কোন এক চম্পা্র কাহিনী

দুই বন্ধু নৃপেন্দ্র আর শুকুরালী হরহরি আত্মা।
নৃপেন্দ্রের বাড়ি মনু নদীর উত্তর তীরে রায়শ্র্রী গ্রামে, সে জাতীতে নাথ। শোনা কথা এই সম্প্রদায়ের প্রথম পুরুষ নাকি ছিল নাম পরিচয় হীন গর্তে (গাত) পাওয়া এক শিশু! যেহেতু গাতে পাওয়া গিয়েছিল বিঁধায় তাদেরকে নাথ সম্প্রদায় বলা হয়। এদের পূঁজাপাঠে কোন ব্রাহ্মণ যোগ দেন না। তাই নিজেরা নিজেদের একজন দিয়ে পুঁজোও পাঠ করে নেয়। মারা গেলেও চিরাচরিত হিন্দুদের মত ওদের না পুড়িয়ে গর্তে চাপ মাটি দিয়ে দেয়া হয়।

শুকুরালীর বাড়ি রায়শ্রী গ্রাম থেকে কিছুটা পূর্বে দনাশ্রী গ্রামে। দুনো জনই রায়শ্রী প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। সকালে ঘণ্টি পরার সাথে সাথে পিটি প্যারেডে দাঁড়ায়। স্কুলের হেড স্যার বিজয় বাবু সবুজ চাঁনতারা পতাকা হোষ্টিং করেন। ক্যাপ্টেন জোরে চিৎকার উঠে- সোজা হও। সবাই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ক্যাপ্টেন আবার নির্দেশ দেয় –জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন কর। সবাই হাত তোলে পতাকাকে অভিবাদন জানায়। এরপর শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত- পাক সার জমিন চাঁদ বাদ—–

এখানেই শেষ নয়,এরপর হেড মাষ্টার বিজয় বাবু ছাত্রদেরকে নিয়ে দেশাত্মবোধক গান গাইতে শুরু করেন নিজেও লাইনে ঘুরে ঘুরে গান- এই যে দেখছো পল্লীস্থান, এই পল্লী মোর জন্মস্থান, এই পল্লীতে বাসকরি ভাই আমরা হিন্দু মুসলমান। শুধু গান নয়। গানের সাথে সাথে কোলাকুলিও করে বুঝান হয় যে আমাদের মধ্য কোন ব্যবধান নাই। যে কোলাকুলি করত না তার কান বিজয় বাবু মলে দেন। প্রতিদিন এই পিটি প্যারেড এ শুকুরালী ও নৃপেন্দ্র পাশাপাশি দাঁড়ায় আর কোলাকুলিও করে । এই ভাবেই তাদের বন্ধুত্ব দিন দিন পাথরের মত শক্ত হতে থাকে।

এত দোস্তির মধ্যে নৃপেন্দ্রের মনে দুঃখ! শুকুরালীকে তার ঘরে খাওয়াতে পারেনা। একদিন তার মা’কে বলে-শুকুরালী আমার বন্ধু তারে এক বেলা আমাদের ঘরে ভাত খাওয়ান যায় না? মা – জীব কেটে বলে- রাম রাম কি অলক্ষণে কথারে বাবা। পাড়া প্রতিবেশী শুনলে আমাদের জাতী ছাড়া করবে। তুই আর ছেলে পেলেনা মুছলমান শুকুরালীর সাথে বন্ধুত্ব করলে! নৃপেন্দ্র বুঝল কোথাও সমস্যা আছে তাই তো মা ঐ কথা বলছে। সে চুপ করে গেল। মনে মনে বলে- মা তুমি জাননা আমি তো শুকুরালীর বাড়িতে কত খাই।

দিন যায় বছর যায়। দুনো জনই পড়া শোনায় বেশ অগ্রসর হতে পারে না। যেই সতের বয়সে পড়েছে নৃপেন্দ্রর তখন ওর মা নৃপেন্দ্রকে বিয়া করিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে শুকুরালী ও নৃপেন্দ্রের মধ্যে দুরত্ব বাড়তে থাকে। আগের মতো রাত বিরাতের আড্ডা হয়না। এখন সন্ধ্যা হতেই নৃপেন্দ্র বলে- মা ভাত দে! খাইয়া ঘুমাইয়া যাই। মা মুচকি হাসি হেসে জিজ্ঞাস করে – কিরে বাবা আগে তো শুকুরালীর সাথে রাত বিরাতে না ঘুরলে তোর পেটের ভাত হজম হতনা। এখন সন্ধ্যার সাথে সাথে দরজায় খিল দিস কেন? নৃপেন্দ্রও হাসে ঐ পাশে নতুন বৌটাও লজ্জায় মরে যাচ্ছে। নৃপেন্দ্র বলে- মা তুই না যে কি কস! নতুন বৌ ঘরে আছে না? ওরে ঘরে রেখে বাইরে ঘুরলে মানুষে কইবোটা কি? দে দে ভাতটা দে বৌটারে ভাত দিয়ে দিস। (চলবে)

(যদি ভাল লাগে আওয়াজ দিয়েন তাহলে আগ বাড়তে পারি—)

Loading

মুনিম সিদ্দিকী

About মুনিম সিদ্দিকী

ব্লগে দেখছি অন্য সহ ব্লগাররা তাদের আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন নিজ নিজ ব্লগে! কুঁজো লোকের যেমন চিৎ হয়ে শোয়ার ইচ্ছা জাগে তেমন করে আমারও ইচ্ছা জাগে আমি আমার আত্মপরিচয় তুলে ধরি! কিন্তু সত্য যে কথা তা হচ্ছে শুধু জন্মদাতা পিতা কর্তৃক আমার নাম আর পরিবারের পদবী ছাড়া আমার পরিচয় দেবার মত কিছু নেই! আমি এক বন্ধ্যা মাটি যেখানে কোন চাষবাস হয় নাই। যাক আমি একটি গান শুনিয়ে আত্মপ্রতারণা বর্ণনা শেষ করছি- কত শহর বন্দরও পেরিয়ে চলেছি অজানা পথে - কালেরও নিঠুর টানে- আমার চলার শেষ কোন সাগরে তা তো জানা নাই! ধন্যবাদ।

Comments

কোন এক চম্পা্র কাহিনী — 3 Comments

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *