বাংলাদেশকে কারা ধ্বংস করতে চায়?

দেশকে নিয়ে আমাদের মত সাধারণ মানুষ তথা আম-পাবলিককে ভাবতে দেখলে  অনেকেই বলবেন দেশকে নিয়ে ভবাবার লোকের কি অভাব আছে? যারা ভাবার উপযুক্ত তারা ভাবছেন এবং এ ব্যাপারে কাজ হচ্ছে চিন্তার কারণ নাই! আশা করি তাদের কথা সঠিক হউক। তবে কেন জানিনা বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করলে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়।

সম্প্রতি টাইমস অফ আসাম  পত্রিকার এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যে বাংলাদেশের উপর কি মারাত্মক অভিযোগ!

ভারতের টাইমস অব আসামের সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ইসলামী চরমপন্থি গ্রুপটি এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় এ পত্রিকাটি আরো লিখে “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা, হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালে হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ নির্মাণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বাংলাদেশের মাদ্রাসা ও সামরিক বাহিনীর অংশ হয়ে যাওয়া ইসলামপন্থীরা। ওই প্রবন্ধটিতে সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে মাদ্রাসাগুলোকে গণতন্ত্র সহায়ক করে তোলার উপায় নিয়েও সজীব ওয়াজেদ জয় আলোচনা করেন।

অনেকেই মনে করেন, ঐ প্রবন্ধটিই ছিল পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম ফভিয়া ও মুসলিম বিদ্বেষী মহলের প্রভাবিত পরাশক্তির সহায়তা নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার মিশনে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনার প্রতিলিপি।

এদিকে টাইমস অফ আসামের প্রতিবেদনের বিষয়ে আমাদের সময় ডট কম লিখেছে “ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই প্রবন্ধের দাবি ও সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের ভারতীয় আশঙ্কার পেছনে যুক্তি দাঁড় করাতে তুলে আনা হচ্ছে বিতর্কিত সাংবাদিক সালাহউদ্দিন সোয়েব চৌধুরীর প্রসঙ্গ। সালাহউদ্দিন সোয়েব চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত উইকলি ব্লিটজ-এর সম্পাদক। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোয় প্রচার করা হচ্ছে, জিহাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতারসহ অনৈতিকভাবে শাস্তির মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জিহাদ বিরোধী অন্যান্য সাংবাদিকদের ওপরও বাংলাদেশের এই গোয়েন্দা সংস্থাটি চড়াও হয়েছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে ভারতীয় মিডিয়ায়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে ভারতের কংগ্রেস কূটনৈতিক দরকষাকষিতে সফল হতে বাংলাদেশসহ ভারতে ধর্মীয় চরমপন্থী মতবাদের বিকাশের হুমকিকে নানানভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ২০০৮ সালে প্রকাশিত গবেষণাকে নতুন করে সামনে আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সামরিকবাহিনীতে চরমপন্থী গ্রুপগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের গবেষণার উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আর্মির অধিকাংশ সদস্য ইসলামী বিপ্লবের সমর্থক। এই অংশটি যে কোনো সময় বাংলাদেশকে একটি তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করতে পারে। এমনকি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে তালেবানদের একটি গ্রুপ এরইমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।” (সুত্র: আমাদের সময় ডট কম নভেম্বর ১৭, ২০১৩)

অতএব আজ আমাদেরকে জানতে হবে 

১) বাংলাদেশে তথাকথিত ইসলামী সন্ত্রাসবাদের কথা সর্বত্র কারা প্রচার করতে চায়?

২) আর এসব  সন্ত্রাসী সংগঠনের এজেন্ডা কি?

৩) কে বাস্তবে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে আগ্রহী?

৪) আর কারা পিছনে থেকে উসকানি দিয়ে এধরনের অপকর্মকে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনে ব্যবহার করতে চায়?

৫) কারা এসব অপকর্মের  সুবিধাভোগী এবং কারা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের  শিকার হয়ে বাংলাদেশ আজ যে গভীর সংকটে পড়েছে অর্থাৎ দেশ আজ যে সামাজিক, রাজনৈতিক ক্রস রোডে এসে দাঁড়িয়ে আছে তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োয়জন উপরোক্ত প্রশ্নগুলার উত্তর অন্বেষণ। দেশের মানুষ এখন এসব বুঝতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ বিষয়ে কলকাতার সুবীর ভৌমিকের নিবন্ধ প্রসঙ্গে  বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মাজার তার এক সাম্প্রতিক কলামে লিখেছেন, “এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বন্ধুরা! কারণ আমরা গোলামের বাচ্চা গোলাম। আমাদের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই যে কেউ বলে যেতে পারে। আমাদের রাষ্ট্র বলে কিছু নাই, আমাদের স্বাধীনতা আত্মমর্যাদা বলে কিছু নাই। আমরা কাকে নির্বাচিত করব কাকে করব না সে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারও আমাদের নাই। অতএব ‘ইন্ডিয়া মাস্ট ডু অল ইট ক্যান টু সি এ ফ্রেন্ডলি রেজিম রিটার্ন টু পাওয়ার’। কলকাতার সুবীর ভৌমিক বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে চাকুরী নিয়ে বাংলাদেশের ঘাড়ে বসেই এই কথা বলেছেন। এরপরও তিনি স্বপদে থাকবেন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিল্লীকে উস্কানি দিয়ে যাবেন।”

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কলকাতাবাসী লোকদের চাকুরী পাওয়া এ সরকারের আমলে যত সহজ তা বোধ হয় আগে কখনও হয়নি। গত জানুয়ারি মাসে একদিন সোহগ পরিবহন সার্ভিসের বাসে চড়ে ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম  তখন আমার পাশেই এক তরুণীকে ফোনে আলাপ করতে শুনলাম বাংলাদেশ বেতারে চাকুরী হওয়ার সুসংবাদ তার আত্মীয় স্বজনকে জানাচ্ছেন। একটু পরে জানতে পারলাম সে মেয়ে অনেক আগেই সিলেট ছেড়ে কলকাতায় চলে গিয়েছিল এবং স্বামীর সঙ্গে সেখানেই থাকতেন এবং ভাল চাকুরী করতেন।। ঢাকায় এসে বাংলাদেশ বেতারে সংবাদ পড়ার চাকুরী পাওয়ায় সে তরুনী ভীষণ খুশী। তার খুশীতে আপত্তি না হওয়ারই কথা, তা নাহলে নিজেকে সাম্প্রদায়িকতার কলংকে কালিমাযুক্ত করব। তাই নয় কি? আবার অনেকে বলেন কয়বছর ধরে দেশে রহস্যজনকহারে হিন্দু পুলিশ আফিসার নিয়োগ ও তাদের দিয়ে আলেম সমাজ এবং মুসলিদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি যে এখন আর কারো কাছে অস্পষ্ট নয়।

ইতিহাস কি বলে?

ইতিহাস বলে, স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজকে  পরাজিত করে তাকে গ্রেফতার করে যখন কিছু সংখ্যক ইংরেজ সৈন্য নিয়ে যাচ্ছিল তখন মাঠে-ময়দানে যে সব শত শত জনতা দেখছিল এ দৃশ্য  তারাও যদি হুংকার দিয়ে উঠত তাহলে সেই সব সৈন্য তখন সেখান থেকেই পালিয়ে যেত। কিন্তু অসচেতন জনগণ বুঝতে পারেনি সিরাজের গ্রেফতারের সাথে সাথে কি ক্ষতি তাদের হতে যাচ্ছিল। ২০০বছরের জন্য এ অঞ্চলের স্বাধীনতাই শুধু হারিয়ে যায়নি সেই সাথে হারিয়ে গিয়েছিল আমাদের বিবেক, আমাদের সাহস, হারিয়ে ছিলাম আমাদের কত সম্পদ আর  সুযোগ করে দিয়েছিলাম লুটতে এ দেশের সম্পদ আর পরবর্তীতে সংঘটিত করাতে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ও বিদ্বেষ।

আজ যদি ইতিহাসের ১৯৪৭ ভারত ভাগ করে পূর্ব পাকিস্তান তার পর পাকিস্তান থেকে মুক্তি পাওয়া মুক্তি যুদ্ধের ফসল পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ করা এ সব ঐতিহাসিক ঘটনাগুলার দিকে তাকাই আর আজকের অবস্থার দিকে নজর দেই তখন কেন জানি মনে হয় এত ত্যাগ এত কষ্ট এসবই কি বৃথা গেল? আর কত রক্ত,  কত প্রাণ বলিদান করতে হবে এদেশকে একটি সভ্য অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে?

এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ হতে পারে কিন্তু অসাম্প্রদায়িক ছিল না। কয়েক বছর আগেও ইসলামের নামে  তথাকথিত ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বলে কিছু দেখে নাই। কিন্তু এখন কিভাবে কোথা থেকে এসব শুরু হল? এ দেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলও ছিল সেক্যুলার দলও ছিল। আর যারা ধর্মের আর্দশে দেশ গড়ার রাজনীতি করতে চায় তারাইবা সন্ত্রাসী হতে যাবে কেন? এতে কার লাভ হবে?

তবে দু:খের বিষয় হল আজকের তরুণ প্রজন্মের একটি বিরাট অংশকে কুলশিত করা হয়েছে অপসংস্কৃতির নেশায়। তারা যেন এক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সেই ঘুমিয়ে পড়া জাতিকে যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা কি সত্যি না মরীচিকা তা বুঝার সচেতনতা হারিয়ে ফেলেছে আজকের প্রজন্ম। তাই অনেককে আক্ষেপ করে বলতে দেখি, “সেই স্বপ্ন দেখা গভীর ঘুম ভাঙ্গবে করিডোর হওয়া বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতীয় ট্রাকের ঝনঝনানি ও হর্নের আওয়াজে। উঠে দেখবে মরুময় এক বাংলাদেশ যা ভারতীয় ট্রাকের ধুলা ও ধোঁয়ায় অন্ধকার।” বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিদ্ধেষী হতে চায় না কিন্তু ভারতীয় চাপে বাংলাদেশের  অবস্থা কাহিল । তাই তো দেখা যায় আজ বাংলাদেশের নির্বাচন  যেন ভারতের নির্বাচন। তা না হলে ভারত কোটি কোটি টাকা খরচ করবে কেন? ২০০৮ সালে হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ভারতের ষড়যন্ত্র ও বিনিয়োগটিও ছিল বিশাল। তাকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারত অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে প্রকান্ড এক প্রচারযুদ্ধ। আসামের দৈনিক নববার্তা পত্রিকাটি গত ২১/১০/২০১৩ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় লিড খবর ছাপে যে,হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। উক্ত পত্রিকায় ভাস্কর দেব আরো রিপোর্ট করে,ভারত গত ২০০৮ সনের নির্বাচনে ৮ শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে  প্রতি নির্বাচনেই ভারত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে।  ছোট একটি দেশ যার চারিদিকে একটি বিশাল দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত এ অবস্থায় তার পাশে স্বাধীনভাবে ঠিকে থাকা যে আসলেই কঠিন তা এখন আর বাংলাদেশের কারো কাছে অস্পষ্ট হওয়ার কথা নয়। দু:খের ব্যপার হল বর্তমান সরকারের নতজানু নীতির ফলে ভারত বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ট্রানজিট নিয়েছে কোনরূপ রোড টাক্স বা ট্রানজিট ফি না দিয়েই।  ভারত বেরুবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর না দিয়েই। গঙ্গার পানি নিয়েছে, এবার তিস্তা, কুশিয়ারা ও সুরমার পানিতেও হাত দিচ্ছে। কিন্তু এ প্রচণ্ড চাপের মুখে দেশের স্বার্থে এবং আমাদের স্বাধীনতা বজায় রেখে ও আত্মমর্যাদার সহিত ঠিকে থাকতে হলে যে প্রয়োজন সততা ও জাতিয় ঐক্য যা আমদের মাঝে নাই। ভারতের সফলতা হল তাদের দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে, এ দেশের শিল্প বাণিজ্যকে ধ্বংস করতে অর্থাৎ বাংলাদেশকে তাদের পণ্যের একচেটিয়া বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশে এক শ্রেণীর বিবেক ও মস্তিষ্কশুন্য মোড়ল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তাদের টাকায়, যাদের কাছে দেশের স্বার্থ ও স্বাধীনতার কোন মূল্য নেই । তাদের কাছে অর্থ ও ক্ষমতার লালসাই হচ্ছে বড়। আর এদেরকে সময় থাকতে প্রতিহত না করলে এক দিন আসবে যখন এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বর আদৌ কোন প্রয়োজন আছে বলেই কেউ মনে করবে না।

নিচের ভিডিওটা দেখলে কিছু আভাস পাওয়া যায় দেশ কোন দিকে যাচ্ছে।

 

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *