ব্রিটেনের অভিবাসন আইনে পরিবর্তন -বাংলাদেশিদের উপর তীব্র প্রতিক্রিয়া

গত ৯ই জুলাই অর্থৎ পরশু দিন থেকে ব্রিটেনের অভিবাসন আইনে অতি বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন এসেছে যা শুধু অভিবাসনের ক্ষেত্রে হাজার হাজার পরিবারকে বঞ্চিত করবে তা নয় বরং যারা যুগ যুগ ধরে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছেন তাদের অনেকের পারিবারিক ক্ষেত্রে এই আইনগুলো অন্তরায় হয়ে পড়বে। অধিকন্তু ব্রিটেনের বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ভারতীয় এমন অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমাজ জীবনে নতুন এক মাত্রা সংযোজন করবে।

ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র সচিব টেরেসা মে গত মাসে (জুনে) অভিবাসন আইনে পরিবর্তন আনার কথা বলেন, যা ছিল স্মরণকালের কঠোর নীতি-কথা, কিন্তু অনেকে মনে করেছিলেন যে যে কঠোরতায় কথাগুলো উত্থাপন করেছিলেন আসলে সেই কঠোরতায় কার্যকর করতে যাবেন না। কিন্তু তা হয়নি। বরং ইতিমধ্যে তা কার্যকর হয়েই গিয়েছে। প্রথম প্রস্তাব শুনে (জুন মাসে) লেইস্টার শহরে লেবার দলীয় এমপি জনাব কিথ ভাজ তার বিস্ময় এভাবে প্রকাশ করেছিলেন, “I am shocked at the Government’s new proposal. They will dramatically affect my constituents, settled British Asians, not illegal immigrants, tax payers who contribute to our country. A British Home Secretary has no place dictating who British citizens should choose as their spouses based on an artificial financial limit. This is unfair, unjust and unnecessary. আমি সরকারের এই নতুন প্রস্তাবলি দেখে স্তম্ভিত হয়েছি। এগুলো আমার ভোটার এলাকায় দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করবে। আমার এলাকার লোকজন ব্রিটিশ এশিয়ান। ওরা অবৈধ অভিবাসী নন। তারা ট্যাক্স পে করেন এবং এ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। একজন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিবের এমন কোন অধিকার নেই যে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকদের উপর হুকুমজারি করবেন যে তারা কাদেরকে কৃত্রিম এক আর্থিক আয় সীমার ভিত্তিতে দাম্পত্য জীবনের জন্য পছন্দ করবেন।” কিন্তু কোন বিবৃতিই কাজে আসেনি।

এই পরিবর্তনের আওতায় কোন ব্রিটিশ নাগরিক যদি তার স্ত্রী/স্বামীকে ব্রিটেনে আনার আবেদন করতে চান তবে তার বাৎসরিক আয় ১৮,৬০০ পাউন্ড হতেই হবে। তারপর পূর্বে যেখানে সেটলম্যান্টের প্রবেশনারী সময় ছিল দুই বৎসর, অর্থাৎ এটা এমন এক সময় যার ভিতরে বিয়ে বিচ্ছিন্ন হলে বা কোন অভিবাসীকে গুরুতর অপরাধে পাওয়া গেলে তাকে তার আপন দেশে ফিরত পাঠানো যেতে পারে, সেই সেটলম্যান্ট প্রবেশনারী সময় বর্ধিত করে এখন পাঁচ বৎসর করা হয়েছে।

অভিজ্ঞ মহলের ধারনা যে এই আইনের কারণে ইউরোপের বাইরের অভিবাসন আবেদন ৪৫% শতাংশ কমিয়ে আনবে।  মনে রাখতে হবে যে অভিবাসনের সিংহ ভাগ কিন্তু ইউরোপীয়। মাত্র ১৮% শতাংশ ইউরোপের বাহিরের। এবং এটাও লক্ষণীয় যে এই পরিবর্তন কেবল ইউরোপের বাহিরের লোকজনের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ ইউরোপের কোন দেশে স্বামী/স্ত্রী আনতে প্রয়োগ করা হবে না।

তাছাড়া আয়ের সর্বনিম্ন অংক (threshold) যে শুধু ১৮,৬০০ পাউন্ড তা নয়। স্ত্রী/স্বামীর সাথে একটি সন্তান হলে তা হবে ২২, ৪০০ এবং তারপর অতিরিক্ত প্রত্যেক বাচ্চা প্রতি ২,৪০০ পাউন্ড গুণতে হবে।

এই আইন কম আয়ের পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন রাখবে এবং তাদের জীবনে অনেক রকমের অশান্তি বহে আনবে। যেসব বাংলাদেশি রেস্তরোয়ায় কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এটা এক জটিল বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কেউ দুই বাচ্চাসহ তার পরিবার আনতে হলে আয় দেখাতে হবে ২৪,৮০০ পাউন্ড অর্থাৎ তার সাপ্তাহিক বেতন/আয় হয় হবে ৪৭৭ পাউন্ড! শুধু রেস্তোরায় কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা দেবে তা নয় বরং প্রাইমারী স্কুল থকে শুরু করে ভল্যুন্টারি সেক্টর, সেবা সেক্টর, প্রাইভেট ও স্টেটিউটরি সেক্টরের হাজার হাজার চাকুরীজীবী এই নির্ধারিত আয়ের মাত্রার নিচে।

গতরাতে এক মিটিঙে ছিলাম যেখানে একজন ব্যারিস্টার ও সলিসিটরও ছিলেন। আমরা সবাই সেখানে ঐক্যমত পোষণ করি যে এই আইনের মধ্যে মানবাধিকার লঙণের একটি বিষয় অনুভব করা যায় এবং এদিক থেকে আইনটি চ্যালেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

Loading

About এম_আহমদ

প্রাবন্ধিক, গবেষক (সমাজ বিজ্ঞান), ভাষাতত্ত্ব, ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাসের পাঠক।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *