখওয়ান নেতৃবৃন্দ ও অসংখ্য লোককে গ্রেফতার এবং কয়েক হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করে। তারা ইখওয়ানের অফিস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এদের সর্বশেষ অপকীর্তি হচ্ছে, ইখওয়ানের বিরুদ্ধে একটি ফিল্ম তৈরি করে অপপ্রচার চালানো। এ ফিল্মের নাম দিয়েছে তারা ”Defining Moments’ বা ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো’।
এই অপপ্রচারের জবাবে ইখওয়ানের মিডিয়া মুখপাত্র ড. তালাত ফাহমি ম্যাকমিলান টিভি চ্যানেলের মোহাম্মদ নাসেরকে ইন্টারভিউ দেন। ফিল্মে বলা হয়েছে যে, মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল ক্ষমতা জবরদখল করেছে। ড. তালাত বলেন, ড. মুরসি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। সে নির্বাচনে দুই কোটি ৬০ লাখ লোক ভোট দিয়েছে। ক্ষমতা দখল করেছেন ট্যাংক ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসা সিসি। ফিল্মে অভিযোগ করা হয়েছে, ১৯৫২ সালে বাদশাহ ফারুকের বিরুদ্ধে বিপ্লবের সময় মুসলিম ব্রাদারহুড সন্দেহজনক ভূমিকা পালন করেছিল। ড. তালাত বলেন, ইখওয়ান সদস্য মেজর জেনারেল আব্দুল মোনেম বাদশাহ ফারুককে পদত্যাগ করান। ইখওয়ানের সিনিয়র নেতা মাহদি আকেফ তাকে সাহায্য করেন। তখন ইখওয়ান সদস্যরা সব স্থাপনা ও পুল পাহারা দেয়, যাতে ব্রিটিশ সৈন্যরা আবার কায়রো দখল করতে না পারে।
পরবর্তীকালে জামাল নাসেরের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তৎকালে হাসান আল হুদাইবির নেতৃত্বাধীন ইখওয়ান কোনো সঙ্ঘাতে যায়নি, যাতে আবার ব্রিটিশরা না আসতে পারে। মুরসির বিরুদ্ধে ফিল্মে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি মোবারক আমলের কয়েক হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়েছেন। ড. তালাত বলেন, তারা ছিলেন মোবারক আমলের নির্যাতিত ব্যক্তি।
এরপর ড. তালাত ফাহমি অভিযোগ করেন, জেনারেল সিসি সিনাইয়ে বিনাবিচারে এক হাজার ৪৪৭ জনকে হত্যা করেছেন, ১১ হাজার ৯০৬ জনকে আটক রেখেছেন এবং এক হাজার ৮৫৩টি বাড়ি ধ্বংস করেছেন।
ড. তালাত বলেন, সিসি একজন পুরোদস্তুর ইসরাইল সমর্থক ব্যক্তি। তিনি ইসরাইলকে সব সহায়তা দিচ্ছেন এবং গাজার অবরোধে ইসরাইলকে সাহায্য করছেন। ড. তালাত আরো বলেন, সিসি মিসরের দু’টি দ্বীপ অন্য রাষ্ট্রকে দিয়ে দিয়েছেন। ড. তালাত বলেন, সিসি সরকার একটি গোষ্ঠী মাত্র, তারা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না, তার পতন হবে এবং মিসরের জনগণ তখন আনন্দোল্লাস করবে।
আমরা মনে করি, ইখওয়ানুল মুসলেমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সুসংগঠিত ইসলামি আন্দোলন, যারা আইনের মাধ্যমে কাজ করে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। তারা সন্ত্রাসকে ঘৃণ্য মনে করে। ইখওয়ান-বিরোধী অপপ্রচার বাস্তবে ইসলামের দুশমনদের কাজ।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *