সীমান্ত প্রহরা ও শান্তি রক্ষা

বর্তমানে মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রের পূর্বতন নাম হচ্ছে বার্মা। বার্মা বা মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানীর নাম নেপিডো, যেটি ভৌগোলিকভাবে দেশের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। সাত বছর আগেও রাজধানী ছিল বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী প্রাচীন বন্দরনগরী রেঙ্গুন। বার্মা সরকার রেঙ্গুনের নাম বদলে ইয়াঙ্গুন করেছিল। সেই ২০০২ সালের প্রথম দিকের কথা। বহু বছর পর, মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশি পণ্যের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে জেনে পুলক অনুভব করেছিলাম। ভেবেছিলাম, এই একটি সুযোগ যেখানে বাংলাদেশের প্রতি মিয়ানমারের জনগণের আবেগ-অনুভূতি ও আগ্রহকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। বাস্তবে ঠিক তা-ই ঘটেছিল।

বাংলাদেশের স্থলসীমান্তের ১০ শতাংশের ৯ শতাংশ ভারতের সঙ্গে ও মাত্র ১০ শতাংশের ১ শতাংশ মিয়ানমারের সঙ্গে। ভারত যে আমাদের প্রতিবেশী, সেই কথা আমাদের প্রতিদিনই স্মরণ করতে হয়। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো, দিবালোকের মতো স্পষ্ট ভূ-বাস্তবতায়, মিয়ানমারও যে আমাদের নিকটতম পড়শি সে কথা আমরা বেমালুম বিস্মৃত থাকছি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে একাধিকবার বাংলাদেশের বিডিআর ও মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার নামক দেশটি আমাদের মিডিয়ার শিরোনামে থেকেছে মাঝেমধ্যে। এই ধরনের একটি সংঘাতের পটভূমিতেই, একবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অংশকেও মিয়ানমার সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছিল। তখন আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ডিরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশনস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখ, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে, তখন থেকে পেছনের দিকে ২২ বছর ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তথা যুদ্ধরত পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিবাহিনীর একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পরবর্তী এক-দুই বছরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক ক্যাম্প গুটিয়ে ফেলা হয়েছিল। এর পর পরই সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশকে কক্সবাজার জেলা ও বান্দরবান জেলার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত রামুতে অস্থায়ী ক্যান্টনমেন্টের মতো করে মোতায়েন করা হয়েছিল। এরপর আর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করিনি। গত ১০ বছরে অনেকবারই মিয়ানমার আমাদের দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে, কিন্তু সেটা একটা তিক্ত কারণে। সেই তিক্ত কারণটি হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত।

সীমান্ত প্রহরা ও শান্তি রক্ষা

এখন থেকে আনুমানিক চার বছর আগে মিয়ানমারে নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হয়েছিল। সেই নতুন সংবিধানের অধীনে নতুন নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনের ফলে একটি নতুন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। পাশ্চাত্য বিশ্ব সেই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কৌশলগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে ত্বরিতগতিতে এগিয়ে এসেছিল। পশ্চিম ইউরোপ, নিজেদের স্বার্থেই মিয়ানমারের নতুন রাজনৈতিক পরিবেশকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু এর একটি মূল্য মিয়ানমারকে দিতে হয়েছে হালকাভাবে। সেই মূল্য হলো, নির্বাচনের পূর্বেকার ২৫ বছর যাবৎ ক্রমান্বয়ে যেই উষ্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গণচীন নামক বৃহৎ শক্তির সঙ্গে গড়ে উঠেছিল, সেই উষ্ণ সম্পর্কটির উষ্ণতা কমাতে হয়েছে। গণচীন ও মিয়ানমারের সম্পর্ক এখন একদম শীতল নয়, কারণ মিয়ানমারে গণচীনের পক্ষ থেকে প্রচুর বিনিয়োগ আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারত নামক রাষ্ট্রের সম্পর্ক উষ্ণ ছিল, এখনো আছে। কিন্তু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের বিষয়টি কোনো অবস্থায়ই, অঙ্কের কোনো হিসাবেই, মেলানো যাচ্ছে না।

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধ ছিল। চূড়ান্ত আন্তর্জাতিক বিচারে তার ফয়সালা হয়েছে। বাংলাদেশের আড়াই বছর আগের আওয়ামী লীগ সরকার তখন ঘটনাটির নাম দিয়েছিল ‘সমুদ্র বিজয়’। মিয়ানমারের ক্ষতি হয়েছিল বলে অনেক বিশ্লেষকই বলেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমার অসন্তুষ্ট। আজকের মিয়ানমার, একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি। মিয়ানমারের সাবেক সামরিক জান্তা, ক্রমান্বয়ে যুগপৎ শান্তি আলোচনা ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান ১৮টি ইনসার্জেন্সি বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন করেছিল। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার আমলে, আমাদের চোখে প্রচলিত গণতন্ত্র ছিল না সত্য, কিন্তু সামরিক জান্তা তাদের নিজস্ব নিয়মেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছিল। তিন বছর আগে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর বেসামরিক সরকার, মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রের বেশির ভাগ দরজা-জানালা খুলে দিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য। বাংলাদেশকে তারা সেই সুযোগ দেয়নি অথবা বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে পারেনি। ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদকালে যতটুকইবা সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল, সেটা পরবর্তী সময়ে অব্যাহত রাখা হয়নি বা রাখতে পারেনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল।

মিয়ানমারে যে প্রদেশটির বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের সঙ্গে অভিন্ন সীমান্ত আছে, সেই প্রদেশের বর্তমান নাম রাখাইন প্রদেশ। রাখাইন প্রদেশের অতীত তথা ঐতিহাসিক নাম আরাকান প্রদেশ। এই আরাকান প্রদেশে নৃতাত্ত্বিকভাবে দুই ধরনের জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য। এক, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জনগোষ্ঠী, যারা থাইল্যান্ড-লাওস-ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া-চীনের মতো মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। আরেকটি হলো, ইসলাম ধর্মের অনুসারী, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, যাদের আচার-আচরণ, চলাফেরা, ভাষা ও লোকজ সংস্কৃতি ইত্যাদি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মানুষের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ মিল আছে। নিকট অতীতে মিয়ানমারের বিভিন্ন সরকার বারবার চেষ্টা করেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রাখাইন প্রদেশ থেকে বিতাড়িত করতে। বিতাড়িত করলে সেই রোহিঙ্গারা কোথায় যাবে? স্বাভাবিক নিয়মেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় এসে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনা অনেকবার হয়েছে গত ৩০-৪০ বছরে। শরণার্থী হিসেবে আসার পর, অতীতে (তথা গত পাঁচ-ছয় বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমল ব্যতীত) সব সময় সরকারি উদ্যোগে, শান্তিপূর্ণ পন্থায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য কঠোর চেষ্টা করা হতো এবং চেষ্টাগুলো মোটামুটি সফল হতো। গত কয়েক বছরে একদিকে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গাবিরোধী চেষ্টা বা পদক্ষেপ অনেক শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বাংলাদেশি উদ্যোগ নরম থেকে নরমতর ও গৌণ থেকে গৌণতর হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিও সহানুভূতিসুলভ হওয়ার পরিবর্তে, ক্রমান্বয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ত্রিমুখী সম্পর্ক অবনতিশীল হয়েছে। ত্রিমুখী মানে তিনটি পক্ষের মধ্যে। একটি পক্ষ হলো মিয়ানমার সরকার তথা রাখাইন প্রদেশের মিয়ানমার সামরিক কর্তৃপক্ষ। আরেকটি পক্ষ হলো, বাংলাদেশ সরকার তথা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পক্ষ। তৃতীয় বা শেষ পক্ষ হলো, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, যারা এখনো রাখাইনে আছে এবং যারা শরণার্থী হয়েছে (বাংলাদেশের মাটিতে বা অন্যত্র), সবাই।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট সহানুভূতি পায়নি বলে অনেকেই বলে। এটাও সত্য, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে, রাজনৈতিক, সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইতিবাচকের পরিবর্তে নেতিবাচকভাবেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সব কিছুর জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দোষ দিলে চলবে না। বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরা ও সীমান্ত এলাকায় শান্তি রক্ষার জন্য যারা নিযুক্ত, তাদেরও ভূমিকা আছে। তাদের রাজনৈতিক মুরব্বিদের ভূমিকাও ধর্তব্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনটিকে মূল দায়িত্বের বাইরে অন্য অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত রাখা হয়েছে কি না এবং সেই নিয়োগের কারণে, মৌলিক দায়িত্বের প্রতি তাদের দক্ষতায় ও মনোযোগে তারতম্য হয়েছে কি না, এটা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রসঙ্গে চোরাচালান ও অবৈধ আসা-যাওয়া যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, এটাই বাস্তবতা। এ ধরনের প্রেক্ষাপটেই সর্বশেষ বা সাম্প্রতিকতম সংঘাতমূলক সম্পর্ক ও পরিস্থিতি।

