বাঘের গালে হরিণ চুমু দেবে!

যার যত বয়সই হোক না কেন, আমাদের সকলের মধ্যে কিছু চিন্তা এবং কয়েকটি বস্তু, কমন বা সাধারণ। এইরূপ কমন বা সাধারণের মধ্যে প্রথমটি হলো একটি চিন্তা: যথা আমরা কেমন আছি বা আমরা ভালো আছি কিনা—এই প্রশ্নটি। দ্বিতীয় চিন্তাটি হলো, আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ কেমন আছে—এই প্রশ্নটি। আমাদের দেশে আমরা তিন প্রকারের পঞ্জিকা বা ক্যালেণ্ডার অনুসরণ করি। প্রথমেই হলো খ্রিস্টীয় বা সৌর ক্যালেন্ডার, দ্বিতীয়টি হলো ইসলামী বা হিজরী বা চন্দ্র ক্যালেন্ডার, তৃতীয়টি হলো বাংলা ক্যালেন্ডার। ইসলামী বা হিজরী ক্যালেন্ডার এর সম্পর্ক চাঁদের ওঠা-নামার সঙ্গে। খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার সূর্যের ঘূর্ণণের উপরেই নির্ভরশীল। পাশ্চাত্য জগত ৩১ ডিসেম্বরে নিজেদের মূল্যায়ন করে এবং ৩১ ডিসেম্বর দিনের শেষে ১ তারিখের সূর্যদ্বয়ের পূর্ব থেকেই নববর্ষকে স্বাগতম জানাতে থাকে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূর্য এবং চন্দ্র প্রসঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনে, সব মানুষ স্বীকার না করলেও মুসলমানদের জীবনে অবশ্যই, সূর্য এবং চন্দ্র উভয়কে সম্পৃক্ত করেছেন। এখন চন্দ্র বছরের রবিউল আউয়াল মাস চলছে। এই ১২ তারিখ হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এ প্রসঙ্গে আরেকটু কথা কলামের শেষের দিকে আবার বলবো। যাহোক, নিজের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করা এবং আগামী ঘণ্টা দিন সপ্তাহ মাস বা বছর নিয়ে স্বপ্ন দেখা একটি স্বাভাবিক কর্ম। একটি ফজরের নামাজ থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত একটি মূল্যায়নের সময়। মাগরিবের নামাজ থেকে রাতের শেষে ফজরের নামাজ পর্যন্ত আরেকটি মূল্যায়নের সময়। শুক্রবারের দুপুরে, জোহরের নামাজের বদলে জুম্মার নামাজ পড়া হয়; পরবর্তী জুম্মা পর্যন্ত একটি মূল্যায়নের সময়। একটি মাসের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী মাসের প্রথম দিন পর্যন্ত একটি মূল্যায়নের সময়। এইরূপভাবে একটি বছরের প্রথম দিন থেকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত একটি মূল্যায়নের সময়। মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মূল্যায়নের উপর নির্ভর করে নিজের কর্মপন্থা ও ল্যবস্তু স্থির করা বা সংশোধন করা এটাও একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রোপটেই আজ আমরা দুই তিনটি মূল্যায়নমূলক অনুচ্ছেদ লিখবো।

২০১৪ সালটি কেমন গেল এই প্রশ্নের উত্তর একেকজন একেক নিয়মে দিবে। কেউ বলবেন আগের বছর তথা ২০১৩ থেকে ভালো গিয়েছে কারণ, ২০১৩-এর মতো অনেক হরতাল, অনেক অবরোধ ইত্যাদি হয়নি। অনেকে বলবেন অত ভালো যায়নি কারণ, যেই আপাত-শান্তি আমরা ২০১৪ সালে দেখেছি সেটা শান্তি নয় সেটা অশান্তির গর্ভ। কে কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কে কোথায় বড় হয়েছেন সেটার প্রোপটে সহজেই বলা যায় যে, অনেকেই পর্বত দেখেননি, অনেকেই পাহাড়ও দেখেননি। আমি ভাগ্যবান যে আমি পর্বত এবং পাহাড় উভয়ইটিই দেখেছি। অনেকেই সমুদ্রও দেখেননি, অপরপে আমি সমুদ্র দেখেছি কারণ আমি সমুদ্র পাড়েরই ছেলে। ১৯৮৮ এবং ১৯৯১ সালে দুই দুইবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটি প্রদেশ বা রাজ্য যার নাম হাওয়াই (দ্বীপপুঞ্জ), সেখানে বেড়াতে গিয়েছি সরকারি কাজে। এই দ্বীপপুঞ্জ প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত। এই প্রদেশ বা রাজ্যের রাজধানীর নাম হনুলুলু এবং এটা ওয়াহু দ্বীপে অবস্থিত। এই দ্বীপপুঞ্জের সর্ববৃহৎ দ্বীপের নাম হাওয়াই। এই হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত আছে দুইটি বড় আগ্নেয়গিরি। একটির নাম: ‘মোনাকিয়া’ যেটি ৪৬০০ বছর আগে সর্বশেষ সক্রিয় ছিল। অন্যটির নাম ‘মোনালোওয়া’ এবং সাম্প্রতিককালের পৃথিবীর সকল সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে, এইটি অন্যতম। পৃথিবীর সকল সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এটার উচ্চতাই সবথেকে বেশি। এই আগ্নেয়গিরি তথা পর্বতের চূড়া সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪,১৭০ মিটার তথা ১৩,৬৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। হেলিকপ্টারে করে আমাদের কয়েকজনকে আগ্নেয়গিরি মুখ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। মুখটাই মনে করুন একটা ফুটবল খেলার মাঠের অর্ধেকের সমান আয়তন এবং গভীর গর্ত। ঐ পর্বত বা আগ্নেয়গিরির মুখ দেখলে আপাত দৃষ্টিতে কিছুই মনে হবে না। কিন্তু যখন এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নিউৎপাত হয় বা লাভা বের হয়, তখন এই পর্বতের ধারে কাছে কেউ যেতে পারে না। লাভা বের হলে পরিস্থিতি কীরকম দাড়ায় সেটা যেন সফরকারী বা পর্যটকগণ বুঝতে পারেন তার জন্য আগ্নেয়গিরির পাশেই মিউজিয়াম আছে যেখানে অতীতের লাভা উদগিরণের বা অগ্নিউৎপাতের ভিডিও দেখানো হয় বিবিধ মন্তব্যসহ। এই উদাহরণটির সঙ্গে ২০১৪ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিকে তুলনা করা যায়, যদি আপনারা কেউ গভীরভাবে চিন্তা করে তুলনা করতে চান।

বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক কর্মীগণ বিভিন্ন প্রকারের কষ্টে জর্জরিত আছেন। হাজার হাজার কর্মী এবং তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগণ, সরকার কর্তৃক রুজু করা মামলার কারণে অথবা সরকার দলীয় ব্যক্তিগণ কর্তৃক রুজু করা মামলার কারণে ঘরবাড়ি ছাড়া। ঘরবাড়িতে আসলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। অতএব, পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে না থাকাই শ্রেয়। বাড়িতে থাকতে না পারলে, জমিতে কে চাষ দেবে, মুদি দোকানটা কে চালাবে, দর্জির দোকানটা কে দেখবে, খেজুর গাছটা শীতকালে কে কাটবে, শিশুটি অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে কে নিয়ে যাবে, যে অস্থায়ী চাকরি করতেন বা মাস্টাররোলে চাকরি করতেন বা দৈনিক বেতন ভিত্তিতে চাকরি করতেন সেই চাকরিটার কী হবে? কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক-সাহস করে বাড়িতে এসে থেকেছেন। দশ পনেরো দিন কেটে যায় বিনা উপদ্রবে। তারপর হঠাৎ করে একদিন রাত্রে সাড়ে বারোটা একটার দিকে বাড়িতে পুলিশ এসে হাজির। সেই যে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তিন চার বা সাত মাস পর ঐ কর্মী জামিনে বের হতে পারলেন। শুধু সময়তো নয়, এক লরে অধিক বা দুই লরেও বেশি টাকা খরচ হয়েছে জামিনটা নিশ্চিত করতে। এই খরচগুলোর কোনো রশিদ নেই। এই টাকাটা যোগাড় করতে কর্মীকে জমিটা বন্ধক রাখতে হয়েছে। আর কর্মীদের মধ্যে যার জমি নেই তিনি তার বউয়ের এবং শ্বাশুড়ীর গয়না বন্ধক দিয়েছেন। অথবা চার পাঁচজন আত্মীয় বা বন্ধু থেকে ধার নিয়েছেন। কর্মী, জামিনে বের তো হলেন বটে, তবে মাথার মধ্যে দুইটি চিন্তা ঘুরছেই। সেই দুটি চিন্তা হলো, আবার কবে নতুন করে মামলা ঘাড়ে চাপে এবং দ্বিতীয় চিন্তা হলো, ধার করা টাকা ফেরত দিবেন কীভাবে। এই সব কিছু সরকারপ করেছে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের উপরে মানসিক চাপ বিস্তার করার জন্য, যেন কর্মীরা নিজের নিরাপত্তা ও নিজের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং অতএব কর্মীগণ কেইউ আপনার জোটের বা দলের পে কোনো আন্দোলনে নামতে না পারেন। এই প্রক্রিয়ার নাম হামলা-মামলার রাজনীতি। এই হামলা-মামলার রাজনীতি পুরো ২০১৪ সালটিকে ব্যস্ত রেখেছে।

আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা বলতেই হবে। কর্মীদের অনেকের মনে বিগত কয়েক মাস যাবত অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ঢাকায় থাকলে ২০ দলীয় জোটের অনেক দলের কর্মীদের সঙ্গেই দেখা হয় কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে। নির্বাচনী এলাকা, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় থাকলে, পরিকল্পিতভাবেই ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরীক বিএনপির কর্মী, অথবা গুরুত্বপূর্ণ শরীক জামায়াতে ইসলামী বা খেলাফতের কর্মী এবং ছোট শরীক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কর্মীদের সঙ্গে সাাত হতেই থাকে। সর্বশেষ সাাত করে আসলাম রবিবার ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪। সাাতে কর্মীরা যেসব প্রশ্নগুলো করতেই থাকেন, সেগুলো অনেকটা এরকম, “আন্দোলন হবে তো?”, “এবার পারবেন তো?”, “কখন শুরু হবে?”, “ঢাকা প্রস্তুত তো?” ইত্যাদি। এই কলাম পড়ছেন, বুধবার ৩১ জানুয়ারি। এরই মধ্যে আপনারা দেখেছেন বুধবার ২৪ তারিখ ঢাকা মহানগরের কোর্ট-কাচারি এলাকায় এবং তার আশেপাশের এলাকায় কীরূপ জঙ্গী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সরকারি রাজনৈতিক দলের উষ্কানীতে। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। কারণ ২০ দলীয় জোট তাদের সম্মেলনের তারিখ এবং স্থান ঘোষণার পর, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারি রাজনৈতিক দলের কর্মীগণও একই তারিখ একই সময় একই স্থানে জনসভা অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দেন। অতএব গাজীপুর জেলার সরকারি প্রশাসন আইন-শৃংখলা রার অজুহাতে, সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেন। অর্থাৎ ২০ দলীয় জোটকে মিটিং করতে না দেওয়া। গাজীপুরে সাম্প্রতিককালে কোনো বড় রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়নি। আমার মূল্যায়নে সরকার কোনোমতেই চাচ্ছে না, ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীগণকে ৫ জানুয়ারি ২০১৫-এর পূর্বে সমন্বিত হতে। ২৭ ডিসেম্বর তারিখে ২০ দলীয় জোটকে গাজীপুরে মিটিং করতে না দেওয়ার কাজটি একান্তভাবেই অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। মাত্র কিছুদিন পূর্বে ৭ই নভেম্বর তারিখেও, বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে মিটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মতাসীন সরকার, ২০ দলীয় জোটকে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হতে উষ্কানী দিচ্ছে। সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডে, ২০ দলীয় জোটের কর্মীদের মনে এবং দেশের গণতন্ত্রমনষ্ক মানুষের মনে জিদ চেপে বসছে। অনেকেই বলছেন যে, সরকারের এইরূপ কর্মকাণ্ড প্রতিহিংসাপরায়ণ। এই প্রোপটে ২০ দলীয় জোটের কর্মগণ রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য শুধু প্রস্তুত বললে কম হবে, শুরু করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন বললেই যথার্থ হবে।

বছরটা কেমন গেল এই নিয়ে কথা তুলেছিলাম। তার মাঝখানে আন্দোলনের কথা এসে গেল। একটা বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনের নাম প্রায় সকলেই জানেন। সেই ম্যাগাজিনটার নাম টাইম। তারা প্রত্যেক বছর শেষ হওয়ার সময় ঐ বছরের সবচেয়ে “আলোচিত চরিত্র” নিয়ে আলোচনা করে এবং তাকে প্রচ্ছদে আনে। তাকে ম্যান অফ দি ইয়ার বলে অথবা পারসন অফ দি ইয়ার বলে। এবছর ২০১৪ সালের প্রধান চরিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে “ইবোলা ফাইটার”— অর্থাৎ, বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়া ইবোলা নামক মহামারী মরণব্যাধীর বিরুদ্ধে, নিজেদের জীবনের প্রতি হুমকি মেনে নিয়েই, যারা যুদ্ধ করেছেন সেই সকল মানবতার প্রতি নিবেদিত প্রাণ সাহসী ব্যক্তিদেরকেই সম্মান দিয়েছে, টাইম ম্যাগাজিন ম্যান অফ দি ইয়ার বলে। এই ঘটনা উল্লেখের পর সম্মানিত পাঠকের সঙ্গে মত বিনিময় করছি যে, বাংলাদেশে যদি এরকম ম্যান অফ দি ইয়ার বের করতে হয়, ২০১৪ সালের জন্য, তাহলে কাকে করা যেতে পারে? এটা কি ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন পরিচালনাকারী নির্বাচন কমিশন? অথবা, এটা কি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, যিনি সম্মানিত জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় যে পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ বেতনভুক্ত বা উচ্চ সম্মানীভুক্ত উপদেষ্টা সেই তথ্যটি প্রকাশ করেছেন? অথবা এটা কি জনাব এইচটি ইমাম যিনি অবলীলায় এবং সাবলিল ও স্বচ্ছভাবে বাংলাদেশের মানুষের অনেক বড় একটি উপকার করেছেন এই কথা বলে যে, তিনি সাবেক ছাত্রলীগার সরকারি কর্মকর্তাদেরকে দিয়েই নিজেদের ছক-আটা নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন ৫ জানুয়ারি তারিখে? অথবা ঐ সকল নাম না জানা বীর পুরুষগণ যারা প্রতি পরীাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে জাতিকে শিার েেত্র অগ্রগতি সাধনে মহতি ভূমিকা পালন করেছেন? সুযোগ পেলে জরিপ-ভোটের মতো করে আপনাদের মতামত নিতাম। যদি বলি যে, ইনারা সকলেই সমষ্টিগতভাবে মুখ্য চরিত্র, তাহলেও থেকে যায় একটি নিষ্পত্তি না করা প্রশ্ন। সেই অনিষ্পন্ন প্রশ্নটি হলো, কার বা কাদের সাহসে অথবা কার বা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সকল মুখ্য চরিত্রগুলো তাদের ভূমিকা পালন করতে পারলেন এবং পারছেন। সেই পৃষ্ঠপোষক কি দেশের বাইরে না দেশের ভেতরে? আজকের এই কলামের মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা চূড়ান্ত করবো না। এটা রেখে দিচ্ছি আগামী কোনো এক দিনের জন্য।

সম্মানিত পাঠক, গত মাসখানিকের মধ্যেই দু’চারটি ুদ্র ঘটনার বড় তাৎপর্য আমি তুলে ধরি। চট্টগ্রাম মহানগরে, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে রেল-এর একটি ইঞ্জিন, রেললাইন ছেড়ে প্ল্যাটফরমের উপর উঠে গিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক, ইঞ্জিনের দুইজন ড্রাইভারই ঐ সময় ঘুমাচ্ছিলেন। (তুলনা, সরকারও প্রশাসনের ইঞ্জিনকে জনগণের উপর তুলে দিচ্ছেন। প্রশাসন লাইনের উপর না থেকে, বে-লাইনে গিয়ে জনগণের উপর চড়াও হচ্ছে)। ২৬/২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরের শাহজাহানপুরে শিশু জিয়াদের ঘটনা মর্মস্পর্শী। একে তো ৩০০ ফুট গভীর চিকন গর্তটির মুখ খোলা ছিল যার কারণে শিশুটি সেখানে পড়ে যায়। সরকারি উদ্ধারকারীরা কিছুই করতে না পেরে, ঘোষণা করে যে, ওখানে কোনো শিশু পড়ে যায়নি। অর্থাৎ শিশু জিয়াদকে নিয়ে স্থানীয়রা নাটক সৃষ্টি করেছে!! এই প্রোপটে, ৩/৪ জন শিশু ও একজন কিশোর কেন বলেছিল যে, তারা ঐ গর্তের ভেতর থেকে শিশুর কান্না শুনেছিল, এই কথা বলার কারণে আটক হয়ে থানায় যেতে বাধ্য হয়। ঐ শিশু-কিশোরদেরকে খাওয়া-দাওয়া ব্যতিতই সেখানে কয়েক ঘণ্টা জেরার সম্মুখীন হয়। শিশুর পিতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং বারবার প্রশ্ন করা হয় যে, তোমার শিশুকে তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ? বেসরকারি উদ্ধারকারীদের প্রচেষ্টায় শিশু জিয়াদ উদ্ধার হওয়ার পরেই মাত্র, থানা থেকে শিশুর পিতা মুক্তি পায়। (তুলনা, অস্থির প্রকৃতির বন্য হাতির মতো, সরকারি প্রশাসন যন্ত্র, যা ইচ্ছা তাই করছে, কারণ তারা সবকিছুতেই বিপদ অনুভব করে। রাজনৈতিক সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হুকুমে, সরকারি কর্মকর্তাগণ এত প্রকারের বেআইনী কাজ করেছেন যে, তারা এখন একটা আশংকায় এবং অস্থিরতায় ভুগছেন। যার কারণে তারা অমানবিক এবং নির্দয় আচরণ করছেন জনগণের প্রতি)। ২৯ ডিসেম্বর সকালবেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একটি ট্রেনকে কমলাপুর এলাকায় ধাক্কা মারে একটি বড় মালবাহি লম্বা ট্রাক তথা কাভার্ড ভ্যান। এতদিন ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজি, ছোট বাস, প্রাইভেট কার ইত্যাদি উড়ে যেত। ২৯ তারিখে সড়ক পথের কাভার্ড ভ্যান রেলপথের বগিকে উড়িয়ে দুমড়িয়ে দিয়েছে। কাভার্ড ভ্যান নিজেও তিগ্রস্থ হয়েছে। (তুলনা, দুই প্রকারের। একটি প্রাচীন প্রবাদ আছে “বয়স বৃদ্ধ কাল, হরিণ চাটিছে বাঘের গাল”। অর্থাৎ বয়সের কারণে বাঘ যখন কিছুই করতে পারে না, তখন, বাঘের দৃষ্টিতে সবচেয়ে প্রিয় খাবার যেই প্রাণী সেই প্রাণী তথা হরিণ কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই বাঘের কাছে গিয়ে বাঘের গালে চুমু দেয়। বাঘের শক্তি যেমন দাঁতে এবং সামনের দুই পায়ের থাবায়, তেমনই বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের শক্তিও দলীয় ব্যক্তিদের ভর্তি করার মাধ্যমে শক্তিশালী করা আইন-শৃংখলা রাকারী বাহিনীর উপর। বাঘের যেমন দাঁত পড়ে যায়, তেমনই আইন-শৃংখলা রাকারী বাহিনীও তাদের ভুল বুঝতে পারবে অচিরেই। জনগণ হরিণ, তারা বাঘের গালে চুমু দিবে। তুলনা দুই, কাভার্ড ভ্যান রেলবগিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। চেষ্টা করলে জনগণও অত্যাচারী শাসকের ধারক ও বাহকগণকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারবে)।

সম্মানিত পাঠক, এতণ বছরটা কেমন গেল বা আগামীতে কী হতে পারে, সেই নিয়ে ুদ্রাতিুদ্র আলোচনা করলাম। এখন ভিন্ন প্রসঙ্গে যাওয়াটা আবশ্যক মনে করছি। একটু আগে আলাপ করতে গিয়ে আমরা উল্লেখ করেছি যে, আগামী ৪ জানুয়ারি হবে হিজরী ক্যালেণ্ডারে তৃতীয় মাস তথা রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ। এই দিনটি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয়তম বন্ধু বিশ্ব ব্রম্মাণ্ড্য তথা তাবত সৃষ্টিকূলের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এর জন্মদিন। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যারা আগ্রহী, তারা জানেন যে, মহান আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)কে কতটুকু ভালোবাসেন। আমরাও প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)কে ভালোবাসি। আমি মনে করি, তিনি পৃথিবীতে এসে আমাদের উপকার করেছেন। অতএব, তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি তথা মহানবী (সা.) পৃথিবীতে না আসলে কী হতো পৃথিবীর অবস্থা, সেটা যুগপৎ গবেষণা ও কল্পনার বিষয়। সেজন্য রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে আমি এবং আমার মতো কোটি কোটি মানুষ একটি খুশিতে থাকি, আনন্দে মাতোয়ারা হই, একা এবং সম্মিলিতভাবে। সে আনন্দ প্রকাশ করি সামাজিক অঙ্গনে। এই দিনটিই ঈদ-এ মিলাদুন্নবী। অর্থাৎ প্রিয় নবী (সা.)-এর জন্মদিন উপল্েয আনন্দ প্রকাশ ও মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

১২ রবিউল আউয়াল মাসের তারিখের আলোচনা আরেকটু করে বিষয়টির ইতি টানছি, এই কলাম শেষ করছি। শুধু নবীকে ভালোবাসলে তো হবে না। তাঁর আদর্শকে, তাঁর শিাগুলোকে বুঝতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে অনুসরণ করার জন্য। আমার ব্যক্তিগত পরিচয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল—এটা যেমন সত্য, এটাও সত্য যে, গত সাত বছর এক মাস যাবত আমি রাজনৈতিক অঙ্গনের একজন প্রত্য কর্মী তথা আমি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নামক একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান। আমি বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে রাখতে চাই যে, আমাদের দলের নামে কল্যাণ শব্দটি কেন? আমার দলের নামের আলোচনা, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখের আলোচনা উভয়টি একই সূত্রে গাঁথা। সম্মানিত পাঠককে অনুরোধ করবো পবিত্র কোরআনের একটি সূরার কথা স্মরণ করতে। সূরাটির নাম, সূরা আম্বিয়া। এটি পবিত্র কোরআনের একুশতম সূরা। এই সূরার ১০৭ নম্বর আয়াত দ্রষ্টব্য। আয়াতটির আরবি উচ্চারণ এইরূপ: ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন। পবিত্র কোরআনের একাধিক বাংলা অনুবাদ মতে এই আয়াতের অর্থ এইরকম: “আমি তো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।” ‘রহমত’ নামক আরবী শব্দটি বাংলা ভাষায় এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত যে, আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে, এটা একটা আরবি শব্দ। এই শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে চার পাঁচটি বাংলা শব্দ উল্লেখ করা যায় যথা: মঙ্গল, উপকার, উসিলা, খাতির, কল্যাণ, সৌজন্যে ইত্যাদি। আমি মঙ্গল বা উপকার বা কল্যাণ এইরূপ তিনটি শব্দকে অগ্রাধিকার দিলাম। অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু এই পৃথিবী নয় সমস্ত সৃষ্টিজগতের জন্যই রহমতস্বরূপ। অর্থাৎ উপকারের উসিলা অথবা কল্যাণের প্রতীক, কল্যাণের ধারক, কল্যাণের বাহক, কল্যাণের প্রতিভূ। মহানবী (সা.) হচ্ছেন এই জাগতিক জীবনে আমাদের সকলের স্বীকৃত আদর্শ। তিনি যদি কল্যাণের ধারক-বাহক-প্রতীক-প্রতিভূ হন, তাহলে আমরা যারা তার উম্মত আমাদেরও কল্যাণমুখী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। আমাদেরও চিন্তায়-চেতনায় এবং বে কল্যাণ লালন করা প্রয়োজন। শুধু লালন নয়, কল্যাণমুখী কর্ম করা এবং সেই কর্মের ফল মানুষের দোড়গড়ায় পৌছে দেয়ার জন্য চেষ্টা করা প্রয়োজন। এই প্রোপটেই আমি অনুভব করেছি যে, সর্ব প্রকারের কল্যাণমুখী কর্মের সমন্বয় ও দিক নির্দেশনার জন্য রাজনীতির অঙ্গনে উৎকর্ষ সাধন বা উৎকর্ষতা অর্জন অপরিহার্য। অতএব, অথবা অপর ভাষায়, রাজনীতির ল্যবস্তুই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের তথা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী সকলের কল্যাণ সাধন করা। এই প্রোপটেই আমাদের দলের নাম রেখেছি কল্যাণ পার্টি। আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে আমরা কামনা করছি যে, আগামী দিনে ও বছরে, যাদের উপরই দায়িত্ব অর্পিত, তারা সকলেই যেন বাংলাদেশের সকলের প্রতি কল্যাণমুখী হন এবং কল্যাণ সাধনে ব্রতি হন

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *