কর্মব্যস্ত এই শহরের রাজপথ দিয়ে নানা বয়স ও পেশার মানুষ নিয়ে ছুটে চলছে নিশান পরিবহন নামের টেম্পো । পিছনে বাদুরের মত ঝুলে “ফার্মগেট গুলিস্তান.. ওস্তাদ বায় লন” জাতীয় নানা কথা বিরামহীন ভাবে বলে চলছে ১০ বছর বয়সের রনি নামের এক দুরন্ত কিশোর । নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আনন্দের সাথে টেম্পোর হেলপারি করে চলছে রনি । ওর বাবা নেই শুধু মা আর এক বোনের সংসার । বছর খানেক আগে বাবা মারা গেছে । মা অন্যের বাসায় কাজ করে । তবে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে যাবার কারণে প্রতিদিন কাজে যেতে পারে না । তাই এক বাসায় কাজও বেশী দিন থাকে না । দু চার দিন না গেলে তারা অন্য মানুষ রেখে নেয় । তাই রনির ইনকামের উপর ওদের তিন জনের সংসার নির্ভরশীল ।
টেম্পো এসে ফার্মগেট থেমেছে । এখানে অনেক যাত্রী নেমে গেছে । নতুন কয়েক জন উঠেছে কিন্তু আগের মত ভীড় নেই। তাই টেম্পো চলা শুরু করলে রনি ভেতরে এসে বাসার সুযোগ পায় । যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া শেষে, টাকা গুনতে গিয়ে হঠাৎ রনির চোখ আটকে যায়- সামনের ছিটে মায়ের কোলে বসে থাকা ৫/৬ বছরের ছেলের হতে একটি খেলনা প্লেনের দিকে । স্মৃতির পাতা উল্টে রনি খুঁজে পায় বছর তিনেক আগে ওর বাবা এক বৈশাখের মেলা থেকে ওর জন্য প্ল্যাস্টিকের খেলনা প্লেন কিনে দিয়েছিল । রনির সেকি আনন্দ ওই প্লেন নিয়ে । সারাদিন চোখের আড়াল হতে দিত না প্লেনটাকে । ও তখন বস্তির স্কুলে ক্লাস টু’তে পড়ে । ওদের ক্লাসে সবার চেয়ে ভাল ছাত্র ছিল রনি । সব স্যার ম্যাডাম ওকে খুব ভাল বাসত । সবাই রনির বাবাকে বলত- তোমার ছেলে লেখাপড়া করে একদিন অনেক বড় হবে । খেলনা প্লেনটি নিয়ে খেলতে খেলতে আর বস্তির উপর দিয়ে আকাশে ছুটে চলা প্লেন দেখে রনির পাইলট হাবার শখ হয় । ছুটে গিয়ে বাবা কে বললে বাবা বলে -“পাইলট হতি হলে অনেক পড়তি হিবি। আমি কামাই করে টেকা দিমু আর তুই পড়বি”। হঠাৎ গাড়ীর হার্ড ব্রেকে কেঁপে ওঠে রনি । টেম্পো এসে থেমেছে গুলিস্তান । যাত্রীরা নামার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে । রনির পাশের এক যাত্রী বলে উঠল “এই পাইলট নাইমা সাইড দে”। প্লেনের পাইলট হবার স্বপ্ন দেখা রনি এখন টেম্পোর পাইলট । নতুন যাত্রী আশায় “ফার্মগেট.. মিরপুর..” বলে চিৎকার করে খুঁজে ফিরছে যাত্রী ।
অনেক ধন্যবাদ
বহুত খুব ভালা পেলাম। আপনি সত্যি ভাল লিখেন।
ভাই, অসাধারণ..
কতশত রনিদের কত হাজার স্বপ্নই টেম্পোর তলায় পিষ্ট হয়েছে, হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু তবুও আশায় বুক বাঁধি, আশায় ছুটে চলি।
আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তি অনন্য, চালিয়ে যান।
মানুষতো আশা নিয়েই বেচে থাকে।
খুব ভাল লেখা। বরং বলবো অতি ভাল। এখানে কাহিনী/বাস্তবতা প্রাণ স্পর্শ করেছে, একটি স্থানের ও কালের human condition কে উত্থাপন করতে পেরেছে। চালিয়ে যান।
অনেক ধন্যবাদ।মানুষ ও মনবতার কথা বলতে চাই।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। সুন্দর একটি ব্লগে আমন্ত্রন জানানোর জন্য। নিয়মিত লেখার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
ভাই,
সংলাপব্লগে স্বাগতম। সুন্দর একটি লেখা! আরো লিখা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার অনু গল্প পড়ে ঢাকার রাস্তার বাস্তব ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে! আপনি শক্তিমান লেখক! লেখা জারী রাখবেন। ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।