গোলাগুলির প্রথম ঘটনা ঘটেছে ২৮ মে, ২০১৪ তারিখে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মতে, ‘সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যদের ওপর বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছিল মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।’ অপরপক্ষে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ‘দুজন সন্দেহভাজন সশস্ত্র বাঙালি হলুদ রঙের পোশাক পরে সীমান্তবর্তী মংডু শহরে প্রবেশ করার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তারক্ষীদের নজরে আসে এবং সেই সময় তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়। সেই গুলিতে একজন নিহত হয় ও আরেকজন পালিয়ে সীমান্তরেখা পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।’ এ ঘটনায় বিজিবি সদস্য নায়েক সুবেদার মিজান সেই গোলাগুলিতে নিহত (শহীদ) হয়েছেন। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি তো বটেই, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও প্রচণ্ড আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব-স্বাধীনতা ইত্যাদির অনুকূলে এবং মিয়ানমারের আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিকূলে। আমার প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ হচ্ছে যে বাঙালি তরুণরা যেখানে শতভাগ মিয়ানমারের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, সেখানে প্রচুরসংখ্যক উপজাতীয় তরুণের মন্তব্য ছিল মিয়ানমারের পক্ষে। এটি আমার পক্ষ থেকে একটি আশ্চর্যজনক আবিষ্কার।

আরো একটি সিরিয়াস বিষয় উপস্থাপন না করলেই নয়। মিয়ানমার যদি সন্দেহ করে যে আরাকানীয় বা রোহিঙ্গা সম্পর্কীয় ইনসার্জেন্ট বা বিদ্রোহী জনগোষ্ঠীর সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যে আশ্রয় বা প্রশ্রয় পাচ্ছে, তাহলে সেটা উড়িয়ে দেওয়া সহজ হবে না। কারণ বিতর্কিত শান্তিচুক্তির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার হয়েছে, ফলে সেখানে নিরাপত্তা নজরদারি প্রায় শূন্যের কোঠার কাছাকাছি। দ্বিতীয়ত, আমরা বাংলাদেশিরা যদি সন্দেহ করি যে অফিশিয়ালি বিলুপ্ত কিন্তু আনঅফিশিয়ালি বিলুপ্ত নয় এমন উপজাতীয় ইনসার্জেন্ট সংগঠন মিয়ানমারের জঙ্গলে আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়, তাহলে মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও এই সন্দেহ দূর করা কঠিন হবে। এ পর্যায়ে আমার মন্তব্য হলো, যার যার দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার ও সেই সেই দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর ওপরই বর্তায়। আমরা বাংলাদেশিরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি কি না বা পারছি কি না সেটাই আমাদের কাছে মুখ্য আলোচ্য বিষয়।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি করা একাধিক কারণে প্রয়োজন। একটি কারণ হলো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে, পূর্বমুখী নীতি (Look East) কার্যকর করতে গেলে, মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে করা কঠিন হবে। অন্য একটি কারণ হলো, একাধিক রাজনৈতিক-বাণিজ্যিক সংগঠনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একসঙ্গে আছে, অন্যান্য দেশের সঙ্গে যথা ভারত, চীন ইত্যাদি। অতএব, ওই সব রাজনৈতিক-বাণিজ্যিক সংগঠন থেকে উপকার পেতে হলে সংগঠনের দুটি সদস্য দেশকে পারস্পরিকভাবে বন্ধু হওয়া প্রয়োজন। অন্য আরেকটি কারণ হলো, চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা এবং মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা। এই ত্রিবিধ আঙ্গিকে সম্পর্ক উন্নত করা প্রয়োজন। ছোট্ট একটি ঘটনা উল্লেখ করে এই কলাম শেষ করছি। উল্লেখ করার কারণ হলো, বাংলাদেশ সরকারকে রাজনৈতিক ও ইতিবাচক অর্থে কিছুটা সাবধান করা, বাংলাদেশের স্বার্থে। ২০০০ সালের মে মাসের একটি তারিখে তৎকালীন মিয়ানমারের শাসকবর্গের জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব (চার তারকা জেনারেল) থান শয়ের ঢাকা সফর চূড়ান্ত হয়েছিল। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের পক্ষ থেকে অব্যাহত চেষ্টার ফলেই ওই সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সফরের চার দিন আগে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ এমন একটা মন্তব্য করেছিলেন যে সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওই হাই- প্রোফাইল সফরটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল বা ডেফার্ড করা হয়েছিল। এখন ২০১৪ সালের জুন মাস। আমরা সুচিন্তিত, সুসংহত পদক্ষেপ চাই, সরকারের পক্ষ থেকে ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com

দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় পূর্ব প্রকাশিত

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *