ইসলামে নির্দেশ ও নির্দেশনার পার্থক্য: পর্ব-২
সাধারণভাবে মনে করা হয় কোরআন শরীফে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হুকুম-আহকামগুলো মুসলমানদের জন্য ফরজ হবে। কোরআনের মতো স্পষ্টভাবে বর্ণিত হাদীসও ফরজ বা ওয়াজিব হবে বলে মনে করা হয়। এক অর্থে এটি সত্য হলেও বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। উভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট হুকুম আহকামের অপরিহার্যতা থাকা সত্ত্বেও তা ‘নির্দেশ’ অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে ‘নির্দেশনা’ অর্থেও আমলযোগ্য হতে পারে। এ নিবন্ধে নির্দেশ ও নির্দেশনার পার্থক্যের আলোকে সমসাময়িক কতিপয় বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে কোরআন ও হাদীসের সংশ্লিষ্ট সুস্পষ্ট বর্ণনাগুলোকে নির্দেশ ও নির্দেশনার আলোকে ব্যাখ্যা করে ইসলামী শরিয়াহ’র অন্তর্গত ভাবধারাকে অনুধাবনের চেষ্টা করা হয়েছে। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব।
আল-কোরআনের হেদায়েতকে মেনে চলার বিষয়ে প্রথম পর্বে আলোচিত চিন্তার ধারাকে (line of thought) মাথায় রাখলে আপাত দ্বন্দ্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সহজ সমাধান হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে এ রকম দুটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হলো:
গতকাল একজন সহকর্মী বললেন, তিনি শুনেছেন- নারীরা জিন্সের প্যান্ট পরতে পারবে না। এ বিষয়ে তিনি আমার মত জানতে চাইলেন। উনাকে এ বিষয়ে আমি যে মতামত দিয়েছি, সংক্ষেপে তা নিম্নরূপ –
সাম্প্রদায়িকতাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ইসলাম সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতির পরিচয় ও নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। সে কারণে অন্য দ্বীনের অনুসারীদের ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় বহন করে এমন পোশাক পরিধান করা মুসলিম জাতির জন্য নিষিদ্ধ। পুরুষের পোশাক পরা নারীদের জন্য যেমন নিষিদ্ধ তেমনি নারীদের পোশাক পরা পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ। কিছু পোশাক আছে যা নারী-পুরুষ উভয়ই পরিধান করে। কমন প্যাটার্নের এসব পোশাক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পরতে পারবে। প্রশ্ন হলো, কোন্ কোন্ পোশাক নারী ও পুরুষ জন্য কমন প্যাটার্ন?
দেশ, কাল, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পরিবেশ ও মন-মানসিকতা ভেদে এই কমন প্যাটার্নের হেরফের হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক। তাই, পোশাক বিশেষ সম্পর্কে সাদা-কালো বাইনারিতে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে দেয়া সম্ভব নয়। অবশ্য প্রত্যেক এলাকাতেই কিছু কিছু পোশাক একেবারেই নির্ধারিত। যেমন, বাংলাদেশে শাড়ি, পেটিকোট, ব্লাউজ নারীদের পোশাক। সালোয়ার, শেমিজ, কামিজও নারীদের পোশাক। পাজামা-পাঞ্জাবী পুরুষদের পোশাক। লুঙ্গি পুরুষদের পোশাক। দেখুন, পাজামা আর সালোয়ার শুধু নামেই পৃথক। কামিজ আর পাঞ্জাবীতেও আদতে পার্থক্য নাই। আমাদের বাঙালি সমাজে মেয়েদের জিন্সের প্যান্ট পরা যতটা বেমানান, লুংগি পরা তারচেয়ে কম বেমানান নয়। অথচ লুংগি, তাও সেলাইবিহীন, ছিল রাসূল (সা) ও তাঁর সহধর্মিণীসহ তদানীন্তন আরবদের অন্যতম কমন পোশাক।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, জিন্সের প্যান্ট সম্পর্কে উক্ত সহকর্মীকে আমি কী বলেছি। আমার মতে, পাতলা কাপড়ের সালোয়ার পরার চেয়ে আটোসাটো নয় এমন জিন্সের প্যান্ট নারীর ইসলামসম্মত পোশাক হিসাবে ভালো (better)।
পর্ব ১