হেফাজতে ইসলাম ও অরাজনৈতিক আন্দোলন

প্রথমেই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কওমি মাদরাসা এবং তার সম্মানিত মহাপরিচালকের সাথে। চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলা সদরে অবস্থিত এই বড় মাদরাসাটির নাম ‘আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম’। সংক্ষেপে এটাকে হাটহাজারী বড় মাদরাসা অথবা আরো সেেংপ হাটহাজারী মাদরাসা বলা হয়। কওমি মাদরাসায় জ্যেষ্ঠতম বা প্রধানতম শিক মহোদয়কে মুহতামিম বলা হয়। হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম মহোদয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাপরিচালক নামেও অভিহিত করা হয়। বর্তমান মহাপরিচালক হচ্ছেন চট্টগ্রাম অঞ্চল তো বটেই, সমগ্র বাংলাদেশে কওমি ধারায় শীর্ষতম ও অন্যতম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা মুফতি শাহ আহমদ শফী। এই মাদরাসাটি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শুধু চারজন ছাত্র নিয়ে। বর্তমানে সেখানে আট হাজার ছাত্র আছে, যার মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগই আবাসিক। কওমি মাদরাসার শিাধারায় প্রাইমারি স্তর থেকে শুরু করে মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর সমপর্যায় অর্থাৎ দাওরা স্তর পর্যন্ত এবং দাওরার পরও (শুধু মেধাবী আগ্রহীদের জন্য) আরো দুই বছরের গবেষণা স্তরে অধ্যয়নের সুযোগ এই মাদরাসায় বিদ্যমান। বর্তমানে এখানে ১০০ শিক আছেন, যাদের অনেকেই মুফতি। আল্লামা আহমদ শফী বাংলাদেশের একাধিক কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি তথা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (সংক্ষেপে, বেফাক) চেয়ারম্যানও। তিনি অন্য আরো অনেক মাদরাসার পৃষ্ঠপোষক হাটহাজারী উপজেলাতেই আরো বেশ কয়েকটি বড় কওমি মাদরাসা আছে। যেমন, আমার গ্রামের বাড়ির পাশেই বাথুয়া মাদরাসা। কওমি মাদরাসাগুলোতে বেশির ভাগ ছাত্রের বেতন দিতে হয় না এবং এই মাদরাসাগুলো জনগণের দান-অনুদানের ওপরই নির্ভর করে চলে, অর্থাৎ সরকারের কাছে ঋণী নয়।

আমার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে বলেই এই পরিচয় করাচ্ছি না এই কথাগুলো মুখ্য কারণ হচ্ছে আগামী ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের সর্বত্র থেকে ঢাকা অভিমুখে যে লংমার্চ হওয়ার কথা হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনের আহ্বানে, এর আমির বা প্রধান নেতা আল্লামা মুফতি শাহ আহমদ শফী। যার আহ্বানে এত বড় একটি আন্দোলন হচ্ছে তার সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা দেয়া সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার কর্তব্য বলে মনে করি। সুধী পাঠক লক্ষ করবেন, ওপরের অনুচ্ছেদে ‘কওমি ধারা’ বা ‘কওমি মাদরাসা’ বা ‘কওমি শিা’ ইত্যাদি শব্দযুগল ব্যবহার করেছি। তাহলে আমাকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, এগুলোর বিপরীতে বা সমক বা সম্পূরক অন্য কোনো শব্দযুগল আছে কি না। চট্টগ্রাম মহানগরে ষোলশহর এলাকায় একটি বড় মাদরাসা আছে, নাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া, সেেংপ জামেয়া আহমদিয়া। এর সম্মানিত অধ্যরে নাম হজরত মাওলানা জালাল উদ্দিন আল-কাদেরী, যিনি চট্টগ্রাম মহানগরের সর্ববৃহৎ মসজিদ জমিয়াতুল ফালাহর সম্মানিত খতিবও বটে। চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ-ওয়াজেদিয়া এলাকায় একটি বড় মাদরাসা আছে, যার নাম ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদরাসা, সেেংপ ওয়াজেদিয়া নামে পরিচিত। এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হজরত মাওলানা ওয়াজেদ আলী খান রহ:। পঁয়ষট্টি বছর আগে এই মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হজরত মাওলানা আতিকুল্লাহ খান রহ:। উভয়েই শিক হওয়া ছাড়াও আধ্যাত্মিক জগতের মহাপুরুষ ছিলেন। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার সাবেক পাঁচলাইশ থানার (বর্তমান বায়েজিদ থানার) বটতল এলাকায় অবস্থিত বিখ্যাত আহসানুল উলুম জামিয়া গউসিয়া আলিয়া মাদরাসার সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন হজরত আল্লামা কাজী নূরুল ইসলাম হাশেমী। তাঁকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলমান ‘ইমামে আহলে-সুন্নাত-ওয়াল জামায়াত’ পদবিতেও অভিহিত করেন। হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত তিনটি আলিয়া মাদরাসার নাম উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করছি; যথা ওয়াদুদিয়া মাদরাসা, ছিপাতলী আলিয়া মাদরাসা, লালিয়ারহাট হোসাইনিয়া সিনিয়র মাদরাসা এবং বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম মাদরাসা। জামেয়া আহমদিয়া, ওয়াজেদিয়া মাদরাসা, পাঁচলাইশ মাদরাসা কিংবা অন্য আলিয়া মাদরাসাগুলোতে বহু ছাত্র পড়েন। এই মাদরাসাগুলো সাধারণভাবে সরকারি বা আলিয়া মাদরাসা হিসেবে পরিচিত। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ সরকারের হাতে; মন্ত্রণালয় থেকে শিা অধিদফতরের আওতায় মাদরাসা শিা বোর্ডের মাধ্যমে। প্রয়োজনে কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটিও সংশ্লিষ্ট থাকে। আলিয়া মাদরাসাগুলো ছাত্রদের থেকে বেতন নেয় এবং দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদানও গ্রহণ করে থাকে। শিকদের মধ্যে কেউ কেউ শতভাগ বেতন আর কেউ কেউ আংশিক বেতন সরকার থেকে পান অর্থাৎ এমপিওভুক্ত হওয়ার সুবিধা পেয়ে থাকেন। সুধী পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন, লেখাপড়ার পদ্ধতি বা মাদরাসাগুলো পরিচালনার পদ্ধতিতে এই বিভাজন কেন? এ প্রসঙ্গে পুস্তক রচনা করাই ন্যায়সঙ্গত, কিন্তু এই মুহূর্তে পাঠকের বোঝার জন্য কিছু কথা বলা দরকার।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয় লাভের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা নামক প্রদেশ বা ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরবর্তী ১০০ বছরে তারা ভারতের বৃহদাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৫৭ সালে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ তথা সিপাহি বিদ্রোহ ঘটে যাওয়ার পর লন্ডন থেকে ভারত শাসনের জন্য প্রত্য পদপে নেয়া হয়। এই সময়ে ভারতের মুসলমানেরা শিাদীা, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে পিছিয়ে পড়েছিল। রাজভাষা বা সরকারি ভাষা হিসেবে মোগল আমল থেকে সুপরিচিত ফার্সি ভাষার বদলে ইংরেজি চালু হয়েছিল। এরূপ মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায়, নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের আগ্রহে, সরকারি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সাধারণভাবে এগুলোকে আলিয়া মাদরাসা বলা হতো। মাদরাসাগুলোতে ধর্মীয় শিার পাশাপাশি সাধারণ শিার কিছু অংশ সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত থাকত এবং আছে। এই প্রোপটে অন্য কিছু ধর্মীয় নেতা, শুধু ধর্মীয় শিা অনুসরণ ও আহরণের ল্েয ভিন্নমাত্রার মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ ধরনের মাদরাসার মধ্যে প্রথম এবং প্রধানতম মাদরাসাটির নাম দারুল উলুম দেওবন্দ। জায়গাটি বর্তমান ভারতের উত্তর-প্রদেশে অবস্থিত। দেওবন্দ মাদরাসার ধারায় বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো পরিচালিত। আলিয়া মাদরাসা ও কওমি মাদরাসা থেকে শিতি, আলেমদের মধ্যে তো বটেই, তাদের অনুসারীদেরও চিন্তা-চেতনার মধ্যে বিস্তর আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিকে। কওমি মাদরাসার ধারাকে সাধারণত কওমি বা খারেজি ধারা বা ওহাবি ধারা বলা হয়। আলিয়া মাদরাসার ধারাকে সাধারণত ‘সুন্নি’ ধারা বলা হয়। এই বিভাজনটি মুসলমানদের মধ্যে একমাত্র বিভাজন নয়। মাজহাব মোতাবেক সুন্নি মুসলমানেরা মোটামুটি চারটি মাজহাবে বিভক্ত; যথাÑ হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি; যদিও বাংলাদেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান হানাফি মাজহাবের অনুসারী। অর্থাৎ তারা ইমাম আবু হানিফা রহ: কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যাগুলোকে অনুসরণ করেন। যত প্রকারের বিভাজনই থাকুক না কেন, ঈমান দ্বীন ইসলামের স্তম্ভগুলো অনুসরণে কোনো বড় রকমের পার্থক্য নেই। মহানবী সা:-এর সুন্নত অনুসরণসহ এবং মহানবী সা:-এর প্রতি মহব্বত ও সম্মান প্রকাশ করা ইত্যাদি প্রসঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য আছে।

বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দলের নাম জামায়াতে ইসলামী। এই দলটির জন্ম ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে। পাকিস্তান আমলেও এই দলটি ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলটি রাজনৈতিভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। এই দলের মোট সদস্যদের চার ভাগের তিন ভাগেরও বেশি ১৯৭১ সালে হয় শিশু ছিলেন অথবা তার পরবর্তী সময়ে জন্ম, যার কারণে তাদের ব্যক্তিগত কোনো দায়বদ্ধতা ১৯৭১ সালের অপরাধগুলো প্রসঙ্গে আসে না। দলের ছাত্র সংগঠনের তরুণেরা অন্য যেকোনো ছাত্রসংগঠনের মতোই সাম্প্রতিকতম বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম। যা হোক, এই দলের ওই আমলের কিছুসংখ্যক সদস্য বা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বা ভারতের জামায়াতে ইসলামী একই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দার্শনিক বা ব্যাখ্যাকারী বা গুরুজনের দীায় দীতি হয়ে পথ চলছে। সেই দার্শনিক হলেন মাওলানা সৈয়দ আবুল আ’লা মওদূদী। তিনি পবিত্র কুরআনের একটি বিস্তারিত তাফসিরও রচনা করেছেন, যার নাম তাফহীমুল কোরআন। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ধর্মীয় রাজনীতির প্রোপটে তাকে বলা যেতে পারে ‘রাজনৈতিক ইসলাম বা পলিটিক্যাল ইসলামের প্রথম ভাষ্যকার’। পবিত্র কুরআনের তাফসির ছাড়াও মাওলানা মওদূদী ধর্মীয় বিষয়ে প্রচুর গ্রন্থ রচনা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সুন্নি সমাজ বা কওমি সমাজের মূল ধারার আলেম-ওলামা মাওলানা মওদূদী কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যার অনেকের সাথে কঠোরভাবে দ্বিমত পোষণ করেন। বাংলাদেশে বিপুল আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব আছেন, শ্রদ্ধেয় পীর-মাশায়েখ আছেন। বেশির ভাগ পীর-মাশায়েখ তথা আধ্যাত্মিক জগতের গুরুজনেরা জামায়াতে ইসলামীর অনেক ধর্মীয় তত্ত্ব ও ব্যাখ্যার সাথে কঠোরভাবে দ্বিমত পোষণ করে থাকেন। অতএব জামায়াতে ইসলামীর চিন্তা-চেতনাকেও সুন্নি বা কওমি ধারার মতো আরেকটি ধারা বলা যায়, যদিও তুলনায় অনেক ছোট। কিন্তু জামায়াতের বিরোধিতা করা এক জিনিস এবং দ্বীন ইসলামের বিরোধিতা সেরেক জিনিস।

বাংলাদেশে ধর্মনিরপে ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিহীন চেতনার রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বা যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য। বাংলাদেশের সব মুক্তিযোদ্ধাও দাবি করছেন এই বিচারের জন্য। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান শক্তি বিএনপিও ১৯৭১ সালের অপরাধগুলোর বিচারের প।ে তবে বিচারের মাত্রা, আঙ্গিক ও স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাঝে মতপার্থক্য আছে। সাম্প্রতিককালে এরূপ মানবতাবিরোধিতা অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল কয়েকজনের বিচারকার্য সম্পন্ন করে রায় দিয়েছেন। রায়ের সাথে কেউ একমত পোষণ হতে পারেন আবার কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু আবদুল কাদের মোল্লার প্রসঙ্গে রায় হওয়ার পর ঢাকা মহানগরে একটি প্রতিক্রিয়া ফুটে ওঠে। স্বেচ্ছায় হোক বা সরকারের আগ্রহে হোক বা কোনো মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় হোক, একদল তরুণ শাহবাগ মোড়ে মিলিত হয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। কিছু দিন পর আবিষ্কৃত হয়, যারা এই আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বা যারা আপাতদৃষ্টিতে প্রকাশ্য উদ্যোক্তা, তাদের মধ্যে অনেক এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকে পূর্ণভাবে নাস্তিক বা আধা-নাস্তিক অথবা ধর্মবিরোধী অথবা ধর্মবিদ্রƒপকারী। এ ধরনের তরুণেরা ভার্চুয়াল তথা ইন্টারনেটের জগতে ব্লগে লিখতেন। তাই তাদেরকে ব্লগার বলা হয়। এরূপ ধর্মবিরোধী বা নাস্তিকতা-আশ্রয়ী কিছু তরুণ ব্লগার তাদের লেখার মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বীন ইসলাম ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি বিদ্রƒপ বা কটূক্তি করেছেন এবং এই কাজ করতে গিয়ে সাঙ্ঘাতিক অশ্লীল ও অশোভন ভাষা ব্যবহার করেন। তাদের ভাষাগুলো এত অশ্লীল ও অশোভন ছিল যে, এই কলামে পুনরুক্তি করতে চাই না। ঢাকা তথা বাংলাদেশের দু-একটি প্রধান পত্রিকা এই তথ্যাটি প্রমাণসহ মানুষের সামনে উপস্থাপন করে ঘুমন্ত জাতিকে জাগ্রত করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পাদন করেছে। ধর্মপ্রিয় মানুষ মাত্রই ব্যথিত হয়ে ওঠে ও বিুব্ধ হয়ে ওঠে ধর্মের অবমাননায়। কারণ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরোধিতা করা এক এবং ধর্মের প্রতি বিদ্রƒপ করা আরেক বিষয়। এই পরিপ্েেরিত বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ব্লগারদের পরিচালিত শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি বিরূপ মনোভাব গ্রহণ করেছেন। এই পরিস্থিতি ও পরিবেশে শাহবাগ আন্দোলন তথা গণ-আন্দোলন মঞ্চ যুগপৎ দু’টি বিষয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম বিষয় : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সবার ফাঁসি দাবি এবং দ্বিতীয় বিষয় : ধর্মবিরোধিতা ও ধর্মের প্রতি বিদ্রƒপ। অতএব ধর্মবিরোধিতার এই প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, শাহবাগ তথা প্রজন্ম চত্বর তথা গণজাগরণ মঞ্চকে সরকার যারপরনাই পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলে অনুভূত হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলে শোনাছে, সরকারপন্থী ব্যবসায়ীরা এতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন বলে সবাই বলছে। অপরপে দ্বীন ইসলাম বিরোধিতার প্রতীক যে শাহবাগ, তার বিরুদ্ধে সরকার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয়নি দু-একটি লোক দেখানো পদপে ছাড়া। অতএব সাধারণ ঈমানদার মুসলমানগণ একত্রিত হয়েছেন মানসিকভাবে, চেতনার মধ্যে, সঙ্কল্পের মধ্যে। এই একতার নেতৃত্ব দিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম সংগঠক। হেফাজতে ইসলামের নেতারা স্পষ্টতই বলেছেন, তারা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, তাদের কোনো রাজনৈতিক ল্য নেই এবং তাদের আন্দোলন ঈমান আকিদা রার জন্য। তারা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের প্রসঙ্গে আলোচনা-সমালোচনা পরিহার করেছেন। তারা মনোনিবেশ করেছেন ঈমান, আকিদা রা করার জন্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার ল্েয। প্রশ্ন হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনটি ব্যাপক জনসমর্থনের দাবিদার কি না। আমার মন্তব্য হচ্ছে, অবশ্যই তারা ব্যাপক জনসমর্থনের দাবিদার। এই কলামের মাধ্যমে এর প্রতি আমার সমর্থন ব্যক্ত করছি।

প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল বা বুধবারে নয়া দিগন্ত পত্রিকায় আমার কলাম বের হয়। ৬ মার্চ ২০১৩ তারিখে যে কলাম লিখেছিলাম তার নাম ছিলÑ ‘রক্ত দিয়ে লেখা ইতিহাস ও উইপোকার কথা’। ১২ মার্চ লিখেছিলামÑ ‘অদৃশ্য তরুণ ও তারুণ্যের চেতনা’। উভয় কলামেই শাহবাগ নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের তরুণসমাজের একটি অংশ কিভাবে ধীরে ধীরে ধর্মবিরোধিতায় নেমেছে বা নাস্তিকতার পথে পা দিয়েছে ইত্যাদি আলোচনা করেছি। সময় এসেছে বাংলাদেশের সচেতন জনগণের (যাদের মনে ধর্মীয় অনুভূতি আছে) সবারই একটি চিন্তামূলক মঞ্চে একত্রিত হওয়ার। বাকস্বাধীনতার নামে দ্বীন ইসলামের মূলনীতি সম্বন্ধে এবং পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের প্রধানতম ব্যক্তিত্ব হজরত মুহাম্মদ সা:কে নিয়ে কটুবাক্য করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এই আন্দোলনে বা এই প্রচেষ্টায় আলেমসমাজ অগ্রণী ভূমিকা নেবেন, এটাই আমাদের কামনা। আশা করি, আলেমসমাজের মধ্যে বিভিন্ন কারণে যে মতপার্থক্য আছে সেটাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়ে এই একটি ইস্যুতে নিজ নিজ মঞ্চ থেকেই আন্দোলনে শরিক হওয়া যায় এভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায় বা জনগণের কাছে আবেদন রাখা যায়। সম্মানিত পীর-মাশায়েখের মুরিদ সন্তানগণ মহানবী সা:কে ভালোবাসেন। বারো আউলিয়ার দেশখ্যাত চট্টগ্রামে বা ৩৬০ আউলিয়ার দেশখ্যাত সিলেটে লাখ লাখ লোক মাজারভক্ত। খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও ঢাকা মহানগরেও আল্লাহর আউলিয়াদের মাজার আছে। তাদের মনে যে রাসূল-প্রেমের শিখা জ্বলন্ত, সেটা বলার কোনো অপো রাখে না। আমি (সাধারণ শিার মাধ্যমে শিতি হলেও) মনে করি, ধর্মীয় মূল্যবোধের চেতনাকে বে ধারণ করতেই হবে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও ধারণ করি। কিন্তু ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে, মুক্তিযুদ্ধ ও দ্বীন ইসলাম পরস্পরবিরোধী। অতএব, চিন্তার জগতে পথভ্রষ্ট তরুণসমাজকে সঠিক ও সৎ পথে ফেরত আনার জন্য প্রচেষ্টা চালাতেই হবে এবং পথভ্রষ্টদের মধ্যে যারা আগ্রাসী তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। সময় কারো জন্য বসে থাকবে না।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

Loading


Comments

হেফাজতে ইসলাম ও অরাজনৈতিক আন্দোলন — 1 Comment

  1. যেহেতু ৭১ মুক্তিযুদ্ধে আপনি সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন, তাই আপনার কাছে জানতে চাই,
    বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের বিচার চলছে ও সাজা হয়েছে-
    ১/ তারা কি নিরাপরাধ ছিলেন?
    ২/ ৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা জেনেও তার বিরুদ্ধে অস্থান না নেয়া কি কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে?
    ৩/ এই চুপ করে থাকার পেছনে কি তাদের কোন স্বার্থ ছিল?
    ৪/ যদি তারা কোনরূপ প্রতিবাদ করে থাকেন এবং তার পক্ষে কোন প্রমাণ আপনার জানা থাকলে জানাবেন প্লিজ।

    নিচের লিংকের লেখাটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানালে উপকৃত হব-
    http://www.somewhereinblog.net/blog/Mahfuzhappy/29521097
    [img]’মি. গোলাম আযম’- বৃদ্ধ বয়সে বিছানায় শুয়ে শহীদের স্বপ্নে বিভোর!!?[/img]

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *