তবুও ভাল লাগছে…

গত তিন বছরেরও বেশি সময়ে দেশ বিদেশে মহাজোট সরকারের কল্যান কাজে তেমন কোন অবদান নেই বললেই চলে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেপরোয়া মনোভাব আর দলীয় ক্যাডারদের ‘ধরো মারো খাও’ রাজনীতির মাধ্যমে সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব ঠিকঠিক কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে। দেশে আইনের শাসনের অভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বেশ কিছুদিন আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান নৈরাজ্য ও অপশাসনে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছিলনে, ‘দেশ চালাচ্ছে বাজিকরেরা’। বর্তমান দেশে কোন সুস্থ সরকার আছে কিনা যে কোন বিবেকবান মানুষের মনে এমন প্রশ্নের উদ্রেক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এখানে না আছে মানুষের রুটি রুজির নিশ্চয়তা না আছে কারও জীবনের নিরাপত্তা।

বেচে থাকার বাসনা আর কজনে করতে পারছে, স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরন করতে পারাটাও এখন মস্তবড় পাওয়া। রাস্তা-ঘাটের যে বেহাল দশা, গাড়ি-ঘোড়ার মাধ্যমে তো বটেই পায়ে হেটে চলাচল করাটাও অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান হারাচ্ছে শত শত মানুষ। অনেক দিনের কষ্ট সাধনার হাজারো রঙ্গিন স্বপ্ন মুহূর্তেই পর্যবসিত হচ্ছে দুঃস্বপ্নে। আবুল পরিবর্তন হয়ে ওবায়দুলের ভাগ্য খুলেছে, কিন্তু কপাল পোড়া জনগণের দুর্দশা কিছুতেই কাটছে না। কি স্থলে কি জলে, কোথাও নিরাপদ নয় সাধারন মানুষ। নৌ পথের অবস্থা অতীব ভয়ঙ্কর। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নয়, মেঘনা উপকূলবাসীর নিকট লঞ্চ নামক নৌযান এখন ভয়াবহ মরন ফাদ। কয়েক বছর ধরে একের পর এক ঘটে চলেছে লঞ্চ ডুবীর ঘটনা। কোন রকম আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে লঞ্চ মালিকেরা অস্বাভাবিকভাবে ধারনক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে চললেও সরকার এ সকল ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার।

রাস্তা-ঘাটে মৃত্য নিয়ে আর কেউ হা-হুতাশ করে না, নিজের শয়নকক্ষেও কেউ এখন নিরাপদ নয়। এর পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল পিলখানা থেকেই যার সর্বশেষ সংযোজন সাগর রুনী।। অফিস, বাসা এমনকি বাথরুমে ঢুকে নির্বিচারে অফিসার নিধনের সেই সব নির্মম চিত্রগুলোকে শুধু আদিম বর্বরতার সাথেই তুলনা করা যায়। আর সাগর-রুনীর হত্যাকান্ড সকল অসভ্যতাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের মত আম জনতার কথা ভাববার সময় কোথায়। ইতিহাস সাক্ষী দেয় গত তিন দশকে বাংলাদেশে কোন সরকারই সাধারন জনতার জীবনকে মুল্য দেয় নি। বরং এগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার। আর এখন সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনীর যে কর্মকান্ড তা দেখলে পাক হানাদার বাহিনীও লজ্জা পেত। যান-বাহন, বাসা-বাড়ি, হোস্টেল এমনকি পরীক্ষার হল থেকে ধরে এনে দেদার্সে হতাহত করা হচ্ছে নিরপরাধ মানুষদের। প্রকাশ্যে দিবালোকে তাদের দেশী-বিদেশী অস্ত্রের মহড়া জাতির জন্য বিরাট অশনিসংকেত।

