আমাদের গ্রামের নাম যোগীবিল। বৃহত্তর সিলেটের মৌলবি বা মৌলভীবাজারের (সাবেক সাউথ সিলেট বা দক্ষিণ সিলেট) ইতিহাস খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলার ৬নং আলিনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত একটি গ্রাম । বাংলাদেশের অন্য হাজার গ্রামের মত আমাদের গ্রামটি অখ্যাত হলেও পুরো অজ্ঞাত নয় বলেই মনে হয়! তথ্য প্রযুক্তির বন্যায় সমৃদ্ধ এই দুনিয়ায় গুগল একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, সেই গুগলের আবিষ্কৃত গুগল আর্থে সার্চ করলেই আমাদের এই যোগীবিলের নাম পাওয়া যাবে !
ভূ-মানচিত্রে ২৪°২০’০০” উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯১°৫৩’০০” পূর্ব দ্রাঘিমাংশে আমাদের গ্রাম অবস্থিত। গ্রামের পূর্বে সবুজ শ্যামল সুনছড়া চা বাগান । গ্রাম থেকে মাত্র আড়াই মাইল পূর্বে ভারতের সীমান্ত । সীমান্তের অপর পাড়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসর মহকুমার অন্তর্গত মূর্তিছড়া চা বাগানের অবস্থান। পশ্চিমে পাশ জুড়ে বিখ্যাত লাগাটা নদী, তার পশ্চিম কূলে প্রাচীন ঐতিহাসিক মংগলপুর গ্রাম, এখানে মনিপুরী সম্প্রদায়ের লোক বাস । পশ্চিম-দক্ষিণে ঐতিহাসিক বিশাল সলিম উল্লাহর দীঘি এবং মাত্র ২ মাইল দূরে কমলগঞ্জ উপজেলা। তার পশ্চিমে ডবল-ছড়া, লাউয়া ছড়া পর্যটন কেন্দ্র এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল । দক্ষিণ পাশ দিয়ে ঝির ঝির করে বহে চলছে ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি কন্যা খুব ছোট্ট নদী যার নাম সুনছড়া। প্রস্থে ছোট বলে অনেকে নদী না বলে ঝিরি বা ছড়া বলে থাকেন। শুধু বৈশাখ মাসে নয়, বারোমাসই পা ভেজানো পানি থাকে । তবে যখন অতিবর্ষণ হয় তখন পানিতে টইটম্বুর প্রবল বেগে ভাটির দিকে নেমে চলে। সেই সময়ে সাময়িক ভাবে দুইপাশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন গরু ঘোড়া কেন কোন মানবও খরস্রোতকে উপেক্ষা করে পাড় হতে পারেনা । সুনছড়ার দক্ষিণ পাশে চিৎলীয়া গ্রাম ও বিশাল হলদির হাওড়। আরও দক্ষিণে ইতিহাস প্রসিদ্ধ আদমপুর, তারও দক্ষিণে পর্যটন কেন্দ্র মাধবপুর লেক, এখানেও মনিপুরী সম্প্রদায়ের বাস । আরও দক্ষিণে সদ্য লোক নজরে আসা নয়ন কাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত হামহাম। যা আমাদের গ্রাম থেকে মাত্র সাড়ে পাঁচ মাইল দূরত্বে অবস্থিত। গ্রামের উত্তর পাশে লাংলিয়া গ্রাম। তার উত্তরে আলিনগর চা বাগান, ৪ মাইল উত্তরে ঐতিহাসিক শমশের-নগর এয়ারপোর্ট অবস্থিত। আরও উত্তরে লংলার পৃথিমপাশার ঐতিহ্যবাহী নবাব বাড়ি এবং পর্যটন কেন্দ্র মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।
আমাদের গ্রামের প্রাচীন ইতিহাস পাওয়া না গেলেও স্থানীয় লোক মুখে জানা যায় যে, আজ থেকে ২শত বছর আগে সাতগাঁও পাহাড়ি এলাকা থেকে যোগী সম্প্রদায়ের কয়েক পরিবার মংগলপুরের মনিপুরী রাজার কাছ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বিলের পশ্চিম পাশের সমতল ভূমি কিনে বসত স্থাপন করেছিলেন। সেই থেকে এই এলাকার নাম যোগীবিল বা জুগীবিল বলে পরিচিত লাভ করে। তারও ৫০ বছর পর বিলের পূর্ব পাশে টিকলাময় জংগল এলাকায় মুসলিমরা বসত করতে শুরু করে।
আপনারা যারা ভ্রমণ ইচ্ছুক তারা এই লিংকে ক্লিক করে আরো বিস্তারিত বুঝতে পারবেন।
http://www.getamap.net/maps/bangladesh/bangladesh_%28general%29/_jugibil/
যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, সারা বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের মৌলভীবাজার একমাত্র জিলা, যে জিলায় ৫৫টি দৃষ্টি নন্দন পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। আমি বিশ্বাস করি যারা আমার জিলা ভ্রমণ করে যাবেন তাদের বুক থেকে —বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি! তাই পৃথিবীর রূপ দেখিতে চাই না আর! জীবনানন্দ দাসের সেই কবিতাটির বিখ্যাত এই দুই ছত্র- উচ্চ ধ্বনিতে না বের হলেও অস্ফুট স্বরে বের হয়েই আসবেই!
আগেই বলেছি কি অসাধারণ একটা বর্ণনা পড়েছি আমি। এখানেও ভালোলাগা জানিয়ে দিয়ে গেলাম। 8)8)
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
লোক মুখে জানা আপনাদের গ্রামের প্রাচীন ইতিহাস জানাবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনার বর্ননা পড়ে দৃষ্টি নন্দন আপনাদের গ্রাম ভ্রমণ করতে ইচ্ছা হচ্ছে!
আপ্নার আগমণে আমাদের গ্রাম কবে ধন্য হবে সেই অপেক্ষায়।