আজ দু’-একটি বিষয়ে পাঠকের সঙ্গে মতবিনিময় করছি। ‘ফিতনা’ নামে একটি ইংরেজি সিনেমা বিশ্বের মুসলিম সমাজে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং সারা বিশ্বে এটি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক ছিলেন আরনউড ভেন ডোর্ন। তিনি গত এপ্রিলের কোনো একদিন পবিত্র মদিনা নগরীতে অবস্থিত মসজিদে নববিতে এসে মহানবীকে (সা.) উদ্দেশ করে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বলেন, ‘মাননীয় মহানবী (সা.), আমি আমার কর্মের জন্য দুঃখিত।’ মাজেদ আল-সুগাইরি নামক এক ব্যক্তি কর্তৃক সৌদি গেজেটে প্রকাশিত ভেন ডোর্নের কথা প্রসঙ্গে বক্তব্যের শিরোনাম ছিল, ‘আই অ্যাম সরি ওহ! প্রফেট।’ আরনউড ভেন ডোর্নের কথা এখানে উল্লেখ করছি এজন্য যে, তিনি উগ্র ডানপন্থী একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ‘ফিতনা’ নামের সিনেমাটি তৈরি করে দ্বীন-ইসলামের প্রবর্তক ও মহান আল্লাহর প্রিয়তম বন্ধু মহানবীর (সা.) প্রতি অত্যন্ত নগ্নভাবে কটূক্তি করেন এবং অনেক আজেবাজে ডায়ালগ এর ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করেন।
সিনেমাটি প্রচার হওয়ার পরপরই সারা বিশ্বের মুসলমান সমাজে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশেও মানুষ এই সিনেমা প্রচারের নিন্দা জানায় এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করে। প্রযোজক আরনউড ভেন ডোর্ন যখন দেখলেন, সিনেমাতে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করাতে তিনি বিশ্বের কাছে সমালোচিত হচ্ছেন এবং প্রচণ্ডভাবে ঘৃণিত হচ্ছেন এবং তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হচ্ছে, তখন তার মনে প্রশ্ন জাগল, কে এই মুহাম্মদ (সা.)? তাকে নিয়ে কেন এত হইচই? সুতরাং তার সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর গভীরে প্রবেশ করতে হবে। তাই তিনি কঠোর পরিশ্রম করে মহানবী (সা.) সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও কিতাব সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করলেন। মহানবী (সা.) সম্পর্কে বিভিন্ন খোঁজ-খবর নিতে থাকলেন। গবেষণার শেষ পর্যায়ে এসে উপলব্ধি করলেন, তিনি যেটা করেছেন, সেটি ভুল ছিল। এত বড় মাপের এবং এত বড় একজন মহান ব্যক্তিকে নিয়ে এভাবে কটূক্তি করা কখনোই উচিত নয়। তার ভুল তিনি বুঝতে পারলেন। তার এ ভুলের জন্য মদীনার মসজিদে নববিতে এসে মহানবীকে (সা.) উদ্দেশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমা প্রার্থনার পরপরই অত্যন্ত সানন্দচিত্তে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের অত্যন্ত বিতর্কিত ও সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ লেখনীর কারণে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে কোথাও তিনি শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। ইংল্যান্ড, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো দেশ, ভারতের কলকাতা, দিল্লি যেখানেই থাকুন না কেন, কোনো স্থানেই একনাগাড়ে অনেকদিন পর্যন্ত শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। সাম্প্রতিককালে মিডিয়াতে খবর এসেছে যে, তিনি আত্মোপলব্ধি করছেন। সেই আত্মোপলব্ধিটি কী? তসলিমা নাসরিন মনে করেন, তিনি যে লাইফ স্টাইল অনুসরণ করেছেন এবং তার ব্যক্তি জীবন একজন নারী হিসেবে যে নিয়মে পরিচালিত হয়েছে, সেই নিয়মটি কি আসলেই সঠিক ছিল? তার পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধব, শুভানুধ্যায়ীরা কি আসলেই তার নিঃস্বার্থ শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন? তার এ আত্মোপলব্ধি হয়তো ইতিবাচক অথবা তার এ উপলব্ধি অতীত কৃতকর্মের অনুশোচনা হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এ দুটি উদাহরণ দেয়ার পেছনে অবশ্যই একটি কারণ রয়েছে। মানুষ চিন্তাশীল ও বিবেকবোধ সম্পন্ন প্রাণী। অন্যায় করলে বা কারও অনিষ্ট করলে মানুষের চিন্তাশক্তি ও বিবেকবোধে একটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ বিবেকবোধই মানুষের মনে তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার জন্ম দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ চিন্তাশীলতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দুটি আঙ্গিক থেকে এর উদাহরণ দিতে চাই। এক. শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সরকারি অংশ যেভাবে অপমান, অপবাদ ও কটূক্তি করে যাচ্ছেন তার উদাহরণ। দুই. হেফাজতে ইসলাম নামক একটি সংগঠন নিয়ে এবং তাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে ঢালাওভাবে ভুল তথ্যনির্ভর যে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে তার উদাহরণ।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ১১টি সেক্টরের মধ্যে ১০টি কার্যকর ছিল। ওই ১০টি সেক্টরের ১০ জন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। কিছু অতিরিক্ত ছিলেন। কারণ একাধিক সেক্টরে সেক্টর কমান্ডাররা দায়িত্ব পালন করেছেন বাস্তবতার প্রয়োজনে। কিন্তু জিয়াউর রহমান শুধু একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবেই সুপরিচিত ছিলেন না, তিনি নিজে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক হিসেবে ২৫ মার্চ রাত ১২টার কয়েক মিনিট পর চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরে অবস্থিত সৈনিকদের সমাবেশে একটি ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলায় দেয়া দু’মিনিটের এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরা পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলাম। আমরা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করলাম।’ তিনি তার ব্যাটালিয়নকে নেতৃত্ব দিয়ে ওই সময় থেকেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন।
এভাবে সারা বাংলাদেশেই আরও অনেক জায়গায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আনুমানিক এর ৩৬ ঘণ্টা পর ২৭ মার্চ তৎকালীন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে অনুরোধ করেন রেডিও স্টেশনে এসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য। তিনি রেডিও স্টেশনে এসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রথমে নিজের নামে, পরে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবে ঘোষণা সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সুতরাং স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য তিনি ঐতিহাসিক মর্যাদার দাবিদার। তিনি তার জীবদ্দশায় কোনোদিনই বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে কোনো কথা বা কটূক্তি করেননি। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু যখন তাকে সেনাবাহিনী প্রধানের আসনে না বসিয়ে উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন, তখন তিনি আনন্দচিত্তে সেটি মেনে নিয়ে চাকরি করতে থাকেন।
কোনো রকম প্রতিবাদ করেননি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ১০ দিন পর তাকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। আনুমানিক এর ৯ সপ্তাহ পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব বড় রকমের দুটি দুর্যোগ ঘটে যায়। একটি ৩ নভেম্বরের বিদ্রোহ এবং সেই সঙ্গে জেলখানায় ৪ নেতার হত্যাকাণ্ড। আরেকটি ৭ নভেম্বরে সিপাহি-জনতার বিপ্লব। সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জনসাধারণ, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বাবস্থাতেই একজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এরও অনেক পরে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম অক্ষুণœ রাখেন। তিনি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সাং¯ৃ‹তিক আদান-প্রদান ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের নিমিত্তে ‘সার্ক’ গঠন করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
ভালো-মন্দ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ কর্মকাণ্ড নিয়েই মানুষের তথা সব নেতার জীবন। জর্জ ওয়াশিংটন, নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ কেউই এই মানবীয় ভুলের ঊর্ধ্বে নন। আমি যে বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছি সেটি হচ্ছে, সম্প্রতি হঠাৎ করেই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে অপবাদ দেয়া, কটূক্তি করা, হেয়প্রতিপন্ন করা, অরুচিপূর্ণ বিশেষণ ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। দুঃখজনক হল, যারা এ ধরনের কটূক্তি বা বাজে বিশেষণ ব্যবহার করছেন তারা সমাজের নামি-দামি, অভিজাত, ক্ষমতাসীন অংশের ব্যক্তি। আরনউড ভেন ডোর্নের মতো আমিও এই নামি-দামি ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই- অতীত ঘাঁটুন, ইতিহাস পড়ুন এবং সঠিক উপলব্ধিতে আসুন। কখন, কী কারণে বঙ্গবন্ধু কী করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানইবা কী করেছিলেন- এসবের সঠিক ইতিহাস জেনে মন্তব্য করুন।
এবার হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গে আসি। হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটির প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসা। এ সংগঠনের প্রাণপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালক বা মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফী সাহেবকে। আল্লামা আহমদ শফী ওই মাদ্রাসায় ৪০ বছরের অধিককাল যাবৎ আছেন। আমার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার ওই একই স্থানে। বিশ্ববিখ্যাত নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাড়িও হাটহাজারী থানায়। হাটহাজারীর একজন বাসিন্দা হিসেবে এ এলাকা সম্পর্কে আমার অধিক ধারণা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওই এলাকাতে মুসলমানদের দুটি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর একটি কওমি মাদ্রাসা এবং অপরটি হচ্ছে সরকার কর্তৃক পরিচালিত আলিয়া মাদ্রাসা। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আন্দোলনকে বলা হয় ওহাবি আন্দোলন। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাভিত্তিক আন্দোলনকে বলা হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বা সুন্নি আন্দোলন। এর বেশি ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। হাটহাজারী থানায় বা চট্টগ্রামে সরকারি মাদ্রাসার অনুসারীগণ বা সুন্নিগণ এবং কওমি মাদ্রাসার ওহাবিগণ কেউই এমন কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নেই যে, একে অপরকে সম্পূর্ণ অবহেলা করবে। তাদের মধ্যে মৌখিক বিতর্ক থাকলেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছেন। বিগত চার দশক যাবৎ এ চিত্রই আমি পর্যবেক্ষণ করে আসছি।
হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা যে দাবি দিয়েছে, আমি তার পক্ষে-বিপক্ষে কিছুই বলছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই ১৩ দফার বেশ কিছু বিষয়কে অধিক সম্মান করি। দেশের সব নাগরিক হেফাজতের সব দফাকেই সম্মান করবেন, এমন আশা করাটা অবাস্তব। কিন্তু কেউ সম্মান করুক বা না করুক, প্রথমেই সে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর গভীরে প্রবেশ করতে হবে, সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না জেনে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল ও সাংস্কৃতিক মহলের সম্মানিত ব্যক্তিদের এবং সম্মানিত নারী নেত্রীদের প্রতি আমার আবেদন- আগে বিষয়টি সম্পর্কে জানুন, উপলব্ধি করুন এবং অতঃপর মন্তব্য করুন। ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’ চিৎকার শুনে নিজের কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে ছুটবেন না।
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবি প্রসঙ্গে চার পৃষ্ঠার ব্যাখ্যা প্রচার করেছে। নিজের নাম বলাই যেখানে বিপজ্জনক, সেখানে ১৩ দফার ব্যাখ্যা প্রচার করা নিশ্চিতভাবেই কোনো সহজ কাজ নয়। এটুকু বললাম এজন্য যে, আমরা প্রত্যেকেই যদি মনে করি, আমি দ্বীন-ইসলামের অনুসারী, তাহলে আমাকে আমার ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। আমি যদি খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হই, তাহলে আমাকে খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। সুতরাং প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারে, তাহলে সমাজে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, হিংসা-হানাহানি, ঘৃণা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। এ কথাগুলো বলার কারণ হল, সদ্য সমাপ্ত চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে, হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন করতেন কী করতেন না, সেটা একটি উপলক্ষ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গভীর রাতে নিদ্রারত বা নামাজরত অথবা জিকিররত হাজার হাজার মানুষের ওপর মানবীয় ও যান্ত্রিক নির্মম আক্রমণের ফলে যে হত্যাযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে সরকারের নির্দেশে, এ বিষয়টিও একটি উপলক্ষ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। যাই হোক, বললেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়ে যাবে না। কেউ না কেউ একজন ব্যক্তিকে অত্যাচার করতে করতে গভীর কোমায় নিয়ে যেতে পারেন। সেই কোমা থেকে মহান আল্লাহপাক ওই ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে আনতে পারেন। যেমন সাভার ট্রাজেডির ঘটনায় ধ্বংস্তূপের মধ্যে রেশমা নামের একজন মেয়ে দীর্ঘ ১৭ দিন বেঁচেছিলেন। যেটি কল্পনাতীত। তাই মানুষ রক্ত মাংসের শরীর নিয়ে যদি বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে তার সঙ্গে বিশ্বাস তো বেঁচে থাকবেই। সেই বিশ্বাসটি ধর্মীয় কিংবা সাংস্কৃতিক যাই হোক না কেন।
আমি বিশ্বাস করি, আমাদের চিন্তার জগতে ও রাজনৈতিক জগতে পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই পরিবর্তনের জন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করে যেতে হবে। পুরনোকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা যেমন অনুচিত, তেমনি পুরনোকে আঁকড়ে থাকাও কাম্য নয়। পুরনোর মৌলিক অংশটুকুই আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং বাকি অংশকে পরিবর্তন করতে হবে। তবে দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে পুরনো ও নতুন বলে কিছু নেই। কারণ, এর মৌলিক আদেশগুলো মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত এবং তাঁর প্রিয়তম বন্ধু মহানবী (সা.) কর্তৃক ব্যাখ্যাকৃত। মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমগুলো এবং মহানবীর (সা.) শিক্ষাগুলো তিনটি কালের সঙ্গে একাত্ম যথা- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। পৃথিবীর মাটির উপর দণ্ডায়মান বা মাটি থেকে কয়েকশ’ মাইল উপর পর্যন্ত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলয়ের ভেতরে প্রযোজ্য সময়ের জ্ঞান বা সময়ের হিসাব মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশগুলো এবং মহানবীর (সা.) শিক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
পুনশ্চ : কলামটি লেখা শুরু করেছিলাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আগে, লেখা শেষ করলাম নির্বাচনের পরে। তাই মিশ্র অনুভূতি আছে। এ প্রসঙ্গে আরেকদিন লিখব ইনশাআল্লাহ।