এরা কারা?

হলমার্ক এতো বড় একটা অপরাধ হল । তানভীর মাহমুদ কি একা? হলমার্ক প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের এড. আহমেদের গল্প বলতে হয়। এক সময় সাধারণ চাকুরে এরপর রিয়েলস্টেট ব্রোকার থেকে হলমার্কের মতোই রাতারাতি মিলিয়নিয়ার। মার্কিন অর্থ কেলেংকারি যখন তুঙ্গে তখন আবাসন খাত আর ওয়ালস্ট্রিটের কোন জবাবদিহিতা নেই; মার্জিন ছাড়াই লোন। অর্থাৎ গরুর চেয়ে ঘাসের দাম বেশি। সবরকম জালিয়াতির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো ১ টাকার বাড়ি ৩ টাকায় কিনে একই দিনে তিনবার বিক্রি অর্থাৎ সিটি প্রশাসনে রেকর্ড হওয়ার আগেই বারবার বিক্রি দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ। এরপর ভূয়া ক্রেতা হাওয়া। বাধ্য হয়ে ব্যাংক সেই বাড়িটি আবার বিক্রিতে তুললে আবার ফিরে আসে সাজানো ক্রেতা। গ্র“পটির মধ্যে ব্রোকার, উকিল, টাইটেল কোম্পানি, ইনসুরেন্স, ব্যাংক। এদের হাতেই পুরো নীল নকশা। এরা পাকিস্তানী, ইটালি, মেক্সিকান, আমেরিকান, পোর্টরিকান ইত্যাদি। এআইজি, গোল্ডম্যান সেক্স, ফেনি মে, ফেডিম্যাক, বিয়ারস্ট্যার্ণ, সিটি ব্যাংক, লেম্যান ব্রাদার্স… প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার আবাসন আর স্টকমার্কেট জালিয়াতির সঙ্গে কয়েকজন বাংলাদেশীও জড়িত। দু’একজন জেল খাটছে, এফবিআইয়ের লিস্টে থাকা বাকিরা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। দু’একজন কুইকরেন্টাল করে বলেও জানা গেছে। অর্থাৎ সবাই মিলে যে হারে ব্যাংক লুট করেছে তা মার্কিন ইতিহাসে প্রথম। গ্লোবাল ধ্বসের শুরুতে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জালিয়াতিতে ঝরতে শুরু করে মার্কিন অর্থনীতি। ২০০৮ সনে প্রথমে গেলো বিয়ারস্টার্ণ। ৬০ ডলারের স্টক ৬ ডলার। ডাউজোন্স ১ দিনে ঝরে যায় ৫০০ পয়েন্ট। মহাপ্লাবনে অংশ নিয়ে একটার পর একটা ব্যাংক নগ্ন হয়ে গেছে।  একদা রাজকীয় জীবনের আহমেদ এখন রাজ সাক্ষি। তার বিরুদ্ধে ৫০০ মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির অভিযোগ, এখন দায়িত্ব গ্যাং ধরিয়ে দেয়া। তানভীরের মতো সেও প্রশাসনের হাইপ্রফাইল লোকের সাথে চলাফেরা করতো। কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট, পার্টি ডোনার, গায়ানার প্রেসিডেন্ট তার বাড়িতে দাওয়াত খায়। স্টকমার্কেট আর আবাসন ব্যবসা করি বলে এসব ঘটনা খুব পরিচিত। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেড চেয়ারম্যান, ট্রেজারি সেক্রেটারি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, আবাসন আর ইন্টারনেট বাবল…। ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার জালিয়াতি করে ১৫০ বছরের জেল খাটছেন বার্নি ম্যাডফ আর ৭৫ হাজার টাকায় নাস্তা খাওয়া তানভীরের বরাদ্দ এখন ১৫ টাকা। যা বলতে চাই, হলমার্ক আর বিয়ারস্টার্ণ ১০ হাজার মাইল দূরে হলেও জালিয়াতিতে সাদা-কালো-পূর্ব-পশ্চিম, হিন্দু-খ্রীস্টান নেই। মুজিবের অর্পিত আইন গেজেটের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগাররা হামলে পড়েছিলো পরিত্যাক্ত সম্পত্তির উপর। রাষ্ট্রের নির্দেশে দখল হয়েছে লক্ষ লক্ষ বিঘা। তখন বিএনপি ছিলো না। পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তি দখলে দুইদলই চ্যাম্পিয়ান (দ্র: লিভিং ইউথ ভেস্টেড প্রপার্টি, প্রফেসর আবুল বারাকাত)। ঠিক সেই রকমই মিথ্যা কাগজ দেখিয়ে হাইপ্রফাইল সহায়তায় দুই গোলার্ধের দুইপক্ষই নানান ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট করেছে। তফাৎ একটাই, জবাবদিহিতা এবং বিচার। মার্কিন লুটেরাদেরকে জেলে পাঠানো হলেও অর্থমন্ত্রীর জেদ, মহামানবদের (মহাদানবদের) মান-সম্মানের স্বার্থে “স্টকমার্কেটের তদন্ত রিপোর্টের নাম প্রকাশ করা যাবে না।” প্রসঙ্গ, দুদক আর রিমান্ডের অন্ধকার গুহা নয় বরং সংসদীয় কমিটির লাইভ টিভি শুনানি জরুরি কেন? কারণ এর মাধ্যমেই জনগণকে জানানো যায়, জালিয়াতি বা অর্থ কেলেংকারির রহস্য। এখন লাইভ বাকযুদ্ধ চলছে লিবিয়ায় মার্কিন দূতাবাসের প্রকৃত ঘটনা নিয়ে ওবামা সরকারের মিথ্যাচার। কংগ্রেসের দাবি, ছবির জন্য নয়, এটি আরেকটি ১/১১। ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত করছে কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থা। সমস্যা, ওয়াশিংটনে কোন জজ মিয়া তৈরি হয় না।   ২০০৮ সনের বিশাল কর্পোরেট জালিয়াতির শুনানি সারা বিশ্ব লাইভ দেখেছে। হিয়ারিং কমিটিতে বাঘা-বাঘা কংগ্রেসম্যানদের উল্টোদিকে ফেড চেয়ারম্যান, ব্যাংক আর বীমা কোম্পানি সিইওদেরকে বাক্যবাণে তপ্ত কড়াইয়ে ভেজে ফেলা। একেকজন সিইও’র বেতন বোনাস ২০০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছেটে দেয়া হয়েছে। জেল-জরিমানা এখন পর্যন্ত অব্যাহত। সিইওদের ব্যক্তিগত জেট আর হীরা-জহরতের জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিচার কাজে এই মাপের শুনানি বিশাল ভূমিকা পালন করে। (চাইলে ডিভিডি কিনে ওয়ালস্ট্রিট, ইনসাইডার জব, আমেরিকান গ্রিড জাতিয় ছবিগুলো নানান পাবলিক প্লেসে দেখানো যেতে পারে। এতে গণসচেতনতা বাড়বে)। ৪৮ হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের মার্কিন অর্থনীতি যা হজম করবে, মাথাপিছু ৮০০ ডলারের বাংলাদেশ কি তা পারবে? শক্তিশালী গোয়েন্দা আর প্রভাবমুক্ত বিচারের বদলে রক্ষিবাহিনী, ক্লিনহার্ট, দুদক, রিমান্ড এবং র‌্যাব নামের মানবাধিকার বিরোধীদের কর্মকান্ডে সারা বিশ্বে দুর্নাম ছড়িয়ে গেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মানবাধিকার ভঙ্গের খবর পশ্চিমের মিডিয়ায়। প্রতিদিনই দুঃসংবাদে আমরা কতো অসহায় হয়ে গেছি। বিশাল আকারের তৃতীয় বিশ্ব আছে বলেই টিকে আছে আজকের প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্ব। ঠিক তেমনই দুর্নীতিবাজরা সফল কারণ ৪২ বছরের এ্যামেচার সরকার যন্ত্রটি যথেষ্ট দুর্বল। খোল-নলচে পাল্টে না ফেললে ১৭০ মিলিয়ান মানুষের দেশটি আর ২০ বছর পরে ভয়াবহ দুর্যোগ সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, পানির জন্য যুদ্ধ হবে, শস্য ক্ষেতে হবে খরা। ওরা রাজনীতি বোঝে না, বোঝে ক্ষমতা। দুই নেত্রীকে একবার ডিবেটের আনতে পারলেই গোমড় ফাঁস হয়ে যাবে। ৪২ বছরের উৎপাদনহীনতায় তৈরি হয়েছে গার্মেন্টস আর ম্যানপাওয়ারের অদ্ভুত অর্থনীতি। সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার গার্মেন্টস মালিক যারা বিলিয়নিয়ার পুঁজিপতি। প্রায় ৩০ লক্ষ শ্রমিকের ৯৫ ভাগই নারী, যারা দুই গোলার্ধের বিলিয়নিয়রদের হাতে মাসে মাত্র ৩৭ ডলার বেতনে জিম্মি (ভিক্ষুকেরাও এর চেয়ে অধিক আয় এবং মানবাধিকার ভোগ করে)। বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধনী-গরিবের বৈষম্য যে হারে বাড়ছে তাতে করে শোষক শ্রেণীর কব্জায় জনশক্তি এবং গার্মেন্টস শিল্পটি আধুনিক দাস প্রথার বেশি নয়। এক সময় এই দাসপ্রথাও বিলুপ্ত হবে।

কারা সৃষ্টি করেছে হলমার্ক?
১৯৯৭ সনে খুলে দিলেও ২০১০ সনে ব্যাংকগুলোকে ফের রাষ্ট্রায়ত্ব করে দলের অনভিজ্ঞ নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই লবিস্ট আর দুর্নীতিবাজ বলে প্রমাণ হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে অতিরিক্ত ব্যাংকিং খাত সৃষ্টি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতাহরণ এবং লুটপাটের শুরুতেই, সরকারী আর বেসরকারী ব্যাংকের জন্য আলাদা নীতিমালা করে হলমার্ক সাজানোর পথ উন্মুক্ত করা হলে এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় প্রশাসনের লোক, অন্যথায় যা সম্ভব না। প্রাইভেট ব্যাংকের পরিচালক হতে পকেট থেকে যদি ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়, তাহলে বিনা খর্চে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ‘জান্নাত আরা হেনরিদের’ লুটপাটের লিমিট কতো? সুদের হারে অসংখ্য কালো-বেড়ালের কারণ, অর্থহীন অর্থনীতি। ১৫ থেকে ২১ ভাগ হারে সুদে কতোভাগ ‘ইনফ্লেশন’ যোগ করলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কোটিপতি হওয়া যায়? সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনসহ অর্থহীন অর্থনীতির দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে প্রতিদিন ঢুকছে ৪ হাজার মানুষের বেশি। মেয়েরা গার্মেন্টস-এ আর পুরুষরা রিক্সা চালায়। বিশ্বের সবচে’ সস্তা শ্রমের সুযোগ নিতে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের অর্থে গার্মেন্টস শিল্পে যে অভাবনীয় উন্নতি হচ্ছে তাতে করে নতুন আরেকধাপ ধনী-গরিবের বৈষম্য উদ্বেগজনক। এরা ৭০ টাকা খর্চ করে একটি জিন্স বিক্রি করে প্রায় ৮ হাজার টাকায়। এমনও অভিযোগ, শ্রমিকদের দুরাবস্থার একটি তথ্যচিত্র মার্কিন টিভিতে প্রচার রোহিত করেছে বিলিয়নিয়ার মার্কিন ক্রেতা (দ্র: নিউইয়র্ক টাইমস্ ২ সেপ্টেম্বর)। গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক বেতন ৩ হাজার টাকা। বুঝলাম, চালের কেজি ২৫ কিন্তু মাছ-মাংসের কেজি কতো? পূবের এই ৯৯ ভাগের খবর পশ্চিমে ছড়ালে গার্মেন্টস শিল্প প্রত্যাখ্যাত হতে পারে, যেমনটি হয়েছিলো দক্ষিণ আমেরিকার বেলায়। অনভিজ্ঞ এবং অদূরদর্শী সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে ইনফ্লেশনের কারণ না হয়েও মাশুল দিচ্ছে নিম্নবিত্তরাই। কোনরকম গনশুনানি ছাড়াই তেল-গ্যাসের দাম বারবার বাড়ানো হয়। কিন্তু ৪ আনা ট্রেন ভাড়া বৃদ্ধির জন্য গণশুনানির অপেক্ষায় নিউইয়র্কবাসী। এজন্য দায়ী প্রশাসন নয় বরং মৌসুমি এক্টিভিস্ট যারা আন্দোলনের ধোয়া তুলে অদৃশ্য কারণে বারবার কেটে পড়ে। এই দশকের হুজুর ভাসানীরা এখন পর্যন্ত ডায়নেস্টির পক্ষে খুতবা  দিচ্ছেন কারণ তারাও বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি এবং বংশ বড়। আরো বিশ্বাস করেন, এই দেশে কোন ওবামা নেই। কিন্তু তাদের ধারনা ভুল। বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য কর্পোরেট রাজধানীতে কতো মানুষ ফুটপাতে ঘুমায়? কি উদ্ভট অর্থনীতি! বায়ে গেলে কঙ্গো, ডাইনে নিউইয়র্ক, সামনে প্যারিস, পেছনে রায়েরবাজারের স্লামডগ মিলিয়নিয়ার, গণভবন নামক বাকিংহাম প্যালেসের কথা না-ই বললাম। কিন্তু ৪১ লক্ষ বর্গফুটের সপিংমলে ঢুকলে মনে হতেই হবে, বাংলাদেশের জিডিপি কাতারের চাইতেও বেশি? আইনস্টাইনরা যাই বলুন, রাতের ঢাকা নগরীর দৃশ্য কি তারা দেখেন? আমি দেখেছি রাত জেগে, সাভারের খোলা মাঠ আর হাইকোর্টের মাজার থেকে টঙ্গি রেলস্টেশনে হাজার হাজার গৃহহীন। বুঝলাম আইয়ূব খান ভোলায় যাননি কিন্তু মানুষ জানতে চায়, ২২ বছরে এতোগুলো ঘূর্ণিঝড় হলো দুই নেত্রী কতোবার উপকূলে গেছেন? অভাব-অনটন, ঝড়-বাদল সম্বল করে উপকূলের মানুষেরা কেমন থাকেন?

এভাবে চলতে দিলে দক্ষিণ আমেরিকা আর পূর্ব ইউরোপীয় ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা’ অনিবার্য হয়ে উঠবে। বৈষম্য ঠেকাতে পশ্চিমে বাম রাজনীতির উত্থানে ৯৯ ভাগের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন হলিউড থেকে হার্ভার্ডের তারকারাও। কয়েক হাজার ভোগবাদী, পুঁজিবাদীদের জন্য ‘মালমুহিত’ বাজেটে পান-সুপারির পয়সাও পায় না গরিব মানুষেরা। যারা বলেন ৫০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নয়, তাদের যুক্তি কি এখনো খন্ডন করিনি? ৩০০ টাকা ভাতার জন্য ৩ মাইল হাঁটতে হয়। তিনবেলা ৩ কেজি বাতিল চাল আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম বস্তিতে রেখে ভোটব্যাংকের স্থায়ী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় কোমর ভাঙ্গা বাম রাজনীতি উঠে না দাঁড়ালে পরিস্থিতি হবে বৈষম্যের গিনিজবুক। উদ্ভট অর্থনীতির দেশে বাম রাজনীতির বাস্তবতা এখন সবচে’ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর কিছুদিন আগে উত্তর আমেরিকাতে মিথ্যাচার করে গেলেন। বিশ্বে মন্দা হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নাকি হাঁচিও হয় না; হলমার্কের পর ডুব দিয়েছেন। তার প্রয়োজন গদী। সরকারের উচ্চমহল যখন খাতাকলমে হলমার্কের উপদেষ্টা, বিচারের সাহস কার? এরকম বহু হলমার্ক পাইপলাইনে। সুতরাং ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ব করার সঙ্গে সঙ্গে কেন লুটপাট শুরু হলো, টকশোর অর্থনীতিবিদরা জানেন না বলা যাবে না কারণ মাত্র ১৫% সমালোচানার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর গাত্রদাহ ইতোমধ্যেই টক-অব-দ্যা টাউন।
প্রশাসনের লেজেগোবরে হওয়া মোটেও কাম্য না হলেও কেন তানভীর? একে মেরে ফেললেই কি লাভ? যারা তাকে সৃষ্টি করলো তাদেরকে ধরা হচ্ছে না কেন? জনগণের অর্থে পরিচালিত সংসদের এখন নানান কমিটি ও লাইভ টেলিভিশন কি শুধুই এক পক্ষের? নখদন্ত হয়ে ওঠা দুদকের হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠার আসল কারণ নির্বাচন থেকে বিএনপি-জামাতকে দূরে রাখা। নির্বাচন যতোই এগোবে, বিরোধীদলের মামলাগুলো প্রাধান্য পাবে। হলমার্ক, ডেসটিনি চুলোয় যাবে।

জগাখিচুরি বটে!

৫০০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে ব্যবসা খুললেই আমেরিকাতে গ্রিনকার্ড পাওয়া যায়। ১০০ হাজার ডলার দিয়ে বাড়ি কিনলে হালাল হওয়ার পথ সহজ হয়। মালয়েশিয়ায় প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশী ২০০ হাজার ডলার ব্যয় করে দ্বিতীয় বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ নিয়েছে (অতীতে বাঙালিদের চুষে খাওয়া বদনাম পাকিস্তানীরা নিয়েছে মাত্র ৬৫০ জন, কে কার সম্পদ লুট করে?)। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ আর শিল্পীরা আমেরিকাকে মনে করে কোলকাতা। রাস্তায় বের হলেই টকশোর হোস্ট আর গেস্ট। বিখ্যাত ব্যক্তিরা জ্যাকসন হাইটসের রেস্টুরেন্টে খায় আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা মারে। নির্বাচনে ভরাডুবি নিশ্চিত জেনে টিআইবি’র রিপোর্টে উল্লেখিত দুর্নীতিবাজদের আগাম প্রস্তুতির হিড়িক লক্ষণীয়। ভাই-ব্রাদারদের নামে বাড়িঘর, টাকা-পয়সা রাখার হিড়িক। অন্য দল ক্ষমতায় এলে অধিকাংশই পালিয়ে যাবে। (১৪/১০/১২ তারিখে টিআইবি’র ঘোষণা ৯৭ ভাগ মন্ত্রী-এমপি’রাই অনৈতিক কাজে জড়িত)। শেষ বছরে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা স্থানীয় উন্নয়নের নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোর-জবরদস্তি বরাদ্দ নিয়ে মুদ্রা পাচারকারীদের জীবন আরো সম্বৃদ্ধ করছেন। পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে বাংলাদেশে লুটপাট এবং মুদ্রাপাচার অনেক সহজ। দুর্বল সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে আইয়ূব আমল থেকে মাড়োয়ারিবাবুসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচারকারিরা রাজধানীতে বিশাল সিন্ডিকেট করে নিয়মিত অর্থনীতি ধ্বংস করছে। একটি ফোন করলেই হংকং, সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার স্যাটেলাইটের কল্যাণে লক্ষ লক্ষ ডলার পশ্চিমে চলে যায়। উত্তর আমেরিকা এখন মুদ্রাপাচারের অন্যতম উত্তম দেশ। বিশ্ব মন্দার কারণে বেহায়া পশ্চিমারা টাকার সূত্র নিয়ে আগের মতো মাথা ঘামায় না। মানিএক্সেঞ্চগুলো পর্যন্ত ডলার জমা নিয়ে হুন্ডি ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। যখন বাংলাদেশ থেকে ফিরি, কাস্টমস্ বলে, ২ হাজার টাকার বেশি কেন? প্রশ্ন, মাত্র ২ হাজার টাকা আমার জন্য লিমিট হলে ডেসটিনি, হলমার্ক কার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠায়, জবাব সরকারকেই দিতে হবে আগামী নির্বাচনে। ওয়াশিংটন গরম হলে ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারেরা কেমন ঠান্ডা হয়ে যান, পদ্মাসেতু এবং ড. ইউনূসের ঘটনাই যথেষ্ট প্রমাণ। বিরোধীদলের অভিযোগ দেশটা এখন পুলিশী রাষ্ট্র এবং সর্বত্রই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ। দেখা যাক তাদের অভিযোগ কতোটা সত্য। মায়ের আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ক্ষুতবা দিলেন, ৪-জি পেতে হলে আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দিয়ে ক্ষমতা আনতে হবে। অর্থাৎ বুঝে নেবো অন্যথায়, এই দেশে কখনোই ৪-জি আসবে না। বিষয়টি কি ঠিক? আমরা জানি দেশের ৯৯ ভাগ উন্নতির মূল কারণ প্রাইভেট সেক্টর। এই দেশের মানুষ গরিব কিন্তু মেধাবী, পরিশ্রমী এবং বেঁচে থাকার জন্য অসাধ্য সাধন করে যা পৃথিবীতে অন্যতম দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে প্রচুর আইটি বিশেষজ্ঞ এমনকি নাসাতেও বাঙালি বিজ্ঞানী। সুতরাং সরকার নিয়ন্ত্রণ না করলে প্রাইভেট সেক্টরের হাত ধরে ২০১১ সনেই চলে আসতো ৪-জি টেকনোলজি। তেমনিই নির্বাচন নিয়ে কু-উদ্দেশ্য না থাকলে নির্দলীয় সরকারেরও প্রশ্ন উঠতো না। এখন শুরু হয়েছে ’৭৫-এর মতো জাতীয়করণ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে খেয়ে ফেলার পায়তারা। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সরকার এখন ক্যাস্ট্রো কিংবা গণচীন। আমাদের প্রয়োজন নিজস্ব ফর্মূলায় ‘সম-বণ্টনের’ এমন একটি সংবিধান যেখানে ৪২ ভাগকে ৪২ বছরে আর ৯৯ ভাগে পরিণত করবে না। অবস্থা ভয়ানক তাই ক্ষমতাসীন, জ্ঞানীগুণি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক, সামর্থবান দেশপ্রেমিকদের সন্তানেরা দেশে থাকেন না। এমনকি যারা ঘোর সাম্রাজ্যবাদি তারাও। বাংলাদেশ এখন প্রতিদিনের মৃত্যুপুরি। নিউইয়র্ক মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট আগষ্টেই খুন হয়েছে ৪০৭ জন (প্রকৃত নম্বর ৪ থেকে ৫ ভাগ বেশি)। ভয়ংকর ঘটনা একটার চেয়ে আরেকটা বড়। সেই ভয়েই হয়তো অত্যন্ত দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের প্রতি সকল আস্থা হারিয়ে সন্তান এবং ঘনিষ্ঠজনদেরকে দেশে রাখেন না। নিরাপত্তার অভাবে অনেক মানুষ এখন রাতে ঘুমায় না কিংবা পালা করে ঘুমায়। প্রবাসীরাও দেশে গেলে বন্দুকধারী নিরাপত্তা ভাড়া করে। সুতরাং বিরোধীদলের অভিযোগ সাধারণ মানুষেরও অভিযোগ। রান্না শেষ, চেখে দেখা যাক জগাখিচুরি। পালা করে এই দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী দুই নারী, তারাই বিশ্বে একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যাদের হাতে একই সঙ্গে দল, সরকার এবং কয়েকটি মন্ত্রণালয়। জুলাই মাসে বিবিসি’র সাক্ষাৎকারে ‘দুইটার্ম’ ক্ষমতার আশা প্রকাশে যে প্রশ্নটি তুলেছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক, আমাদের টকশোর বিশ্লেষকরা কেন ধরতে পারলেন না? সন্দিহান সাংবাদিকের প্রশ্ন, ম্যাডাম হাসিনা! “আমি আবার ক্ষমতায় গেলে” এই কথাটির মানে কি? “উপকূলের জেলেরা না হয় আবহাওয়া সংকেত বুঝতে ভুল করে কিন্তু আমরা যারা এর বাইরে কেন বারবার ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সংকেতটি ধরতে পারছি না?” পরিকল্পনা মন্ত্রীর ছক অনুযায়ী উন্নতি চাইলে এই সরকারকেই আরো দুইটার্ম ক্ষমতায় রাখতে হবে। ইন্ডিয়ার মিডিয়াতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘোষণা, ‘শেখ ডায়নেস্টি সত্য’। তার লবি যথেষ্ট সফল কারণ কোন কারণে শেখ ডায়নেস্টিকে আমেরিকা প্রত্যাখ্যান করলেও সার্ক অঞ্চলের ইজারাদার ভারত আর কাকাবাবু প্রণব তো আছেন। রাজনীতিতে যারা ঝুনো নারকেল সত্বেও ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার, সেইসব তোফায়েল কিংবা খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য নন, উল্কার বেগে জিয়াউর রহমান কিংবা ওবামার উত্থান এবং সাফল্য কি শাসকদের ধারণা ভুল প্রমাণ করেনি? এই মুহূর্তে দেশে অন্তত ৫০ জন আছেন যারা রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য (বয়স রাষ্ট্রপতিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জাপটে ধরেছে সেটাও আমলে নিতে হবে)। আমার আশংকা, সরকার নির্বাচন এবং পদ্মাসেতু দুটোই আটকাবেন যার আলামত ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। ’৭৫ এর মতো সংশোধনী এনে আরো দুইটার্ম ক্ষমতা কিংবা একটি এনজিওকে দিয়ে রীট পিটিশন করিয়ে সিটি কর্পোরেশনের মতো নির্বাচন ঝুলিয়ে দেবেন (প্রধানমন্ত্রী সংকেত দিয়ে যাচ্ছেন ১/১১-এর)। তাদরে পরবিার ছাড়া স্বাধীনতায় কারোই কৃতিত্ব নেই। ডায়নেস্টি ছাড়া ক্ষমতার ভাগিদারও নেই। দুই নেত্রীই মনে করেন, সংবিধান এবং পতাকা পারিবারিক। দুইদলেরই ইয়েস স্যারেরা কোমর মাটিতে ঠেকিয়ে বলতে থাকেন হা-হা…, দেশ এবং পতাকা পারিবারিক কারণ নেত্রী বলেছেন, ‘পারিবারিক’।  তবে বলির পাঠা  তো কাউকে করতে হবে এবং তারা কারা তা এখন সবাই দখেতে পাচ্ছে।

মিনা ফারাহ, নিউইয়র্ক।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *