গোলাম আযম উত্তর বাংলাদেশ ও একটি বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ

মগবাজারস্থ কাযী অফিস লেন মসজিদের পারিবারিক কবরস্থানে গোলাম আযম এখন স্থায়ী অধিবাসী। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবেই বেঁচে ছিলেন। তাঁর প্রস্থান তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির আরও বেশী মৌলিক অবস্থানে স্থান করে দিয়েছে যা আজ ইতিহাসের অংশ।

গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস ছিলেন, ভাষা আন্দোলনের তাঁর ঐতিহাসিক ভুমিকা ছিল (রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে তাঁর স্বাক্ষরে প্রথম স্মারকলিপি দেয়া হয়), ভাষা সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ায় তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। কর্মজীবনে এসে তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের পর ক্রমান্বয়ে জামায়াতেরও শীর্ষ (আমীর) অবস্থানে আরোহণ করেন। বাংলাদেশ পূর্ব সকল আন্দোলন সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় নেতা হিসেবে।
মাঝখানে ৭১ এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সশস্র যুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভুমিকা নিয়ে তিনি হয়েছেন প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর রাজনৈতিক শত্রুরা তাঁকে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধান হিসেবে চিত্রায়িত করেছে। গণমাধ্যম তাঁকে রাজাকার-আলবদরের মূল হোতা, কপট চরিত্রের সিম্বল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর ৭১ এর ভুমিকা সম্পর্কে বহুবার কথা বলেছেন। বর্ণনা করেছেন আওয়ামীলীগ তথা ভারত ব্লগীয় রাজনীতির সাথে তাঁর মতবিরোধের পূর্বাপর ইতিহাস। স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধ কালীন রাজনৈতিক বিরোধী মতে স্বীয় অবস্থানের কথা। পাশাপাশি দৃঢ়তার সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে অস্বীকার করেছেন তাঁর এবং জামায়াতের কোন ধরনের হত্যা, সন্ত্রাস এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। “৭১ বিষয়ক রাজনীতিতে গোলাম আজমের সহজ সরল স্বীকারোক্তি-অবস্থান এবং সেই নীতিতে অটল থাকা’ তাঁকে চিরদিন এক অবর্ণনীয় অপবাদের অংশীদার করেছে। তাই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গোলাম আযম কে চরম বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে।

তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল, তিনি দীর্ঘ সময় প্রবাসে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। দেশে ফিরে আসার পর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোপনে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে তিনি তাঁর নাগরিকত্ব ফেরত পান। ৯০ এর গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট উত্তরনে তিনি কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা দিয়ে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথনির্দেশ করেন যা এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূল ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গোলাম আযম যেখানেই রাজনৈতিক সভা করতে গিয়েছেন সেখানেই তাঁর সভা বানচাল বা প্রতিহত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চরম এই প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে গোলাম আযম তাঁর দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কখনো বিএনপি কখনো মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ এর সাথে যুগপৎ কিংবা জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। ফলে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা এবং জিয়া পত্নী খালেদা জিয়া উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্মৃতি আছে গোলাম আযমের সঙ্গে।
গোলাম আযম শুধু দলের শীর্ষ নেতাই ছিলেননা, তিনি তাঁর অনুসারীদের আদর্শিক শিক্ষকও ছিলেন। তাঁর রচিত বিপুল সাহিত্য ও পুস্তকাদি দলের কর্মীদের সাথে তাঁকে ছাত্র-শিক্ষকের নৈতিক বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। শুধু তাঁর দলের লোকজনই নন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনুসারিদের মধ্যে যাদের পাঠাভ্যাস আছে তাদের প্রায় সকলের বুকশেলফ খুঁজলে গোলাম আযমের দু-চারটি বই খুঁজে পাওয়া যাবে এটা নিশ্চিত। তিনি তাঁর কর্মীদের কাছে ছিলেন আধ্যাত্মিক গুরু সমতুল্য। তাঁর পেছনে নামাজ পড়বার জন্য, তাঁর খুতবা শোনার জন্য প্রতি জুম্মা নামাজে তাঁর মসজিদে বিশেষ সমাগম হত। গোলাম আযম এর মসজিদে এসে তাঁর মাধ্যমে বিয়ে (আকদ) পড়িয়ে সংসার জীবন শুরু করার এক বিশেষ আগ্রহ তাঁর অনুসারীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যেত। ফলে তাঁর মত এত বিয়ে (আকদ) জীবনে কোন নেতা তো দুরের কথা কোন আলেমও পড়িয়েছেন কিনা সন্দেহ আছে।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হল প্রতিকুলতার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে তাঁর দলকে তিনি একাধিকবার ক্ষমতার অংশীদারীত্ব পর্যায়ে নিতে পেরেছিলেন। দল যখন অনুকুল পরিস্থিতিতে উপনীত সবাইকে অবাক করে দিয়ে তখন তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন উত্তরসূরিদের হাতে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বময় কোন রাজনৈতিক দলের এরকম মৌলিক নেতার জীবদ্দশায় দলের সুদিনে শীর্ষ দায়িত্ব অনুসারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া, দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও দল এবং কর্মীদের কাছে এত বিপুল জনপ্রিয় থাকার নজির খুবই বিরল।
জীবন সয়াহ্নে গোলাম আযম কে যুদ্ধাপরাধী এবং ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯০ বছরের আমৃত্যু জেল দিয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। যে বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল তাঁকে এ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে সে আদালতের কর্মকাণ্ড, প্রক্রিয়া ও বৈধতা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথেষ্ট আপত্তি উঠেছে। ইতোমধ্যে স্কাইপ কেলেংকারী, বিচারের রায় আগেই ফাঁস হওয়া, আদালতের সামনে থেকে সাক্ষী অপহরণ, শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে আইন সংশোধন সহ নানা বিতর্কিত কারণে দেশের গন-মানুষ এই রায় নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে। গোলাম আযম কি সত্যিই অপরাধী ছিলেন! নাকি তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে নির্মম জুলুম করা হয়েছে তা আপীলেট ডিভিশনে চূড়ান্ত ভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগেই তিনি পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই গোলাম আযম এর ৭১ সম্পর্কিত ভুমিকা এবং তাঁর দায় এখনও জাতির কাছে অনিষ্পন্নই রয়ে গেল।
গোলাম আযমের মহাপ্রস্থানে তাঁর প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষের যে আবেগ এবং শোক-সহমর্মিতা প্রকাশ পেয়েছে তা নিঃসন্দেহে নতুন এক অধ্যায়। গোলাম আযম কে নিয়ে দেশ-বিদেশে যে মাতম তাতে নিজ দলের নেতারাও অবাক হয়েছেন। গোলাম আযমের জানাজায় বাস-ট্রাক ভাড়া করে লোক আনার কোন দৃশ্য দেখা যায়নি (জামায়াত যেটা রাজনৈতিক সভা আয়োজনে বিভিন্ন সময় করে থাকে)। সেরুপ কিছু হলে বিরুপ মিডিয়ার শত-শত ক্যামেরার বদৌলতে সে দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমাদের হতো।
গণমাধ্যম গোলাম আযমের প্রয়াণ আনুষ্ঠানিকতায় যে খুঁত খুঁজে পেয়েছে তা হল অন্যকোন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক মিত্র বা সিভিল সোসাইটির বিশিষ্টজনদের তাঁর জানাজায় অনুপস্থিতি। 

এই অনুপস্থিতির আসল কারণ কি ? গোলাম আযমের প্রতি অশ্রদ্ধা না মিডিয়ার বিরুপ প্রচারনার ভয়ে এড়িয়ে যাওয়া ? আমি এরকম বহু বিশিষ্ট নাগরিকদের জানি যারা গোলাম আযম কে ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করেন, জীবনে বহুবার তাঁর সাথে একান্তে সাক্ষাৎও করেছেন কিন্তু, তাঁরা গোলাম আযমের জানাজায় উপস্থিত হতে সাহস করেননি। কেউ কেউ আন্তরিক ভাবে এটাও চেয়েছেন যে গোলাম আযমের শেষ বিদায়টা যেন বর্ণাঢ্য হয়। খালেদা জিয়া সহ বিএনপি নেতারা গোলাম আযমের সাথে মিটিং-সভা কি কম করেছেন? কিন্তু আজ তাঁরাও সমলোচনা মোকাবিলার ভয়ে শোক প্রকাশে বিরত থেকেছেন।
বাংলাদেশে রাজাকার, আলবদরের দোসর বা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে সীল এঁটে দেয়া একটি দারুণ রাজনৈতিক কৌশলগত অস্ত্র। যে কেউ এই অস্ত্র কে ভয় পায়। হোক তিনি সেক্টর কমান্ডার, বীরউত্তম, বীরবিক্রম বা যেকোন পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা। একথা সবাই জানে, এই অস্ত্রের সর্বশেষ স্বীকার হয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকার বীরউত্তম এবং খোদ সরকারেরই আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক।
একজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা একবার ঘরোয়া আলোচনায় আক্ষেপ করে তাই বলেছিলেন “বঙ্গবন্ধু যদি আজ বেঁচে থাকতেন এবং নীতি বা যুক্তির প্রশ্নে তাঁর কোন কথা বা বক্তব্য যদি গোলাম আযম বা তাঁর দলের পক্ষে যেত তাহলে এই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি! তাঁকেও (বঙ্গবন্ধু কে) হয়তো রাজাকার বানিয়ে ফেলত”।
আমি মনেকরি গোলাম আযম বিরোধীদের সাফল্য ও ব্যর্থতা এই একই চক্রে ঘুরপাক খেয়েছে। গোলাম আযম বিরোধী প্রচারণায় তাঁরা সফল এ কারণে যে গোলাম আযমের প্রতি সহমর্মী বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকগণকেও তারা সে ভীতির শিকারে পরিণত করতে পেরেছেন। অপরদিকে তাদের এই কৃত্রিম বাড়াবাড়ি মূলক প্রচারণা গোলাম আযম এর প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুণ। গোলাম আযম সম্পর্কে জানা, জানতে গিয়ে তাঁর অনুসারী হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়েছে। এর পাশাপাশি মুখে গোলাম আযম বিরোধী হলেও ভেতরে ভেতরে গোলাম আযমের প্রতি সহমর্মী সুধী-বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর বিকাশ ঘটেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তাই তারা আজ নিজেরাই নিজেদের প্রতি সন্দেহ প্রবণ। শহীদ মিনারে নয়জন বিশিষ্ট নাগরিক কে সম্প্রতি নিষিদ্ধ করা এবং তা নিয়ে পরবর্তী প্রতিক্রিয়াই তার উজ্ঝল প্রমান।

গৌরবজনক শেষ বিদায়
গোলাম আযমের গৌরবজনক শেষ বিদায়ের আক্ষেপ হয়তো বহুদিন তাড়িয়ে বেড়াবে তাঁর বিরুদ্ধ পক্ষকে। ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে তাঁকে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তির প্রতিক হিসেবে দাড় করাতে সক্ষম হলেও গোলাম আযম ডাকসুর জি,এস ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তাঁর মৌলিক অবদান এবং তিনি ছিলেন কেয়ার টেকার ফর্মুলার জনক- এই স্বীকৃতি গুলোকে তারা ইতিহাস থেকে কখনো মুছতে পারেননি। ঠিক তেমনি গোলাম আযমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশের প্রাণকেন্দ্রে, আনাচে-কানাচে, বিশ্বময় যে জনস্রোত হৃদয়ের ছাপ রেখে গেছে ইতিহাসের আর্কাইভ থেকে তা কি কোন পার্থিব শক্তি কখনো মুছতে পারবে?

গোলাম আযমের পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর কফিন কাঁধে বহন করে তাঁকে কবরস্থ করেছেন তাঁর সন্তান, দৌহিত্র এবং তাঁর শিক্ষার উত্তম অনুসারী ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন সভাপতি বৃন্দ। তাঁর সুযোগ্য সন্তান সাবেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আমান আজমি দাফন শেষে আল্লাহর যে দোয়া করেছেন তাতে বুক ভাঙ্গা কান্নায় হাত তুলে শামিল হয়েছেন সবাই। পরম করুণাময়ের কাছে তাঁর কায়মনোবাক্যে সর্বশেষ আর্তি ছিল, “যারা আমার বাবার বিরোধীতা করেছেন হে আল্লাহ তুমি তাদের কে আমার বাবা সম্পর্কে জানার, তাঁর সাহিত্য পড়ার তাওফিক দাও। তাদের উত্তরসুরিরা যেন তাদেরকে ভবিষ্যতে এজন্য দায়ী করে। গোলাম আযমের স্বপ্ন ছিল এদেশে ইসলামী বিপ্লব হবে, তাঁর বিরোধীদের সন্তান ও উত্তরসুরীদের দ্বারা তুমি তা বাস্তবায়ন করে দিও… আমীন। আমার কাছে এই প্রার্থনাকে খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।

নীতি, যুক্তিবোধ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে গোলাম আযম বিরোধীদের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড যদি এভাবেই ক্রিয়াশীল থাকে- আপনারাই বলুন তাহলে তাঁর (গোলাম আযম) সন্তান যে দোয়া করেছেন, গোলাম আযম উত্তর বাংলাদেশে যদি সত্যি সত্যি তা বাস্তবায়ন হয় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ থাকবে কি ?

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *