১৫ সম্পাদকের বিবৃতি, দলদাস বুদ্ধিজীবী এবং শরত্চন্দ্রের ‘হন্যে কুকুর’

আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ফ্যাসিবাদকে সাংবিধানিক রূপ দেয়া হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদের হিংস্র দাঁত নখগুলো এখন ভয়াল বিকট আকারে হামলে পড়েছে দেশবাসীর ওপর। ফলে আহ্লাদ, আশকারা, লালসা, স্বার্থপরতা ও অন্ধত্ব জীবন ধারণযোগ্য অক্সিজেনকে ভিটেছাড়া করেছে। ক্রোধ এবং ক্রুড়তা, হিংসা ও হিংস্রতা, সন্ত্রাস ও সংঘাত, দুর্নীতি ও দলবাজি এখন জান কবচ করে নিয়েছে আইন, নীতি-নিয়ম ও নৈতিকতার। সঙ্গত কারণেই ‘স্টেনগান ঘাড়ে নিয়ে হেঁটে যায় উনিশ শত চুয়াত্তর সাল’-এর বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের মতোই এখন কাটা রাইফেল আর পিস্তল হাতে নিয়ে ধর্মের ষাঁড়ের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেখ হাসিনার সৈনিকরা। এই সৈনিকরা দেশজুড়ে ইসলামবিদ্বেষ উসকে দিয়ে ডেকে এনেছে হানাহানি। শিক্ষকদের পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে দিচ্ছে। ছুড়ে মারছে এসিড, শত শত নিরীহ লোককে হত্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুরফুরে মেজাজে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বানাচ্ছে জঙ্গি। জনগণের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে লাখ লাখ মামলা। লক্ষাধিক মানুষ বিনা কারণে কারারুদ্ধ। রাজনীতিবিদদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে করা হচ্ছে অপমান। শত শত মানুষ হয়েছে গুম। খুন ধর্ষণ তো ডাল-ভাত। পুলিশ ও র্যাবের নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ হয়েছে পঙ্গু। এদের হাতে দেশের তেজী শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ লগ্নিকারী হয়েছে পথের ভিখারী। হলমার্কের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সোনালী ব্যাংক হয়েছে ফতুর। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কাদাপানিতে ডুবে মরেছে বাংলাদেশের ইজ্জত। এই রকম অবস্থায় দ্বিতীয়বারের মতো মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কমান্ডো স্টাইলে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেশের সাহসী সন্তান, সত্য প্রকাশে অকুণ্ঠ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। তার ওপর চালানো হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। রিমান্ডে অবর্ণনীয় নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ মানুষটি শুধু নীতি ও নৈতিকতার পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্য করেছেন অনশন। মুমূর্ষু অবস্থায় নীত হয়েছেন হাসপাতালে। এর আগে অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আমার দেশের প্রেস। পত্রিকা প্রকাশের পথে একের পর এক খাড়া করেছে দেয়াল। এরপর পুলিশ দিয়ে কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি। তারপর সংঘবদ্ধ শকুনের মতো মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে অনুগত ও করুণাভিখারী গণমাধ্যমকে। এই গণমাধ্যমগুলো চোয়ালকে বানিয়েছে মোহাম্মদী বেগের খঞ্জর। আর কলমকে বানিয়েছে গোর খোদকের কোদাল। এই খঞ্জরওয়ালা ও কোদালওয়ালারা নিজেদের মেধা ও শক্তির সবটুকু একত্র করে আফ্রিকার হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর ওপর। যেখানে যার যতটুকু সাধ্য আছে, যার চোয়াল ও কলমে যদ্দূর কুলায় তা দিয়ে মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর ওপর প্রতিনিয়ত ঢেলে দিচ্ছে বিষ, বিষোদ্গার, ঘৃণা। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তারা যাচ্ছেতাই ভাষায়, কুিসত অঙ্গভঙ্গীসহ সব প্রতিহিংসা উগড়ে দিচ্ছে এই দুই সত্তার ওপর। বাংলা অভিধানে যত জঘন্য ও নোংরা শব্দ আছে, তার সবগুলো এরা বহুদিন পর অন্ধকার গুহা থেকে টেনে বার করে বল্লমের মতো, বর্শার মতো নিক্ষেপ করছে মাহমুদুর রহমানের ওপর। আমার দেশ-এর ওপর। আর শাসকরা তাদের গৃহপালিত এই প্রাণীদের খিস্তি খেউর তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে। মাহমুদুর রহমান কারাবন্দি। তার পত্রিকা বন্ধ। তাকে যারা ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা সমর্থন জোগাত সেই টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ। অর্থাত্ যখন মাহমুদুর রহমানের জবাব দেয়ার কোনো উপায়ই রাখা হয়নি, সেই সময় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য অন্ধ বধির পশুর মতো ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার নুশংস মচ্ছবে মেতে উঠেছে এরা। এই রকম অবস্থায় মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও তার পত্রিকা বন্ধের ৪০ দিন পর দেশের সর্বজনমান্য ১৫ জন সম্পাদক নিজ নিজ বিবেকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘দৈনিক আমার দেশের প্রেসে তালা দিয়ে পত্রিকার ছাপা বন্ধ করা, পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর নির্যাতনের অভিযোগ, বিকল্প ব্যবস্থায় ছাপতে না দিয়ে আমার দেশ পাবলিকেন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ ‘দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আইসিটি মামলায় গ্রেফতার করে পত্রিকার প্রেসে তালা লাগিয়ে দেয়া এবং কোনো কারণ না দেখিয়ে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়া অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অনেক সাংবাদিককে বেকারত্বের অন্ধকারে নিক্ষেপ করা কোনো নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের ভাবমূর্তির পক্ষে অনুকূল নয়।’ সম্পাদকরা বলেন, ‘আমরা মনে করি সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারের ওপর আশঙ্কাজনক হুমকি। এ জাতীয় ঘটনা গণতন্ত্রের ভিতকে যে দুর্বল করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একজন সম্পাদককে গ্রেফতার, পত্রিকার প্রকাশনা ব্যাহত ও দুটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। একই সঙ্গে স্বদেশে গণতন্ত্রচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত ও বিবেচিত হচ্ছে।’ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সমাজে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, পত্রিকাটির প্রেসের তালা খুলে দিয়ে এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখা এবং দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।’ দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও প্রশংসিত হয় এই বিবৃতিটি। এর মূল সৌন্দর্য হলো, মত ও পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও সম্পাদকরা এই বিবৃতির মাধ্যমে আইন, গণমাধ্যম ও মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারা একত্রিত হয়েছেন। কিন্তু এই বিবৃতিটি প্রশংসিত হলে কি হবে, শাসকরা এটাকে দেখল তাদের অপকর্ম চরিতার্থ হওয়ার পথের কাঁটা হিসেবে। অতএব পঞ্চম সংশোধনী থেকে উত্সারিত ফ্যাসিবাদের তহসিলদার এই সরকারের পাইক পেয়াদা, লাঠিয়াল, ক্যাডার, দলদাস বুদ্ধিজীবী এবং আমির উমরাহরা একসঙ্গে গগন ফাটিয়ে ঘেউ ঘেউ করে পাড়া মাথায় তুলল। প্রথম কীর্তি স্থাপন করলেন আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেব। তিনি বললেন, সম্পাদকরা না বুঝেই বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি সাবধান করে দিয়ে বললেন, ভবিষ্যতে যেন না জেনে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে ওকালতি না করা হয়। যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা— যখন কেউ বলে লোকে তাকে বলে আহাম্মক। শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে জুতা বানানোর প্রতিযোগিতা হলে ইনু সাহেব হয়তো প্রথম হতেন। রাজনৈতিকভাবে এতিম, অসহায়, এই নেতা তার দলের ২০ হাজার শহীদ নেতাকর্মীর রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে হাসিনার স্তাবকতায় সবাইকে টেক্কা দিয়ে নৌকায় চড়ে মন্ত্রী হয়ে নিজেকে এখন ভাবছেন কেউকেটা। তার মতো লোকরা যখন দেশের সম্পাদকদের ধমকানি দেন, জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন বান্দরবানের জঙ্গলের উল্লুকরা পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মহাবীর কে এম শফিউল্লাহ আর এ কে খন্দকার সাহেবের সেকটর কমান্ডার ফোরামও বিবৃতি দিয়েছেন। তারা যে কোন কাননের ফুল সে তো সবাই জানে। আগেই যে কথা বলে এসেছি, যারা সরকারের সব অন্যায় ও অপকর্ম সম্পর্কে নিঃশব্দ, যারা দেশজুড়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞসহ এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ব্যাপারে মুখে তালা লাগিয়ে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্সি দাবি করে বুদ্ধিজীবী সুলভ ‘ভাব ধরে’ জাতিকে অষ্টপ্রহর জ্ঞান দেয়, ‘জনগণমন অধিনায়কের’ ইশারায় এবার তাদেরও জবান খুলল। সরকারের সাংস্কৃতিক বরকন্দাজ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্যাডে হানিফ খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই দলদাসরা জানালেন, তারা মর্মাহত, তারা বিস্মিত, হতবাক। কারণ যে প্রভুর গোয়ালে খড় বিচালি খেয়ে তাদের ঘাড়ে গর্দানে বিস্তর চর্বি জমেছে, সেই প্রভুর স্বার্থ পাহারা দেয়া তাদের ফরজ কাজ। সেই স্বার্থে সাম্পাদকরা আঘাত করেছেন। আর কি চুপ থাকা যায়! এখন নিমক হালালি ‘দেখানোর জন্য হলেও তাদের কিছু করার দরকার। অন্য কিছু করার মুরাদ তো নেই। বিবৃতি দাও। দিলেন বিবৃতি। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে দেখি নাম আসে, শিল্পী কাইউম চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, হাসেম খান, নির্মলেন্দু গুণ, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রামেন্দু মজুমদার, শাহরিয়ার কবির, ড. মুনতাসীর মামুন, সেলিনা হোসেন, ডা. কামরুল ইসলাম খান, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গোলাম কুদ্দুস ও মুহাম্মদ সামাদ-এর। প্রিয় পাঠক ‘ইহারা কাহারা? কি ইহাদের পরিচয়? কি ইহারা করিয়া বেড়ায়? ইহাদের আসল মতলব কি?’ তা কারো অজানা নয়। তবে অজানা হলো, কেন শক্তি, সামর্থ্য, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এদের অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি? কেন পাকিস্তানি পতাকার নিচে বসে এরা চাকরি করেছে? থাক, এদের সম্পর্কে, সাবধান থাকতে হবে। কারণ বহু আগে, সেই ১৯৭০-এর দশকে এদের কীর্তিকলাপ দেখে শ্রদ্ধাভাজন আহমদ ছফা বলে গেছেন, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা যা বলে সে কথা যদি জনগণ শুনতো তাহলে দেশ কোনো দিন স্বাধীন হতো না। আর এখন এরা যা বলে তা শুনলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। খ্যাতি ও প্রতিপত্তির লোভে আধিপত্যবাদের কাছে আত্মা বিক্রয়কারী দলদাস বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে, এখন থেকে হাজার বছর আগে কবি জালাল উদ্দিন রুমি বলে গেছেন, সেই রাজা হলো উত্তম যে জ্ঞানীদের কাছে যায়। আর সেই জ্ঞানীরা হলেন নিকৃষ্ট যারা রাজদরবারে যাতায়াত করে। তো এই বুদ্ধিজীবীরা তো আওয়ামী রাজদরবারের চারদিকে দিন-রাত ঘুর ঘুর করে। এরা জনগণের চোখে বোঝা। এদের কবি ‘নিকৃষ্ট’ বলতেই পারেন। কবির কথায় কবি প্রসঙ্গ এলো। এখন দেখি আমাদের কয়েকজন কবিও এই ‘ঘেউ ঘেউ’ এর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তারাও একটা বিবৃতি ঝেড়েছেন। কবি বলেই বোধ করি কিছুটা বে-আক্কেল। বে-আক্কেল বলেই ইনু সাহেব দ্বারা সাহসী হয়ে একটা বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেক নজরে পড়বার জন্য সওয়াবের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। কবিরা চিরকালই বঞ্চিত লাঞ্ছিত গ্রুপের। এরা রাজদরবারে বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞানের দাপট ও জ্বালায় কাছে ঘেঁষতে পারে না। এরা উচ্ছিষ্ট খুদ কুঁড়া ও এঁটো খাবার কুড়িয়েই নিজেদের ধন্য মানে। এঁটো হোক আর খুদ কুঁড়া হোক— রাজদরবারের অংশ তো, অতএব ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো এরা এটুকুতেই মহানন্দে লাফালাফি করে বেড়ায়। শুধু আওয়ামী দরবারে তাই নয়— বিএনপি দরবারেও এরকম আহাম্মক ও গোমূর্খ অনেক কবি দেখেছি। এরশাদের দরবারে তো ছিলই। যেহেতু এদের কেউ পোঁচে না, সেজন্য এরা চোখে পড়ার জন্য নানান কসরত করে ও ভাষা ব্যবহার করে। তেমন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তাদের বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ‘মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।’ এই কথাগুলো পড়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। এই কবিরা একদিকে যেমন জ্ঞানবিচ্ছিন্ন অন্যদিকে তেমনি জনবিচ্ছন্ন। সাংবিধানিক দায়িত্ব কাকে বলে সেটাও জানে না, আর জনগণের আকাঙ্ক্ষা কি সেটা বোঝার মতো সুস্থতা তো নেইই। মাহমুদুর রহমানের গুষ্ঠি উদ্ধার করা বিবৃতিদাতা কবিদের মধ্যে দেখি আছেন বেলাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, রবিউল হুসাইন, রুবি রহমান, মুহম্মদ নূরুল হুদা, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহা, কাজী রোজী, শিহাব সরকার, মুহাম্মদ সামাদ, নাসির আহমেদ, আসলাম সানী, কাজল বন্দোপাধ্যায়, হালিম আজাদ, তারিক সুজাত। সারা পৃথিবীতে কবিরা সত্য, মানবতা, ন্যায়, নৈতিকতা, সুন্দর, কল্যাণ ও মঙ্গলের পথের যাত্রী। অন্যায়, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে শোষণের বিরুদ্ধে তারা থাকে সবসময় সোচ্চার। কিন্তু আশ্চর্য ব্যতিক্রম এই দলকানা দলবাজ কবিরা। এরা লজ্জা শরম হুঁশ আক্কেলের মাথা খেয়ে ফ্যাসিবাদ, অন্যায় ও জুলুম-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছে বেহায়ার মতো। হয়তো এদের সম্পর্কে জাতীয় কবি নজরুল বলে গেছেন, “একদিন কথা-শিল্পী সুরেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে গল্প শুনেছিলাম যে, শরত্চন্দ্র তার বই-এর সমস্ত আয় দিয়ে ‘পথের কুকুরদের জন্য একটা মঠ তৈরি করে যাবেন। খেতে না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় যেসব হন্যে কুকুর, তারা আহার ও বাসস্থান পাবে ঐ মঠে— ফ্রি অব চার্জ। শরত্চন্দ্র নাকি জানতে পেরেছেন, ঐ সমস্ত পথের কুকুর পূর্বজন্মে সাহিত্যিক ছিল, মরে কুকুর হয়েছে। শুনলাম ঐ মর্মে নাকি উইলও হয়ে গেছে! ওই গল্প শুনে আমি বারবার শরত্চন্দ্রের উদ্দেশে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে বলেছিলাম, ‘শরত্-দা সত্যিই একজন মহাপুরুষ। সত্যিই আমরা সাহিত্যিকরা কুকুরের জাত। কুকুরের মতোই আমরা না খেয়ে এবং কামড়াকামড়ি করে মরি। তার সত্যিকার অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি আছে, তিনি সাহিত্যিকদের অবতার-রূপ দেখতে পেয়েছেন।”

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *