সভ্যতার অন্তরালে!

প্রিয় পাঠক, আমি যে বিষয়ের অবতারণা করতে চাই তা নিশ্চয় অনেকেই অবগত তবু লিখলাম হয়তবা বিবেকবান ও চিন্তাশীল মানুষের কাছে বিষয়টা পুনরায় পর্যালোচনার সুযোগ পাবে।

আলোচনার শুরুতেই মহান আল্লাহ তায়লার প্রদত্ত পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে শুরু করতে চাই। পবিত্র কোরআনের সুরা হজ এ প্রথম আয়াতে আল্লাহ-তায়ালা বিশ্বের মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন:

يٰأَيُّهَا النّاسُ اتَّقوا رَبَّكُم ۚ إِنَّ زَلزَلَةَ السّاعَةِ شَيءٌ عَظيمٌ
হে মানুষেরা! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের (প্রলয় দিবসের) প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।
[1] O mankind! Fear your Lord and be dutiful to Him! Verily, the earthquake of the Hour (of Judgement) is a terrible thing.”

বিশ্বের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে একটু খেয়াল করলে মহান আল্লাহর উপরোক্ত সতর্কবাণীর গুরুত্ব এবং কেয়ামতের আলামত বা নির্দেশন সমর্পকে আলাহর রাসুল মোহাম্মদ (সঃ) ভবিষ্যৎ বানীর সত্যতা সহজেই বুঝা যায়।

আজকের বিশ্বের প্রাকৃতিক জীবনে, মানব সমাজে, রাষ্ট্রীয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বত্রই শুরু হয়েছে প্রকম্পন।

মানব ইতিহাসের নজীর বিহীন ধ্বংস নিয়ে আসছে সুনামি, ভূমিকম্প, সাইক্লোন, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা কখনও আগে মানুষ দেখেনি। এত অধিক পরিমাণের জান মালের ক্ষয় ক্ষতির অভিজ্ঞতা আগে হয়নি মানুষের।

প্রকম্পন শুরু হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, জনতার বিদ্রোহের কাছে পতন ঘটছে আরব বিশ্বের শক্তিশালী স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ব্যবস্থার, স্বৈরাচারী শাসকদের বিরোদ্ধে চলছে মুক্তির, স্বাধীনতার ও মানবাধিকার সংগ্রাম, দেশে দেশে চলছে জনতার সংগ্রাম, হাজারো মানুষ নিহত হচ্ছে, পতন হচ্ছে একের পর এক স্বৈরাচারী সরকার।

প্রকম্পন শুরু হয়েছে বর্তমান বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার কেন্দ্রস্থল খোদ অমেরিকায়, প্রকম্পন হচ্ছে ইউরোপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়, দেউলিয়া হতে চলেছে গ্রীসের মত ইউরোপের অন্যতম রাষ্ট্রের পুরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এমন এক পর্যায় এসে পৌঁছেছে যে এখন এই পুঁজিবাদ একটি অন্যায় এবং বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে। এ ব্যবস্থা একটি সংখ্যালঘু ধনিক শ্রেণীর সৃষ্টি করে সমাজের অপরাপর শ্রেণীগুলোকে শোষণ করার মধ্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছে। এরাই আবার সমরাস্ত্র উৎপাদনের শিল্প কারখানায় খাটানো পুঁজির মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে সেই অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। যার ফলে একদিকে যেমন সমগ্র বিশ্বে অশান্তি ও নিরাপত্তা-হীনতা বৃদ্ধির কারণ হয়েছে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনা সমাবেশ করতে বাধ্য হয়। এই সেনা সমাবেশের কারণে দেশের বিরাট অংকের অর্থ ব্যয় হয়।এ কারণেই কালক্রমে দেশের শাসন, সামাজিক স্তর এবং জনগণের বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।সুদ ভিত্তিক ঋণবান্দব পুঁজিবাদী অর্থনীতির কুফল এখন সর্বত্র প্রকাশিত হচ্ছে।

গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সব ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকার বিরুদ্ধে মধ্য-শ্রেণীর বিরোধিতা এবং পুঁজিবাদী বিশ্বের কর্মকৌশলের বিরুদ্ধে তাদের উদ্বেগ। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়টি তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে।

“অকুপাই ওয়ালষ্ট্রিট/ওয়াল স্ট্রিট দখল করো ও আমরা দেশের নব্বই শতাংশ” আন্দোলনে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ যাত্রা প্রথমে নিউইয়র্ক থেকে শুরু করে এখন চলছে আমেরিকার প্রতিটি বড় বড় শহরের রাস্তায়! এদিকে কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি ও গ্রীকসহ এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের প্রতিটি উন্নত রাষ্ট্রে! মানুষ চাচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, চাচ্ছে আয়-বৈষম্য কমাতে। চাচ্ছে কর্মসংস্থান। দেখুন

আসলে বিগত কয়েক দশক থেকে আমেরিকা ও ইউরোপে পুঁজিবাদের মূল্যবোধহীনতা ও লেইসেজ ফেয়ার, ঋণ-বান্ধব অর্থনীতি আধুনিক বিশ্বের এই চরম বৈষম্যতার জন্ম দিয়েছে। এ নীতির কারণেই পুঁজিবাদে কোনো অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেই। যার ফলে অল্প সংখ্যক লোকের পক্ষে এত সম্পদ পুঞ্জীভূত করা সম্ভব হয়েছে। বস্তুবাদী, সেকুলার পরিবেশ এবং সুদ ব্যবস্থা এ ধরনের পুঞ্জীভূত-করণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আর এদের কাছে সরকারগুলো অনেকটা অসহায়। এসব সরকারের নেতারা পুঁজিপতিদের টাকা নিয়ে পার্টি চালান এবং নিজেরা নির্বাচিত হন। তাই গণতান্ত্রিক সরকারও পুঁজিপতিদের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। তারা বিত্তবানদের ট্যাক্স করতে পারছে না। ফলে বাজেট ঘাটতি হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হল বিশ্ব বিবেক কবে জাগবে এর সমাধানে? দুঃখের বিষয় হল, মেইন ষ্ট্রিম মিডিয়া তথা মুল শ্বেতের মিডিয়া এসব ব্যাপারে খুবই নীরব। তাই পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের এই করুন অবস্থার জন্য বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনীতির সাথে মিডিয়াকেও দায়ী করলে ভুল হবে না। কেননা মিডিয়া যদি এসব ব্যাপারে আওয়াজ তোলত তাহলে এই অবিচারী (Unfair Economic System) অর্থব্যবস্থার কুফলে পুঞ্জীভূত এত বিশাল আয়-বৈষম্য সমাধানে হয়তবা মানুষ এগিয়ে আসত। আসলে সভ্যতার অন্তরালে বর্তমান অবস্থা যে ভাবে চলছে তার প্রতিকার না হলে আধুনিক এ সভ্যতার পতন অবধারিত।

Loading


Comments

সভ্যতার অন্তরালে! — 4 Comments

  1. ভালো লেখেছেন । পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্তায় এটাই নিয়ম,আর আমাদের চোখে অনিয়ম ।

  2. ভাই, বিশ্ব এখন ফ্যাসাদে পরিপূর্ণ হয়েছে পড়েছে। আল্লাহই জানেন দুনিয়া মনে হয় তার জীবনের অন্য কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক কিছু আজ আক্ষেপ ও দুঃখের সাথেই দেখতে হয়।
    ভাল লেখা হয়েছে। চিন্তা জাগানিয়া।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *