গণতান্ত্রিক বিধিসিদ্ধতাকে কবর দেয়া হল।

মিসরীয় জাতীর ভাগ্যের কি পরিহাস! সে দেশের গণতন্ত্রের ভাগ্যাকাশে আবার নেমে আসলো কালো অন্ধকার। গণতান্ত্রিক অধিকারের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্রকেই কবর দেয়া হল। ২০১৩ সালের জুলাই মাসের শুরুতে দেশটির রাজনীতিতে যা ঘটল ইতিহাসে তা হয়ে থাকবে এক কালো অধ্যায়।  যে কাহিনীর জন্ম  নিল তা যেমন দু:খজনক ইসলামী রাজনীতির জন্য তেমনি সে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মিশরের হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম একটি স্বৈরাচার মুক্ত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত লক্ষ লক্ষ জনতার রায়কে পদদলিত করা হল, গণতান্ত্রিক বিধিসিদ্ধতাকে কবর দেয়া হল।

স্বৈরাচারী মোবারক শাসনামলের সৃষ্ট কায়েমি স্বার্থবাদিদের স্বার্থান্বেষী চক্রের অবিরাম অপপ্রচেষ্টায় ফিরে আসছে কুখ্যাত শাসনের প্রেতাত্মা। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহ্ম্মদ মুরসী বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, বামপন্থী মোর্চাকে সাথে নিয়ে ও মিশরীয় কিছু সাধারণ মানুষের অধৈর্য্যর সুযোগ নিয়ে ধন্যাট্য ও পুঁজিপতিদের মালিকানার মিডিয়ার অপকৌশলে হাজারো মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে পুনরায় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার যে নাটক করা হল যা মিশরের ইতিহাসে সত্যিই এক কালো অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত থাকবে। প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সংবিধান স্থগিতের ঘোষণা দেন সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। যে পাতর চাপায় পড়ল  মিশরের সাধারণ জনগণ তা থেকে কবে মুক্তি পাবে সেটাই হচ্ছে এখন বড় প্রশ্ন।

সামরিক সরকার বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করার প্রথমেই গণতন্ত্রের উদাহরণ ও উপহার দিল মিসরের চারটি টিভি চ্যনালের বন্ধ করার মাধ্যমে। সেই সাথে বন্ধী করল জনতার ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতাদেরকে। তাই আজ অনেকের মনে আশংকা  দীর্ঘমেয়াদী একনায়কত্ব পাতন করে আরব বিশ্বের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনুপ্রাণিত সবচেয়ে জনবহুল যে আরব দেশ তা কি এক বছর শেষ না হতেই গণতান্ত্রিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হল?  অনেকের মতে মুরসির হয়তো মারাত্মক ভুল হয়েছে যখন তার জনপ্রিয়তা শীর্ষে ছিল তখনই দেশের সামরিক বাহিনীকে পুরাপুরি বেসামরিক তত্বাবধানে নিয়ে আসার ব্যর্থতায়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার মোহাম্মদ আইয়ুব লিখেছেন Morsy’s gravest mistakes have resulted from a deliberate policy of accommodation and not, as is commonly believed, confrontation.  পরে যখনই তিনি কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছিলেন তখন বিরোধীরা চিৎকার শুরু করে। মুরসি সব সময় বলতেন তিনি সকল মিসরের সবার প্রসিডেন্ট। মুরসি সবাইকে নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন এবং তার সরকারের বিভিন্ন পদে ও মন্ত্রিপরিষদে মুসলিম ব্রাদারহুড ছাড়াও বাহিরের লোকদেরকে নিয়েছিলেন। কিন্তু যখনই তার বিপক্ষে বিরোধীদের প্রতিবাদ একটু বাড়তে শুরু করল তখনই এরা মুরসির জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে চলে যেতে লাগল! এতে তার সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পেল। আর সে জন্য সামরিক বাহিনী দ্রুত ক্যু করার সুযোগ নিল।

অন্য দিকে মিডিয়াতে মুসলিম ব্রাদারহুড দেশে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে অন্যান্য মতের ও দলের মানুষের জীবন বিপদগ্রস্ত করে ফেলবে বলে এক ধরণের বায়বীয় আতংক ছড়াতে থাকে সর্বত্র। আসলে  দীর্ঘমেয়াদী একনায়কত্ব চালু থাকায় ও দুর্নীতি ব্যবস্থাপনায় মিশরে যে একটি শাসক শ্রেণী তৈরি হয়েছিল – যারা আরব বসন্তের ঝড় হাওয়ায় কিছুদিন অপ্রস্তুত ছিলো পাল্টা আক্রমণের যার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় এবং তাদের ভোটে মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল কিন্তু তাদেরকে, তাদের ইসলামী আদর্শ অনুসরন, সততা শহুরের উচ্চশ্রেনীর গুষ্টি মেনে নিতে পারে নাই শুরু থেকে। গত এক বছরে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের সুযোগে সেই অভিজাত শ্রেনীর তাদের স্বার্থ রক্ষায় পুনঃসংগঠিত হয়ে তারাই আবার ফিরে এসেছে ক্ষমতায়। মুরসিকে কেন সারনো হল তার কিছু বিশ্লেষণ দেখতে পাবেন নিচের লিংকগুলায়।

১) মুরসিকে কেন সরে যেতে হলো?
২) সি এন এন ওয়েব সাইটে প্রকাশিত মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার
মোহাম্মদ আইয়ুবের প্রবন্ধ ।

Loading


Comments

গণতান্ত্রিক বিধিসিদ্ধতাকে কবর দেয়া হল। — 2 Comments

  1. আপনার পোস্টটি পড়ে ফেইসবুকে দেয়া একটি কমেন্ট এখানে উল্লেখ না করে পারলাম না।
    *************************
    ‘মিশরে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত মুরসী সরকারকে এই ভাবে সরিয়ে দেয়াকে গণতন্ত্র বলেনা। এই চরম অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের সবকদার ওবামা বা ইউরোপের কেউ প্রতিবাদ জানায় নাই। তার মানে তারা স্পষ্ট ম্যাসেজ দিচ্ছে দুনিয়ার সব মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রণ হলেও ইসলামী মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রকে ব্যবহার করতে দেয়া হবেনা। যা আমরা আলজেরিয়া, ফিলিস্তিন ইত্যাদি দেশে দেখে আসছি। মুরসী যদি গণরায়ের বাইরে চলে গিয়ে থাকে তাহলে উচিত ছিল তাকে আবার নির্বাচন দিতে বাধ্য করার জন্য, যা হতো গণতান্ত্রিক। আমার মনে হয়না আবার নির্বাচনে ব্রাদারহুডকে সুযোগ দেয়া হবে। হলেও বাংলাদেশের মত ব্রাদারহুডের নেতা কর্মীদেরকে আইন আদালত দিয়ে মিথ্যা মামলা হামলা, নির্বাচনে অনুপযুক্ত, জেল ইত্যাদি ইঞ্জিনিয়ারিং করে তারা ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠিকে জিতিয়ে নিয়ে আসবে। তখন এই অন্যায় অনেক ব্রাদারহুড নেতা কর্মী মেনে না নিয়ে চরমপন্থার দিকে চলে যাবে। রাস্তায় রাস্তায় সুইসাইডাল স্কোয়াডের বোম ফাটবে।ভ্রাতৃঘাতি হত্যা চলতে থাকবে ”
    Munim Siddiqui

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *