ব্যান্ডেজ ও বই

পিন্টু কাগজ কুড়ায় । মা বাবা কেউ নেই । কখনও ছিল কিনা তাও মনে নেই । ১১ বছর বয়সের এ জীবনে মায়ের মমতা নিয়ে কখনও কেউ হাত বাড়িয়ে দেয় নাই ওর দিকে । আত্মীয় স্বজন বলতে রেল লাইনের পাশে ওর সম বয়সী কয়েক জন । ওদের সাথে মিলে মিশে হাসি আনন্দে ওর জীবন কেটে যাচ্ছে ।

প্রতিদিনের মত আজও কাগজ কুড়াতে বেড়িয়েছে পিন্টু । হাসপাতালের পাশের ডাস্টবিনে মূল্যবান কিছু পাওয়া আশায় গভীর মনোযোগে ময়লা হাতড়ে বেড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে এখনে ভাল কিছু জিনিস পাওয়া যায় যা বিক্রি করে সব বন্ধুরা মিলে মজার কিছু খেয়ে আনন্দেই একটি দিন কাটে । ওদের বন্ধুদের মাঝে বেশ মিল । সবাই সবার সুখে দুখে কাছাকাছি থাকে ।

ময়লার মাঝে পিন্টু হঠাৎ সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি জিনিষ খুঁজে পায় । বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখে সেটি । জিনিষটি কি প্রথমে বুঝতে না পারলেও চোখে লাগিয়ে পাশের দোকানের থাই গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা একটা চোখের ব্যান্ডেজ । কোন চোখ অপারেশনের রোগীর চোখ থেকে খোলার পর ফেলে দেয়া হয়েছে । ব্যান্ডেজটা চোখে লাগিয়ে বেশ মজা পায় পিন্টু । আগে দু’চোখে দেখত আর এখন এক চোখে দেখে । ব্যান্ডেজটা চোখে লাগিয়ে ফুটপাতে বসে নিজের আনন্দ লুটছিল পিন্টু । একজন পথচারী ওর চোখে ব্যান্ডেজ লাগানো দেখে দু টাকা ওর হাতে দিতেই, প্রথম অবাক হলেও ব্যাপারটি বুঝতে তার দেরি হয়নাই! ভাল একটি টাকা রোজগারের পথ পেয়ে গেল সে। মনের আনন্দে ভিক্ষা করতে থাকে।

আজ বেশ ভাল ইনকাম হয়েছে । তাই সবার জন্য রাস্তার পাশ থেকে কমদামে নষ্ট কমলার মাঝ থেকে বেছে একহালি কমলা কিনে রওনা হয় । যাবার পথে দেখতে পায় পাশে এক দোকানে একলোক তার বাচ্চার জন্য রঙ্গিন ছবি ওয়ালা একটি বই কিনেছে । বই দেখে পিন্টুরও কেনার ইচ্ছা জাগে । পড়তে না পারলেও সব বন্ধুরা মিলে ছবি গুলো দেখে মজা করা যাবে ভেবে মনে মনে পুলকিত হয় । কিন্তু কাছে গিয়ে দেখে দোকানদার ক্রেতার কাছে ৫০ টাকা দাম চাচ্ছে । পকেটে টাকা না থাকায় মন খারাপ করে চলে যায় পিন্টু ।

গতকালের মত আজও ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ভিক্ষা করে অনেক টাকা পেয়েছে পিন্টু । এখন বই কিনতে এসেছে । আসার পথে ব্যান্ডেজটা ফেলে দিয়ে এসেছে । ওটার এখন আর দরকার নেই ওর । দোকানদারের কাছে বইয়ের দাম জানতে চাইলে ধমক খেয়ে পাশে দাড়ায় । দোকানদার ওকে ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করছে না তাই সুযোগ বুঝে বইটি হাতে নিয়ে দোকানদারের দিকে টাকা ছুড়ে ফেলে এক দৌড়ে চলে আসে বন্ধুদের আড্ডায় । সবাই ওর হাতে বইটি দেখে বেশ আগ্রহের সাথে দেখতে চায় । মাজার মাজার সব ছবি দেখে আকাশের চাঁদ হাতে পাবার আনন্দে মেতে ওঠে সবাই । কার আগে কে দেখবে এই প্রতিযোগিতায় নেমে কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে ছিঁড়ে যায় শখের বইটি । সবাই সজল চোখে একে অপরের দিকে তাকায়ে থাকে, মুখে কোন কথা নেই যেন এই মাত্র ওদের পৃথিবী থেকে কেঁড়ে নেয়া হয়েছে কোলাহল, কলরব, আর কথামালা ।

Loading


Comments

ব্যান্ডেজ ও বই — 10 Comments

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *