আল্লাহর প্রটেকশন কোথায়?

পবিত্র কালাম
“লাহু মোয়াক্ কিবাতুম মিন বাইনি ইদা্‌ইহি ওয়ামিন খাল্ ফিহি ইযাহ্ ফাজু নাহু মিন আমরিল্লাহ-হি….” বলে কোরআনের আয়াতটা যখন পাঠ করছিলাম তখন মনে একটি প্রশ্ন জাগল। প্রশ্ন বলার আগে সে আয়াতের পুরা অনুবাদটি লিখছি।
আল্লাহ বলেন,

“আমি মানুষের সামনে ও পিছনে পাহারাদার নিযুক্ত রাখি তারা মানুষকে বিপদমুক্ত রাখে আল্লাহর নির্দেশে” (সুরা রা’দ ১৩:১১)

প্রশ্ন হল তাহলে মানুষ কেন বিপদে পড়ে? আর মানুষের সমষ্টিতে গড়ে উঠে যে সমাজ, সেথায় কেন হয় মানুষ গুম, হত্যা এবং সে সমাজ কেন পতিত হয় বিভিন্ন পাপ পঙ্কিলে আর লাঞ্ছিত হয় সেথায় মানবতা, কেড়ে নেয়া হয় মানবাধিকার, লুণ্ঠিত হয় মানুষের ইজ্জত ও সম্ভ্রম, নেমে আসে অশান্তি? আল্লাহর প্রটেকশন কোথায়?
অবশ্য উপরের আয়াতের একটি “কি-ওয়ার্ড” হচ্ছে “আমরিল্লাহ-হি” অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে। তার মানে আল্লাহর হুকুম না আসলে সে পাহারাদার কাজ করবে না। তাই আল্লাহ প্রটেকশন দিতেও পারেন আবার তা উঠিয়েও নিতে পারেন। কথা হল নিরাপত্তা পেতে হলে আল্লাহর হুকুম পাওয়ার সৌভাগ্য ললাটে থাকতে হবে। তবে কীভাবে আসবে সে সাহায্য তা আল্লাহই আবার বলে দিয়েছেন সে সুরার পরবর্তী আয়াতে। তিনি বলেন:

“আমি কোন জাতীর ভাগ্য পরিবর্তন করি না যতক্ষণ না সে জাতি তার নিজের ভাগ্য উন্নয়নে সচেষ্ট না হয়”

এখন আসল কথায় আসা যাক বাঙ্গালী জাতি হিসাবে অমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ যে ভয়ঙ্কর অচল অবস্থায় আমরা আছি তথা যে বিপদে ও দুরবস্থায় আমরা আছি তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ইচ্ছা যে কারো মনে নাই তা অস্বীকার করা যায়না। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে যে প্রচেষ্টার প্রয়োজন তা কি এবং কীভাবে করা যাবে সে প্রশ্নের উত্তর জানাই হচ্ছে বড় প্রয়োজন।

বাংলাদেশের বৃহত্তর জন গুষ্টি এখনও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী অর্থাৎ মুসলিম। কেউ বলেন এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য কাল অর্থাৎ পিছিয়ে থাকার কারণ। তাদের কথা হল ইসলামের কারণেই আমারা পিছিয়ে আছি অন্তত বাংলা ব্লগের কিছু নাস্তিক সেকুলারিষ্টের কথাবার্তায় সে বক্তব্যই প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রশ্ন হল আসলেই কি ইসলামকে দুষ দেয়া যায়? বাংলার বৃহত্তর জন গুষ্টি ইসলামী বিশ্বাসের দাবীদার হলেও বর্তমানে তাদের কোন কাজকর্মে যে ইসলামের সত্যিকার প্রতিফলন নাই একথা নতুনভাবে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। একজন মুসলিম হিসাবে একথা আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে এ পৃথিবীতে যদি সর্বশ্রেষ্ঠ কোন আদম সন্তান পদচারণ করে গিয়ে থাকেন তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহর রাসুল মোহাম্মদ (স:) এবং তার জীবন অনুসরণ করাই হচ্ছে ইসলামের দাবী অথচ তা না করে আমরা দাবী করছি খাঁটি মুসলিম! তাই দেখা যায় বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সমর্থক সরকারের এক মন্ত্রী মসজিদে এসে বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রাখতে লজ্জ্যাবোধ করেন না। অবশ্য হঠকারী এ বক্তব্যের কারণে তাঁর উপর পড়েছিল জুতা বর্ষণ। মন্ত্রীকে এভাবে অপমান করায় কেউ খুশী হতে পারেন তবে মসজিদের ভিতর মুসল্লিদের যারা এ জুতা নিক্ষেপ করলেন এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ও অভদ্রতা প্রদর্শন করলেন তা কিন্তু ইসলামের শিক্ষার প্রতিফলন নয়। আমি বরং খুশী হতাম যদি দেখতাম মসজিদের খতিব মন্ত্রীর কথা যে সঠিক নয় সে সমালোচনা করার যোগ্যতা ও সাহস দেখাতেন। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মনে ইসলামের আবেগ আছে তা অস্বীকার করা যায় না। তবে যে জিনিষের প্রয়োজন তা হল সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে সে আবেগকে সুস্থ এবং সঠিক পন্থায় পরিচালিত করে ইসলামী জাগরণের পক্ষে বুদ্ধিমত্তার আণ্দোলন শুরু করা। তা না করলে সমাজে বাড়বে ধর্মের নামে গোড়ামী, কুসংস্কার, পির মাজারি ও কবর পূজা, অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মান্ধতা। সম্প্রতি পাকিস্তানে কোন এক গ্রামের এক দল উচ্ছৃঙ্খল ধর্মান্ধ জনতা কোরআন পুড়ানের অভিযোগে ধৃত এক লোককে পুলিশ হেফাজত থেকে বলপূর্বক ধরে নিয়ে তাকে মেরে তার মৃতদেহকে আগুন দিয়ে জালানোর দৃশ্য দেখলাম আল জাজিরা টিভিতে। এটা কোন ধরনের ইসলাম? (খবর এখানে দেখুন) মসজিদে নববীতে যে লোক প্রস্রাব করে ছিল তাকে রাসুল কি করেছিলেন?
আসলে মুসলিম সমাজে এই সব অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মান্ধতার সুযোগে অন্যদিকে প্রগতিশীলতার আবরণে যারা ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করতে চায় তারা পাচ্ছে সমাজে বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি। তাই একদিকে চলছে ধর্মের নামে অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মান্ধতা আর অন্যদিকে আধুনিকতা ও প্রগতীর নামে চলছে ধর্মহীনতা। আর মুসলিম সমাজে এসব কুকর্ম বন্ধ করা সম্ভব হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মুসলিম সমাজের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ইসলামী চরিত্রের সঠিক ও সৎ নেত্রীত্ব না আসবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সাহসী পুরুষ জনাব মাহমুদুর রহমানের সাম্প্রতিক একটি কলাম থেকে কিছু উদ্বৃতি দিতে চাই তিনি লিখেছেন,

“প্রগতিশীলতার আবরণে যারা ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধাচারণ করছেন, তাদেরই আজ সকল প্রকার সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দায় গ্রহণ করতে হবে। এ দেশের অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ইসলাম বিরোধীদের আধিক্য লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, কোনো ধর্মপ্রাণ অতিথি সেসব অনুষ্ঠানে ইসলামের পক্ষে মন্তব্য করতে গিয়ে রূঢ় আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কিছুদিন আগে এক টক শোতে বাংলাদেশে সামাজিক অবক্ষয় প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক সচিব, মো. আসাফদ্দৌলাহ সুশাসনের উদাহরণ হিসেবে হজরত ওমর (রা.)-এর শাসন কালের উল্লেখ মাত্রই সেই টক শোর তরুণ উপস্থাপক তাকে অত্যন্ত অভদ্রভাবে থামিয়ে দেন।
স্পষ্ট ভাষণের জন্য বিশেষ পরিচিত, প্রবীণ একজন ব্যক্তির সঙ্গে সেই আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছিল এ দেশের গণমাধ্যমে ইসলাম প্রসঙ্গে আলোচনা করাটা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এই পরিবেশে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত করাও পিতা-মাতার জন্য ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে।

ক’দিন আগে ইসলাম চর্চার অপরাধে মগবাজারের এক বাসা থেকে ২০ তরুণীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একজন অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে নির্যাতনও করা হয়েছে। মহিলা পরিষদসহ বাংলাদেশের কোনো মানবাধিকার অথবা নারীবাদী সংগঠন এ বিষয়ে নিন্দাসূচক একটি বাক্যও অদ্যাবধি উচ্চারণ করেনি। আমি নিশ্চিত যে, গুলশান-বারিধারার কোনো ক্লাব থেকে নৃত্যরত তরুণীদের ৩১ ডিসেম্বর রাতে এভাবে গ্রেফতার করা হলে চারদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে যেত। ভারতের রাজধানীর এই কলঙ্কজনক ঘটনা আমাদের সমাজপতিদের জন্য শিক্ষণীয় হওয়া উচিত। সরকার এবং বিরোধী দল নির্বিশেষে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সুস্থ জাতি গঠনে অপসংস্কৃতির অবাধ আগ্রাসনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে এখনই সতর্ক হওয়া কর্তব্য।

কিছু বিদেশি আপত্তিজনক চ্যানেল এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শন এ দেশে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়নসাপেক্ষে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সর্বনাশ অনিবার্য হয়ে উঠবে। মানব কল্যাণ অথবা বিপর্যয় সৃষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। পারমাণবিক চুল্লি থেকে যেমন স্বল্প খরচে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব, একইভাবে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র তৈরিতেও একই চুল্লির প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই আমাদেরও বিজ্ঞানের অশুভ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক রূপে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। সন্তানদের মঙ্গল চিন্তা অন্তত আমাদের সঙ্কীর্ণ দলীয় ভাবধারা মুক্ত হয়ে করতে হবে।”
(আমার দেশ, ০৩/০১/২০১৩)

মুক্তির উপায় কি?
মুক্তির উপায় হচ্ছে হা হুতাশ না করে আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করি তাদের সকলকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সঙ্কীর্ণ দলীয় ভাবধারা ও ছোটখাট মতবিরোধ এখন পাশে রেখে একটি কমন প্লাটফরমে সবাইকে এক হতে হবে। ইসলামী বিশ্বজনীন মূল্যবোধ ও আদর্শ সর্ব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যে প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব তা বুঝতে হবে। ইসলামী সার্বজনীন মুল্যবোধের সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হলে যে দেশের হিন্দু, মুসলিম, বুদ্ধ, খৃষ্টান সবার জন্য কল্যানকর তা মানূষকে যুক্তি সহকারে ভালভাবে জানাতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে ইসলামের কথা বলা মানে সাম্প্রদায়িকতার কলন্কে হেয় হতে হবে।। ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জন। দুধে আর মদে যেমন সহবস্থান হতে পারেনা, তেমনি সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে আর সেই শিক্ষায় শিক্ষিত আপনার আমার মত মানুষরা যত ব্লগ লিখিনা কেন কিংবা তোরাগ নদীর তীরে গিয়ে যতই কান্নাকাটি করি না কেন তাতে সমাজের কোন পরিবর্তন হবে না এবং সমাজের নেতৃত্বেও কোন পরিবর্তন আসবে না। তাই সে জন্য সবচেয়ে প্রথম যে জিনিসের দরকার তা হল সমাজে গনতান্ত্রিক পরিবেশ গড়া। মানুষকে ইসলামী সমাজ গঠনের পক্ষে ডাকার অধিকার আদায় করা। ইসলামী রাষ্ট্র মানে যে অন্য ধর্মের সাথে শান্তীপূর্ন সহঅবস্থানের সমাজ, একটি সত্যিকার সুশীল সমাজ, সত্যিকার প্রগতীর সমাজ। যেথায় থাকবেনা সুদ, মদ, ঘুষ ও জিনা। অতএব তা করতে দরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা। আর ইসলামের প্রতিষ্ঠা করতে হলে এখন দরকার রাজনীতির। কাজেই যারা রাজনীতি বিমূখ তারা প্রকৃতি পক্ষে পলায়নপর মনোভাবের অধিকারী।

Loading


Comments

আল্লাহর প্রটেকশন কোথায়? — 2 Comments

  1. “মন্ত্রীকে এভাবে অপমান করায় কেউ খুশী হতে পারেন তবে মসজিদের ভিতর মুসল্লিদের যারা এ জুতা নিক্ষেপ করলেন এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ও অভদ্রতা প্রদর্শন করলেন তা কিন্তু ইসলামের শিক্ষার প্রতিফলন নয়। আমি বরং খুশী হতাম যদি দেখতাম মসজিদের খতিব মন্ত্রীর কথা যে সঠিক নয় সে সমালোচনা করার যোগ্যতা ও সাহস দেখাতেন”

    মহিউদ্দিন ভাই,

    খতিব সে নৈতিকতা অনেক আগে হারিয়েছেন।উনার বিতর্কিত নিয়োগ সময় উনার অবস্থান সে সময় উনার আদর্শ, ধ্যান ধারণা,চিন্তা-চেতনা,কি ধরনের তা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছিল।উনি সরকারে বিতর্কিত নারীনীতি প্রণয়ন প্রতিবাদ দুরে থাক সে সময় একটা বিবৃতি দিতে প্রয়োজন মনে করেনি।এসব মানুষে কাছে এ ধরনে আশা করাটা বোকামি।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *