এ জন্য দায়ী কারা?

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস মিলে,বন্যা যে আসছে তাও বুঝা যায় কিন্তু ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নাই। তবে ভূমিকম্প যখন আসে কাউকে না জানিয়েই আসে এবং এসে ধ্বংস করে যায়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলা আগ্নেয়গিরি হয়ে ওঠা সিরিয়ায় ও মধ্যপ্রাচ্যে যে ভূমিকম্প নিয়ে আসছে এতে কোন সন্দেহ নাই। আর এ সবের জন্য প্রধান দায়ী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অপদার্থ রাষ্ট্র নায়কেরা তথা স্বৈরাচারী শাসকেরা। আইএস নামক ফেউকে সামনে রেখে মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের রাস্তা বন্ধ রাখতে যারা চক্রান্ত করে যাচ্ছিল তাদেরকেই বহন করতে হবে এর দায় ভার।

বাশার আল-আসাদের দল হচ্ছে ইসলামের সংখ্যালঘু শিয়া ধর্মীয় গোষ্ঠীর একটি উপগোষ্ঠী যার নাম আলাওয়াইজ (ʿAlawīyyah Arabic: علوية), বা  Alawis) । যাদেরকে অনেক শিয়ারাও বিপথগামী বলে আভিযোগ করে।  সেই আলাওয়াইজ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা হচ্ছে সিরিয়ার মোট জন সংখ্যার মাত্র ১২% । সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হচ্ছে সুন্নি মুসলিম। কিন্তু গত ৪০ বছরের অধিক কাল থেকে সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ  জনতার উপর সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্র ক্ষমতা চালিয়ে যাচ্ছে ।

২০১২ সালে শুরু হওয়া বাশার আল আসাদের সরকার বিরুধী শান্তিপূর্ন আন্দোলনকে গৃহযুদ্ধে রুপ দিয়ে প্রায় চার বছরে আড়াই লক্ষ ২৫০,০০০ নারী পুরুষ ও ৩০,০০০ শিশু নিহত হয়েছে।   ৪০ লক্ষ মানুষ  উদবাস্ত হয়ে জীবন বাচানোর তাগিদে শরণার্থী হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশয় নিচ্ছে

এদিকে সিরিয়ায় রাশিয়াকে বোমা ফেলতে দেখে সৌদি সরকারের পুতিনের সাথে  কথা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কি আসাদকে সরাতে, না মক্কাকে প্রটেকশন দিতে, না রাজপরিবারের স্বার্থ রক্ষার্থে? খাদে-মাইন হেরেমের “খাদিম” আল সাউদরা অবশ্য জানেন কীভাবে ইসলামের খাদেম হতে হয়। তাই তো ছুটে গিয়েছেন পুতিনের সাথে আলাপ করতে। আচ্ছা পৃথিবীর এমন কোন দেশ আছে যার নামকরন হয়েছে কোন পরিবারের নামে? পুতিন এত বোকা নয় যে মক্কা মদিনায় বোমা ছুড়বে।

মাত্র দুই তিন সপ্তাহ আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট গিয়েছিলেন মস্কোর জামে মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সেখানে নিশ্চয় ফুটবল নিয়ে আলাপ হয় নাই কিংবা  ইসলাম নিয়েও আলাপ হয় নাই। আলাপ হয়েছে একে অন্যের স্বার্থ রক্ষার কথা নিয়ে। পরের সপ্তাহে ইরানের সেনা প্রধান ভিজিট করেছিলেন তার পরই সিরিয়াতে আসাদকে রক্ষা করতে শুরু হয় রাশিয়ার বোমা বর্ষণ। অনেকে বলেন এটা হচ্ছে আইসিস নিধনের জিহাদ।  আইসিসকে সৃষ্টি করেছে কারা তা তো সবার জানা। ভাল কথা যদি আইসিস জঙ্গিরা শেষ হয়। পুতিন তো বলেছেন ওবামা ও তার লক্ষ্য এক শুধু ওবামা বুঝতে পারছেন না!

আসলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাহির থেকে যারাই  জড়িয়ে পড়েছে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে এখানে কেউ সিরিয়ার জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের খাতিরে, মানবতার খাতিরে লড়ছে না।  তবে সিরিয়ার সমস্যা বস্তুতান্ত্রিক এ সভ্যতার বিশ্বমোড়লদের মুখোশ উন্মোচন যে হচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নাই।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানও  জানেন তিনি কি করছেন। মুসলিম বিশ্বের নেতাদের মাঝে এই লেকটাকেই মনে হয় বুদ্ধিমান। তুরস্কের সেকুল্যারদেরকে কিভাবে কলা খাওয়াতে হয় তিনি ভাল জানেন। এখানে মনে রাখতে হবে সিরিয়ার সমস্যার সাথে তুরস্কের পিকেকে সমস্যা মিশিয়ে তুরস্ককে ভাঙ্গার যে ষড়যন্ত্র চলছে সেটাকেও এরদোগানকে রুখতে হচ্ছে। ইউরোপের একমাত্র মুসলিম প্রধান দেশ তুরস্ক সে দেশও এখন ফকির হওয়ার পথে যাচ্ছে রাশিয়ার সাথে সিরিয়া নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে। পশ্চিমারা চাইবে তুরস্ককে দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধ করাতে যাতে তুরস্ককে ভাঙ্গা সহজ হয়। তুরস্কের আরেক সমস্যা হচ্ছে কুর্দিস মিলিশিয়া যারা আলাদা হয়ে আরেকটি রাষ্ট্র করতে চায়।

সিরিয়তেই যেহেতু ইমাম মেহদী আসবেন তাই মনে হয় সেজন্য আরো কত যুদ্ধ বা কত কিছু হতে পারে। তবে আল্লাহ নিশ্চয় তাঁর নিজস্ব প্ল্যান মতই ঘটনা প্রবাহকে পরিচালিত করবেন। ইমাম মেহদী তো আসার কথা মুসলিমদের নেতৃত্ব দিতে,সাহায্য করতে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সে মুসলিমরা কোথায়? সিরিয়ার মানুষের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি আছে আল্লাহ ভাল জানেন।

Loading

Comments are closed.