মানবতার আহ্বানে

ঐতিহাসিক লর্ড একটন্স ১৮৮৭ সালে সতর্কবাণী করেছিলেন, “Power tends to corrupt, and absolute power corrupts absolutely” এ কথাটা আওয়ামী বাকশালীদের ব্যাপারে যে কত প্রযোজ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও ছ্ত্রালীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ৩২ বছর যে দলটি করেছেন তাকে এখন একটি অভিশপ্ত দল হিসেবে গণ্য করেন।

বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট শফিক রেহমান গত সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে তার লেখা “মৃত্যুদণ্ড” বইটির প্রকাশনা উৎসবে বলেছিলেন, “কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিলে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে, সেটা অন্যায় বা পাপ হতে পারে। কারণ মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগে বিচারক প্রকৃত সত্যটা নাও জানতে পারেন।” সেই মাসে তিনি কানাডাতেও এসেছিলেন এবং টরন্টোতে আয়োজিত তাঁর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে  প্রদত্ত তার বক্তব্যে নিরপরাধ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নজির বিভিন্ন দেশে রয়েছে বলেও জানান তিনি। শফিক রেহমান বাংলাদেশে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে দেয়ার এই ক্যাম্পেইন শুরু করার জন্য বর্তমান সময়টিকে সঠিক বলে গণ্য করেছেন। কারণ মানুষের জীবন নিয়ে এমন রাষ্ট্রীয় হেলাফেলা গত ৪৫ বছরের মধ্যে আর কখনোই দেখা যায়নি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের জনগণের একটা অংশের জন্য রীতিমতো ত্রাস বা আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর এসবই হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে। কাজেই যে কথাটি দেশের প্রায় সব মানুষের মনে অনুরণিত হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে বলার সৎ সাহস দেখিয়েছেন শফিক রেহমান।

তাই আজ দেশের বিজ্ঞজনেরা বলছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের কব্জায় রাখতে দেশে বিদেশে যাদের সাথে আঁতাত ও ষড়যন্ত্র করে চলেছেন এবং যেভাবে দেশের দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় করণের মাধ্যমে দুষিত করে চলেছেন তা সত্যিই আতঙ্কের ব্যাপার। তবে ক্ষমতার নেশায় যে এ আগুন তারা জ্বালিয়ে চলছেন একদিন তা তাদেরকেই জ্বালিয়ে ছাড়বে। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।

আর শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে শফিক রেহমানের সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো ভুল সাক্ষী বা ভুল মানুষকে এই শাস্তিটা দেয়া হলে তা আর শোধরানোর কোনো উপায় থাকে না।
উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর এই সর্বনাশা খেলাটি দেখে যদি তিনি আরো বেশি করে তার এই ক্যাম্পেইনটি শুরু করেন, তা হলে তাকে খুব বেশি দোষারোপ করা যাবে না।
রাষ্ট্র যাকে সাব্যস্ত করেছে কসাই কাদের হিসেবে, পরিবার বলছে, ‘না, তিনি কসাই কাদের নন। তিনি কাদের মোল্লা।’ পরিবারের যুক্তি, ১৯৭১-এর সেই কসাই কাদের কোনোভাবেই ১৯৭২ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করতে পারে না। মানুষের স্মৃতিশক্তি এতটুকু সজীব থাকাবস্থায় উদয়ন স্কুলে সেই কসাই কাদের শিক্ষকতা করতে পারে না।
রাষ্ট্র বলছে, অপরাধ সংঘটনের সময় অভিযুক্ত সালাহ্উদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশে ছিলেন। সাপোর্টিং ডকুমেন্টসহ পরিবার বলছে, অভিযুক্ত সেই সময় দেশেই ছিলেন না। দেশ ও বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসতে চেয়েছেন। কিন্তু তারা সেই সুযোগটি পাননি। সমাজের একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে এ ধরনের সংবাদগুলো শফিক রেহমানের কাছে পৌঁছেছে। এসব সংবাদ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি যদি তার মৃত্যুদণ্ডবিরোধী ক্যাম্পেইনটি আরো জোরেশোরে শুরু করেন তবে মুক্তিযোদ্ধা হলেও তাকে রাজাকার বলা সম্ভব, কিন্তু কখনোই মতলববাজ বলা যাবে না। কারণ কোনো মতলববাজ কখনোই জনপ্রিয় ভাবনার বাইরে এ ধরনের ঝুঁকি কখনোই নেন না।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ পুরো পশ্চিমা জগৎ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সেখানকার প্রায় সব দেশই নিজেদের জুডিশিয়াল সিস্টেমে মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি বাতিল করে দিয়েছে। এরা বলেনি যে, আগে অমুকের শাস্তিটা হয়ে যাক, তার পরেই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হবে। কারণ যখনই কোনো দেশে এটি করা হয়েছে, তখন কেউ না কেউ তাৎক্ষণিকভাবে বেনিফিটেড হয়েছে। প্রকৃত কোনো মানবতাবাদী কখনোই এসব বিষয় গণনা করে মানবতার আহ্বানে সাড়া দেন না।

সুত্র : নয়া দিগন্ত

Loading

উড়ন্ত পাখি

About উড়ন্ত পাখি

আমি কোন লেখক বা সাংবাদিক নই। অর্ন্তজালে ঘুরে বেড়াই আর যখন যা ভাল লাগে তা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।

Comments are closed.