ধর্মনিরপেক্ষতা ও হেফাজতে ইসলাম

আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী ঘরানার কিছু ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক মনে করেন, ’৭২-এর সংবিধান ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংবিধান কি-না, তা নিয়ে তারা কোন আলোচনা করেন না। ’৭২ সালের সংবিধানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সংশোধনীই একমাত্র উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী। আর সব সংশোধনী সংবিধানকে কাটাছেঁড়া, ক্ষতবিক্ষত করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে তারা দাবি করেন। ’৭২-এর সংবিধান শুধু ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মডেল আর পরবর্তীকালে অন্যান্য সরকারের করা সংশোধনীগুলো যথার্থ নয়Ñ এই বক্তব্য কতটুকু যথার্থ সে বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইবেলের ওপর হাত রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ নেন। আমেরিকার মুদ্রায় ‘ওঘ ঙেউ ডঊ ঞজটঝঞ’ কথাটি লেখা আছে। এরপরও তাদের আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলি এবং সেখানে সব ধর্মের লোকেরা শান্তি-সম্প্রীতিতে বসবাস করছে বলে ধারণা করি। ‘ব্রিটিশ সংবিধানে প্রটেস্টান খ্রিস্টান ছাড়া কেউ সে দেশের রাজা বা রানী হতে পারে না’Ñ এ ধরনের বিধান থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সংবিধান যদি বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট গণতান্ত্রিক সংবিধান হয়, তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-এর ঘোষণা প্রদান করা এবং সংবিধানে প্রস্তাবনার পর্বে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ (দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে) সংযোজন করার কারণে বাংলাদেশের সংবিধান কেন ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক হবে না, তা বোধগম্য নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা নির্ভর করে সংবিধান স্বীকৃত (তৃতীয় ভাগ) মৌলিক অধিকার [পৃষ্ঠা : ১২, অনুচ্ছেদ ৪১-এর ১ (ক) (খ) এবং (২)] যথাযথভাবে সব নাগরিক ভোগ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যথার্থ ভূমিকা পালন করছে কি-না তার ওপর। অনুচ্ছেদ ৪১ (১)-এ আইনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে, (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে। (২) কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম সংক্রান্ত না হলে তাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করতে হবে না। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকার সংবিধান যথাযথভাবে মেনে চলছে কি-না? বাংলাদেশের জনগণকে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে এবং জীবন দিতে হয়েছে। তারপর মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা পেয়েছি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব, সবুজের বুকে লাল পতাকা এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের অক্ষরে লিখিত সংবিধান। সেই সংবিধান জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার যথাযথভাবে পালন করছে কি-না, তা দেখার দায়িত্ব এ দেশের সব নাগরিকের। যথাযথ দায়িত্ব পালন না করলে তার প্রতিবাদ করার নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিটি নাগরিককে দিয়েছে সংবিধান। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-এর ঘোষণা প্রদান এবং সংবিধানের প্রস্তাবনার পর্বে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করার কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট হয়নি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১-এর কোন কার্যকারিতা বর্তমানে আছে কি? কোন সম্প্রদায়ের লোক বর্তমান সময়ে তাদের ধর্ম ও ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষা করতে পারছে না। যেমনÑ রামুতে বৌদ্ধ ধর্মের উপাসনালয়গুলোতে উপর্যুপরি সরকারের মদদপুষ্ট লোকদের তাণ্ডবের কারণে যে বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে, তা নজিরবিহীন। বিভিন্ন জায়গায় সরকার সমর্থিত অঙ্গ-সংগঠনের সমর্থক ও কর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দুদের ভূমি, জমি ও বসতবাড়ি দখল করে ঘরছাড়া, সংসারহারা ও দেশান্তরিত করতে বাধ্য করছে। এক্ষেত্রে সরকার সমর্থিত ব্যক্তিদের আড়াল করে বিরোধী দলের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা ও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত আছে। অথচ সরকার সমর্থিত পত্রিকায় ভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক রুপতনু বড়-য়া কানাডার মন্ট্রিলে আশ্রয় চেয়ে সে দেশের ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলার রায়ে বলা হয়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত আছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের নামাজ পড়তে দেয়া হচ্ছে না। শুক্রবার হলেই পুলিশ পাহারায় বায়তুল মোকাররমের গেটে মুসল্লিদের ভাগ্যে জোটে পুলিশের বুটের লাথি। সারাদেশে জেলা প্রশাসন অশ্লীল নৃত্যের অনুমোদন দেয়, কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের অনুমোদন দেয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমার বাড়ি, সেখানকার এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আমি দিতে পারব। নবম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ৮২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘হলাল-হারাম’ অংশে হারাম বিষয় ও দ্রব্যের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছেÑ ‘দেবদেবী বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত হারাম।’ বইটিতে ইসলামী শরিয়ত, হালাল-হারামÑ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আল্লাহর সঙ্গে দেবদেবীকে সমান্তরাল (নাউজুবিল্লাহ) করে দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৭৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীবজন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও নামে উৎসর্গ করা হয়।’ সরকারি পাঠ্যবইয়ে ইসলামের এমন ভয়াবহ অবমাননায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং দেশের বিশিষ্ট আলেম সমাজ। পবিত্র কোরআনের অর্থও বিকৃত করা হয় বইটিতে। উল্লিখিত বইয়ের ১০৭ পৃষ্ঠার পাঠ্য বিষয় হল ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ’। এখানে সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছে ‘তোমরা (ইসলাম ও মানবতাবিরোধী শত্র“র বিরুদ্ধে) লড়াই করবে। যতক্ষণ না ফিতনা-ফ্যাসাদ ও অশান্তি চিরতরে নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। মানুষকে যাবতীয় পশুপ্রবৃত্তি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যায়-অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ধর্মশিক্ষা বা ধর্মীয় অনুভূতির বিকল্প নেই। এ কারণে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ থেকেই হেফাজতে ইসলাম দাবি জানিয়ে আসছে, শিক্ষার সব স্তরেই সঠিক ধর্মশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হেফাজতে ইসলামের এই তথ্যগুলো সঠিক কি-না, তা যাচাই করা প্রয়োজন ছিল সরকারের। তা না করে সরকার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্মুখ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যা অপ্রত্যাশিত। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধের বিচারে পবিত্র কোরআনের সূরার অপব্যাখ্যা করে ‘মানবতাবিরোধী’ কথাটি সংযোজন করে ধর্মের অপব্যবহার করা হয়েছে, যা আলেম সমাজকে ক্ষুব্ধ করেছে। আলেম উলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ ইসলামের এই চরম অবমাননা এবং আয়াতের অপব্যাখ্যা প্রতিরোধকল্পে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখানে লক্ষণীয়, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো বা বিচার বানচাল করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কওমি মাদ্রাসার আলেম উলামা মাশায়েখরা কখনও জামায়াতে ইসলামী কিংবা অন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। বাংলাদেশে এমন কিছু এনজিও আছে, যারা সুনির্দিষ্টভাবে মুসলিম সমাজে পিতার সম্পত্তিতে ভাইয়ের সঙ্গে সমান অধিকার দাবি করার জন্য নারী সমাজের নির্বাচিত ইউপি সদস্য, ওয়ার্ড কমিশনার এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচিত নারী সদস্যদের নিয়ে প্রতি মাসে মটিভেশন ওয়ার্ক করে। ইসলামে নারীর জীবন বিধানে সম্পত্তির অংশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকার পরও সেটাকে নিয়ে মটিভেশন ওয়ার্ক করার ধৃষ্টতা তারা কোথা থেকে পায়? হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীদের বিয়ের সময় উপঢৌকন ছাড়া পৈতৃক সম্পত্তির কোন অংশই যে নারীকে দেয়া হয় না, এ নিয়ে তাদের কোন মন্তব্য নেই। এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা মুসলিম নারীরা কি ওই সব বিদেশী পয়সায় পরিচালিত এনজিওর কাছে এবং আধুনিকতার নামধারী কিছু নারীনেত্রীর কাছে ধরনা দিয়েছি সম্পত্তিতে সমঅধিকারের জন্য? আমি নিজে একজন শিক্ষিত, সচেতন, নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নারী হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, মুসলিম পারিবারিক আইন মাফিক নারীদের সম্পত্তি বণ্টন যথার্থ। পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান মিশনারিদের গরিব, অসহায়, দুস্থ মানুষের পাশে গিয়ে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ধর্মান্তরিত করার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, যা দেশের সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগের মারাÍক পরিপন্থী। এসব বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে এবং সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগের বিরুদ্ধাচরণকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা পালন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের আলটিমেটাম দেয়ার কারণে আজকে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষবিহীন, অরাজনৈতিক, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, আলেম, উলামাকে সরকারের নির্মম রোষানলের শিকার হতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী খেতাবে ভূষিত হতে হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেÑ এমন নিকৃষ্ট কথাও শুনতে হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা নিয়ে সরকার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিতে গিয়ে সরকার সমর্থিত আলেম উলামাদের মাঠে নামিয়েছে, শাহবাগ চত্বরের ব্লগারদের ব্যবহার করেছে। তথাকথিত আধুনিক সমাজের নারীনেত্রীরা নারী সমাবেশের মঞ্চে উঠে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার যে অপব্যাখ্যা প্রদান করেছেন সে প্রসঙ্গে বলতে চাই, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র ও জনগণের উপকারের কথা বলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন, নির্যাতন এবং তাদের নামে মিথ্যা মামলা, রিমান্ড ও জেলহাজতে প্রেরণ যেভাবে প্রকট আকার ধারণ করেছে, এমনকি সরকারের অপকর্মের সমালোচনা করতে গেলে সরকার তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পায়ে পা বাঁধিয়ে যেভাবে কলহে জড়িয়ে পড়ছে, তা দেশবাসীর কাম্য নয়। হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে নারীনেত্রী, ব্লগার, আওয়ামী আলেম উলামাদের সরকারি হেফাজতে প্রশাসনের বেষ্টনী দিয়ে মাঠে না নামিয়ে বরং হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার কোথায় কোথায় ইসলামের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং ইসলামকে কোথায় কোথায় কোরআন-হাদিসবহির্ভূত অপব্যবহার করা হয়েছেÑ সরকারপ্রধানের কাছ থেকে সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চায় দেশবাসী। বস্তুত এই সরকার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১ সম্পূর্ণরূপে লংঘন করছে। বিধিবিধান মেনে চলছে না। এ সরকারের আমলে কোন ধর্মের লোক শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। এর জন্য ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-এর ঘোষণা এবং প্রস্তাবনার পর্বে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন দায়ী নয়। এর জন্য মূলত দায়ী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। ’৭২-এর সংবিধান থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত যতগুলো সংশোধনী হয়েছে, সবগুলোতেই সব ধর্মের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। কোথাও হরণ করা হয়নি। বরং বর্তমান সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-এর অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমনÑ সংশোধনী এপ্রিল, ২০০৮ এ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের অর্থ ছিল, দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। আর সর্বশেষ সংশোধনী, অক্টোবর ২০১১-তে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের অর্থ করা হয়েছে, দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। যেখানে আল্লাহর সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার নাম বসিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা ও মানসিকতার অভাবে কোন ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের লোক ধর্ম পালন এবং তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছে না এবং বিরোধী দল সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন কর্মসূচিও পালন করতে পারছে না। হেফাজত নেতা বাবুনগরী সরকারি হেফাজতে থাকাবস্থায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, রিমান্ডের নামে তার ওপর প্রচণ্ড অত্যাচার করা হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত মুসলমানরাও মুসলমান এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুসলমানরাও মুসলমান। ঈমান আকিদা রক্ষার্থে এবং ধর্মকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে আলেম, উলামা, মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের ৫ তারিখের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বেগম খালেদা জিয়া ঢাকাবাসীকে সাহায্য করার যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তা ছিল যথার্থ ও সময়োপযোগী এবং যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে হেফাজতের কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন, তারা তাদের ঈমানি দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বেগম খালেদা জিয়া শুধু পরপর তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দু’বারের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসনই নন, তিনি একজন ঈমানদার মুসলমান, জবান বরখেলাপকারী নন। কাজেই বেগম খালেদা জিয়ার ওই ঘোষণাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ কোন মুসলমান যে দলই করুক, ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে একাÍতা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। অতএব ঢাকাবাসীকে সাহায্য করার কথা বলে একজন মুসলমানের ঈমান আকিদার আন্দোলনে একাÍতা ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি সরকার ও উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের না করাই শোভনীয়।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *