কোন এক চম্পা্র কাহিনী ২

আগের মত আড্ডা দিতে নৃপেন্দ্রকে না পেয়ে শুকুরালীও রাগে দুঃখে ফুলতে থাকে। তাদের এত দিনের দোস্তি একটা মাইয়া পাইয়া লাটে উঠে গেল? শুকুরালী রাগে কসম করে, শালা নৃপেন্দ্রের সাথে কথাই বলব না। দেখি আমার দিন যায় কিনা। নৃপেন্দ্রের সাথে যে দেখা হয়না তেমন না, মাঝে মধ্যে হয়। তবে সেই আড্ডায় নৃপেন্দ্রের মুখে অন্য কোন কথা না, শুধু বৌয়ের কথা, শুকুরালী রাগ হয়, কয়- বৌয়ের কথা ছাড়া আর বলার কিছু পাছ না? নৃপেন্দ্র বলে- দোস্ত তুই রাগ করস কিসের জন্য? আমি কই কি তুইও বিয়া করে দেখ বৌয়ের মধ্যে কি মজা? শুকুরালী আসমান থেকে পড়ে- বলে বৌয়ের মধ্যে কি আর মজা? বৌ কি খাইবার চিজ নাকি? নৃপেন্দ্র হো হো করে হাসে আর বলে –চিপার মজা পাস নাই তো তাই তুই বেয়াক্কল রই গেলি। জোয়ান মর্দ বেটা হইছস, বয়স ১৭ পার করে দিলে কিন্তু এর মধ্য চিপার মজা বুঝলিনা দোস্ত!! রাখ আসছে কালী পুজার সময় তোরে চিপার মজা শিখাই দিমুনে।

ঘোর আমাবস্যার রাতে কালী মন্দীরে পুজা শুরু, ব্রাহ্মণ ঠাকুর মন্ত্র পড়ে পুজাপাঠ সেরে কলসি ভরা পানিতে ফুঁ দিলেন। তারপর সর্ব প্রথম দেবীর প্রসাদ নরেন্দ্র কাকাকে এক কাপে ঢেলে দিতেই- কাকাও মা কালীর নাম নিয়ে পুরা কাপ গলায় ঢেলে দিলেন। পাশে ছিল কাকার ১৪ বছরের ছেলে নারায়ণ এবার ঠাকুর নারায়ণকেও কাপ ভরে এগিয়ে দিলেন। নারায়ণ এখন বিরাট প্রবলেমে কাউ কুই করতে থাকে, পাশে বাবা তিনি আবার কি মনে করেন! কিন্তু নরেন কাকাই বলে উঠলেন- বাবা নারায়ণ এটা মদ না এটা দেবীর প্রসাদ তুমি পান করো বাবা। নারায়ণ কি আর অপেক্ষা করে- গুপুত করে সব গলায় ঢেলে দিল। সব শেষে দেবীর চরণামৃত নৃপেন্দ্রও পেল। সেও ভরা কাপ গলায় ঢেলে দিল। এবার ঠাকুর শুকুরালীর দিকে কাপ বাড়িয়ে ধরল। কারণ ঠাকুর শুকুরালী যে মুসলমান বুঝতে পারে নাই। শুকুরালীও দ্বিধা করছিল, সে মুসলমান হয়ে মদ খাবে। ঠাকুর বলেন- খাও বাবা খাও এটায় কোন পাপ নাই এটা দেবীর প্রসাদ। নৃপেন্দ্রও চেপে ধরল অগত্যা ওদের দেখা দেখি সেও পুরা কাপ গলায় ঢেলে দিল। আর যায় কই গলা তলা জ্বলে গরল পানি টুকু কণ্ঠনালী দিয়ে চলে গেল।

বেশ কতক্ষণ লাগল সামাল দিতে।। তারপর নৃপেন্দ্রর কলার ধরে মন্ডপের বাইরে এনে এক চুটে চৌদ্ধ গুষ্ঠি উদ্ধার করলেও আস্তে আস্তে শুকুরালীও বদলে যেতে লাগে। মনে ঢেউ জাগে কিছক্ষণ আগের রাগ গোসা কোথায় যেন পালায়। শুকুরালী বলে দোস্ত কি খাওয়াইলা! আরও কিছু দিতে পারবা না?

নৃপেন্দ্র কয় এখনতো বিপদে ফেললে শুকুরালী!! আচ্ছা তোমার জন্য না হয় নদীর ওপারে পাট্টায় যাব। তোমার চিন্তা নাই আমি যামু আর আমু। তুমি মমতারে নিয়া খেয়া ঘাটের চালার ভিতর বসে থাকবা। শুকুরালী চমকে উঠে-জানতে চায়- মমতা? মমতা কে? আমি তো কাউরে আমাদের সাথে দেখছিনা। নৃপেন্দ্র কয়-এই আন্ধারে তুমি মমতারে কেমনে দেখবা, একটু সবুর কর,তারপর রসমাইলের সাথে দেখা করামু, সেই দিন না তুমারে বল ছিলাম চিপার কি মজা! আইজ রাইতে তুমি টের পাইবা! শুকুরালী জিগায়- তোর বউয়ের নাম কি মমতা? নৃপেন্দ্র খেক করে উঠে- দূর শালা! আমার বৌ মমতা হইব কেন?আমার বৌ খানকি নাকি! আমার বৌট মুছলমান নাকি তার নাম হইব মমতা! মমতা তোমার জ্ঞাতি মুসলমান ঘরের মাইয়া। শহর থেকে আমদানী করেছি।
রায়শ্রী গ্রামটা বেশ বড় পশ্চিম পাশে সব ঘর মুসলমান আর পূর্বপাশ সব ঘর হিন্দু। লম্বা বাঁশ বনের পাশ দিয়ে এসে তারপর মাজারটা পেরিয়ে, খেয়া ঘাটের ছনের ছাওয়া ঘরটার কাছাকাছি আসতে, নৃপেন্দ্র মুখে দুই আঙ্গুল ধরে শিষ দিল, রাতের নিস্তব্দতা কেটে কেটে শিষটা মনুর ঢেউএর আওয়াজে মিশে যেতেই, ছনের ছাওয়া চালার বেশ দুর থেকে হুক্কা হুয়া শিয়ালের ডাক ভেসে এল। নৃপেন্দ্রের মুখেও হাসি এল। যাক বাবা মেয়েটা এসেছে তাহলে। আসবেনা কেন নগদ ৫০টাকা দিয়ে এসেছিল আর দোস্তরে খুশী করলে আরও ৫০ দিব বলে ওয়াদা করেছে।

চলবে-

Loading

মুনিম সিদ্দিকী

About মুনিম সিদ্দিকী

ব্লগে দেখছি অন্য সহ ব্লগাররা তাদের আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন নিজ নিজ ব্লগে! কুঁজো লোকের যেমন চিৎ হয়ে শোয়ার ইচ্ছা জাগে তেমন করে আমারও ইচ্ছা জাগে আমি আমার আত্মপরিচয় তুলে ধরি! কিন্তু সত্য যে কথা তা হচ্ছে শুধু জন্মদাতা পিতা কর্তৃক আমার নাম আর পরিবারের পদবী ছাড়া আমার পরিচয় দেবার মত কিছু নেই! আমি এক বন্ধ্যা মাটি যেখানে কোন চাষবাস হয় নাই। যাক আমি একটি গান শুনিয়ে আত্মপ্রতারণা বর্ণনা শেষ করছি- কত শহর বন্দরও পেরিয়ে চলেছি অজানা পথে - কালেরও নিঠুর টানে- আমার চলার শেষ কোন সাগরে তা তো জানা নাই! ধন্যবাদ।

Comments

কোন এক চম্পা্র কাহিনী ২ — 1 Comment

  1. আপনার গল্প ভালো লেগেছে, ভালো লাগছে। এগিয়ে যান।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *