১/১১’র কুশীলবদের বিচার করলেন না?

ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকার রম্য সংখ্যায় গত সোমবার ‘চলতি রস’-এ একটি কার্টুন ছাপা হয়েছে। তাতে দুই বন্ধুর একজন বলছে, ‘কি রে, ফেসবুক খুলে কী এত ভাবছিস?’ অপর বন্ধুটি বলল, ‘আর বলিস না, মাথায় এত ইস্যু ঘুরছে, কোনটা নিয়ে যে স্ট্যাটাস দেবো, সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’ প্রথম বন্ধুটির মাথায় যেসব ইস্যু ঘুরছে, সেগুলো হলো সহিংসতা, গোলাগুলি, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, হ্যাকার, গভর্নরের পদত্যাগ, ইশ মাত্র দুইটা রান, তনু হত্যার বিচার চাই, বাঁচাও সুন্দরবন প্রভৃতি। আসলেই তো, সমাজে ইস্যুর কোনো শেষ নেই। শেষ নেই সরকারের কেলেঙ্কারিরও। সরকার নানা কেলেঙ্কারি করে একের পর এক ইস্যু তৈরি করছে। আবার সে ইস্যু ধামাচাপা দিতে সামনে আনছে নতুন আরেকটা ইস্যু। একটি ইস্যুতে জনগণ শোরগোল তোলামাত্র আরেক ইস্যু দিয়ে আগেরটাকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে। এ দিক থেকে সরকারের দক্ষতার প্রশংসাই করতে হয়। কারণ, আর কিছু পারুক আর না পারুক, পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি, নির্যাতন-নিপীড়ন আর হুজুগ তোলার ব্যাপারে তারা দারুণ ওস্তাদ। ফলে একটি ইস্যুতে সরকারের যখন লা-জবাব অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, তখনই তারা জনগণের সামনে নতুন আরেকটা ইস্যু এনে তাদের দৃষ্টি সে দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
ক’দিন আগেও দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত ইস্যু ছিল দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা। সে চুরির ঘটনা জানতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তারা প্রকাশিত খবর মোতাবেক, এ ব্যাপারে নীরব থাকেন। তাদের নাকি কেউ এমন যুক্তি দিয়েছিল যে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক চুপ করে থাকলে ওই ৮০০ কোটি টাকা সুড়সুড় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং, এ কথা গোপন করায় সে টাকার অনেকাংশই হাতছাড়া হয়ে যায়। আসলে চুরি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল আট হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এক চোরা ফাউন্ডেশন বানান ভুল লিখে ফেঁসে গেছে। আর তাই ৮০০ কোটি টাকা চুরি করেই চোরদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে টাকা রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেনা পরিশোধ করে থাকে। আজ পর্যন্ত কারো টাকা এভাবে চুরি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে এখানে এই টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের একটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ঠাট্টা করে লিখেছে, ‘চোরদের উচিত এখন নিজেদের পাছায় লাথি মারা। কারণ একটি বানান ভুলের জন্য তাদের সাত হাজার কোটি টাকা হাতছাড়া হয়ে গেছে। এই টাকা চুরির হোতা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকেও। সরকার তাদের আদর করে পুষে রেখে যেন বাঙ্গালদের হাইকোর্ট দেখাচ্ছে। দৌড়াচ্ছে ফিলিপিন্সের এক জুয়াড়ির পেছনে। বলছে, ‘টাকা চুরির হোতা’ বলে কথিত ওই জুয়াড়ি নাকি কিছু টাকা ফেরত দিতে পারেন। কিন্তু অধরাই থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আর তাদের পেছনের প্রভাবশালীরা।
জনগণ মনে করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির ইস্যুতে সরকার যখন আর কোনো জবাব দিতে পারছিল না, তখন অপহরণ করা হলো আইটি বিশেষজ্ঞ জোহাকে। এই জোহাকে নিয়েই র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তে নেমেছিল। তিনি তাদের প্রভূত সহায়তাও করেন। জোহার পরিবার যখন তার অপহরণ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায়, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন ধরনের হেঁয়ালিপূর্ণ কথাবার্তা বলতে শুরু করলেন। বললেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাকে আটক করে থাকতে পারে। তবে তাকে ফিরে পেতে পরিবারকে ‘ধৈর্য ধরতে হবে’। সপ্তাহখানেক পর তাকে বাসায় দিয়ে যায় ডিবির লোকেরাই। তারা জানায়, জোহা নাকি এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে উ™£ান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এর পর থেকে জোহা কার্যত আত্মগোপনে আছেন। এর মধ্যে এলো ক্রিকেটার তাসকিন ইস্যু। তাকে কেন পক্ষপাতমূলকভাবে ভারতের স্বার্থে আইসিসি টি-২০ থেকে বাদ দিলো, তা নিয়ে আমরা কেবল চোখের পানি ফেললাম; জোরাল ভাষায় প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারলাম না। এখন এসেছে কুমিল্লার সেনানিবাসে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ ও হত্যা। সেনানিবাসের মতো একটি সংরক্ষিত এলাকায় এ রকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত দুই সপ্তাহেও কেউ আটক হয়নি। বরং সবাই দেখছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন কাণ্ড করছে, যাতে এই হত্যাকাণ্ডের কোনো আলামত না পাওয়া যায়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হয়েছে। কবর থেকে তনুর লাশ ফের ময়নাতদন্তের জন্য তোলা হয়েছে। তাহলে আগের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কি বানোয়াট মিথ্যা কথা লিখে দেয়া হয়েছিল? তনুর বাবা ও পরিবার দেখেছে, ওর মাথা থেঁতলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আগের ময়নাতদন্তকারী তা রিপোর্টে উল্লেখ করেননি। এখন বলছেন, তার কথা বলায় সীমাবদ্ধতা আছে। তনুর বাবা-মা, ভাই-বোনকে আলাদা আলাদাভাবে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে ভোররাত পর্যন্ত অসংলগ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এমনকি এ কথাও বলা হয়েছে, তনুর বয়স ১৯, তাকে বিয়ে দেননি কেন? ফলে নানা সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। তবে কি এ ঘটনার সাথে এমন কেউ জড়িত, সরকার যাকে রক্ষা করতে চায়?
এর আগেও আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু আগে তোলা সরকারের আরেকটি ইস্যু এরই মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। তা হলো, ১/১১-এর কুশীলবদের বিচার। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার পত্রিকার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার সাংবাদিক জীবনে সবচেয়ে বড় ভুলগুলো, তিনি ১/১১-এর সময় ডিজিএফআইয়ের পাঠানো রিপোর্ট যাচাই না করেই ছেপেছিলেন। এই স্বীকারোক্তি সরল। শুধু মাহফুজ আনাম নন, আরো অনেক সম্পাদকই ডিজিএফআইয়ের দেয়া এই কাহিনীগুলো রসিয়ে রসিয়ে ছেপেছেন। তাদের অনেকে এখন টিভিতে সরকারের গুণকীর্তন করায় ব্যস্ত। কিন্তু সরকার তার সব স্বৈরশক্তি নিয়ে শুধু মাহফুজ আনামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল কেন? সে কি শুধু তার স্বীকারোক্তির জন্য? কিন্তু ডিজিএফআইর পাঠানো এসব কাহিনী ছাপতে তখনই অস্বীকার করে প্রতিবাদ করেছিলেন নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির। সে প্রশ্ন ছিল আদর্শিক। আসলে মাহফুজ আনামদের বোধকরি একটি শিক্ষা দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু বিএনপিকে উৎখাতের জন্য মাহফুজ আনামদের যে ‘জেহাদ’ ছিল, সে কাজটা বোধকরি সরকারের দৃষ্টিতে খুব ভালো কাজই হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় বলেছেন, তার মাকে জেল খাটানোর জন্য মাহফুজ আনামই দায়ী। অতএব তার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করা উচিত। বেগম খালেদা জিয়াকে জেল খাটানোর জন্য কে দায়ী? জয় কিন্তু সে কথা বলেননি।
