এই ভূখণ্ড, মৃত্যুপুরী হচ্ছে- ম্যালথাস সত্য হচ্ছে।

প্রতিটি লঞ্চ ডুবি প্রকৃতির প্রতিশোধ মাত্র। 
প্রতিটি গুম, প্রকৃতির প্রতিরোধ । 
প্রতিটি রোড এক্সিডেন্ট প্রকৃতির নিয়ম।
প্রতিটি আগুনে, বিল্ডিং ভেঙ্গে শ্রমিকের মৃত্যুতে 
প্রতিটি পুলিশের গুলিতে, প্রতিটি অপমৃত্যুতে, প্রতিটি খুনে 
কিছুই নয়, ম্যালথাস সত্য হচ্ছে মাত্র। 

প্রতিটি হিমবাহ গলে, লবনপানি বাড়ছে ।
ইঞ্চি ইঞ্চি করে মাটির দিকে আসছে সাগর। 
পানি প্রত্যাহারে সুজলা বাংলা হচ্ছে মরু। 
মানুষ পালাচ্ছে রুজির সন্ধানে। পুঁজি পালাচ্ছে, মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে। 
এই ভূখণ্ড, মৃত্যুপুরী হচ্ছে- ম্যালথাস সত্য হচ্ছে।

ফরমালিন খাবারে, কার্বাইড কারবারে, স্ট্র টেনে আর্সেনিক। 
প্রাকৃতিক শরীর জমছে, বিন্দু বিন্দু করে জমছে কেমিক্যাল। 
জিন্দা টাইম বোম্ব হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ১৬ কোটি নাগরিক। 
যে কোন মুহূর্তেই, কেমিকেল বোম্ব ফুটে । 
ভুল চিকিৎসা, ভুল রিপোর্ট, ভুল ইনজেকশন, ভুল ইন্টার্র্নি, ভুল লেখাপড়া
ভুল টাকায় তৈরি ফাইভ স্টার কসাইখানায় এপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছে মানুষ। 
যেখানে ডাক্তার সেলেব্রিটি পরামর্শে তৈরি হয়েছে মৃতের জন্যে আলাদা বহির্গমন পথ । 
বিপুল বৈভবে,মাউন্ট এলিজাবেথে এম্বুলেন্স ফ্লাইট নিয়ে যান যারা, 
মুক্তি পাচ্ছেনা তারাও। প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না, শুধুমাত্র ম্যালথাস সত্য হচ্ছে । 

পুঁজিবাদ সৃষ্টি করেছে যে লোভের উৎসব, সেই উৎসবে মেতেছে সবাই
অপরাজনীতি, টক শো হোস্ট, জাতীয় ক্রিকেটার, ফৌজ ,পুলিস, র‍্যাব
নষ্ট নাগরিক সবাই মিলে, আজ আরাধনা করি টাকার দেবতার। 
তাই, স্বৈরাচার বৈধতা পায়, লুটপাট সহনশীল হয়, লুম্পেন নাগরিক ট্যাক্স বর্জন করে।
১৬ কোটি নাগরিকের সকলেই নেমে পরে, লুটপাটের মচ্ছবে। যে পারে যার থেকে মেরে খায়।
রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙ্গে, আইন-বিচার সব বর্জন করে নাগরিক প্রতিষ্ঠা করে জঙ্গলের নিয়ম। 

এই সহনশীল পরিবেশে, ভেঙ্গে পরে বেঁচে থাকার সকল কাঠামো 
– একটি মাত্র সত্য বর্তমান থাকে।

ম্যালথাস “ প্রকৃতি তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রাণকে বলী দেয়”
ম্যালথাস “ প্রকৃতি বলী দেয়, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রাণকে”
ম্যালথাস “ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রাণকে বলী দেয়, প্রকৃতি”। 

তাই প্রতিটি লঞ্চ ডুবি, প্রতিটা গুম, প্রতিটা খুন আজ অবশ্যম্ভাবী 
ম্যালথাসকে স্বতঃসিদ্ধের মত প্রমাণিত করে মাত্র। 
প্রমাণিত করে, ডারউইন কেউ। 
সব চেয়ে শক্তিশালীরাই বেঁচে থাকে, দুর্বলেরা হারিয়ে যায় বা মানিয়ে নেয়। 
তাই আজ পাজর সরু হয়, ভুঁড়ি পুরু হয়।
কিন্তু, অনুভূতি বিবর্তিত হয়না,বিবর্তিত হয়না প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা,
বিবর্তিত হয়না কংক্রিট চাপা পরা মানুষের সাত দিন ধরে ধুকে ধুকে নির্মম মৃত্যুর যন্ত্রণা, অথবা পানিতে ডুবে মরার সময় দম বন্ধ হওয়া, বা পেটের মধ্যে ছুরি ঢুকে ভুরি গালা করার অনুভূতি । 

এইভাবে বাসের অযোগ্য দেশে, প্রকৃতির প্রতিশোধ নিয়ে টেঁসে যাচ্ছে ১৬ কোটি মানুষ। 
তাই, মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে লাখ ডলার জমা দিচ্ছে লুটেরা সৌভাগ্যবানেরা। 
আর হাইলি স্কিল্ড মাইগ্রেশানে ডাকছে কানাডা,অস্ট্রেলিয়া-“বুদ্ধিমান হোন, ঠিক কাজটি করুন”। 
কিন্তু, আমাদের জন্যে রয়ে যাচ্ছে ক্রম স্বতঃসিদ্ধের মত প্রমাণিত হতে থাকা ম্যালথাস। 

তাই আসেন, বের করেন, আপনার শটগান, ছুরি, আমি বের করি আমার রামদা, কুড়াল- আসেন আমরা একজন আরেক জন কে খুন করি, আমরা একজন আরেকজনের পরিবারকে হত্যা করি – আরও একটা বেশী টাকা কামানোর আশায়- আসেন আমরা ম্যালথাসকে সত্য প্রমাণিত করি।

এই ভাবে ১৬ কোটি মানুষের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু শেষে বেচে থাকবে, শুধু মাত্র দুটি শিশু।
একটি ছেলে , একটি মেয়ে। 
যারা হবে সকল স্মৃতি বিস্মৃত, নিষ্পাপ এবং সত্য। 
এই শিশু দুইটি একদিন এই ভূখণ্ডে গড়ে তুলবে নতুন একটা সভ্যতা। 
একটি বাংলাদেশ সভ্য,সুন্দর, মানবিক। 
সেই দিন ম্যালথাস মিথ্যা হবে। 


জিয়া হাসান । ১৬ মে ২০১৪

Loading

জিয়া হাসান

About জিয়া হাসান

লেখক: প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি -

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *