ইয়াজুজ-মাজুজ ও জুলকারনাইন প্রসঙ্গ – কোরান ও হাদিসের আলোকে

রহস্যপূর্ণ ও বহুল আলোচিত বিষয় ইয়াজুজ-মাজুজ  ও জুলকারনাইন প্রসঙ্গে কোরান ও হাদিসের আলোকে কুরআনের রহস্যপূর্ণ বিষয় ইয়াজুজ মাজুজ প্রসঙ্গে  সুরাহ আম্বিয়াতে একবার এসেছে  আর একবার সুরাহ কাহাফে অনেকেরই খুব আগ্রহ রয়েছে ইয়াজুজ-মাজুজ ও দাজ্জাল প্রসঙ্গে কোরানে দাজ্জাল প্রসঙ্গটি আসেনি
কিন্তু ইয়াজুজ মাজুজকে ওয়াল তৈরি করে বাঁধা দেয়া ব্যাপারটি এসেছে সুরাহ কাহাফে
Holy Quran 18:94
——————
قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَىٰ أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا
They said, “O Dhul-Qarnayn, indeed Gog and Magog are [great] corrupters in the land. So may we assign for you an expenditure that you might make between us and them a barrier?”
এবং তাদের উত্থানের কথাটি এসেছে সুরাহ আম্বিয়াতে
দেখুন নিচের আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে ইয়াজুজ মাজুজের উত্থানের সময়টি
——————
حَتَّىٰ إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُم مِّن كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ
Until when Gog and Magog has been emerged from every direction /elevation, descend . আম্বিয়া-৯৬

ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব কোথা থেকে?
من كل حدب সকল দিক দিক থেকে / সকল উঁচু স্থান থেকে এই আয়াত আমাদেরকে আরো জানায় ইয়াজুজ মাজুজ কোনো বদ্ধ স্থান থেকে আসবেনা বরং তারা সকল দিক থেকে আসবে এখন কথা হলো, কোথায় এখন ইয়াজুজ মাজুজরা?
এই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে অনেক বিভ্রান্তি  কিন্তু, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব কিয়ামতের বড়ো আলামতের অন্তর্ভুক্ত  এবং তারা ছিল, আছে এবং থাকবে ফাছাদকারী হিসেবে দুনিয়াতে এই বিষয়টি নিয়ে ভালো কাজ করেছেন আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি র., মাওলানা হিফজুর রহমান র.ও মাওলানা মওদুদী র. যদিও, আল কোরানে দুই জায়গায় ইয়াজুজ মাজুজের প্রসঙ্গটি এসেছে: সুরাহ কাহ্ফ এবং আম্বিয়াতে,
আয়াত গুলো গভীর চিন্তাভাবনার দাবি রাখে  এবং হালকা পড়া ও চিন্তাভাবনায় এগুলা থেকে মর্ম উদ্ধার করা কঠিন ওই দুই সূরার এবং সহীহ হাদিসের আলোকে যা বলা যায় তা হলো  তাহলো:
১. ইয়াজুজ মাজুজ আগেও ছিল এবং এখনো আছে এবং কিয়ামতের আগে আবার এদের আবির্ভাব ঘটবে কিয়ামতের বড়ো আলামত হিসেবে

২. শুধু একটা বড়ো wall জুলকারনাইন নির্মাণ করেন নিরীহ মানুষদেরকে তাদের আক্রমণ থেকে বাঁধা দিয়েছিলেন

৩. কোরান বলেনা জুলকারনাইন কোনো বিল্ডিং / prison নির্মাণ করে তাদেরকে আটকিয়ে রেখেছেন

৪. কোরান বলে আল্লাহর ওয়াদা যখন হবে তখন দেয়ালটি ভেঙে যাবে এবং সেটি কিয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে তা বলেনি ; বলা হয়েছে وعد ربّك এখানে ওয়াদাটি স্পেসিফিক ওয়াদা নয় শেখ আদিল সালেহি এবং শেখ হাইসাম আল হাদ্দাদের মত অনুযায়ী কিন্তু সুরা আম্বিয়ার ওয়াদাটি স্পেসিফিক with ال যা ইঙ্গিত করে কিয়ামতকে

৫. হাদীস অনুযায়ী তারা বনি আদমের বংশধর,কেউ বলে তারা নূহের সন্তান ইয়াফেছের ও বংশধর

৬. আনোয়ার শাহ কাশ্মীরের মতে ইয়াজুজ মাজুজ ২২ টি গোত্রের সমাহার যারা মধ্যে এশিয়া ও চীনের উত্তরাংশে বসবাসকরতো এবং চেঙ্গিসখান তাদেরকে একত্রিত করে আরব মুসলমানদের উপর রক্তনদী বইয়ে দিয়েছিলো , ধ্বংস করেছিল ইসলামী খিলাফত যা আল্লাহ রাসূল সা. ভবিষৎবাণী করেছিলেন ويل لالعرب বলে এবং যুলকারনাইনের নির্মিত দেয়ালে ফুঁটো তৈরী হয়েছে বলে।

৭. ইয়াজুজ মাজুজ নামে বর্তমানে কি কোনো জনগোষ্ঠী আছে?
তারা আছে তাদের কর্মে, বৈশিষ্ট্যে, ফাছাদকারী হিসেবে নামে নয়।

৮. কিয়ামতের আগে আবার তাদের প্রবলভাবে আবির্ভাব হবে চারদিক থেকে من كل حدب ; কেউ বলে হাদাব মানে উঁচু পার্বত্য এরিয়া তারা সেখানে থেকে আসবে , কেউ বলে তারা এখন সবজায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং কিয়ামতের আগে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রবলভাবে ফা-ছাদে ঝাপিয়ে পড়বে।

৯. সহীহ বুখারী তে বর্ণিত জয়নাব বিনত জাহাশের বর্ণোনায় এসেছে রাসূলের জীবদ্দশায় ইয়াজুজ মাজুজের ওয়াল এ ছিদ্র শুরু হয়ে গিয়েছিলো. বুখারি- ৭০৫৯

Narrated Zainab bint Jahsh:
The Prophet (ﷺ) got up from his sleep with a flushed red face and said, “None has the right to be worshipped but Allah. Woe to the Arabs, from the Great evil that is nearly approaching them. Today a gap has been made in the wall of Gog and Magog like this.” (Sufyan illustrated by this forming the number 90 or 100 with his fingers.) It was asked, “Shall we be destroyed though there are righteous people among us?” The Prophet (ﷺ) said, “Yes, if evil increased.”
حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ الزُّهْرِيَّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، عَنْ زَيْنَبَ ابْنَةِ جَحْشٍ ـ رضى الله عنهن ـ أَنَّهَا قَالَتِ اسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنَ النَّوْمِ مُحْمَرًّا وَجْهُهُ يَقُولُ ‏”‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَاجُوجَ وَمَاجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ ‏”‏‏.‏ وَعَقَدَ سُفْيَانُ تِسْعِينَ أَوْ مِائَةً‏.‏ قِيلَ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ ‏”‏ نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ ‏”‏‏.‏

১০. জুলকারনাইন কারো নাম ছিলোনা এটি ছিল উপাধি; অনেকে আলেক্সান্ডার দি গ্রেট কে জুলিয়ারনাইন বলে কিন্তু আলেক্সান্ডার দি গ্রেট ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেননা
যা কুরআন ইঙ্গিত করে তার সাথে পারস্যের বাদশাহ cyrus /খোরাসের মিল পাওয়া যায় বলে আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি অভিমত ব্যক্ত করেন এবং ইতিহাস তা সাক্ষ্য দেয়

১১. যুলকারনাইনের তৃতীয় অভিযানটি কোন দিকে হয়েছিল তা কুরআন স্পষ্ট করে বলেনি ; কিন্তু কুরআনের ইঙ্গিত ও ইতিহাসের আলোকে বলা যায় তা কোকাশিয়া অঞ্চলের দিকে হয়েছিলে এবং যুলকারনাইনের প্রাচীরটি কোহেকাফ/ কোহেকাজের শেষপ্রান্তে দুই পর্বতের মধ্যস্থলে ছিল যাতে ইয়াজুজ মাজুজরা পর্বতের অপরপ্রান্ত মঙ্গোলিয়া থেকে এসে আক্রমণ না করতে পারে ; ইমাম রাজি বলেছেন ” সেই দুই পর্বতের অবস্থিতির স্থান উত্তরদিকে এবং কেউ বলেছেন সেই দুই পাহাড় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত

১২. যুলকারনাইনের প্রাচীরের অপরপ্রান্তে ইয়াজুজ মাজুজদের লুটতরাজের এলাকা কোকাশিয়ার প্রাচীরের কোণ হইতে চীনের মাঞ্চুরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যদিও জুলিয়ারনাইন একটি পাস প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলো

১৩. মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের সেই ইয়াজুজ মাজুজরা এখন কোথায়? কি নামে? সেই ইয়াজুজ মাজুজরা কোনো একস্থানে দেশে সীমাবদ্ধ নেই তারা সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন নামে এক নামে নয় কিন্তু ফচাদি বৈশিষ্ট সমান; এই অভিমত আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সহ আরো অনেক ইতিহাসবিদদের

১৪. ওই ইয়াজুজ মাজুজরা মানব সভ্যতার শত্রু মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা তারাই খেলেছে নিকৃষ্টভাবে, বিশেষভাবে তাতারীদের নৃশংস হত্যাযোগ্য ষষ্ঠ হিজরী শতকে ( ৬৮৬ হিজরী সালে) মুসলমানদের উপর ইয়াজুজ মাজুজদেরই কাজ

১৫. কোরান আরো ইঙ্গিত দেয় তারা নিজেদের মধ্যেও অনেক হানাহানিতে লিপ্ত থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত যদিও কিয়ামতের পূর্বে তারা একত্রিত হয়ে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করবে

১৬ . কোরান আরো ইঙ্গিত দেয় যে জুলকারনাইন কোনো প্রতিবন্দকতা ছাড়াই প্রথম দুই অভিযানের বিজিতদের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু তৃতীয় অভিযানের বিজিতরা উনার সাথে communicate করতে কষ্ট হচ্ছিলো ; এইটার অনেক কারণের মধ্যে একটি হতে পারে যে তৃতীয় অভিযানটি দূরবর্তী অঞ্চলে ছিল প্রথম দুইটির চেয়ে অথবা তাদের ভাষাটি অপ্রচলিত ছিল বলে জুলকারনাইনকেনকে বুঝাতে কষ্ট হয়েছিল

১৭। ইয়াজুজ- মাজুজ এর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বলা যায় যে সুরাহ কাহফের ৯৩ থেকে ৯৯ আয়াতে চিত্রিত ইয়াজুজ মাজুজ আর সুরাহ আম্বিয়ার ৯৬ আয়াতের বর্ণিত কিয়ামতের পূর্বে বর্ণিত ইয়াজুজ- মাজুজ এক ইয়াজুজ-মাজুজ নয়।

সুরাহ আম্বিয়ার ইয়াজুজ মাজুজ আসবে সকল জায়গা থেকে مِّن كُلِّ حَدَبٍ- পূর্ব পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ, দেয়ালের এই পাশ ও পাশ সকল জায়গা কিন্তু সুরাহ কাহফের ইয়াজুজ মাজুজ ছিল দেয়ালের অপর পাশে আটকানো। কিয়ামতের পূর্বের ইয়াজুজ মাজুজ তাই চরিত্রগতভাবে যুলকারনাইনের সময়ের ইয়াজুজ মাজুজের সাথে মিল রয়েছে বংশতগতভাবে এখন পুরোপুরি মিল না থাকলেও পরিশেষে রাসূল সা. এর হাদীসটিকে স্মরণ করছি فلا تنقضى عجاءبه ” কোরানের সূক্ষ্ণ তত্বাবলী ও হেকমতসমূহ কোনো কালে শেষ হওয়ার নয়”

Comments are closed.