সালাম ওয়ার্ল্ড নতুন আরেকটি সামাজিক নেটওয়ার্ক

ফেইস বুকের মত সালাম ওয়ার্ল্ড নামে আরেকটি সামাজিক নেটওয়ার্ক চালু হতে যাচ্ছে। সালাম ওয়ার্ল্ড নামের সামাজিক নেটওয়ার্ক মাধ্যমে বিশেষ করে মুসলিম তরুণ তরুণীরা দিয়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য যে কোনো প্রান্তে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি আর স্বাতন্ত্র্যবোধকে সমুন্নত রাখার সুযোগ পাবেন এই সালাম ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কে,যা ফেইস বুক বা অন্য কোনও সামাজিক নেটওয়াক ওয়েবসাইট থেকে পাননি। সালাম ওয়ার্ল্ড তুরস্ক ও রাশিয়ার কয়েকজন তারা ১৫ মিলিয়ন ডলার প্রথম বিনিয়োগ  করবেন এবং পৃথিবীর ১৬টি দেশে এর শাখা অফিস খোলার প্রাথমিক পরিকল্পনা। শুনা যাচ্ছে দু বৎসরে ৪০ মিলিয়নের অবকাঠামো তৈরিতে ও ব্যবসা বিস্তার করতে ব্যবহার করা হবে। মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রুশ ছাত্র জেহুন জাফর এধরনের সামাজিক নেটওয়ার্কে ভিন্ন ভাষাভাষী তরুণদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলার উদ্যোগ নেন। আর তা সম্ভব হচ্ছে ওয়েবসাইটে দেয়া ট্রান্সলেটের সাহায্যে।

অন্যান্য ওয়েবসাইটে যখন অপসংস্কৃতির ভয়াল ছোবলের আশঙ্কা থাকে তখন মুসলিম বিশ্বে সালাম ওয়ার্ল্ড শুধু যে স্বাতন্ত্র্যকে রক্ষা করছে তা নয় বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রাখছে মজবুত ভাবেই।

শুধু মালয়েশিয়ায় দুই কোটি নব্বই লাখ মানুষের সাতভাগ প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সঙ্গতকারীয়েই সালাম ওয়ার্ল্ড তাদের কাছে এক ভিন্ন মাত্রার সূচনা করবে।
এ কাফেলার সাথে যোগ হচ্ছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ছাড়াও বসনিয়া- হার্জেগোভিয়ানা, তুরস্ক, মিশর আর ইন্দোনেশিয়া।

সালাম ওয়ার্ল্ড আগামী নবেম্বরে পুরো বিশ্বের জন্যে মুক্তির এক দিশারী হয়ে আসছে।

প্রথমে এক নজরে দেখলে সালাম ওয়ার্ল্ডকে অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতই লাগে।

শান্তির রং সাদা আর দিগন্তে স্বপ্নের রং নীলের ক্যানভাসে উপস্থাপিত বিভিন্ন ফিচার, মন্তব্য, ছবি, ভিডিও ফেসবুকের সেই শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।

কিন্তু নিজের বিশ্বাস আর অস্তিত্বে যখন কোনও টান পড়ে না তখন সালাম ওয়ার্ল্ড মনে করিয়ে দেয় আপনি পরম নির্ভরতায় একে অপরের সাথে পবিত্র সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেন। কারণ পর্ণোগ্রাফি, মাদকাসক্ত বা জুয়ার নেশায় আপনার বিপর্যস্ত হবার কোনো আশঙ্কা নেই।

অন্য ওয়েবসাইটে যখন বিব্রত হতে হয়, একা কিংবা পরিবারের সদস্যদের মাঝে তখন এধরনের কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না সালাম ওয়ার্ল্ডে।

তবে মুসলমানদের এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগের প্রচেষ্টা যে নতুন তাও নয়। এর আগে ফিনল্যান্ড থেকে মুসলিম.কম কিংবা মিশরের ইখওয়ানবুক.কম যাত্রা শুরু করলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

তবে সমালোচকরা বলেন, এধরনের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট শুধু তাদের ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা বলে।

তাই তুরস্ক থেকে সালাম ওয়ার্ল্ড যাত্রা শুরু করলেও ভিন্নমতরা যোগ করতে বিভিন্ন দেশের তরুণ তরুণীদের পছন্দের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

হ্যাঁ এ কথা ঠিক যে, সালাম ওয়ার্ল্ডয়ের একটি লক্ষ্য মুসলমানদের ঐক্য ফিরিয়ে আনা। এজন্যে তিন স্তরের সাবধানতা অবলম্বন করেই তাকে আগাতে হচ্ছে।

ইসলামে ইজতেহাদকে অবলম্বন করেই হালে চিন্তা ও ভাবধারার যে পরিশুদ্ধি চলছে তা দেশ থেকে দেশান্তরে পার্থক্যের ভিত গড়ে তুলছে।

যেমন ধরা যাক ইন্দোনেশিয়ায় এক মুসলিম নারী হয়ত হিজাব না পড়েও সে সীমা লঙ্ঘন করছে না। কিন্তু সৌদি আরবের আরেক নারী হয়ত এভাবে ভাবতেও পারে না।

তবে এখনো বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সালাম ওয়ার্ল্ডকে কিভাবে বরণ করে নেবে।

এদিকে এ মাসের শুরুতে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আন্দোলনকারীরা ইন্টারনেট ব্লাকআউট ডে পালন করতে বাধ্য হন কারণ তাদের দাবি ছিল মুক্ত স্বাধীনভাবে অনলাইনে বক্তব্য দিতে যেয়ে যাতে তারা কোনও আইনগত মারপ্যাঁচে না পড়েন।

মালয়েশিয়ার বেশ কিছু তরুণ বলছেন, একটা পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে এমন কিছু তারা মেনে নিতে রাজি। কিন্তু এর উল্টো হলে তারা তা কেনই বা মেনে নেবেন।

আবার সিরিয়া কিংবা মিয়ানমারে যদি মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরা হয়, কিংবা রাজনৈতিক কারণে তা জানতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তাহলে বিপরীত ভাবনা ভাববেনই তারা।

অবশ্য ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে কেউ কেউ সালাম ওয়ার্ল্ডয়ের দরজায় কড়া নাড়ছেন তাও কিন্তু ঠিক।

তবে এ্যালেক্সা রেটিংএ সালাম ওয়ার্ল্ড এখনো পরীক্ষামূলক স্তর অতিক্রম করতে পারেনি।

হয়ত এখনো ফেসবুক অনেকের ভরসা কিন্তু বিকল্প সন্ধানের তাগিদ সার্বজনীন আর সে পিপাসা কখনো পুরোপুরি মিটে যাবার নয়।

দেড় বিলিয়ন মুসলিম দুনিয়ার সর্বত্র যেভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার কিয়দংশ যদি সালাম ওয়ার্ল্ডের মধ্যে একটা নতুন পরিচয় আর মেধার মনন গড়ে তুলতে পারে তাহলে এ নতুন উদ্যোগ হয়ত সাফল্যের নিশানা পেয়েও যেতে পারে।

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *