অগ্নিপরীক্ষায় আওয়ামী লীগ এবং আগামীর বাংলাদেশ

চার বিভাগীয় শহর তথা সিলেট, রাজশাহী, খুলনা এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এই মুহূর্তে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন চলছে। নির্বাচনের ফলাফল এমনটি হবে তা কেউই নির্বাচনের আগে ধারণা করতে পারেনি। এমনকি বিএনপিও ভাবতে পারেনি যে তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা এত ভাল ফল করবেন। আওয়ামী লীগও ধারণা করতে পারেনি তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা এমন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবেন। অধিকন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এত সুষ্ঠু এবং অবাধ হবে তা বিএনপি, বিএনপির সমর্থক মহল এবং সাধারণ ভোটাররাও ধারণা করতে পারেনি। নির্বাচনের আগের ধারণার সঙ্গে নির্বাচনপরবর্তী বাস্তবতার এমন বিস্ময়কর পার্থক্যই হচ্ছে নির্বাচনের সাফল্য-সৌন্দর্য, ফসল এবং অর্জন। এখানেই গণতন্ত্রের এগিয়ে চলা।

৪ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হলেও এতে স্থানীয় সমস্যা, প্রার্থীদের যোগ্যতা, অযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, অগ্রহণযোগ্যতা বেশিরভাগ ভোটারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বা মূল থাকেনি। তারা জাতীয় রাজনীতির নানা ইস্যুকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী জোট ভোটারদের সেভাবেই উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে বিশেষভাবে। অন্যদিকে সরকারী দল ও জোট এই নির্বাচনকে স্থানীয় সরকারের চাইতে বেশি কিছু হিসেবে গুরুত্ব দিতে চায়নি। আওয়ামী লীগ বেশ কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসে ভোগে। যেহেতু ৪ সিটিতেই তাদের মেয়ররা বেশ সুনাম অর্জন করেছেন, তারা বেশ কাজও করেছেন, শহুরে ভোটাররা সচেতন মানুষ হিসেবে পরিচিত, তাই তাদের কাছে এ সবের গুরুত্ব থাকবে অনেক বেশি। আওয়ামী লীগ সে কারণে আগে থেকে এমন বিশ্বাসেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, দলীয় এবং আমলাদের পরামর্শ মোতাবেক নির্বাচনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছিল। কিন্তু তারা যেটি বুঝতে চায়নি তা হচ্ছে সময়টি রাজনৈতিকভাবে বেশ উত্তপ্ত।

মেয়াদের শেষপ্রান্তে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশে ক্ষমতাসীনদের প্রতি বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের হিসাব-নিকাশ থাকে। এ মুহূর্তে দেশে আগামী নির্বাচন কোন্ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবেÑতা নিয়ে চলছে একটি বড় ধরনের বিতর্ক। সরকার সেটির সুরাহা না করে অনেকটা ঝুলিয়ে রেখেছে বলে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হচ্ছে। সংলাপ হবে কি হবে না তা নিয়ে কোন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ মনে করছে যে, সরকার এখানে অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধন করার চেষ্টা করছে। সময়ক্ষেপণ করছে। সরকারের এমন ঝুলিয়ে রাখার বিষটি একটি বড় অংশের ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। শহুরে ভোটারদের বিষয়টি এভাবেই ভাবিয়ে তুলেছে। তাদের ভাবনা-চিন্তা কতটা সত্য বা অমূলক সেটি পরে হয়ত বোঝা যাবে।

তবে এ ধরনের ঝুলন্ত অবস্থার সৃষ্টিকে শহরের ভোটারদের একটি বড় অংশকে অনেকটাই ক্ষিপ্ত করে রেখেছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিসহ নানা ইস্যুতেও অনেকেই বিরক্ত-ক্ষিপ্ত। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীর আচরণেও অনেকে বিরক্ত। সমস্যা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও রয়েছে। জনে জনে গ্রুপিং নতুন কোন কথা নয়। দলের সর্বস্তরের নতুন নতুন নেতার আবির্ভাব ঘটেছে, যারা ষড়যন্ত্রের নানা জাল বুনতে মোটেও দ্বিধা করে না। নির্বাচনে কাউকে পরাজিত করার জন্য তারাও মুখিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ ১৪ দল এবং মহাজোটের জাতীয় পার্টির সঙ্গেও এই নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন আলোচনা করেনি। আলোচনা করলেই সমাধান হয়ে যাবে তার কোন গ্যারান্টি নেই সত্য, তবে একসঙ্গে জোট করে রাজনীতি করতে হলে গুরুত্বপূর্ণ যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে জোট-মহাজোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হওয়া খুবই দরকার। সেটি হচ্ছে না।

দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের চিরস্থায়ী শত্রু এবং প্রতিপক্ষের সংখ্যা অনেক বেশি। তেমন বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে আওয়ামী লীগকে কি ধরনের রাজনীতি করতে হবে, করা উচিতÑতা আওয়ামী লীগ খুব একটা আমলে নেয় না। যার ফলে যে কোন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন অবতীর্ণ হয় তখন শত্রু, প্রতিপক্ষ, ষড়যন্ত্রকারীসহ নানান গোষ্ঠী এবং পক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিকে নানা কারণে উত্তপ্ত অবস্থায় রেখেই ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের মতো পুরনো দল পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন গভীর মূল্যায়ন না করে এভাবে অগোছালো অবস্থায় নির্বাচনের আয়োজন করবেÑতা ভাবা যায়নি। সে কারণেই নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত হওয়ার পর নতুন নতুন প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা আক্রান্ত হতে থাকেন।

এর মোকাবিলায় জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে দলটির দুর্বলতা এবং প্রস্তুতিহীনতা আরও ভয়াবহ। জামায়াত-শিবির, হেফাজত এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার নির্বাচনের ময়দানে ধর্মের কার্ড নতুনভাবে খেলবে, আস্তিক-নাস্তিকের ইস্যুটি জোরেশোরে মাঠে ছড়াবে, বাড়ি বাড়ি যাবে, মানুষের হাতে-পায়ে ধরবেÑএটি কেনা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মাথায় কি তেমন কিছু ছিল? তেমন কোন প্রস্তুতি কি দলটির রয়েছে? ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজনীতিতে বহুল ব্যবহৃত ধর্মীয় ট্রাম কার্ডটি ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগ খুব একটা বিবেচনায় নিয়েছিল বলে মনে হয়নি। শহরাঞ্চলে ব্যাপক মানুষকে হয়ত ধর্মের পুরনো কার্ডটি ব্যবহার করে বিভ্রান্ত করা সম্ভব নয়; তবে শহরে অনেক সাধারণ নারী, পুরুষ বসবাস করেনÑ তাদের একটি অংশকে তো করা যায়ই। এ ক্ষেত্রে তাই করা গেছে।

এ মুহূর্তে বিএনপি বেশ উজ্জীবিত। ১৮ দলও তাই। বিশেষজ্ঞ জামায়াত-শিবির ধরেই নিচ্ছে যে, আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় আসবেই। তারই পূর্বপ্রস্তুতি নেয়ার লক্ষণ তাদেরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের কর্মীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হল ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। শিবির সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মহড়া দিতে শুরু করেছে। দেশের অন্যত্রও হাবভাব তেমনই চোখে পড়তে শুরু করেছে।

আশপাশে যে সব বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছেন তাদের মধ্যেও এক ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার পর্ব শুরু হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় আসার পর কোথায় কী করা হবে, কাকে কিভাবে সাইজ করা প্রয়োজন সে ধরনের কথাবার্তা কানে আসতে শুরু করেছে। বোঝা যাচ্ছে, ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরে দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যাদেরকে দেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রায় শুইয়ে দিয়েছিল এখন তারা স্বপ্ন দেখছে যে, তাদের প্রতিপক্ষের অবস্থা প্রায় একই হতে যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে। এর জন্য বিএনপি-জামায়াতের কোনো কৃতিত্ব নেই; তাদের জ্বালাও-পোড়াও হরতাল করারও কোন ফসল এটি নয়। এটি হচ্ছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার ফসল। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সুদূরপ্রসারী কোন রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এমন কাজ করেনি যার ফলে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি জনগণের কাছে ক্রমান্বয়ে দুর্বল বা অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়তে পারে।  আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বড় বড় রাস্তাঘাট, ব্রিজ তৈরি করছে, বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করছে, খাদ্য উৎপাদন করছে, শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করছে, প্রযুক্তিতে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। খুবই ভাল কথা।

আওয়ামী লীগ ধরে নিচ্ছে উন্নয়নমূলক এত কাজ করলেই জনগণ নির্বাচনে মহানন্দে ভোটের মাধ্যমে জিতিয়ে আনবে। আওয়ামী লীগের এই বিশ্বাস বা ধারণা ২০০১ সালেও ভুল প্রমাণিত হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ তখন তা থেকে শিক্ষা নেয়নি, এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেই ধাক্কা আবার আওয়ামী লীগ খেয়েছে। জানি না, তাতে আওয়ামী লীগ সম্বিত ফিরে পাবে কি-না। তবে দেশে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগের শুভাকাক্সক্ষী যারা আছেন- তারা সবাই ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর বাংলাদেশের গতিপথ, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ইত্যাদির ভবিষ্যতে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন কথা প্রসঙ্গে তাদের দুর্ভাবনার কথা বলেছেন, আমি নিজেও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এমন বিবর্ণ চেহারা দেখতে দেখতে এখন আশা-ভরসার অনেক কিছুই ছেড়ে দিয়েছি, আওয়ামী লীগের এমন ভূমিধস বিপর্যয় দেখে সম্মুখে কেবলি অন্ধকার দেখছি।

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই বিভিন্ন লেখায় আওয়ামী লীগকে সতর্কভাবে চলা, কথা বলা, বিতর্ক সৃষ্টি না করা, জনগণকে আস্থায় নেয়া, দলের মূলখোর বলে কুখ্যাতি সম্পন্ন নেতাকর্মীদের শাস্তি দেয়া, দল থেকে তাদের বের করে দেয়াকে আধুনিক চিন্তা-ভাবনায় গড়ে তোলার বিষয়টি বলার চেষ্টা করেছি। আমাদের মতো ছাপোষা মানুষদের এসব লেখা পড়ে দেখার মোটেও সময় নেই নেতৃবৃন্দের। তা ছাড়া রাজনীতির বিষয়টি আমরা ততটা ভাল বুঝি না, যতটা তারা ভাল বোঝেন। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কেননা, মাঠে তারাই রাজনীতি করেন; প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমাদের চাইতে তাদেরই বেশি। সুতরাং, আমরা কখনও আমাদের রাজনীতিবিদদের রাজনীতির ছবক দিতে চাই না। কিন্তু দেশের রাজনীতির গতিপ্রবাহ সম্পর্কে আমাদের পর্যবেক্ষণ তারা বিবেচনায় নিতেও পারেন। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি বিলুপ্ত প্রায়। অথচ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে দলের বাইরে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী মানুষের সঙ্গে সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক এখনও প্রচারিত, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি তাদের মতামত জানতে চাইতেন। এটিই আধুনিক রাষ্ট্র রাজনীতিতে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়।

যে বিষয়টি ১৫ জুনের পর দেশের রাজনীতিতে উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছে তা হচ্ছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী হওয়ার পর ২০০১ সালের চাইতেও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। প্রকাশ্যেই বলাবলি হচ্ছে হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সংখ্যালঘু, বুদ্ধিজীবী এবার তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হতে যাচ্ছেন, জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধীদের মামলার পাল্টা প্রতিশোধ নিতে মাঠে নামতে পারে, দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে পারে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যা-ঘটেছিল তা ছিল তাদের পাশবিকতার ড্রেস রিহার্সেল মাত্র; ২০১৪ সালে পূর্ণ চরিত্রে তা আবির্ভূত হতে পারে। এর কিছু কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে নানা হুমকি-ধমকি থেকে। ক্ষমতায় আসার পর শুধু হত্যা, আক্রমণ, পাশবিক লাঞ্ছনা, গঞ্জনাই যে হবে তা নয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যবস্থাই বদলিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হবে, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট হত্যা মামলা, ৪ জাতীয় নেতার হত্যা মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাÑ এসব তখন ভুলে যেতে হবে, উল্টো মামলাও হয়ত খেতে হবে এর পক্ষের শক্তিকেই। ২০০১ সালের আগে আওয়ামী লীগ এমন কী করেছিল যে, নির্বাচনের দিন থেকে দেশব্যাপী এভাবে তাদের নেতাকর্মীদের হত্যা, আক্রমণ, নারী ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পরিস্থিতি করতে হবে? তখন যদি কোন কারণ ছাড়াই দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গেছে তাহলে এবার জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজত মিলে একত্রিতভাবে কী করতে পারে তা ভাবতেই আঁতকে উঠতে হয়। সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে যারা সারা দেশে এমন নৃশংসতা চালাতে পারে তারা ক্ষমতায় গেলে কী করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তেমন আশঙ্কা সচেতন রাজনীতিক মহলে উঠতে শুরু করছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। সেই নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট জয় লাভ করলে দেশে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তার আশঙ্কা সকল মহলেই কমবেশি হচ্ছে। অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি বা জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার কোন চেষ্টা আওয়ামী লীগ থেকে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ১৮ দল আগামীতে ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করার কারণে জামায়াত বড় ধরনের প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবে, তাতে অন্যদের মৌন সম্মতি থাকবে না এমনটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সেটি ঘটলে বাংলাদেশ ভয়াবহ মানবিক, রাষ্ট্রীয় সঙ্কটে পড়বে যেমনটি পড়েছিল ২০০১-২০০৬ সালে। ধারণা করা হচ্ছে বিপর্যয়টি আরও বড় আকারে হতে পারে। তেমন একটি বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে সকল গণতান্ত্রিক শক্তি কী কর্মসূচী নিয়ে অগ্রসর হবে-তা দ্রুত নির্ধারণ করা জরুরী। জনগণের কাছে যাওয়া, তাদের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্যোগ নেয়া, নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার কোন বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগকে এতদিনকার মতো চললে হবে না, জনগণের আস্থা অর্জনের মতো করেই বাকি দিনগুলোতে চলতে হবে। দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার সব বিষয়ে বক্তব্য রাখাটি মানুষ ভালভাবে নিচ্ছে না। দলের একজন আকর্ষণীয় মুখপাত্র খুবই জরুরী, যিনি প্রতিদিনই বিরোধী দলের অভিযোগের গ্রহণযোগ্য উত্তর দেবেন; তৃণমূলের দুর্বিনীত নেতাকর্মীদের সংযত করা, প্রয়োজনে বিধিবিধান প্রয়োগ করা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুতসহ প্রতিশ্র“ত বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করা, কোন ধরনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করা, যেসব নেতৃবৃন্দ জনগণের দৃষ্টিতে কথাবার্তায় উত্তাপ ছড়ান তাদের তা করতে না দেয়া এবং সর্বোপরি আগামী নির্বাচনে এখন মাঠ উপযোগী নেতাদের প্রস্তুত করা, জোট-মহাজোটের হৃদ্য বাড়ানো, অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নির্বাচনে সকল অপশক্তির প্রচার-প্রচারণাকে ফেস করার সকল প্রস্তুতি নেয়া। এসব কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া এবং সম্পন্ন করা গেলে রাজনীতির মাঠ কেমন হয়, ফসল কেমন ফলবে তা বোঝা যাবে। এর জন্য অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হবে, তবেই অর্জনের সম্ভাবনা ধরা দিতে পারে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

Loading


Comments

অগ্নিপরীক্ষায় আওয়ামী লীগ এবং আগামীর বাংলাদেশ — 1 Comment

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *