বিশ্বাসীরা পড়েছে এক ভীষণ অগ্নি পরীক্ষায়!

সম্প্রতি প্যারিসে সন্ত্রাসী সিরিজ হামলায় বহু নিরীহ মানুষ নিহত এবং অনেক লোক আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে  আজকে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থার ও সহিংসতার বিপক্ষে  কয়েকটি লাইন লিখতে বসলাম।  সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থার  ও সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সবাইকে কাজ করতে এগিয়ে আসতে হবে। তবে শুধু মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় প্রচারিত তথাকথিত রাজনীতিবদের সুবিধাবাদী অঙ্গীকার শুনে মানুষ আর আস্তা রাখতে পারছে না। তাই সামাজিক মিডিয়াতে দেখা যায় সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে জাগছে নানা প্রশ্ন।

তথাকথিত মুসলিম টেরোরিজম করে বা “ইসলামী টেরোরিজমের” খবর বিশ্ব মিডিয়াতে প্রচার করে কার লাভ? টেরোর করা মানে ভয় বা আতংক ছড়ানো অন্য কথায় সন্ত্রাস কায়েম করা। ইসলামে যেহেতু বলা আছে “লা ইকরাহা ফিদ দীন” অর্থাৎ ধর্মে জবরদস্তি নাই। তাহলে ইসলামের নামে এভাবে সন্ত্রাসবাদ করা কি কোন মুসলিমের পক্ষে সম্ভব? কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ প্রচার ও প্রসার তো এখন এক বাস্তবতা । বিশ্ব মিডিয়াতে তো এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে। আর এ অশুভ তৎপরতায় কারা লাভবান হচ্ছে মুসলিম জনগণ না যারা মুসলিম জনগণকে “ডিমোন” তথা অমানুষ ও সভ্যতার দুষমন দেখাতে চায় তারা? সত্যিকারের মুসলিমদের এটা জানার কথা যে সন্ত্রাস করে কোন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা সম্ভব নয়। স্বল্প সময়ের জন্য কিছু এলাকা দখল দেখানো সম্ভব হলেও এটাকে একটা অস্থায়ী ডাকাতের কলোনী বলা ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম যেখানে অশান্তি সেখানে ইসলাম নাই। শান্তি রক্ষার জন্য মাঝে মধ্যে যুদ্ধের দরকার এবং সেটা করবে মুসলিম রাষ্ট্র কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইসলামের নামে যুদ্ধ শুরু করতে পারে না।

আসলে এ সব সন্ত্রাস বা এসব জঙ্গি-ফঙ্গির অজুহাতে বিশ্ব জুড়ে লাভবান হচ্ছে কিন্তু একটা গোষ্ঠী তারা চায় আমার আপনার চিন্তাশক্তিকে কন্ট্রোল করে তাদের ক্ষমতার দাপট চালিয়ে তাদের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখতে। কোথাও দেখা যায় এরা দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে আবার কোথাও দেখা যায় এরা পুঁজিবাদী অর্থনীতির যাঁতাকলে ফেলে মানুষকে ভোগ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার দাসত্বে পরিণত করতে। কোথায় দেখা যায় সন্ত্রাস দমনের নামে বিমান থেকে বোমা ফেলে নিরপরাধ নারী পুরুষ ও শিশুসহ হত্যা করে যাচ্ছে অসংখ্য আদম সন্তান! অতএব ইসলামের নামে যে সন্ত্রাসবাদ শুরু হয়েছে তা শীঘ্র বন্ধ হচ্ছেনা।

তবে এটা ঠিক ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ একমাত্র বিশ্ব প্রভু মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী বিশ্বাসী তথা মুসলিমেরাই বন্ধ করতে পারত কিন্তু তাদের সে ক্ষমতা নাই। তারা আজ পরাজিত। তাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে যুদ্ধ না করেও যেন তারা যুদ্ধবন্দী! গণতন্ত্রে পক্ষে থেকেও “গণতন্ত্রের বিরোধী”, সন্ত্রাস না করেও “সন্ত্রাসের পক্ষের শক্তি”!  আজ মুসলিমদেরকে চিত্রায়িত করা হচ্ছে ইহুদী বিদ্বেষী অথচ ইতিহাসে মুসলিমদের ট্র্যাক রেকর্ড হচ্ছে এর সম্পূর্ন বিপরীত (এখানে দেখেন)। বিশ্বাসীরা আসলেই আজ পড়েছে এক ভীষণ অগ্নি পরীক্ষায়! কোন অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে তাকে ফেলা হয়  সন্ত্রাসবাদ কিংবা মৌলবাদের খাঁচায়!  সম্প্রতি প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার খবর দিতে গিয়ে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখছে “মুসলমানদের এখন থেকে আরও বেশী সন্ত্রাসের অভিযোগ মাথায় নিয়ে চলতে হবে এবং উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান ঘটবে ” (বাংলা অনুবাদ এখানে দেখেন)।

সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক কিভাবে শুধু মুসলিমের বেলাই লেপন করা হয় তার ছোট ক্লিপ দেখেন

ইউরিপিয়ানরাই এখন বলতে শুরু করেছে যে  ইউরিপিয়ান শহরে এসব ঘটনা  কিভাবে সম্ভব হচ্ছে?

এখানে প্রশ্ন আসে বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তির উৎকর্ষে তথা উন্নয়নের অগ্রগতির এ দ্বারপ্রান্তে এসে গত কয়েক দশক থেকে হঠাৎ করে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ নামক এ  আতংক বা অশুভ শক্তির উদ্ভব হল কোথা থেকে এবং কেন? যে কোন অপরাধের তদন্তে প্রথমেই অনুসন্ধান করা হয় সে অপরাধের মোটিভ কি এবং এতে কে লাভবান হতে পারে। অবশ্য এর কিছুটা আবাস উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এখনে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে প্রযুক্তির উৎকর্ষে তথ্য প্রযুক্তির যে যুগান্তকারী অগ্রগতি হয়েছে যার মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান যে ভাবে সহজতর হয়েছে তাতে দুর্নীতি, অন্যায় অবিচার করে তা লুকিয়ে রাখা এখন প্রায় অসম্ভব। তাই অনেকে মনে করেন এমতাবস্থায় মানুষের মনকে বিশ্বের ক্ষমতাবানদের অবৈধ ও অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে চিন্তাভাবনা বা বর্তমান সিস্টেমের বিকল্প কিছু চিন্তাভাবনা করা থেকে ভুলিয়ে মানুষের মনকে অন্যদিকে প্রবাহিত করারও একটা অনন্য সুযোগ হচ্ছে এসব সন্ত্রাসবাদী অপচেষ্টায়!
অনেক মুসলিম চিন্তাবিদরা মনে করেন ইসলামকে টার্গেট করার আরেকটি কারণ হল প্রচলিত বিশ্ব ব্যবস্থার বিকল্পে ইসলামী ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, শাসন পদ্ধতি, শোষনমুক্ত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিয়ম কানুন এবং কাগজি মুদ্রার (Fiat money) পরিবর্তে স্বর্ণ মুদ্রা  (bullion ) মুসলিম দেশে প্রবর্তন হলে বর্তমান কায়েমি স্বার্থে দেখা দিবে বিরাট সংকট।

তবে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ যে আজ এক বিরাট সমস্যা মুসলিমদের জন্য তা অস্বীকার করার উপায় নাই এবং এর সমাধানে মুসলিমদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে শত বাধা বিপত্তি ও ভয় ভীতির মাঝে। আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে তবে আগে নিজেরা সে সাহায্য পাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে ।

 

 

Loading

Comments are closed.