তার চেয়েও হাস্যকর ব্যাপার হলো, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তখন একযোগে হইচই করে উঠলেন এই বলে যে, ‘অসাংবিধানিক সরকার’কে ক্ষমতায় বসাতে মাহফুজ আনাম ষড়যন্ত্র করেছেন আর ‘জীবনভর তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে কাজ করে গেছেন।’ তাই সারা দেশে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে প্রায় আশিটি ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ ও ‘মানহানি’র মামলা দায়ের হয়ে গেল। কিন্তু এর একটি মামলাও শেখ হাসিনা বা তার ছেলে জয় দায়ের করেননি। দায়ের করেছেন তার দলের লোকেরা। মান গেল আমার, মামলা করল যদু মধু। সারা দুনিয়ার গণমাধ্যমসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। আবার এ নিয়ে অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বহীন জাতীয় সংসদেও আলোচনা হলো। সেখানে সদস্যরা বললেন, ১/১১-এর ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করে এর কুশীলবদের বিচার করতে হবে। তারা আরো বলেন, ২০০৭-০৮ সালের মইনউদ্দিন আহমেদের সেনাসমর্থিত সরকার রাজনীতিকদের ওপর যে নির্যাতন করেছে, এর পেছনে কারা ছিল, তাদেরও খুঁজে বের করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই সরকারের সাত বছরেও ১/১১-এর কুশীলবদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সংসদে বললেও কমিশন গঠনের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
এ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি তাদের বিচার করতেই চান, তবে এক-এগারোর কুশলীবদের গ্রেফতার করে তার সদিচ্ছা প্রমাণ করুন। তারা এখনো বাইরে থাকে কিভাবে? তাদের কেন জেলে নেয়া হচ্ছে না suivez? তিনি বলেন, ১/১১-এর অসাংবিধানিক সরকারের হোতাদের মধ্যে লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধুরী তো বাংলাদেশেই আছেন। রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো তো তিনিই দায়ের করেছিলেন। সে সময় ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন মে. জেনারেল রুমিও (সৈয়দ ফাতেমী আহমদ রুমি) দেশে আছেন। তবুও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? উপরন্তু লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে ‘এক-এগারো’ ঘটানোর পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার বারবার অস্ট্রেলিয়ায় হাইকমিশনারের পদে এক্সটেনশন দিয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, তিনি ১১ মাস জেলে থেকে বেরিয়েই বিদেশে চলে যান, ১/১১ সরকারের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু ‘আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। তাদের কোনো অসঙ্গত প্রস্তাবের কাছে মাথা নত করিনি। দেশ ত্যাগ করিনি। আমি এক বছর আট দিন জেলে ছিলাম।’ কিন্তু শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এক-এগারোর সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। অতি উল্লাসে তিনি দলবল নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে একটি কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে শেখ হাসিনা চার লাখ ১১ হাজার ডলার ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে মামলা করেছিল তারাই। তারা বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির মামলা দায়ের এবং তাদের গ্রেফতার করে।
সে সময় ডিজিএফআই শুধু মামলা করে রাজনীতিকদের হয়রানি করেছে, তাই নয়। তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সংস্কারবাদিতার নামে ভেঙে দেয়ারও চেষ্টা করেছে। তার পেছনেও ছিলেন ডিজিএফআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তারা খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও চালিয়েছেন। এর সাথে যোগ দিয়েছিল এক-এগারো সরকারের বশংবদ, শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ কমিশনও গঠন করেছিল এক-এগারোর সরকার। দুই বড় দল ভাঙার চেষ্টায় তারাও ছিল একেবারে মরিয়া। এই হীনমনাদের অনেকে এখন নানা ‘ফুটানির কথা’ বলে বেড়াচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ১/১১ সরকার বেগম জিয়া ও তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর সে ষড়যন্ত্রে শরিক হয়েছিল ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার’। তিনি বলেন, ডিজিএফআই কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার বারী ও ব্রিগেডিয়ার আমিন তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় এসব ‘দুর্নীতি’র খবর সরবরাহ করতেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদকের স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনা প্রশ্ন করেনÑ ‘কোথায় নির্ভীক সাংবাদিকতা? ব্রিগেডিয়ার আমিন ও ব্রিগেডিয়ার বারীর সাথে তার কিসের সম্পর্ক? তিনি কি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন? আর তাই তাদের সরবরাহ করা অভিযোগগুলো ছেপেছেন? ওই দুই সম্পাদক কি মাইনাস-টু ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন? কোনটা সত্যি? যদি আপনাদের সাহস থাকে, তবে স্বীকার করুন।’ কিন্তু এসব কথা তিনি শুধু মাহফুজ আনামকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রথম আলো পত্রিকার বা সম্পাদকের নামও নেননি। আবার সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, সাবজেলে আটক থাকার সময় শেখ হাসিনাকে ‘বিষ মেশানো’ খাবার দেয়া হতো। সেখানে যে মেয়েরা ডিউটি করত, তারা শেখ হাসিনাকে বলেছেন যে, ‘এ খাবার খাবেন না’। এ দিকে আবার প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ডা: সৈয়দ মোদাসছের আলী অভিযোগ করেছেন, ফখরুদ্দীন সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত ছিলেন। সে সময়ের আইজি প্রিজন এবং ডেপুটি আইজিও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার ছিলেন। এত সব অভিযোগ সত্ত্বেও কেন একটি কমিশন গঠন করে এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য কাউকে বিচারের আওতায় আনা হবে না? অভিযোগ সত্য হলে কেন তাদের আটক করে জেলে নেয়া হচ্ছে না? এটা কোটি টাকার প্রশ্ন।
মাহফুজ আনামের এক স্বীকারোক্তিতে আওয়ামী লীগাররা তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮০টি মামলা করতে পারলেন, কিন্তু শেখ হাসিনাকে যারা রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চাইল, তাকে জেলে পুরে রাখল, তাকে বিষ দিয়ে হত্যা করতে চাইল, তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত একটি মামলাও কেউ দায়ের করলেন না কেন? আরো মজার ব্যাপার হলো, সরকারি দলের একশ্রেণীর লোক, যেমন ওবায়দুল কাদের, ১/১১-এর কুশীলবদের বাদ দিয়ে এক-এগারোর জন্য দায়ী করছেন ‘সুশীলসমাজ’কে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, আসলে একটা হুজুগ তুলছে শাসকদল। কারণ, তারা এক-এগারোর সরকারের সাথে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিলের ভাষায়, ‘আঁতাতের নির্বাচনের’ মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন এবং জবরদস্তিমূলক এখন বিনা ভোটে ক্ষমতায় আছেন। আর ওই একটা ধুন তুলে কয়েক দিন শোরগোল করেছেন, যাতে জনগণ তাদের মৌলিক অধিকারের দাবি থেকে নতুন ইস্যু সৃষ্টি না করা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। ফলে এখন আর এক-এগারো কোনো ইস্যু হয়ে রইল না। সরকারের কেউ তা বলছেও না। কিন্তু আমরা বলি, যদি সৎ রাজনীতিক হয়ে থাকেন, যদি সৎ সাহস থাকে, তবে এক-এগারোর যে ক’জন কুশীলব এখনো দেশে আছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনুন।
কিন্তু তা বোধকরি কখনো হবে না। এখন ইস্যু বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির রহস্যময় ঘটনা এবং সোহাগী জাহান তনু হত্যা। ধারণা করি, সরকার শিগগিরই আমাদের আরো কোনো নতুন ইস্যু ‘উপহার’ দেবে শোরগোল করার জন্য। তবে ঘুঘু বারবার ধান খেয়ে চলে যেতে পারে না। কখনো-না-কখনো তাকে ফাঁদে পড়তেই হয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

পূর্ব প্রকাশিত: নয়া দিগন্ত

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *