সমস্যাবহুল হাদিস নিয়ে কিছু কথা


মানুষ যখন ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাসের আবেগে আপ্লুত হয়ে কুসংস্কার ও অবাস্তব বিষয়ে বিশ্বাস করতে শুরু করে তখন তার (cognitive faculty) জ্ঞানভিত্তিক চিন্তা করার সক্ষমতা ও দক্ষতা বিলুপ্ত হয়ে যায় আর এটি যদি কোন জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর সমাজের ধর্মীয় চিন্তা ভাবনায় বাসা বেঁধে ফেলে তখন সে সমাজকে সংস্কার করা আসলেই এক কঠিন কাজ।

অনেকে একমত নাও হতে পারেন, তবে আমি লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক বছর ধরে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত, মুফতি আবু লাইস নামের এক ব্যক্তি বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড থেকে ” কমন সেন্স” বা সাধারণ জ্ঞানকে ইসলামী বিশ্বাসে ফিরিয়ে আনছেন এবং অনেক সাহসের সাথে সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস তথা ইসলামকে আধুনিক চিন্তার মানুষের কাছে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করছেন সফলভাবে। তাঁর দাবী অনেক নাস্তিক, মুরতাদ (ex-Muslim) তার কথা শুনে ইসলামে ফিরে এসেছে।

তবে, তার বেশভূষায়  সনাতনী ধর্মীয় আলোচকদের পোশাকের রূপ প্রকাশ না পাওয়ায় পেশাদারী আলেম-উলামাদের  কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু পাবে সে এক বিরাট প্রশ্ন,  কেননা মুসলমানদের সমাজে আজ ধর্ম চর্চায় প্রাধান্য পাচ্ছে প্রতীকী বিষয়! আজ কে কতটুকু জ্ঞানী, ও যুক্তিসহকারে ধর্ম বুঝতে সক্ষম, তা বড় বিষয় নয়, বরং তার বেশভূষা ঠিক থাকলেই সব ঠিক। এটা যেন এই প্রবাদে পর্যবসিত: “বাহিরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট” কোন অসুবিধা নাই!

মুফতি আবু লাইস অনেকের কাছে “অতি লিবারেল ” বলে মনে হলেও তাঁর কথাবার্তা কুরআন-হাদিসের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যার মাপকাঠিতে হচ্ছে দেখে তার অভিমতকে সঠিক না বলার কোন যুক্তি নাই। কুরআন হাদিসের বিষয়ে তার দীর্ঘদিনের অধ্যায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক মুফতি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে তার জ্ঞানের মান ও পরিধিকে ছোট করে দেখারও সুযোগ নাই।

সম্প্রতি হাদিসের নামে হাস্যকর, উদ্ভট ও অবাস্তব কিছু তথাকথিত প্রচলিত “সহীহ হাদিসের” অগ্রহণযোগ্যতা যে কত স্পষ্ট তা ব্যাখ্যা করেছেন তার ইউটিউব ভিডিওগুলিতে

তাঁর কথা হচ্ছে ইমাম বুখারীর সংগৃহীত সকল হাদিসের মাঝে সবগুলোই যে সহীহ নয় সেটি যেমন মানতে হবে তেমনি সব হাদিসকে যে ফেলে দিতে হবে তাও নয়। তবে অনেক কিছু যে বিতর্কিত বা অগ্রহণযোগ্য ছিল তখনকার যুগেও বিশেষ করে অনেক মুহাদ্দিস বা উলেমাদের কাছে, তা অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু সেসব তথ্যকে অগ্রাহ্য করে আজ অনেকে যেভাবে ঈমাম বুখারীর সংগৃহীত সকল হাদীসকে একেবারে কুরআনের মর্যাদায় নিয়ে যেতে চান, কিংবা এসব নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন তাদেরকে “মুনকারে হাদিস” বা বিপথগামী বলে অভিযুক্ত করতে চান তা এক বিরাট অন্যায়।

হাদিসের নামে বিশেষ করে নবী রাসুলদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তথাকথিত অলৌকিক কিচ্ছা কাহিনী ও আবেগি রেওয়াত  যে কত বড় ধর্মনিন্দা বা Blasphemy সমতুল্য হতে পারে তা বিবেচনা করার দাবী রাখে।

উদাহরণ স্বরূপ, কোন এক হাদিস বর্ণনায় এসেছে যে একটি বৃক্ষ নাকি রাসুলকে (স:)  না দেখার করণে কান্নাকাটি করত ও কথা বলত রাসুলের সাথে।

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে আল্লাহর নবীকে কোন ইহুদী জাদু করে তাঁর দেহ মনকে কাবু করে, তাঁকে অসুস্থ করে, তাঁর চিন্তাশক্তিতে বিভ্রান্তী সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল! তিনি যৌন প্রতিবন্ধী হয়ে গিয়েছিলেন!

কিংবা দুষ্টু পাথর মুসার কাপড় নিয়ে দৌঁড়েছিল যাতে মুসা (আ:) উলঙ্গ হয়ে কিছু দুর যেতে হয়, কারণ বনী ইসলাইলদেরকে তাঁর পুরুষাঙ্গ দেখাতে হয়েছিল, এটা প্রমাণ করতে যে তিনি ‘কোষবৃদ্ধি’ রুগী নন। এই ধরণের অনেক হাদিস যে সমস্যাবহুল তাতে সন্দেহ নাই! এ জাতীয় উদ্ভট হাদিস সহি হাদিসের তালিকায় হলেও সেসবের ইসনাদ বা নেরেটিভ-চেইন নিয়ে যে অনেক আগে থেকেই আপত্তি ছিল তা আজ জানতে দেওয়া হয়না।

এই প্রেক্ষিত থেকে মুফতি আবু লাইস বলতে চান যে এসব হাদিসকে “সহীহ হাদিস” বলা ঠিক নয়। এজাতীয় হাদিস নিয়ে সবসময় বিতর্ক ছিল,এগুলোকে চিরসত্য বা সঠিক বলাটা ভুল।  আজ ইন্টারনেট ঘাটলে দেখা যায় এসব নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা কি ভাবে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে যাচ্ছে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে নিয়ে।

বাকী কথা মুফতি আবু লাইসের কন্ঠে শুনুন।

Comments are closed.