দ্রব্য-মূল্যের উর্ধ্বগতিতে অতিষ্ট সাধারন জনগন। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে চোরাকারবারীদের ইচ্ছে অনিচ্ছার উপর। দ্রব্য-মুল্যের লাগাম টেনে ধরতে কোন পদক্ষেপই নেই সরকারের। তার সাথে অনেকে জীবিকা নির্বাহের উপায় হারিয়ে হত বিহব্বল। জীবনে একটু পরিবর্তনের আশায় যারা সহায়-সম্বল বিক্রি, ধার-দেনা করে সরকারের আহবানে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিল; শেষ সম্বলটুকুতো তারা হারিয়েছেই, হারিয়েছে প্রতিবাদের ভাষাও। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশ বার্তা অনেকেকে প্ররোচিত করছে আত্মহত্যার দিকে। পুরো দেশটাই পরিনত হয়েছে একটা মৃত্যুপুরীতে। দেশের ভেতর খুনী, ধর্ষক, লুটেরাদের জয়জয়কার; সীমান্তে বিএসএফের মরন ছোবল। পালাবারও কোন পথা আর অবশিষ্ট নেই। দেশের মানুষের কাছে ‘সুখ’ কথাটি এখন শুধুই স্বপ্ন। নিত্যক্ষনের ‘নেই নেই’ হাহাকার রব আর আপনজন হারানোর ক্রন্দন রোল প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিটি প্রান্তরে। বিভ্রান্ত, দিশেহারা সরকার দেশকে অচল করে দিয়ে নিজেরাই আঞ্জাম দিচ্ছে বিরোধী দলের কার্যক্রম।

কত কয়েক দিনে সমগ্র দেশে এক রকম অস্থিরতা বিরাজ করছে। মূলত বিরোধী দলের ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচীকে ঘিরে সরকারের কয়েকটি অগনতান্ত্রিক এবং আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের জেরেই এ অস্থিরতা। বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর বিপরীতে সরকারী দলের লগি-বৈঠা আর অস্ত্রের মহড়া জনসাধারনকে নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে। এত কিছু পরও একটি সংবাদ সকলের জন্য বিরাট তৃপ্তি এনে দিয়েছে। মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার দফারফার খবরটি ক্ষনিকের জন্য হলেও সকল দুঃখ-বেদনাকে ছাপিয়ে গেছে। জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতের (International Tribunal for the Law of the Sea) রায় অনুযায়ী উপকূল থেকে ২০০ নটিকাল মাইলের ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এর কর্তৃত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন দিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গোপসাগরের এ অঞ্চলটির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বেশ ভাল লাগছে। আগামীতে ভারতের সাথে ন্যায়ভিত্তিক সমুদ্রসীমা নির্ধারনের ব্যাপরেও আশা পোষন করছি।

Loading

About মিনহাজ আল হেলাল

ছুটে চলেছি শন্তির সন্ধানে দিক দিগন্তে, খুজে চলেছি মানবতা পথ থেকে পথে..................... হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড

Comments

তবুও ভাল লাগছে… — 2 Comments

  1. সময়োপযোগী অনুভূতি, যোগ্যে নেতা না আসা পর্যন্ত আমরা এই ভাবেই থাকবো ।

  2. আপনি ঠিক বলেছেন। দেশের যে অবস্থা সে দিকে তাকালে মনে হবে এই দেশটি ২টি দলের ইচ্ছা অনিচ্ছা পূরণের জন্য সরকার । এক বার বিএনপি একবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেও আসলে ক্ষমতায় থাকে এক শ্রেনীর এবং এক চিন্তা চেতনার লোক। শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভোট ভাগাতে একদল ইসলামের পক্ষে কথা বলে অন্যদল বলে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। আসলে যারা ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেন তারা যেমন চান না এই দেশে কোরআন সুন্নাহ নিয়ম নীতিতে চলুক ঠিক তেমন করে যারা ধর্মের পক্ষে বলে বেড়ান তারাও চান না ইসলাম কায়েম হোক।
    কারণ উভয় দলের নেতা কর্মী এক স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে থেকে বিদ্যা অর্জন করেছেন আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তো প্রাচাত্যের অন্ধ অনুকরণ করতে শিক্ষা দিয়ে থাকে। যারা শিশুকাল থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে এই ধরণের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠেন তারা যেমন কখনও ইসলামী আইনের বাস্তবান চাইতে পারেনা। তেমন করে সমাজতন্ত্রও কায়েম করতে চাইতে পারেনা। এমন কি তাদের মত দল দিয়ে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভয় নয়।
    আমাদের জন্য এখন আবার দরকার হয়ে পড়েছে মুজিব জিয়ার মত ব্যক্তি স্বার্থে লোভি নয় এমন নেতার। নতুন নেতা না আসা পর্যন্ত আমরা এই ভাবেই অন্ধকার যুগের দিকে ধাবিত হতেই থাকব।
    মিনহাজ হেলাল সাহেব আপনার মূল্যবান লেখার জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *