ঈদোত্তর শুভেচ্ছা নিয়ে বহুদিন পর আবার আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আশা করি ব্লগের বন্ধুরা সবাই ভাল আছেন। দীর্ঘ আট মাস যাবত আমি অসুখের বিরুদ্ধে জীবন-মরণ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এ যুদ্ধে জয়ী হতে সবার দোয়া ও শুভ কামনা পাবার আকাঙ্ক্ষা প্রবল।
বন্ধুরা, আজ একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই, আশা করি বিরক্ত হবেন না।
সাহিত্যের পাতায় আমরা যারা বিচরণ করি কেউ আমরা পেশাদার বা স্বনামধন্য পণ্ডিত ব্যক্তি নই। অনেকেরেই উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত নেই। মনে হয় বেশীর ভাগই আমরা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ অথবা ছাত্র। আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তবে বেশীর ভাগই ‘ক্যাজুয়েল’ বা ‘সিজনাল’। একটু আধটু সাহিত্য প্রীতি আছে বলেই এখানে আমাদের পদচারণা। সূতরাং আমাদের কাছ থেকে শতভাগ শুদ্ধতা আশা করা বাহুল্য।
যেহেতু কেউ আমরা পেশাদার বা পন্ডিত ব্যক্তি নই সুতরাং আমাদের যতিচিহ্নের ব্যবহার ও বানানের শুদ্ধতায় গলদ থাকতেই পারে। যেকোন বিষয়ে গলদ থাকা দোষের কিন্তু একটু আধটু গলদের জন্য তা পরিত্যাজ্য হবে এমনটা ভাবা মানেই হল সাহিত্যের সেই সৃষ্টি কিংবা তার স্রষ্টার প্রতিই অবিচার করা। তবু, বানানের প্রতি আমাদের আরো সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন।
একথা বলে ভুল (আমরা স্কুল জীবনে ‘ভূল’ লিখতাম) বানানের স্বপক্ষে সাফাই গাইছি না। আসলে বাংলা বানান নানান পর্বে এসে নানান রূপ ধরে আমাদের বিভ্রান্ত করে ফেলেছে। প্রমিত বানান রীতি অনেকের পক্ষেই যথাযথ অনুসরণ করা হয়ে উঠে না অনেকের পক্ষেই তা সম্ভবও নয়।
সতর্ক থাকা সত্ত্বেও, প্রায়ই আমি বানান ভুল করি। তারমধ্যে কিছু আছে ‘টাইপো মিসেটক্’ আর দৃষ্টিবিভ্রম আবার কিছু আছে ‘কনফিউশন’। সব সময় হাতের কাছে অভিধান রাখা এবং দেখা হয়ে উঠে না। অন্যের কথা জানিনা, আমি নিজে এখনো পর্যন্ত বাংলা বানানের উপর ‘অফলাইন’ ভার্ষনের (অটো-কাারকশন) কোন অভিধান ইনস্টল করতে সক্ষম হইনি। অভ্র’র একটা ইনস্টল করেছিলাম কিন্তু কাজ করতে দেখিনা। কোন বন্ধুর খোঁজে ”অফলাইন’ ভার্ষনের (অটো-কাারকশন) কোন অভিধানের সন্ধান থাকলে দয়া করে জানালে বাধিত হব। তাছাড়া সময় সুযোগের অভাবে এতটা পেশাদারীত্ব মূলক সতর্কতাও অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
কালের বিবর্তনে সাহিত্যে কথ্য ভাষা সহ শ্লীল-অশ্লীল, খিস্তি-খেঁউড় অনেক কিছুই ঢুকে পড়েছে, সে সব এখন সাহিত্যে মেনেও নেয়া হয়েছে। অথচ এক সময় কেবল শুদ্ধরূপের বাইরে অন্য কোন ভাষারীতিতে সাহিত্য রচনার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। কালে চলিতরূপ প্রতিষ্ঠা পেল। ক্রমে কথ্যভাষাও এখন সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। বিশেষ করে আজকাল নাটকে অহরহই কথ্য ভাষার ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। সেখানে অনেক খিস্তি-খেঁউড় ও স্থান পাচ্ছে।
বানান বিভ্রম চীরকালই ছিল কিন্তু ইদানিং নানান রীতির প্রবর্তন হয়ে প্রাচীন শিক্ষিতদের জন্য বেশী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মান সম্মত সাহিত্যের জন্য নিঁখুত বানান অবশ্যি প্রয়োজন আছে। সাধারণ শিক্ষিতদের জন্য হ্রস্ব-ও কার, দীর্ঘ-উ কার, কিংবা হ্রস্ব-ই কার, দীর্ঘ-ঈ কার প্রয়োগের দ্বিধা ও বিভ্রম বিশেষভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে। আমার মনে হয়; আমরা যারা ব্লগের সৌখিন সাহিত্য চর্চাকারী, তাদের এজাতীয় ত্রুটিকে বড় করে না দেখে মেনে নেয়া ভাল। কতক ক্ষেত্রে ‘শ’ ‘ষ’ ‘স” ‘ন’ ‘ণ’ ‘উ’ ‘ঊ’ ‘ই’ ‘ঈ’ ইত্যাদি বেশ বিভ্রমের সৃষ্টি করে। এসবের ভুলে ভাষা পরিশীলিত হয়না বটে, কিন্তু খুব কি সৌন্দর্য্যহানী ঘটে? আমার মনে হয় বিষয়গুলোকে অনেক বড় ভুল না ভেবে ছোট ভুল হিসাবে মেনে নিয়ে লেখককে সংশোধনের প্রেরণা দেয়া ভাল।
খুঁজলে আমার এই লেখাতেও অনেক ভুল পাওয়া যাবে। তাই বলে ভুলের কথা ভেবে বসে থাকলে তো আমার মনের ভাবটাও জনসমক্ষে তুলে ধতে পারতাম না? সুতরাং লেখককে প্রেরণা যোগানোর স্বার্থে ছোট-খাট ভুলগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই বাঞ্চনীয়।
সাহিত্যের পাতায় যাদের বিচরণ তারা একে অপরকে এবিষয়ে আমার সহায়তা করতে পারি। গতকাল কবীর হুমায়ূনে’র নির্দেশিত একটি শুদ্ধ বানানের জন্য আমি তাঁর কাছে ঋণী। ‘ঋদ্ধ’ বানানটি নিয়ে গলদঘর্ম হয়ে যখন ভুল করে ‘ঋদ্য’ লিখেই দায় সেরেছিলাম তখন তিনি সঠিক বানানটি আমায় ধরিয়ে দিলেন। তার কাছে আবারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বানানের পাশাপাশি যতিচিহ্নের ব্যবহার নিয়েও আমাদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সঠিক যতিচিহ্নের অভাবে অনেক লেখাই তার ভাব ও উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে।
আজ আর না, সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আবারো দেখা হবে অন্য কোন বিষয় বা সমস্যা নিয়ে। সবাই ভাল থাকুন।
ধন্যবাদ।