“সম্প্রীতি ও একতার দেশ”- ‘বাংলাদেশ’

বাংলাদেশের জনগণ ধর্মবিমুখ নয় বরং ধর্মপ্রাণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও এদেশের নাগরিক। কাজেই সকল নাগরিকের ধর্মীয় চেতনা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করাই রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া চাই।

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং মানবতা বিরোধী সকল অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার ব্যাপারে কোন দেশপ্রেমিক মাত্রই দ্বিমত থাকতে পারে না।

এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। কিন্তু এটি ইসলামি রাষ্ট্র নয়। আবার এটি ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ সেক্যুলার রাষ্ট্রও নয়। তবে কেউ কেউ সেদিকেই ঝুঁকছেন এবং হয়ত না জেনে বুঝেই ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) -কে তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য অবান্তর যুক্তি দেখাচ্ছেন।

তবে জেনে বুঝে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্মপ্রাণ জনতার দেশে ‘ইহবাদী মতবাদ’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা মোটেই সমীচীন নয়। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে সেটা আগেভাগেই পরিষ্কার করে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সহ সকল শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মানুষের অন্তরে আঘাত লাগতে পারে। ফলে ধর্মপ্রাণ ও ধর্মনিরপেক্ষবাদী মানুষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং এর পরিণাম কারো জন্য সুখকর নাও হতে পারে।

এবার “ধর্মনিরপেক্ষ” শব্দটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

ধর্মনিরপেক্ষ = Secular

Bangla Dictionary Meaning
‘secular’= ধর্মনিরপেক্ষ

Bangla Academy Dictionary Meaning: ‘secular’

উপরের অর্থ অনুসারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলতে এমন একটি ভূখণ্ডকে বোঝানো যেতে পারে যেখানে জনগণ তথা ভবিষ্যত প্রজন্ম ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতা বাদ দিয়ে স্রষ্টা-বিমুখ ইহজাগতিক মতবাদে অভ্যস্ত হতে বাধ্য হবে। এককথায় পার্থিব, ইহজাগতিক, জড়-জাগতিক, লোকায়ত আদর্শের অনুগামী ও অনুসারী রাষ্ট্রকেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলা যেতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি এরূপ রাষ্ট্র কায়েম করেছেন বা করতে বলেছেন?

না, কখনই না। এই বিশ্বনেতা ও বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনগণ আল্লাহর মনোনীত শ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সাঃ) -কে তাদের নেতা হিসেবে চয়ন করেছিলেন এবং মহান স্রষ্টা প্রেরিত নৈতিকতা ও শিক্ষাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন। সে রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণভাবে সকল ধর্মের অনুসারী মানুষের বসবাসের অধিকার ছিল। ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি মানবকল্যাণ মূলক ও নৈতিকতা সম্পন্ন পার্থিব সকল শিক্ষা অর্জনকেও উৎসাহিত করা হত। যেহেতু মহান স্রষ্টার নির্দেশীত পথ ও মতে সাজানো সেই রাষ্ট্রে মৌলিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক কোন কর্ম রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ছিল। তাই অন্য যে কোন মতবাদের মানুষই শুধু নয়, একজন মুসলিমও কোন অনৈতিক কিংবা অমানবিক কর্মের সাথে প্রকাশ্যে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে অবশ্যই বিচার ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হত। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এমনই একটি সার্বভৌম (Sovereign) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে সকল ধর্ম তথা সম্প্রদায়ের মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত ছিল।

সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কখনই ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রবক্তা কিংবা প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না।

আবার দেখা যায় কোন কোন দল ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সেন্টিমেন্টকে ক্ষমতায় যাবার পার্টটাইম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। সাধারণ জনগণ কিন্তু দুই পক্ষের কোন কৌশলকেই সু-নজরে দেখেন না এবং কখনই মেনে নিতে পারেন নাই। অগত্যা উভয় সংকটে পড়ে একবার এদিক, আরেকবার ওদিকে মেন্ডেট দিচ্ছেন এবং মন্দের ভালকে বেছে নিতে গিয়ে বার বার ধোঁকা খাচ্ছেন। সরল জনতাকে নিয়ে এরূপ গরল খেলা থেকে ফিরে না এলে পরিনামে কিন্তু শেষতক চরম মাশুল দিতে হতে পারে। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়াই শ্রেয়।

জনগণ সরল মনে যাদের হাতে দেশের ভার অর্পণ করেন, তারা কি বার বার তাদের সেই বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার রাখেন? নামমাত্র রাষ্ট্রধর্ম বা ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আর নয়। এসব ছলাকলা ছেড়ে বরং আসুন! ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপ্রিয় জনতার বাসস্থান এই বাংলাদেশকে সর্ব ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক “সম্প্রীতি ও একতার দেশ” (Country of amity & unity) হিসেবে সু-প্রতিষ্ঠিত করি। আপন আপন ক্ষুদ্র চাওয়া পাওয়া ও জোর জবরদস্তি ছেড়ে সংখ্যা গরিষ্ঠ সাধারণ জনতা কি চায় তা বোঝার জন্য হৃদয়কে উন্মুক্ত করি এবং সে আনুযায়ী দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। সকল দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে এমন ব্যবস্থা প্রণয়ন করি যেন সকল ধর্ম-বর্ণ তথা সম্প্রদায়ের মানুষ বিভেদ ভুলে যে যার অবস্থানে থেকে একতাবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে গড়ে তোলার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেন। আপন আপন ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন ও চেতনাকে ধারণ করেই নিশ্চিন্তে ও সুখে শান্তিতে দৈনন্দিন কর্ম সম্পাদন ও বসবাস করতে পারেন। সর্বোপরি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সকল প্রকার কুসংস্কার ও অনৈতিক দুষ্কর্ম থেকে মুক্ত রাখার মত পরিবেশ রচনা করি এবং দেহ-মনে সুস্থ, বিশ্বমানের বিজ্ঞানমনষ্ক ও জ্ঞানপিপাসু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি।

Loading


Comments

“সম্প্রীতি ও একতার দেশ”- ‘বাংলাদেশ’ — 1 Comment

  1. সংলাপে স্বাগতম। ভাল লিখেছেন। আরো আসুক।
    ধন্যবাদ।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *