অবসর জীবনের কথা

কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু অবসর কে না চায়? মানুষ তো আর ইট-পাথরে তৈরি নয়। কাজ করতে করতে কর্মক্লান্ত শরীর এবং অবসাধগ্রস্ত মন স্বাভাবিকভাবেই চায় একটু বিরতি, একটু বিশ্রাম। এটা দোষের কিছু নয়, খারাপও নয়, বরং শরীরের জন্য এটা ভাল, প্রয়োজন এবং অপরিহার্য। তবে আমি এ অবসরের কথা বলছি না। আমি বলছি পেশাজীবী মানুষের বয়সকালে চাকুরি ছেড়ে অবসর জীবন বা রিটায়ার্ড লাইফে যাওয়ার কথা। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অজস্র মানুষ ছোট বড় চাকরি করে সংসার চালায়। বলছি, ‘সংসার চালায়,’ আসলে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ চাকরিতেই সংসার চলে না, ‘চালিয়ে নিতে হয়’। সে আরেক বিড়ম্বনা। এ নিয়ে না হয় অন্য দিন কথা হবে।

ফিরে আসি অবসর জীবনের প্রসঙ্গে। একটি বয়স পেরিয়ে গেলে চাকরিজীবীদের অবসরে যেতে হয়। বিদেশের অবস্থা ভিন্ন, কিন্তু বাংলাদেশের বেলা এই অবসরে যাওয়া না যাওয়া ব্যক্তির ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে না। কারণ সরকারি চাকরিতে অবসর বাধ্যতামূলক। আর তাই অবসরে যাওয়ার সময় হলে, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ঘরে ঘরে শুরু হয় অনেক জটিল অঙ্কের হিসেব-নিকাশ। যার হিসেব মিলে যায় সে আনন্দে অবসরের দিনক্ষণ গুনে, যার মিলে না সে অবসর নিতে চায় না। কিন্তু উপায় নেই, অবসর নিতে হয়, অবসরে যেতে হয়, এ যে দেশের আইন, সার্ভিস রুলের নিয়ম। এ নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হবার নয়, হয়ও না। তবে বড় সা’বদের মধ্যে যারা আর দশ-পাঁচ জনের চেয়ে বেশি চতুর, প্যাঁচ-পাচ্চা জানে, তাদের অসুবিধা হয় না। সময়মত সরকারের সাথে লাইন করে ঠিকই একটি চুক্তির ব্যবস্থা করে নিতে পারে। কিন্তু সমস্য যত, সব সহজ সরল সৎ লোক এবং ছোট চাকরিজীবীদের। ধরা-বাঁধা নিয়মের বাইরে তাদের তেমন কোনো সুযোগ নেই। আর তাই তাদের ভোগান্তিরও শেষ নেই। আজকের এ লেখা তাদের প্রতি উৎসর্গ করলাম।

পশ্চিমা দেশের অনেক খাতে বাধ্যতামূলক অবসরের নিয়ম নেই। যতদিন ইচ্ছে, যতদিন শরীরে কুলোয় ততদিনই মানুষ কাজ করতে পারে। এর পক্ষে বিপক্ষে দুদিকেই যুক্তি আছে। পরে যুক্তি হল, যে কাজে আছে সে যদি অকাজ কিছু না করে তবে তাকে সরে যেতে হবে কেন? সে যতদিন কাজ করবে ততদিনই তার অভিজ্ঞতা ও কাজের ফসল প্রতিষ্ঠান এবং দেশ ভোগ করবে। বিপক্ষের যুক্তি হল, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর যে কোনো মানুষের কর্মক্ষমতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে ক্ষয় ধরতে শুরু করে। আর তাই তাকে একটি সময়ে সরে গিয়ে নতুনের জন্য স্থান করে দিতে হয়। এটা জীবনের গতানুগতিক পরিণতি। এর ব্যতিক্রম হবে কেন? এই অবসর নিয়ে অর্থশাস্ত্রে অনেক তাত্ত্বিক এবং নিরীক্ষাধর্মী গবেষণা আছে, বিতর্ক আছে। নীতি নির্ধারকদের মধ্যে আছে বিস্তর মতভেদ। সে যা হোক, এর সবটুকুই আমার আজকের মূল বক্তব্যের জন্য অপ্রাসঙ্গিক, তাই সেকথা আজ আর নাইবা পাড়লাম।

ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায়, কী দেশে কী বিদেশে, প্রাচীনকালে কোথাও চাকরিতে অবসর বলতে কিছুই ছিল না। মানুষ যতদিন পারত ততদিনই বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে যেত, কাজে ব্যস্ত থাকত। চাকরিতে অবসরের ধারণা তুলনামূলকভাবে নতুন। মাত্র উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে অর্থাৎ ১৮৮৮ সালে ইউরোপের জার্মানীতে প্রথম চালু হয় অবসর জীবনের নিয়ম। আজকাল পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বৃদ্ধ বয়সে পেনশন সুবিধাসহ অবসর জীবনের আইন পাশ হয়ে আছে। চাকুরি দানকারি সংস্থা, সরকার এবং চাকরিজীবী সবাই যৌথভাবে দীর্ঘমেয়াদে পেনশন ফান্ড গড়ে তুলে। তবে সে সব পেনশন ফান্ডের আইনে আছে অনেক ফাঁক ফোঁকর এবং এর নিয়ম কানুন, সুযোগ সুবিধা একেক দেশে একক প্রতিষ্ঠানে একক রকম। অনেক দেশে এ ব্যবস্থা দেশের অন্যান্য আইনের মতই একটি জটিল এবং অলঙ্ঘনীয় বিধি। আজকাল পেনশন এবং অবসর জীবন আর কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি নিছক সুবিধা নয়, বরং আইনসিদ্ধ একটি অধিকারে রূপান্তরিত হয়েছে। পাশ্চাত্যের ধনী এবং সম্পদশালী দেশগুলোতে পেনশন সুবিধা অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী ও তার পোষ্যদের জন্য মোটামুটি পর্যাপ্ত, কিন্তু উন্নয়নশীল গরীব দেশে সে সুবিধা এখনো ততটা উন্নত এবং সমৃদ্ধ হয়নি। যার ফলে অবসর জীবনে প্রাপ্ত আর্থিক, চিকিৎসা, ও অন্যান্য সুবিধাদি সংশ্লিষ্ট চাকুরিজীবী ও তার ডিপেন্ডন্টদের জন্য যথেষ্ট নয়। সে কারণেই অবসর জীবনে বেশিরভার লোকদেরকে নিজের ব্যক্তিগত সঞ্চয়, পিতা-মাতার রেখে যাওয়া অর্থ, স্থাবর পৈত্রিক সম্পত্তি, পারিবারের অন্যান্য কর্মক্ষম সদস্যদের আয় উপার্জন, ইত্যাদির ওপর নির্ভর করতে হয়।

বয়সকালে চাকরিজীবীরা যখন অবসরে যায় তখন দীর্ঘ কর্মজীবনের সেই রুটিন লাইফ একইভাবে আর চালিয়ে যেতে পারে না। অনেকের পক্ষে এ হঠাৎ পরিবর্তনের ধাক্কা বা অভিঘাত সামলানো রীতিমত কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কেউ কেউ শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ কেউ অকাস্মাৎ মারাও যায়। যারা অবসরের জন্য আগে থেকে সঠিক ও পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক এবং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে তারা সহজেই এ পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ ব্যাপারে যারা সফল তারা কেউ আগের বাড়িতে থাকে, কেউ রিটায়ারমেন্ট কমিউনিটিতে রিলকেট করে। তাদের মধ্যে কেউ সময় কাটানোর জন্য পছন্দমত ভলান্টারি কাজে যোগ দেয়, যার টাকা পয়সা থাকে সে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়, কেউ লেখালেখি করে, বই পড়ে, বই লেখে, গান শোনে, খেলা দেখে, মাছ ধরে, অর্থাৎ যে কাজটি করতে মন চায়, ভাল লাগে, আগে সময়ের অভাবে করতে পারেনি সে ধরণের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। কেউ নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটায়, কেচ্ছা বলে, খেলা করে। কেউ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় যায়, নিজের মত করে ধর্মকর্ম করে, এতে শান্তি খুঁজে, পরকালের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করে রাখে, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

যাদের শরীর এবং মন ভেঙ্গে যায় তারা ঘরে বন্দি জীবন কাটতে বাধ্য হয়। পুত্র-কন্যা, পরিবার পরিজনদের ওপর নিতান্তই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যাদের দেখা শোনার জন্য নিজস্ব বলতে কেউ থাকে না, তারা সিনিয়র সিটিজেনস্ হোমে যায়, অন্যের সহায়তায় জীবনটাকে কোনো রকম বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। বিদেশে যাকে বলে অ্যাসিস্টেড লিভিং। এপর্যায়ে যাদের ইনসুরেন্স কিংবা নিজেদের সঞ্চয় থাকে না তারা পরিবার পরিজন, রাষ্ট্রীয় ওয়েলফেয়ার, অথবা বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় অথবা এ তিনের যৌথ ব্যবস্থায় দিন যাপন করে। এ তো গেল বিদেশের কথা, এবার আসি বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ছিল ৫৭ এখন বেড়ে হয়েছে ৫৯। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য এটা ৬৫, এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য ৬৭। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে বাধ্যতামূলক অবসরের নিয়ম আছে কিনা সঠিক জানি না, থাকলেও বয়সসীমা কত তা আমার অজানা। অবসর জীবনে চাকরিজীবীরা বিদেশে যা করে বাংলাদেশের অবসরজীবীরাও তাই করে বা করতে চায়। বিদেশের মত সব করতে পারে না সেটা বোধগম্য কারণে – আয়ের স্বল্পতার জন্য। কিন্তু যাদের ঢাকায় বা অন্যান্য বড় শহরে নিজের বা পৈতৃক ভূসম্পত্তি আছে তাদের বিশেষ কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, হয়ও না। তাদের অনেকে বিদেশের তুলনায় এ ব্যাপারে বলতে গেলে এগিয়ে আছে। তবে এরকম লোক আজকাল বাংলাদেশে অনেক হলেও অজস্র নয়।

বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের প্রসঙ্গে একটা কথা আমি বিশেষ জোর দিয়ে বলতে চাই। আর তা হল, কিছু কিছু অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী তাদের দীর্ঘ চাকরি জীবনে যা করতে পারেননি, তার চেয়ে অনেক বড় ও মহৎ অবদান তারা দেশ ও জাতির রেখে গেছেন বা যাবেন তাদের অবসর জীবনের কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে। এখানে ব্র্যাকের স্যার আবেদ, গ্রামীন ব্যংকের ড. ইউনূস, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ড. জাফরুল্লাহ্, বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, এবং আমার জানা মতে দেশের প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহ্সানের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. সৈয়দ আলী আশরাফের কথা না বললেই নয়। এ রকম দেশে আরো অনেক মহৎ ব্যক্তি আছেন বা গত হয়ে গেছেন যাদের কর্ম এবং অবদানের কথা আমরা জানি না তাদের সবার প্রতি আমি জানাচ্ছি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

সব শেষে অবসর বিষয়ে আরেকটি প্রসঙ্গ টেনেই আমার আজকের নিবন্ধে ইতি টানব। বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যত মানুষ চাকরি করে তাদের চেয়ে অনেক বেশি লোক সেল্ফ এমপ্লোয়েড। তাদের চাকরিও নেই অবসরও নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পেশার লোকরাই হচ্ছেন আমার সম্মানিক কৃষক ভাইয়েরা। তারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কঠিন পরিশ্রম করছে বলেই সবার ঘরে রান্না চড়ে, টেবিলে খাবার আসে। এর সাথে আছে অন্য পেশার অসংখ্য লোক যেমন জেলে, তাতী, কামার, কুমার, ঠেলাওয়ালা, রিক্সাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, দিনমজুর, মেথর, মুচি, ভিক্ষুক, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এসব পেশার লোকজনও সাহেব সুবাদের মত কর্ম জীবনে যে অবসর নিতে চায় না তা নয়, কিন্তু পারে না, অভাবের তাড়নায়। বাংলাদেশে আরেক দল লোক আছে অন্য পেশায়। তারা অবসর নিতে চায় কীনা জানি না। তবে তারা অবসর নেয় না। এর কারণ কিন্তু অভাব নয়, জনদাবি স্বত্বেও তারা অবসর নেয় না, নতুনদের জন্য জায়গা করে দেয় না এবং এটা নিতান্তই তাদের স্বভাবের দোষে। পাঠকগণ, বলেন তো এরা কারা? এরা সবার বড়, সবার ওপরে এদের স্থান, এরা দেশবাসীর হর্তাকর্তা, শাসক। তারা বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা- নেত্রী, কর্মী। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, বাংলাদেশে অচিরেই যেন গরিবদের অভাবের বদল হয় এবং শাসকদের স্বভাবেরও।

লেখক: অধ্যাপক – টেনেসী স্টেইট ইউনিভার্সিটি এডিটর – জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ।

Loading


Comments

অবসর জীবনের কথা — 6 Comments

  1. চাকরি জীবন মানেই নিয়ম মেনে চলা জীবন। সে জীবন শেষ হবার পরেই আসে নিয়ম না মেনে চলা জীবন। সারাদিন কোন কাজ নেই, সাপ্তাহিক ছুটি নেই, মাস শেষে বেতন পাওয়া যায় না, পেনশন যা পাওয়া যায় তাতে সংসার চলে না। পরিচিত জনেরা সকলেই ব্যাস্ত থাকে তাদের নিজ নিজ কাজে, তাদের কাছে দু দণ্ড বসে কথা বলতে গেলে তারা বিব্রত বোধ করে। শরীর আসে ক্রমাগত দুর্বল হয়ে, ঔষধ ছাড়া চলে না, সে ঔষধ কিনবার অর্থ থাকে না। ঘরে অলস বসে থাকা এই মানুষটিকে দেখতে দেখতে স্ত্রীরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। অন্যান্য বৃদ্ধরাও এই সিনিয়র সিটিজেনদের পরস্পরের মনের কাছাকাছি যেতে পারে না। বাসায় ছেলেমেয়েরা তাদের পুত্র কন্যাদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকে, বাবা বা মায়ের সাথে কথা বলবার ফুরসত তাদের হয় না। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে, তাদের আলাদা ঘরের প্রয়োজন, এই বুড়োবুড়ি একখানা ঘর দখল করে রাখায় তা সম্ভব হয় না।
    এমন কত যে অসুবিধা এই অবসর জীবনের তা বলে শেষ করা যায় না। বিড়ম্বিত এ জীবনের কেচ্ছা কেউ শুনতেও চায় না। মুখ বুজে কোন রকমে আরও কয়েকটা দিন, তারপর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চির প্রস্থান। সে প্রস্থান সময় যত দীর্ঘায়িত হয়, বিড়ম্বনা ততই বাড়ে।
    পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

  2. @এম আহমেদ:
    “আমরাও মনে হয় সেই পরিণতির দিকে পা পা করে হাঁটছি।”
    সহমত!

    • লেখাটি পড়ে কি যেন একটি ভাব অনুভব করছি। কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে, লেখে দেখি কি আসে।

      আধুনিক পেশা-প্রথায় যে জীবন যাপিত হয় এবং তারপরে যে অবসর আসে, তাতে অনেক সমস্যা থাকতে দেখা যায়। বাল্যকাল থেকে শুরু করলে বিষয়টা হয়ত স্পষ্ট হবে। পড়াশুনা আপনাতেই একটি কাজ এবং এক ব্যক্তি যখন প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি শেষ করে কোন পেশায় ঢুকে এবং ৬৫ বয়সে বেরিয়ে আসে, তখন মনে হয়, এই প্রাপ্ত ‘অবসর’দিয়ে এখন সে কি করবে। এই গোটা সময়ে হয়ত সে বাড়ী-গাড়ি, ধন-সামান কামিয়েছে, কিন্তু এখন তো এগুলো রেখে যাবার বেলা। অনেকের পেশা জীবনের প্রেশার এমনি থেকে যায় যে তার বাচ্চাদের সাথে সময় দিতে পারে নি, পরিবারের সাথে সময় দিতে পারে নি, নিজের মা-বাবার সাথে সময় দিতে পারে নি। সে সেই যে time-tunnel ঢুকেছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসে এখন যে জগত পেয়েছে, সে জগত আগের সেই জগত নয়। আত্মীয় স্বজন ও peer group –এর অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নিজের ছেলেমেয়েরাও হয়ত সংসার জুড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। এতকাল যে জিনিসটি ছিল ‘পেশা’ সেটিই ছিল মূলত ‘জীবন’। আজ অবসর যেন এমন বাস্তবতা এনে হাজির করেছে যা unrecognisable. তবে যা বলছি তা generalise করা যাবে না, কারো ক্ষেত্রে সত্য হবে, কারো ক্ষেত্রে তেমন সত্য নয়।

      বরং আমি যখন একজন সাধারণ চাষির জীবনের দিকে তাকাই তখন অনেক পার্থক্যের মাত্রা অনুভব করি। যে ব্যক্তির সামান্য জমি জমা ছিল এবং যে প্রাচীন প্রথায় ক্ষেত-খামারী করে পরিবারের সাথে মিলে-জোলে জীবন কাটিয়েছে, আজকে সে অনেকাংশে তার গ্রামীণ পরিবেশে, তার আপন সমাজে এখনও connected রয়ে গিয়েছে। জীবন সায়াহ্নে এই চাষির অবস্থা হয়ত পূর্বোল্লিখিত alienated (if it can be said so) উচ্চ-শিক্ষিত পেশা-জীবীর অবসর কালীন জীবন থেকে ভিন্ন। এই difference টা আমার কাছে কি যেন এক তিয়াসী তিয়াসি ভাবের সঞ্চার করে –কেননা এমন অনেক কিছু নিজের চোখে দেখেছি এবং আমরাও মনে হয় সেই পরিণতির দিকে পা পা করে হাঁটছি।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *