“সাকিবের অহংকার ও বিসিবির পা”— অ্যাটিচিউড প্রবলেম: সাকিব বনাম বিসিবি । পর্ব ১

সাকিব নয়, বরং আমাদের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের একটা সিরিয়াস অ্যাটিচিউড প্রবলেম আছে
*
বাংলাদেশের সোনার ডিমপাড়া হাসটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি
*
ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলার ইতিহাসে বেটিং বা ড্রাগস নেয়ার মতো অপরাধ না করলে এভাবে কোনো খেলোয়াড়কে কেউ দেড় বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করে নাই

খেলাধুলার খবর অনেক বছর ধরে যারা অনুসরণ করেছেন, তাদের কাছে বিগত বছরের একটা ছবি বিস্ময়কর মনে হওয়ার কথাসেটা হলো বিসিবির সভাপতির মোস্তফা কামালের পা ধরে মাফ চাচ্ছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বরপুত্র সাকিব আল হাসান।

এই ছবিটা দেখে যে কোনো স্বাভাবিক বোধ সম্পন্ন ব্যক্তির বিবমিষা হওয়ার কথা। সাকিব আল হাসান জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার, একজন ব্যক্তি এবং একজন নাগরিক। এই তিনটা পরিচয়ের একটিও দাবি করে না, একজন ব্যক্তি, ব্যক্তি বা নাগরিক বা ক্রিকেটার আরেক আরেকজন ব্যক্তির পা ধরে বসে থাকবে। সেটা জাতীয় পত্রপত্রিকায় আসবে। এটা দেশের এবং সেই ব্যক্তি এবং নাগরিকের জন্যে অসম্মানের, একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটারের জন্যে তো বটেই।

২৩ জানুয়ারি ২০১০-এ দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ছবি। সাকিব তখন বাংলাদেশ কিক্রেট দলের অধিনায়ক

২৩ জানুয়ারি ২০১০-এ দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ছবি। সাকিব তখন বাংলাদেশ কিক্রেট দলের অধিনায়ক

এই পৃথিবীতে এমন কোনো অপরাধ নাই, যার জন্যে সাকিব বা যে কোন খেলোয়াড়কে বিসিবির চেয়ারম্যানের পা ধরে বসে থাকতে হবে। ক্ষমার অযোগ্য কোনো অপরাধ হইলে, সাকিবকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া যেতে পারেপ্রয়োজনে ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে।

কিন্তু, একজন ব্যক্তি সাকিব বা একজন নাগরিক সাকিব বা একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব বিসিবির চেয়ারম্যানের পা ধরে বসে থাকবেসেটা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার চিহ্ন নির্দেশ করে।

১। বিসিবির মধ্যে প্রফেশানলিজমের অভাব আছে।
২। বিসিবি কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় চলে
, এবং বিসিবির কর্মকর্তা এবং প্রধানদের মনোবাসনা পূর্ণ করা এই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য। ক্রিকেটার বা ক্রিকেটের জন্যে বিসিবি নয়, বিসিবির জন্যে ক্রিকেট।

বিগত সিরিজগুলোতে স্বজনপ্রীতি এবং বিসিবির হাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মানের ব্যাপক অবক্ষয়ের দায় সাকিব আল হাসানের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে অল্প দুয়েকজন প্লেয়ার জানপ্রাণ দিয়ে দেশের ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করছে সাকিব আল হাসান তাদের মধ্যে অন্যতম

এই ধরনের পরিস্থিতিতে সাকিব আল হাসানের ৬ মাসের জন্যে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মানে দেড় বছর পর্যন্ত বিদেশি টুর্নামেন্ট থেকে যে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাকে একটু সামগ্রিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে আলোচনায় আনতে হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনার ভিত্তেতে নয়।

প্রথমে আমরা শাস্তিটাকে একটু বিশ্লেষণ করি। এই শাস্তির চারটি মূল প্রশ্ন।

১। সাকিব আল হাসানের অপরাধটা কি?
২। তাকে শাস্তি দিতে কি কারণ দেখানো হয়েছে। এবং কারণটা গ্রহণযোগ্য কিনা।
৩। সাকিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তিটা কি এবং সেইটা গ্রহণযোগ্য কিনা।
৪। অপরাধ যদি করেই থাকেন তবে সেই অপরাধে তাকে ছয় মাস এবং দেড় বছরের জন্যে ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করার মতো অত্যন্ত কঠোর শাস্তি সঙ্গতিপূর্ণ কিনা।

এবং সাকিবকে নিয়ে গণমানুষের আলোচনায় সাকিবের অহংকার ও দেশপ্রেম নিয়ে যে প্রশ্ন সেটা নিয়েও একটু কথা বলব আমরা।

১। প্রথমে আমরা দেখি , সাকিবের অপরাধটা কী।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে, সাকিবের মূল অপরাধক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) যাওয়া নিয়ে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং অনাপত্তিপত্র না নিয়েই সিপিএলে খেলতে চলে যাওয়া”। (প্রথম আলোর সংবাদ)

২। কিন্তু শাস্তি দিতে কি কারণ দেখানো হয়েছে? খুব ইন্টারেস্টিং। বিসিবির সভাপতি পাপনের বক্তব্য থেকে কোট করছি।

তিনি বলেছেন, “সাকিবের মারাত্মক আচরণগত সমস্যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমনটা কেউ কখনো দেখেনিতার মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারমিশন না নেয়াটা ইস্যু না। সাকিবের আচরণ খারাপটা প্রধান ইস্যু।

দলের ধারাবাহিক বাজে পারফরম্যান্সকোনো টিমওয়ার্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে নাশঙ্কার বিষয়, দলের অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যেও এটি সংক্রমিত হচ্ছেএটি আমাদের দলের ওপর সর্বনাশ ডেকে আনছেঅবশ্যই এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত“ তার মানে বাংলাদেশ দলের ধারাবাহিক খারাপ খেলার জন্যে বিসিবি সাকিবের আচরণকে দায়ী করছেন। এবং পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছেন, সাকিবের অ্যাটিচিউড প্রবলেম, বাংলাদেশ দলের খারাপ পারফরমেন্সের জন্যে দায়ী।

এখানে সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং হল, বিগত সিরিজগুলোতে স্বজনপ্রীতি এবং বিসিবির হাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মানের ব্যাপক অবক্ষয়ের দায় সাকিব আল হাসানের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে অল্প দুয়েকজন প্লেয়ার জানপ্রাণ দিয়ে দেশের ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করছে সাকিব আল হাসান তাদের মধ্যে অন্যতম।

৩। আমরা এখন দেখি, এই অপরাধের ব্যাপারে সাকিবের অবস্থান কি?

দেখবেন, সাকিবের অবস্থান কিন্তু খুবই নমনীয়। তিনি হয়তো, রাগের মাথায় একটা বেয়াদবি করেছেন। কিন্তু প্রথম আলোর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে “বিসিবির নির্দেশে টুর্নামেন্ট না খেলেই সাকিব লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। তা ছাড়া তিনি সিপিএলে গিয়েছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান আকরাম খানের মৌখিক সম্মতি নিয়ে। যদিও কাল অবস্থান বদলে আকরাম খান বললেন, “আমি তাকে অনুমতি দিতে পারি না। আমি বলেছি সিইওর সঙ্গে কথা বলে যেতে।”

ফলে, মূল অপরাধের দিকে যদি আমরা দেখি, দেখতে পাই, সাকিব কিন্তু ঠিকই আকরাম খান থেকে পারমিশন নিয়েছেন। কিন্তু, আকরাম খান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম বলেছেন। ফলে কে ভুল কে ঠিক এগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন

বিসিবির কাছে অ্যাটিচিউডের সংজ্ঞা কী? অ্যাটিচিউড শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা। এবং বিসিবির বিধি অনুসারে অ্যাটিচিউডের শাস্তি কী? আমরা জানি, এক একজন মানুষের ব্যক্তিগত মানসিক গঠন এক এক রকম। এবং বাংলাদেশের মতো দেশে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা একজন অলরাউন্ডারের একটু অ্যাটিচিউড সমস্যা থাকাটা স্বাভাবিক। ব্যক্তিগতভাবে, আমি একবার তামিম ইকবালের সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, তার বিশাল বড় অ্যাটিচিউড প্রবলেম আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে সম্পর্কযুক্ত সকলেই জানেন, জাতীয় দলে দুই দিন খেলার পরে প্রতিটা খেলোয়াড়েরই কলার উঠে যায়। এইটা আমাদের জাতীয় প্রবলেম, সাকিবের একার প্রবলেম না। তাইলে সাকিবকে শুধু অ্যাটিচিউড প্রবলেমের জন্যে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে কেন? সবাইকে দিতে হবে

বিসিবি সভাপতি নিজেই বলেছেন, “কিন্তু সে পরে তার ভুল বুঝতে পেরেছে যে তার এভাবে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। দ্বিতীয়ত সে যেটা বলেছে যে,সে কোচের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। সেটা সে আমার কাছে ক্লিয়ারলিই স্বীকার করেছে এবং এজন্য সে অনুতপ্ত এবং সে লন্ডনে নেমে ফোন করে অ্যাপলোজি চেয়েছে যে, তার ভুল হয়ে গেছে। তার এ রকম করা ঠিক হয়নি। এছাড়া যে সমস্ত বিষয়গুলো পত্রপত্রিকায় এসেছে সেগুলো বলা উচিত হয়নি,এটাও সে আমাকে বলেছে।”

ফলে, এখানে আমরা একটা পরিষ্কার কন্ট্রাডিকশন দেখতে পাই। সেটা হল, সাকিবকে শাস্তি দেয়ার মূল কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিগ খেলতে যাওয়া। কিন্তু অপরাধটা সাকিব করেই নাই, কারণ সে ভুল বুঝতে পেরে বিসিবির নির্দেশে ফিরে এসেছে। ফলে, অপরাধটা হয়ই নাই। এবং সাকিব অপরাধী না হওয়াতে, বিসিবি সভাপতির বক্তব্য মতে, তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, “আপনারা সম্ভবত দুইতিনটা পয়েন্ট যেটা শুনেছেন, আমি যেটা দেখেছি কিন্তু উই হ্যাভ সিরিজ অব অ্যালিগ্যাশনস অ্যান্ড রিপোর্টস, যে ওর সিভিয়ার অ্যাটিচিউড সমস্যা আছে।

পরিষ্কারভাবে আমরা দেখেছি। সাকিবের মূল যে অপরাধ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, তা কিন্তু সে আর ফাইনালি করে নাই। এবং বোর্ডের হিসেবে তার অপরাধ হচ্ছে অ্যাটিচিউড। যেখানে, সাকিব বার বার মাফ চেয়েছে।

আমাদের তাই এখন প্রশ্ন করতে হবে, বিসিবির কাছে অ্যাটিচিউডের সংজ্ঞা কী? অ্যাটিচিউড শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা। এবং বিসিবির বিধি অনুসারে অ্যাটিচিউডের শাস্তি কী? আমরা জানি, এক একজন মানুষের ব্যক্তিগত মানসিক গঠন এক এক রকম। এবং বাংলাদেশের মতো দেশে সাকিবের মতো বিশ্বসেরা একজন অলরাউন্ডারের একটু অ্যাটিচিউড সমস্যা থাকাটা স্বাভাবিক। ব্যক্তিগতভাবে, আমি একবার তামিম ইকবালের সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, তার বিশাল বড় অ্যাটিচিউড প্রবলেম আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে সম্পর্কযুক্ত সকলেই জানেন, জাতীয় দলে দুই দিন খেলার পরে প্রতিটা খেলোয়াড়েরই কলার উঠে যায়। এটা আমাদের জাতীয় প্রবলেম, সাকিবের একার প্রবলেম না। তাইলে সাকিবকে শুধু অ্যাটিচিউড প্রবলেমের জন্যে এমন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে কেন? সবাইকে দিতে হবে।

সাকিবের মতো ক্রিকেটারের কাছ থেকে দেড় বছরের জন্যে বল এবং ব্যাট কেড়ে নেয়া যে কি অমানবিক এবং নিষ্ঠুরপ্রতিশোধের নেশায় অন্ধ, ননক্রিকেটার, রাজনৈতিক দালালি করে নেতৃত্ব অর্জন করা এই সব কর্তাব্যক্তিদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব

সাকিবকে তার অ্যাটিচিউড নিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে অথচ আমরা দেখি সাকিব বার বার ক্ষমা চেয়েছেন, এমনকি লন্ডনে গিয়ে মাফ চেয়ে আসছেন। তবুও ক্ষমা মেলে নাই। বিসিবির পূর্বের সভাপতির পা ধরে মাফ চাওয়াতেও তো দেখা যায়ছেলে ভালো, পা ধরে মাফ চায়। রাগের মাথায় হাথুরুসিংহকে একটা কথা বলার পরে, সাকিব আর কি করতে পারে? এবার পাপন সাহেবের পা ধরে কান্না কাটি? সেটা না করলেই কি অ্যাটিচিউডের সমস্যা হয়?

ফলে আমরা কি দেখতে পাই, সাকিব নয়, বরংআমাদের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের একটা সিরিয়াস অ্যাটিচিউড প্রবলেম আছে। তাদের ইগো এই পর্যায়ে গ্যাছে যে, তারা চিন্তা করতে পারে, “খেলো নাই ঠিক আছে, গেলা কেন? এত্ত বড় সাহস, ক্রিকেট থেকে বের করে দেব।“

ফলে দেখা যায়, ইগোটা সাকিবের যত না বেশি, বোর্ডের কর্তাব্যাক্তিদের তার থেকে কয়েক কোটি গুণ বেশি।

এবং এইটা আরও ক্লিয়ার হয়, পাপন সাহেবের একটা কথায়, “বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিবের জন্যে নয়”। (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)

এই ধরনের একটা বক্তব্যে দিতে গিয়ে একজন শীর্ষ ক্রীড়া কর্মকর্তার হিসেবে কোনো ধরনের প্রফেশনালিজমের ধার ধারেন নাই পাপন সাহেব। তিনি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিবের জন্যে নয়। পাঠক খেয়াল করবেন বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের আচরণ এলাকার রাজনৈতিক পান্ডার মতো। কারণ, পাপন সাহেব কোনোমতেই বলতে পারেন না, বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিবের জন্যে নয়। সাকিবের জন্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট কি না, সেইটা সাকিবের পারফর্মেন্স ডিসাইড করবে, পাপন সাহেব কোনোমতেই সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।

এই কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, অ্যাটিচিউড প্রবলেমওয়ালা বোর্ড তার ইজ্জত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাকিবকে একটা শাস্তি দিতে চাইছে। এমন একটা শাস্তি যাতে তার আজীবনের জন্যে শিক্ষা হয়ে যায়।

যে কোন শীর্ষ ক্রীড়াবিদকে শাস্তি দিতে চিন্তা করতে হয়, তার সংশোধন। কিন্তু, সাকিবকে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বোর্ডের চিন্তা ছিল প্রতিশোধ।

এবং এইটা যে শাস্তি নয়, প্রতিশোধ সেইটা প্রমাণ হয় পরবর্তী প্রশ্নে।

৪। সাকিবের শাস্তিটা তার অপরাধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে কিনা।

৬ মাস সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার। এবং দেড় বছরের জন্যে বিদেশি লিগ থেকে বহিষ্কার।

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, কিসের ভিত্তিতে ছয় মাস, কিসের ভিত্তিতে ১৫ মাস। উত্তর হচ্ছে, প্রতিশোধ। দেড় বছরের ফরেন লিগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে সাকিব ২০১৫ সালের আইপিএলে খেলতে না পারে। টার্গেট আইপিএলে সাকিবের সাফল্য, সাকিবের অ্যাটিচিউড প্রবলেমের সংশোধন নয়।

তাদের প্রতিশোধ এতই নৃশংস যে, এর ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নাই। এর ফলে যে প্রাকটিস না করে, সাকিবের পারফরমেন্স এবং বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সাকিব যে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে পারে, এর ফলে বাংলাদেশের এক মাত্র ভরসার স্থান সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার যে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক খেলায় আমাদের পারফরমেন্স যে বাধাগ্রস্ত হবে, সেটাও তাদের বিবেচ্য না

সাকিব যেহেতু ক্রিকেট খেলে সফল হয়েছে , সেহেতু তার জন্যে সব চেয়ে কঠিন শাস্তি হচ্ছে তাকে দীর্ঘ সময়ে ক্রিকেট খেলতে না দেয়া। বোর্ড জানে সাকিব যদি খেলতে পারে, তাহলে সে সফল হবে। তাই বোর্ডের টার্গেট ছিল, তার সাফল্য কেড়ে নেয়া। তাকে খেলতে না দেয়া।

সাকিবের মতো ক্রিকেটারের কাছ থেকে দেড় বছরের জন্যে বল এবং ব্যাট কেড়ে নেয়া যে কি অমানবিক এবং নিষ্ঠুরপ্রতিশোধের নেশায় অন্ধ, ননক্রিকেটার, রাজনৈতিক দালালি করে নেতৃত্ব অর্জন করা এই সব কর্তাব্যক্তিদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব ।

পরিষ্কারভাবে তাদের টার্গেট সাকিবের সাফল্য। এটা পরিষ্কার বাংলাদেশের মতো মিডিওকারদের দেশে সাকিবের আন্তর্জাতিক সেলেব্রিটি হয়ে ওঠার কারণ মানসিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগা বিসিবির নেতৃত্ব সাকিবের কাছে পূর্ণ আনুগত্য চায়। কিন্তু, সেটা হয়তো সাকিব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, হয়তো তার মধ্যেও গর্ব এবং অহংকার আসছে। কিন্তু সেই অহংকারকে দমন করতে বাংলাদেশের সোনার ডিমপাড়া হাসটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।

তাদের প্রতিশোধ এতই নৃশংস যে, এর ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নাই। এর ফলে যে প্রাকটিস না করে, সাকিবের পারফরমেন্স এবং বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সাকিব যে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে পারে, এর ফলে বাংলাদেশের এক মাত্র ভরসার স্থান সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার যে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক খেলায় আমাদের পারফরমেন্স যে বাধাগ্রস্ত হবে, সেটাও তাদের বিবেচ্য না।

সাকিবের এই শাস্তি, একটা অ্যাটিচিউড প্রবলেম সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের, খেলার সাথে সম্পর্কহীন রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের হাতে, বাংলাদেশের পান্ডামি দেখানোর সংস্কৃতিতে কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রতিশোধস্পৃহা নিবৃত্ত করার জন্যে নেয়া একটি নিষ্ঠুর এবং অমানবিক শাস্তি মাত্র

শুধুমাত্র ক্রিকেটিং কারণে যদি আমরা দেখি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সাকিব যদি লিগ খেলে ,তাহলে তার কন্ডিশনিং হবে এবং সেটা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরমেন্সের জন্যে ভালো হবে। ফলে বিসিবির বরং সাকিবকে এই টুর্নামেন্ট খেলতে উৎসাহ দেয়া উচিত ছিল। তবুও, শুধুমাত্র গায়ের জোর এবং রংবাজি দেখানোর জন্যে বিসিবি সাকিবের টুর্নামেন্ট খেলা বন্ধ করল এবং এমন একটা শাস্তি দিলযাতে সাকিব, দেশের ক্রিকেট এবং এই টুর্নামেন্ট সবার ক্ষতি হবে। সবাই হারবে, জিতবে শুধু বিসিবির অ্যাটিচিউড।

এর ফলে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়, দেশের ক্রিকেটের নেতৃত্ব দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিসিবির দেশের ক্রিকেটে এবং ক্রিকেটারদের প্রতি তাদের সামান্যতম দায়বদ্ধতা নাই। তাদের মূল ইস্যু, টাকা কামানো, ক্ষমতা এবং নিজেদের অ্যাটিচিউড দেখানো।

আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারব, ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলার ইতিহাসে বেটিং বা ড্রাগস নেয়ার মতো অপরাধ না করলে এভাবে কোনো খেলোয়াড়কে কেউ দেড় বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করে নাই।

সাকিবের এই শাস্তি, একটা অ্যাটিচিউড প্রবলেম সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের, খেলার সাথে সম্পর্কহীন রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের হাতে, বাংলাদেশের পান্ডামি দেখানোর সংস্কৃতিতে কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রতিশোধস্পৃহা নিবৃত্ত করার জন্যে নেয়া একটি নিষ্ঠুর এবং অমানবিক শাস্তি মাত্র।

আজকে সাকিব আল হাসানের নয় এই সব অযোগ্য ক্রিকেট কর্মকর্তার শাস্তি হওয়া উচিত যাদের দুর্নীতি, অযোগ্যতা এবং স্বজনপ্রীতির কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেট ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। এদের অযোগ্যতার কারণেই বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রতিভাবান একটা দল আফগানিস্তান এবং ভারতের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে নির্লজ্জভাবে পরাজিত হওয়াসহ ক্রমাগত খারাপ পারফরম করে গেছে। অথচ, আমাদের এই প্রজন্ম অনেকগুলো বছরে আমাদের সেরা প্রতিভাবান টিম। আজকে তাই ছয় মাসের জন্যে সাকিব আল হাসানকে নয়, বরং রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এইসব অযোগ্য, অথর্ব, ক্রিকেটার কর্মকর্তাদের যারা সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে তাদেরকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে আজীবন বহিষ্কার করে, সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমী ক্রিকেটার কর্মকর্তাদের হাতে বিসিবিকে তুলে দিয়ে বিসিবিকে ঢেলে সাজানো উচিত। এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পতন থেকে রক্ষা করা উচিত।

পরবর্তী কিস্তি: সাকিবের অহংকার ও বিসিবির পা” ব্যক্তি সাকিব বনাম রোল মডেল সাকিব পর্ব ২

পূর্ব প্রকাশিত: বাংলা ট্রিবিউন

 

Loading

জিয়া হাসান

About জিয়া হাসান

লেখক: প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি -

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *