ইসরাইলি অধিকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনদের অসহনীয় জীবন।

যারা আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সম্পর্কে অবগত তারা জানেন ইসরাইল নামের রাষ্ট্রটি বেঁচে আছে পাশ্চাত্যের সরকারের সহায়তায়। ইসরাইল কর্তৃক  ফিলিস্তিনদের অবৈধ জমি দখল, গাজায় চলমান গণহত্যা  এবং বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনী মানুষের উপর চালিত মানবতা বিরোধী অপরাধ শুধু ইসরাইল একা জড়িত নয় বরং সে অপরাধের সাথে জড়িত যারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও।  এ যেন বিশাল একপাল হিংস্র ও ক্ষুধার্ত নেকড়ের কবলে পড়েছে গাজার নিরস্ত্র জনগণ। চলমান এ গণহত্যা থামানোর তেমন কোন আন্তরিক উদ্যোগ নেই বিশ্ব নেতৃত্বের।। সামাজিক মিডিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষ গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাও জানালেও বিশ্বের ক্ষমতাবান রাষ্ট্র প্রধানদের ভূমিকা খুবই দু:খজনক। বরং পাশ্চাত্য রাষ্ট্র প্রধানদের কাছ থেকে ইসরাইল পাচ্ছে লাগাতর সমর্থন। 

তাদের কথা, ইসরাইলি অকুপেশন তথা অবৈধ দখলের বিপক্ষে হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে  নির্মূল করার জন্য সর্বপ্রকার হামলার অধিকার রয়েছে যায়নিষ্ট ইসরাইল সরকারের। তাই দেখা যায় গত  ৮ই জুলাই থেকে ইসরাইলের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে গাজায় যে নতুন হামলা শুরু হয়েছে তাকে সমর্থন দিতে তাদের আপত্তি নাই। যদিও আজ ৩১ শে জুলাই অবধি এক হাজারের বেশী ফিলিস্তিনীকে তারা হত্যা করেছে। আহত করেছে বহু হাজার। লক্ষাধিক মানুষকে তারা ঘরছাড়া করেছে। আহত ও নিহতদের অধিকাংশই হলো শিশু ও নারী। হামলার শিকার হচ্ছে শুধু ফিলিস্তিনীদের শুধু ঘরবাড়ি ও দোকানপাটই নয়, মিজাইল নিক্ষেপ করা হচ্ছে মসজিদ, হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয় শিবির, জাতিসংঘের ত্রাণ-দফতরেরও উপরও।  অথচ এ নৃশংস ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে  মিছিল করা বেআইনী ঘোষণা করেছে ফ্রান্স সরকার। 
 জনৈক ব্লগার যথার্থ  লিখেছেন, "হামাসের মিজাইল ইসরাইলে গিয়ে পড়ায় তার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীকে বানি পাঠিয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরন। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলী হামলার নিন্দায় একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। কোন উচ্চ বাক্য নাই চীনাদের মুখেও। তেমন নিন্দা বা উচ্চ বাক্য নাই ভারতীয় নেতাদের মুখেও। কারণ চীন ও ভারত এ উভয় দেশেই রয়েছে তাদের নিজ নিজ ফিলিস্তিন। ভারতের সে নিজস্ব ফিলিস্তিন হল কাশ্মীর। চীনে সেটি হল উইগুর মুসলমানদের অধিকৃত ভূমি জিংজিয়াং প্রদেশ। নেকড়ে কি আরেক নেকড়ের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে?"

অবশ্য এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে  মানবতার ন্যূনতম নৈতিকতার মৃত্যু ঘটেছে অনেক আগেই ইসরাইলের মূল পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এবং একটি বিশেষ মহলের কারসাজিতে মিডিয়া ব্ল্যাক আউট করে ইসরাইলী নৃশংসতার বিপক্ষে জনমত গড়তে দেয়া হয় না আমেরিকায়!

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ:
শত বৈরিতার মাঝেও  আমেরিকার কিছু কিছু মানুষ অন্যায়ের বিপক্ষে এবং  বিবেকের তাড়নায় ন্যায় বিচারের খাতিরে ইসরাইলী নৃশংসতার সঠিক তথ্য তুলে ধরতে এগিয়ে আসছেন। এমনি এক উদাহরণ রেখেছেন আন্না বাল্টজার, কলম্বিয়া স্নাতকোত্তর ও Fulbright পণ্ডিত একজন আমেরিকান ইহুদী মহিলা। তিনি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন অহিংস প্রতিরোধের সমর্থনকারী, ওয়েস্ট ব্যাংক আন্তর্জাতিক নারী শান্তি পরিষেবার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেন। ফিলিস্তিনদের দুর্দশার একজন প্রত্যক্ষদর্শী । ইসরাইলি দখলকৃত এলাকার ফিলিস্তিনের নিত্যদিনের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাহিনী নিয়ে একটি চিত্তাকর্ষক ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন যা  গত নবেম্বর ২৪, ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। এই প্রমাণ চিত্রটি দেখলে বুঝতে পারবেন যে কি কঠিন দুর্দশার জীবন অতিবাহিত করতে হয় প্রতিদিন অসহায় ফিলিস্তিনি মানুষের।  ইসরাইলি যায়নিষ্টদের দখলকৃত এলাকার  ফিলিস্তিনদের জীবন হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে এক বন্ধী জীবন। ফিলিস্তিনদের জন্য পদে পদে চেক পয়েন্ট অতিক্রম করে চলতে হয়। তাই তাদের নিত্য দিনের চলাফেরার জন্য পোহাতে হয় এত ধীরগতি যে তাদের জীবন অনেকটা স্থবির! চেক পয়েন্ট আর নিরাপত্তা তল্লাশি দিতে গিয়ে মাত্র ৩০ মাইল  পথ অতিক্রম করতে কখনও চলে যায় পুরা দিন। ফিলিস্তিনদের ও ইহুদীদের গাড়ীর নং প্লেটের রং থাকে আলাদা যাতে দূর থেকে ফিলিস্তিনদের গাড়ী সনাক্ত করে থামিয়ে দেয়া যায় চেক পয়েন্টে তার পর চলে হয়রানি। কোন কোন পথে রাত্রে চলা নিষেধ ফিলিস্তিনদের জন্য।  ফিলিস্তিনদের উচ্ছেদ করে তাদের জমির উপর গড়ে উঠেছে নতুন স্থাপনা ইহুদীদের জন্য যেখানে তৈরি করা হয় সরকারি খরচে রাস্তা ঘাট, স্কুল কলেজ হাসপাতাল। আর  ইহুদী বস্তি তথা সেটেলারদের থেকে ওয়াল দিয়ে ফিলিস্তিনদের বস্তিকে আলাদা করা হয়।

আন্না বাল্টজার অনেক করুণ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এমনি এক ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি।  গর্ভবতী এক ফিলিস্তিনি মহিলার প্রসব বেদনার সময় স্বামী তাকে নিয়ে ছুটেছেন হাসপাতালে। হাসপাতাল যেহেতু ইহুদী বস্তিতে তাই তাকে আতিক্রম করতে হবে চেক পয়েন্ট কিন্তু সেই পথে সন্ধ্যা সাতটার পর কোন  ফিলিস্তিনির যাওয়া নিষেধ । মহিলার স্বামীর অনেক অনুরোধ স্বত্বেও তার গাড়ী নিয়ে যেতে দিচ্ছিল না চেকপোষ্ট গার্ড  অবস্থা বেগতিক দেখে বেচারা স্বামী  এম্বুলেন্স ডাকায় তা হাজির হয় চেকপয়েন্টের ওপর পাড়ে। কিন্তু  রুগীকে নিয়ে এম্বুলেন্স উঠতে যখন পায়ে হেটে যেতে চাইল  সেখানেও দেয়া হয় বাধা! অনেক অনুরোধ করার পরও চেকপোষ্ট গার্ড তাকে উপরের নির্দেশ অমান্য করে যেতে দিতে অপারগতা জানায়। মহিলার স্বামী তখন তার পরিচিত এক ইসরাইলি সেনা অফিসারকে ফোন করায় সে অফিসারের কথায়  নিরাপত্তা গার্ড যেতে দেয় কিন্তু স্বামী ছাড়া শুধু মহিলাকে। মহিলা অনেক কষ্টে এম্বুলেন্সে উঠার সাথে সাথে প্রসব করে দেন যমজ দুটি শিশু। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শিশু দুটি অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়ায় তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থার অভাবে পথিমধ্যেই মারা যায়। এভাবে অসংখ্য করুন ঘটনা ঘটছে ফিলিস্তিনি মানুষদের জীবনে তার খবর কে রাখে। 

বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটা দেখেন।   

 

https://www.youtube.com/watch?v=lrOdCG7RrvE

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *