আমেরিকা কেন আঙ্কেল স্যাম?

আমার গত ব্লগ পোষ্টেপাঠকদের মন্তব্যের কলামে বেশ কিছু পয়েন্ট ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে বিশ্বের বর্তমান অস্থিরতা বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে যা বিস্তারিত আলোচনার দাবী রাখে। তবে আলোচনা সেখানে চালু না রেখে ভাবলাম এ ব্যাপারে সম্পূরক আরেকটি ব্লগ লিখলে ভাল হয়। গত ব্লগে আমি চেষ্টা করেছি এ কথা পরিষ্কার করতে যে সন্ত্রাসবাদের চলমান যুদ্ধের অবসান হবে না যদি মুসলিমরা এগিয়ে না আসে। প্রত্যেকের উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে সচেষ্ট হওয়া। বর্তমান এই ফিতনার যুগে এটাই হবে মুসলমানের সব চেয়ে বড় দায়িত্ব যে এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা এবং এই ব্যাধিগ্রস্ত ও দুশ্চরিত্র বিশ্ব-ব্যবস্থা-চক্রের (vicious circle) আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা বের করা। তবে এ জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন হচ্ছে বাস্তব অবস্থার একটা সঠিক ধারনা নেয়া, যতটুকু সম্ভব নিরপেক্ষ তথ্য সূত্রের ভিত্তিতে, এবং বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে করণীয় কী সে ব্যাপারে কার্যকর (effective) ব্যবস্থা নেয়া।

আমেরিকাকে আঙ্কেল স্যাম বা স্যাম চাচার দেশ কেন বলা হয় লিখে গুগুল সার্চ করে দেখলাম এ কথাটি চালু হয়েছে সেই ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময়ের কিংবদন্তির নায়ক স্যামুয়েল উইলসনের নাম অনুযায়ী ((বিস্তারিত এখানে পড়ুন))। আমেরিকান সরকার বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের দেশাত্মবোধক আবেগ তথা দেশ প্রেমের প্রতিনিধিত্ব করতে জাতীয় প্রতীকী শব্দ “আঙ্কেল স্যাম” ব্যবহার করা শুরু হয়। কিন্তু অনেকের মতে আজ আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা যে গুষ্টির কব্জায় চলে গিয়েছে তারা আঙ্কেল স্যামের সেই দেশাত্মবোধক আবেগ ও দেশ প্রেমের উদ্দীপনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে পরিচালিত করেছে বৈদেশিক নীতি যার অভিশাপে সারা বিশ্বে চলছে অস্থিরতা। অনেকটা বাংলাদেশের চেতনা ব্যবসায়ীদের মত। তাই দেখা যায় আমেরিকান নাগরিকরাই এখন তাদের দেশের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। সে সব ষড়যন্ত্রের তালিকা  এখানে দেখতে পাবেন।। তবে মেইন স্ট্রিম মিডিয়া এ সব তথ্যকে “ষড়যন্ত্র তত্ব” (conspiracy theory) আখ্যা দিয়ে এ গুলাকে রচনাকারীদের কাল্পনিক কাহিনী বলে উড়িয়ে দেয়। এখন তাদের হস্তস্থিত বলিষ্ঠ হাতিয়ার হচ্ছে মিডিয়া-চালিত “ষড়যন্ত্র তত্ত্বের” গান।

আমেরিকার বৈদেশিক নীতি (Foreign Policy) বুঝতে পারবেন নিচের ভিডিওটা দেখলে।

আর জঘন্য নীতির বলীর পাঠা হয়েছে সিরিয়ার নিরীহ মানুষ! নিচের ভিডিওটা দেখলে বুঝতে পারবেন একটা দেশের মানুষ কত অসহায় হলে সইতে হয় এত অপমান এত যন্ত্রনা ও কষ্ট।

নিচের ভিডিওটা শুনলে, আরও বিবরণসহ, বুঝতে পারবেন। লাখো লাখো মানুষের হত্যা করে কাদের লাভ হচ্ছে? যুদ্ধ নাকি দরকার দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করছে। হায়রে মানবতা! হায়রে “সভ্য সমাজের” মানুষ!

এবারে দেখুন, সিরিয়াতে কে কাকে হত্যা করছে?

অবশেষে কি বুঝতে পারলেন কি ভুলটাই না আঙ্কেল স্যামের নায়কেরা করেছেন (এটা দেখুন):

অতএব এই আইসিস বা তথা কথিত “ইসলামী জঙ্গি” এ সবই হচ্ছে মুসলিম দেশের বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঠাণ্ডা মাথায় অস্ত্র সংঘাতের দিকে দাবিত করে একটি উগ্র গোষ্ঠী তৈরি করার ফসল। এখানে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু এসব জেনেও ইসলামকে জড়িত করা হবে এবং বিশ্ব মিডিয়া এগুলাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচারণা করবে। কারণ তাদের মন প্রাণ শয়তানের কাছে ইজারা  দেয়া।

প্রশ্ন জাগে, “যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ। এত লাখ লাখ লোক হত্যা, এত লাখ লাখ পঙ্গু হওয়া, এত লাখ লাখ বাড়ী ঘর সর্বনাশ হওয়া, এত লাখ লাখ বাস্তুহারা হওয়া, দেশ ছাড়া হওয়া, জাতির পর জাতির নির্মূল হওয়া –কেন? ইসলাম তো ১৪০০ বছর ধরে আছে। কেন ১৯৯০ এর দশক থেকে হঠাৎ সন্ত্রাস দেখা দিল? এসবের কারণ কি?” -এম আহমেদ

জড়বাদী ও পুঁজিবাদী সভ্যতার বিশ্ব মোড়লদের লক্ষ্য হচ্ছে কিভাবে তাদের অস্ত্র শিল্পের মুনাফা বাড়ানো যায় এবং তৃতীয় বিশ্বের নেতাদেরকে তাদের কব্জায় রাখা যায়। আর তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে মুসলিম দেশের নেতাদের অবস্থা হচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখতে সবাই চড়েছে বাঘের পিঠে এখন নামলেই বিপদ! তাই নামতে যাতে না হয় সে জন্য পশ্চিমা নেতাদের গোলাম হয়ে থাকাটাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ।

আজকে মুসলিম বিশ্বের সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যাধিগ্রস্ত, দুর্নীতিপরায়ণ চরিত্রহীন নেতৃত্ব। অতচ মুসলিম বিশ্বের মানুষের কাছে তাদের এ সমস্যার সমাধান আছে তা হচ্ছে কোরআনে ভাষায় “ওয়া আনিবু ইলা রাব্বিকুম ওয়াস্ লিমু লাহ” ফিরে এস তোমার রবের পথে এবং আত্মসমর্পণকারী (অর্থাৎ মুসলিম) হয়ে যাও কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কতটুকু মুসলিম হতে পেরেছি সে বিষয়ে উদাসীন!

আমাদেরকে শুধু কোরআন শুনলেই তো হবে না যদি তা হৃদয়ে দোলা না দেয়। আমাদেরকে কাজ করতে হবে; কীভাবে কোরআনের আলোতে সমাজ সংস্কার করা যায় –সেই চিন্তা করা, কীভাবে শিক্ষাতে এবং রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা যায় –সেটা ভাবতে হবে। বৃহত্তর আঙ্গিকে চিন্তা করতে হবে কীভাবে এই ব্যাধিগ্রস্ত, দুর্নীতিপরায়ণ চরিত্রহীন বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা যায়। তবে শুরু করতে হবে প্রথমে নিজের থেকে, পরিবার থেকে তার পর সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে। তাই চিন্তাধারা পরিবর্তন সব চেয়ে জরুরী আর এ পরিবর্তন আনতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে। বড় বড় মিটিং মিছিল করার খায়েশ ছেড়ে কয়েকটি পরিবার মিলে ছোট পরিসরে মাসে মাসে নিয়মিত পারিবারিক আসর বসানো যায় যেখানে দ্বীনের কথা হবে, কোরআনের তাফসির করা হবে। এ সব যে হচ্ছে না তা নয় তবে আরো বেশী বেশী করতে হবে। সামাজিক কল্যাণ মূলক কাজ কর্মে বেশী বেশী জড়িত হতে হবে।

আমরা যদি ইসলামী আদর্শকে একটি জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মানি তাহলে রাজনীতিকে ইসলাম থেকে বাদ দিতে পারিনা। কিন্তু রাজনীতি আবার এমনভাবে গৃহীত হবে না যে এটা ছাড়া ইসলামই হতে পারে না। Politics is a part of Islam, not the whole of Islam ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে যদি দলের সবাইকে নিয়ে ১০০% রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকতে হয় তাহলে ইসলামের সাফল্যের ট্রেন মিস করার চান্স ১০০% । কোনো ইসলামী দল আগে জনতার মাঝে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী না করে অর্থাৎ জনগণের হৃদয় ও মন জয়ের (winning heart and mind) প্রচেষ্টা না করে রাজনীতির lime light দিকে দাবিত হলে ব্যর্থতা আসতে দেরী হবে না।  সময়মত হোমওয়ার্ক না করে অসময়ে মিটিং মিছিল কিংবা হরতাল করে কোন লাভ নাই? বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে কোন ইসলামী দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত বাদশাহ হওয়া নয় বরং বাদশাহ তৈরির কারিগর (king maker)হওয়া।

ইসলামে বিশ্বাসী যুবকেরা বিভিন্ন প্রফেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের সাথে জড়িত হতে হবে। কীভাবে যোগ্য লিডার তৈরি করা যায়, পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিবে। এমন ধরণের এমন হাজারো কাজ আছে যা করে সমাজের বিভিন্ন ফিল্ডে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো যাবে। উঠতে বসতে মিটিং মিছিল হরতাল করে শত্রুদের পেনিক বাটন দাবিয়ে কোন লাভ নাই। তার চেয়ে ধৈর্য ধরে পজেটিভ কাজে মনোনিবেশ করে মানুষের হৃদয় ও মন জয় করতে হবে। ইসলাম ও আধুনিক জ্ঞান অর্জনে নিজেদের প্রচেষ্টায় যত বেশী সময় দেয়া যাবে তত দ্রুত একটি বুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন যুব সমাজ গড়তে সহজ হবে এবং তারাই আনতে পারবে একদিন সমাজের পরিবর্তন।

দিনের শেষে মুসলিমদের জন্য যে বিষয় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাহল তার  মনের ভিতরের আসল অভিপ্রায় তথা নিয়্যাত কি? আল্লাহ মানুষের মনের ভিতরের তথা হৃদয়ের আকুতি দেখেন সেখানে নির্ভেজাল থাকলে সে বান্দারা তাদের কাজে অবশ্যই আল্লাহর সাহায্যে বিজয় আশা করতে পারে। আর বিজয় না হলেও তাকে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করা জন্য যে সুযোগ দিয়েছেন সে জন্য সে সৌভাগ্যবান কেননা আল্লাহ কারো ভাল কাজের অবমূল্যায়ন করেননা। সময় মত এর প্রতিদান আল্লাহ তাকে দিবেন যা অবিশ্বাসীরা কল্পনাও করতে পারেনা।

Video Source: C-SPAN, BBC, AJ+

Loading

Comments are closed.