সাইদী সাহেবের রায় প্রসঙ্গে কিছু কথা

আজকে বাংলাদেশের ক্ষমতানীন দল ও তাদের সমর্থকরা একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের নামে যে প্রহসন করে যাচ্ছেন এবং যারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসাবে দাবী করেন তারা পবিত্র কোরানের নিম্নের আয়াত পড়েছেন কি না আমার যতেষ্ট সন্দেহ হয়। সুরা বনী ইসরাইলের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “ যে কেহ অন্যায়ভাবে নিহত হইলে তাহার উত্তরাধিকারীকে তো আমি উহার প্রতিকারের অধিকার দিয়াছি কিন্তু সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত।” (এই প্রতিকারের অধিকার প্রসঙ্গে ইসলামী স্কলাররা বলেন: “আইনগত প্রতিকার গ্রহণের অধিকার যথা কিসাস গ্রহন। এই অধিকার প্রদান করে আল্লাহ ভিকটিমকে সাহায্য করিয়াছেন – সুত্র ৪৪২ পৃ: টিকা ৯০৮ -আল কুরআনুল করীম, ইসলামিক ফাউনন্ডেশন এবং এখানে কি ওয়ার্ড হচ্ছে সীমা লঙ্ঘন না করা।)

যুদ্ধাপরাধের বিচারের সাইদী সাহেবের রায়ের ব্যপারে যখন কথা বলি তখন কোরআনের এ শিক্ষার আলোকেই কথা বলি। এখানে আমরা একজন মানুষের জীবন মরণ নিয়ে কথা বলছি। আমরা জানি যে নিরাপরাধ কাউকে হত্যা করে ফেললেই অপরাপর হত্যার বিচার হয়ে যায় না, হত্যার সাথে হত্যা সংযুক্ত হয়। তাই আমরা চাইনা কোন নিরপরাধ মানুষের শাস্তিও হোক। অমাদের বুঝতে হবে যদি কোন অসৎ সরকারের প্রভাবিত বিচার ব্যবস্থার সঠিক সামর্থ বা capacity না থাকে এবং যাকে আসামী বলে ধরে নেয়া হয় তার সমর্থনে দলিল প্রমান flimsy হয়, অথবা সরাসরি অসম্পর্কিত হয়, সেখানে ‘দূর্বল পথে চলতে গিয়ে এক সমস্যার সাথে দশ সমস্যার সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক এবং জাতি আজ তা’ই দেখতে পাচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, চোখের পরিবর্তে চোখ নেওয়ার অধিকার সকল মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু একথাও আছে যে ক্ষমাই শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বোত্তম পন্থা। মোহাম্মদ (সাঃ) ক্ষমার মাধ্যমে মক্কায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নেল্সন ম্যানডেলা তার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ট্রুথ এন্ড রিকন্সিলিয়েশনের’ মাধ্যমে। আমি প্রতিশোধ নয় শান্তির পক্ষের মানুষ। বিশেষ করে দুর্বল বিচার ব্যবস্থা ও চরম দুর্বল সাক্ষী-প্রমাণ বিষয় সামনে রেখে আমার কাছে শেখ মুজিবের ক্ষমার পথই ভাল ছিল। তিনি তার ক্ষমা ব্যক্তিগতভাবে করেনি, করেছিলেন রাষ্ট্র-প্রধান হিসেবে, কিন্তু একটি বিশেষ চক্র সেই শান্তির নিরসন আবেগের নামে আবার অগ্নির মত প্প্রজ্জল করে দিয়েছে। এরা জাতির সর্বনাশ করেছে। দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী যদি জামাতের সাথে সংযুক্ত না হতেন তবে তাকে এই পরিণতির মোকাবেলা করতে হত না। আবার জামাত যদি ১৯৭১ সালের পরে আর রাজনীতি করত না তাহলে এই বিচারের কথাও এখন এরা তুলল না। মূল কথা হচ্ছে ইসলামী রাজনীতি। জামাতের বাইরের লাখ লখ লোক সাঈদী চিনেন, মানেন এবং জানেন যে তিনি এক হিংস্র সম্পদায়ের খপ্পরে পড়েছেন -এরা চরম মিথ্যাবাদী, প্রহসনের বিচার যন্ত্র এখন তাদের হাতে। আজ যারাই তার পক্ষে বেরিয়ে প্রতিবাদ করছে এই হিংস্র সম্পদায়ের বেইমানের দল তাদেরকেই জামাতি বলছে। এই যড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে মানুষ জীবন দিতে এসেছে, এটাই তাদের ঈমান। এই দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, এই যন্ত্র, এই প্রসহন, এই হিংসার রাজনীতি এখন জাতিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং এর জন্য নাস্তিক, পক্ষ, আল্ট্রা সেক্যুলার পক্ষ, বিশেষ করে কমিনিস্ট পক্ষই দায়ী। খাটি আস্তিক ও বিবেবান পক্ষ কেবল ‘ন্যায় বিচারের’ কথাই বলছেন, কেননা তারা আর কীইবা বলতে পারেন। তবে আমি আশাবাদী যে এই দাবানল যারা ছড়িয়েছে তাদের শাস্তি আল্লাহ শীগ্রই দিবেন। সাঈদীর মত সর্বদলীয়ভাবে পরিচিত ইসলামের দায়ী এমন একটি ব্যক্তিত্বকে এই কুখ্যাত বেদীন পক্ষ তাকে মেরে ফেললেও ঊড়িয়ে দিতে পারবে না। তারাই বরং ইতিহাসের আস্তাখুড়ে নিপতিত হবে। এটা এখনই দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশে দশচক্রে ভগবান ভুত হয়ে যাওয়ার নজীর রয়েছে। শেখ মুজিবকে হত্যার সময় কে এম শফিউল্লা সেনা প্রধান ছিলেন। কিন্তু তিনিও বলেন তার ডিপুটি জিয়াউর রহমান নাকি শেখ মুজিবের মৃর্ত্যুর জন্য দায়ী। এখানে প্রশ্ন হলো তিনি যদি তা জেনে থাকেন তাহলে ষ্টপ করলেন না কেন? আর না জেনে থাকলে এমন অপদার্থ সেনা প্রধান হয় কি ভাবে? সেখ সেলিম তো তাকে ভরা সভায় ‘অপদার্থ’ বলেছেন। তিনি কি করতে পেরেছেন? এখন এই ভুতেরা সাঈদীর দিকে ধাপিয়ে গেলেও আমার বিশ্বাস এরা নিশ্চিহ্ন হবে, কেননা ওরা মিথ্যাবাদী।

মনে রাখতে হবে বর্তমান প্রশাসনের যে বিচার ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে ‘আজকের’ ধর্ষক, হত্যাকারী, গুমকারী, চুর ও ডাকাতদের ধরে বিচারাধীন করতে পারছে না – যেখানে পুলিশ, র্যাব থেকে শুরু করে আদালত ও বিচার ব্যস্থা দলীয়করন,প্রশাসনের সর্বত্র করাপশনে ভরপুর সেখানে ৪২ বৎসর আগের বিচার কীভাবে এদেশে সম্ভব হবে নিরপেক্ষভাবে? সে প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে বিবেকবান মানুষের মনে। আজ যদি সরকার এ ট্রাইবুন্যালকে জাতিসঙ্গের সাহায্য নিয়ে হেগের আদালতের বিচারকদেরকে সম্পৃক্ত করে সত্যিকার অর্থে আর্ন্তজাতিক মানের একটি ট্রাইবুন্যাল করে এ বিচার কাজটি পরিচালিত করত তাহলে কি যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা হত? প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কাদের কাছে এ আশা করতে পারেন? আমরা যদি সত্যিকারভাবে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই তাহলে এ দাবী করতে বাঁধা কোথায়?Justice hurried justice burried। প্রজগগন্মের চত্তরে যারা জড়ো হয়েছে তাদের কি উচিৎ ছিলনা এরকম একটা দাবী করা?

আসলে সবাই বিচারের পক্ষে কিন্তু দেশের বিচার ব্যবস্থাই হচ্ছে মূল কথা। এই অবস্থা বুঝে প্রথম থেকেই অনেকে বিদেশিদের মাধ্যমে বিচারের দাবী উত্থাপন করেন। কিন্তু নাস্তিকের ও কমিনিস্টবাদীরা যেকোনোভাবে রাজনৈতিক ইসলামকে ধ্বংস করতে এই পথ বেঁচে নেয়, কিন্তু যেহেতু কথাটি ‘বিচার’, তাই নৈতিক বিবেচনায় অনেক লোক এর পক্ষ দিয়েছেন। কেননা বিচারের বিরূদ্ধে কে কথা বলবে যদিও সবাই জানেন সেই বিচারের capacity দেশে নেই। এখানে নাস্তিক, মুনাফিক ও আল্ট্রা সেক্যুলার পন্থিদের উদ্দেশ্যে যেকোনো উপায়ে ওদেরকে ফাঁসী দেয়া! আরা য়ারা খাটি আস্তিক তাদেরকথা হচ্ছে ‘ন্যায়-বিচার’।

শাহরিযার কবিরের ভুতে ধরা কিছু লোক যারা বিচার বিচার বলে মুখে ফ্যনা তুলে ফেলেন তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় বিচারের অর্থ কি তা এসব লোক বুঝতে পরেন কিনা সন্দেহ হয়। আসলে এদের মানসিকতার যারা যেমন, আমাদের দেশের মানুষ গড়ার বিশিষ্ট কারিগর ডঃ আনোয়ার হোসেন সাহেব যদি বিচার কি বুঝতে পারতেন, তাহলে তার ছাত্রদের অবস্থা আজ এরকম হতোনা। আমরা নারীধর্ষনের অসত্য অভিযোগ সাজিয়ে সাঈদীকে মানবতার অপরাধে ফাঁসী দিচ্ছি ; কিন্তু এই শিক্ষকের ছাত্ররা যখন একশতজন নারীর ইজ্জ্ত নিয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে মিষ্টি খাওয়ানো হয় তা মানবতার অপরাধ মনে করা হয় না। বলতে পারেন, কোর্ট রুমে মহামান্য বিচারপতি মহোদয়গনের সামনে ভাইস চ্যন্সেলর পদধারী একজন মহান পুরুষ সদ্য ফাঁসীর দন্ড প্রাপ্ত অসহায় অবস্থানের একজন মহান ব্যক্তিত্বকে পতিতার মতো গালি দিয়ে মারার জন্য কিভাবে তেড়ে আসতে পারে ? আশা করি এবার বলবেন না যে আমি পতিতাদের অসম্মান করছি। না আমি পতিতাদের অসম্মান করিনি, সমাজের উপর তলার লোকদের লালসাই তাদেরকে পতিতা বানিয়েছে। আমি বলছি এরকম ভাগ্যবিড়ম্বিত পতিতার চেয়েও একজন নিকৃষ্ট মানুষের কথা। যার ছাত্ররা ধর্ষণের সেঞ্চুরী উৎযাপন করে। যার ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে শুনলে বর পক্ষ বিয়ের আসর থেকে উঠে যায়। দোয়া করবেন, ডক্টর সাহেব ও তার ছাত্ররা যে পৌরুষত্ব দেখাচ্ছেন তা যেন আমাদের দেশে সভ্যতা প্রকাশের নুতন সবক হয়ে না যায়। আমাদের দেশে ফকির-পাকড়ার জন্য বরাদ্ধকৃত রিলিফের টাকা দিয়ে মন্ত্রী সাহেবরা ফিক্সড ডিপোজিট করেন। আবার প্রতিশোধের হীন স্বার্থ চরিতার্থের জন্য বেয়াল্লিশ বছর পর একাত্তর সনের সকল গ্লানির দায় ভার তুলে দেন সেই একাত্তর সালের অসহায় ফকির-পাকড়া আর ফেরিওয়ালাদের উপর। কিন্তু কেন, তখন কি প্রশাসনে এদেশীয় কোন লোক ছিলনা ? গন প্রতিনিধি ছিলনা ? সাধারন রাজাকারদের কমান্ডাররা এদেশীয় ছিল, মুক্তিযোদ্ধারা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের কমনান্ডাররা ছিল। তাদেরকে কেন সাক্ষীর কাঠ গড়ায় উঠানো হয়নি ?

এবার বলুন, যুদ্ধাপরাধের বিচার তো সবাই চায় কিন্তু এটাকে নির্বাচনী ওয়াদা করার প্রয়োজন কেন দেখা দিয়ে ছিল? আর এই বিচারটি করার নামে তাও শুধু মাত্র বিরোধী দলের লোকদের বিরুদ্ধ মামলা ইনিশিয়েট কে করেছে সরকার না ব্যক্তিগত ভাবে কোন ভুক্তভোগী? ব্যক্তিগত ভাবে কেহ ‘সাঈদী সাহেবের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে থাকলে আমার কোন কথা নেই। কিন্তু যদি সরকার নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করে থাকে তা হলে ‘দেল্লা রাজাকারকে’ দিয়ে শুরু হবে কেন? আর ‘দেল্লা রাজাকারের’ যদি ফাঁসী হয়, তাহলে পাকিস্তনি যুদ্ধাপরাধিদের কি শাস্তি হবে? বস্তুত: বিচার কাজ শুরু করার আগে সরকারের হাতে রাজাকারের একটি পরিপূর্ণ লিষ্ট থাকা উচিত ছিল। এমনকি নিজেদের দলে আছে কি না তাও দেখা উচিৎ ছিল। কার কিভাবে বিচার করা হবে এব্যাপারে সর্বসম্মত একটি কন্সেন্সাস থাকা প্রয়োজন ছিল। কোন অপরাধের জন্য কি শাস্তি হবে তার জন্য আইনী ব্যবস্থা থাকা দরকার ছিল। রাজাকারদের স্থানীয় কমান্ডাররা পাকিস্তানে চলে যায়নি। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত, ম.খা. আলমগীরের মতো ইউনিয়ন, থানা, ও জিলা লেবেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বাংলাদেশেই রয়ে গেছে। এবং তখনকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আছেন। কিন্তু বলতে পারেন, এই মহারতিদেরকে অভিযুক্ত না করা হোক, সাক্ষী হিসাবে কেন উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ এরাই হতে পারতো সঠিক ঘটনা উৎঘাটনের জন্য বিশ্বাসযোগ্য সোর্স। আর অভিযুক্তই বা কেন হবে না? ‘দেল্লা রাজাকার’ দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (???) হয়ে গিয়েছে বলেই কি তখনকার সব অপরাধ তার। তাহলে কি বলা যায় না যে, আসলে ‘দেল্লা রাজাকারের’ শাস্তি হয়নি, শাস্তি হয়েছে ‘দেলোয়ার হোসেন সাঈদী’ নামের নিরাপরাধ এক মহান ব্যক্তির। মানুষের চিন্তা শক্তি মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই চিন্তা শক্তিই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। মানুষের আরো রয়েছে মিথ্যা থেকে সত্য আলাদা করার সামর্থ্য। আসুন আমরা আল্লাহ্ প্রদত্ত এই চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি। চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের পক্ষে যে কোন সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব।

যারা সাইদী সাহেবের অদালতে কথপাকথন পড়েন নাই তারা ইচ্ছা করলে এখান থেকে পড়তে পারেন।  লিংক এখানে

[youtube]http://www.youtube.com/watch?v=DldhR2warLE[/youtube]

কৃতজ্ঞতা: এ নিবন্ধটি প্রণয়নে ফেইসবুক ও অর্ন্তজালের আমার যে সকল বন্ধুদের ইমেইল ও ব্লগ-তথ্যের কিছু সহায়তা গ্রহণ করেছি তাদেরকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

Loading


Comments

সাইদী সাহেবের রায় প্রসঙ্গে কিছু কথা — 4 Comments

  1. বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমেদ চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় বলেন, “দেশের মানুষ মাওলানা সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী মনে করে না; যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের নিহতের ঘটনায় ১ জন মানুষও জীবন দিল না, সেখানে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর দেড় শতাধিক মানুষের জীবন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার। ইতিহাস একদিন এসবের মূল্যায়ন করবে।”

    ড. পিয়াস করিমের সাথে আলোচনায় দেশের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদের এক্সক্লুসিভ বক্তব্যের ভিডিওটি দেখুন
    http://www.facebook.com/video/embed?video_id=227821910693357

  2. অশেষ ধন্যবাদ অপনার সুদীর্ঘ মন্তব্যের জন্য।
    দু:খের ব্যপার হল বাংলাদেশী জনতার মাঝে আজ যে বিভক্তি ও বিভাজন পরিলক্ষত হচ্ছে এবং দেশে বিরাজমান সামিজিক অস্থিরতা, হিংসা বিদ্ধেষ ও বিশেষ করে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার যে প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে তা বিগত ১০/১২ বৎসর ধরেই চলে আসছিল বামপন্তী ও সেকুলার গুষ্টির প্রপাগান্ডায় যা অনেকেই বুঝতে চান নাই আবার অনেকে এখন বুঝেও না বুঝার ভান করে যাচ্ছেন। তবে আমি মনে করি যে যুদ্ধ ওরা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে তা প্রতিহত করতে এগিয়ে না আসলে আমরা ইতিহাসের খাতায় কাপুরুষ ও দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক হিসাবেই কলন্কিত হয়ে থাকব।

  3. আপনার লেখাটি পড়েছি এবং কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করেছি। আপাতত সাঈদীকে একপাশে রেখে, বিগত কয় বৎসর ধরে বিচার, বিচারের দাবী, বিচারের পিছনের আদর্শ, তারপর সেই প্রসঙ্গে আলোচিত ও প্রচারিত ঘৃণা-বিদ্বেষ, ইতরামি, গালা-গালি, অপরের মানবতা লুণ্ঠন এগুলোর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে যে বাস্তবতায় হাজির করা হয়েছে সেটাই খেয়ালে প্রকট হচ্ছে। আমি তিন বৎসর ধরে এগুলো দেখছি। কিন্তু এই আন্দোলন ও আন্দোলনী প্রোপাগান্ডিস্টদের মুখের স্বীকারোক্তিতে বুঝেছি যে তারা বিগত ১০/১২ বৎসর ধরেই এগুলো চালিয়ে যাচ্ছিল। এসবেরই সন্ধিক্ষণ দেখেছি শাহবাগে। তারপর এই দলের একজন ‘সহযোদ্ধার’ মৃত্যু এবং তার দলের প্রতিক্রিয়াতে শাহবাগী আন্দোলন যে প্রতীকীতে অবস্থান নেয়, তাও দেখেছি। এই পরিক্রমায় অনেক বিষয় reduced হয়ে এসেছিল আর এখন এগুলো সামনে রেখেই কিছু কথা বলব। আমার কথা দীর্ঘই হবে।

    (১-ক) গোটা কোরানকে যেভাবে তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত: এই তিন প্রধান শ্রেণীতে পাঠ করা যায় তেমনি কুফর, নিফাক ও ঈমান: এই তিন প্রধান শ্রেণীতে পাঠ করা যায়। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে নাস্তিক ও মুনাফিকদের যেসব আন্দোলন দেখেছি শাহবাগে তা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল এবং রাজীব নাস্তিকেই অবশেষে সেই প্রতীকীরূপ ধারণ করে। যে ইসলাম বিদ্বেষী মুরতাদ আল্লাহর রাসূলকে (সা:) অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করে যাচ্ছিল, তারই পরিক্রমায় সেই প্রসঙ্গে বা কারণে হোক অথবা অন্য কোনো কারণে প্রাণনাশ হলে, এই মুরতাদের “সহযোদ্ধারা” তার “ইজ্জতের” এবং তার সাথে তাদের “ইজ্জতের” আওয়াজ তোলে তাকে শহীদি মর্যাদা দেখাতে চেয়েছিল। এই প্রতীকীতে এবং তাদের কর্ম কাণ্ডে (things symbolised around these) কারা কাফির এবং কারা খাটি মুনাফিক তারা আপনাতেই প্রকাশ পেয়েছিল। যারা রাজীবের প্রাধান্যে এবং তাদের তথাকথিত যুদ্ধের প্রাধান্যে নবীর ইজ্জত একপাশে রেখেছিল তারা রাজীবদের কর্মকাণ্ড না দেখার পক্ষপাতি ছিল, ওসব কর্মকাণ্ড না দেখলেই হত –এটাই ছিল তাদের যুক্তি। দ্রষ্টারাই ছিল দেখার অপরাধে অপরাধী। কেননা রাজীবকে তাদের বাঁচাতে হবে, রাজীব তাদের “সহযোদ্ধা”। মক্কা ও মদিনার মুনাফিকগণ কাফেরদের সংশ্লিষ্টতায় তাদের ইজ্জত অনুভব করত।

    (১-খ) শাহবাগ এখন পরাজিত। আর তা আমাদের আলেম ওলামাদের দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে। আমার জীবনে এই প্রথমবার আলেম ওলামাদের অবস্থানগত শক্তি বুঝার মওকা এল এবং এখন তাদের ভাষাই কথা বলতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। নাস্তিক ও উগ্রপন্থীরা এখন একে অপরকে দোষারোপ করছে। এটা যেন কিয়ামতের দৃশ্য, যেখানে পথভ্রষ্টতার কারণে ওরা একে অপরকে দোষারোপ করবে। বেশি দূরে না গিয়ে, তা এখনি শুরু হয়েছে। আমার এই কথাগুলোকে কিছু অতীত টেনে সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছি।

    (১-গ) আমি ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘আমার-ব্লগ’-এ রেজিস্টার করেছিলাম। হঠাৎ করে কোন এক গুগল সার্চে সেখানে যাই এবং আরিফ জেবতিক নামক একজন ব্লগার কবি আল-মাহমুদকে কেন্দ্র বিষোদ্গার করতে দেখি এবং প্রতিবাদ করি। রেজিস্টার করার পর থেকে সেখানে লক্ষ্য করি যে একাত্তরের নামে কিছু উগ্র লোক ঘৃণা-বিদ্বেষের মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধ চার দশক পরে এসে করছে। সেখানে ইসলাম বিদ্বেষ চলছে। নবী রাসূলকে নিয়ে কটাক্ষ ও বিষোদগার চলছে, কোরান নিয়ে অজ্ঞ-মূর্খরা বিষোদগার করছে। সেখানকার ঐ পঙ্ক-পালের মধ্যে লক্ষ্য করি ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দু, ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী মুরতাদ এবং পৌত্তলিক-সংস্কৃতিতি-প্রভাবিত আলট্রা সেক্যুরালিস্ট এক দল লোক সেই হুলুস্থলে জড়িত। এর মধ্যে প্রধানত চলছিল জামাত বিদ্বেষ ও বিষোদ্গার। এদেরকে ‘নির্মূল’ করতে হবে। একাত্তরের হত্যা ও ধর্ষণের জন্য ওরাই নাকি দায়ী -তাই তারা ওদের ‘ফাঁসী’ চাচ্ছিল। এই দলের নেতাদের ছবি কুকুরের পিছনে, শোয়ারের পিছনে, অনেক জন্তু-জানোয়ারের পিছনে এঁকে বিষোদগার করছিল। কুকুর ও শোয়ারের ও অন্যান্য জন্তু জানোয়ারের মুখে দাড়ি এঁকে এবং ছবির নিচে জামাতের কোন নেতার নাম দিয়ে চলছিল গালাগালি, অসভ্য কথাবার্তা, ঘৃণা, বিদ্বেষের ছড়াছড়ি। জামাত সমর্থিত বাংলাদেশের প্রায় দশ শতাংশ লোকদের এভাবে ঘৃণা ও গালাগালির পাশা পাশী চলছিল গোটা পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষের সম্প্রসারণ। এদের সাথে ছিল কিছু মুসলিম নামের কলঙ্ক, কিছু লোক যারা বিচারের প্রত্যয়ে অনুপ্রাণিত ছিল না। না হলে ‘বিচারের’ কথা বলত, ন্যায় বিচারের আওয়াজ তুলত। কিন্তু তা না করে ‘ফাঁসি’, ‘নির্মূল’ ‘সমূলে বিনাশ’, গালা-গালি, ওদেরকে পাকিস্তানে পাঠানো ইত্যাদি দাবীতে কাফিরদের সাথে একাত্ম হয়ে “ঢালাওভাবে” অসভ্য, অমানবিক প্রোপাগান্ডা করছিল।

    (১-ঘ) আরিফ জেবতিকের ফ্যাসিস্ট লেখার উপর আমার প্রথম মন্তব্য-ব্লগ এখানে দেখা যেতে পারে। প্রথমেই উগ্রপন্থী ফ্যাসিস্টদের কথাবার্তায় সতত অনুভূত হয় যে লোকগুলো ইতিহাসের প্রকৃতিমূর্খ: ইতিহাস ও অতীত বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য কি, ইতিহাস ও বাস্তবতার দর্শন কি –এসবের উপর তাদের কোনো দখল নেই। যততুকু মনে পড়ে কবি আল-মাহমুদ জামাত সমর্থিত কোন এক সংগঠন থেকে পুরষ্কার গ্রহণ করাতে আরিফ জেবতিক ও তার ফ্যাসিস্ট-জাতের লোকদের ‘জাত’ চলে গিয়েছিল এবং তাদের দৃষ্টিতে তিনি নাকি আর মুক্তিযোদ্ধা থাকেননি। এর পরে এই ফাজিল ফালতুর দল আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের রাজনীতিতে একমত না হওয়ার কারণে তাদের পদবি চলে গেছে বলে গোয়ারের মতো চিৎকার করতে দেখেছি। সেখানে কয়েক দিনের মধ্যেই একথা বুঝতে পারি এই পঙ্ক-পালের অনেকই নির্লজ্জ এবং বেহায়া প্রকৃতির। আমি যখন আরিফ জেবতিকের লেখার উপর মন্তব্য দিয়েছিলাম তখন তার আদর্শের প্রায় সব কয়টি ফ্যাসিস্ট এসে হাজিরা দিয়েছিল। পরে ওদেরকে আস্তে আস্তে আরও চিনতে পারি।

    (১-ঙ) যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে প্রথম দিকে অপরাপর মন্তব্যে এমন কথাও বলেছিলাম যে লম্ফঝম্ফ করার আগে যুদ্ধাপরাধের উপর বিশেষজ্ঞ কয়েকজন বিদেশি আইনবিদের সমন্বয়ে একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেখা হোক যে যে ধরণের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাদের প্রকৃতি কি এবং এগুলো দিয়ে কি সুষ্ঠু কোনো বিচার execute করা যাবে কিনা। যদি যায়, তবে জনগণকে এক ধরণের কথা বলতে হবে, যদি না যায়, তবে অন্য ধরণের কথা। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনার মত নয়, হয়ত ২০/২৫ ব্লগার পড়েছে। আমার-ব্লগে যে কয়জন চটি লেখক দৈনিক সংগ্রাম থেকে উদ্ধৃতি টানছিল এবং যেসব ভিডিও ক্লিপ দেখাচ্ছিল সেগুলোর কোনোটি যুদ্ধাপরাধ প্রমাণ করেনি। গবেষণায় কোনটি দলীল আর কোনটি দলীল নয় –এই জ্ঞান নিশ্চয় ভাল করেই আছে। একটি হত্যার ফটো বা ভিডিও শুধু ক্রাইম প্রমাণ করে। এই ফটো বা ভিডিও দেখিয়ে আপনি যার তার দিকে ইঙ্গিত করে বলতে পারবেন না যে সে এই ক্রাইম করেছে। এটা প্রমাণ করতে হলে দশ-ঘাটের পানি খেতে হবে। কিন্তু উগ্ররা তাই করছিল। একহাতে ঐ ফটো আর অন্য হাতে জামাতিদের প্রতি ইঙ্গিত। তারপর caricature, বিকৃত ছবি, তারপর উল্লসিত হলাহল, গালাগালি। আমি এক পর্যায়ে উগ্রমতিদের লম্ফ-ঝম্প দেখে কয়েকবার বলেছিলাম, ‘শাহরিয়ারদের দল হয়ত নিরাশ হতে পারে’। আজ তা’ই দেখা যাচ্ছে। আমি দু একজনের ফাঁসীর কথা বলছি না, বরং জামাত নির্মূল এবং তথাকথিত বাকশালী দ্বিতীয় অধ্যায় বরং ফ্যাসিস্টদের ভাষায় “দ্বিতীয় মুক্তি যুদ্ধ” –এগুলো এখন পায়ের নিচে দলিত। ঘৃণা বিদ্বেষের পরাজয় এভাবেই আসে। শাহবাগের প্রতীকীতে তাই এসেছে। এই তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারাই শাহবাগের জন্ম দিয়েছিল।

    (২-ক) শাহবাগ। আমরা যারা ব্লগে ব্লগে নাস্তিক ও মুনাফিক গোষ্ঠীর শয়তানী চিৎকার যেভাবে দেখেছি আমাদের বরেণ্য আলেম-ওলামাগণ তা দেখতে পাননি, তবে শাহবাগের “কীর্তনে” তারা তা ঠাহর করতে পেরেছেন। চার নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে থেকে খাবার, পানীয় ও মোবাইল পেশাব-পায়খানার ব্যবস্থাসহ মঞ্চে আল্লাহ রাসূলের বিপক্ষে আওয়াজ ওঠার বাস্তবতা দেখেছেন, শুনেছেন। রাত দিন একত্রে যুবক-যুবতীদের সংগীতে উন্মাদনা দেখেছেন, অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে অনেক কর্মকাণ্ড দেখেছেন, দাড়ি-টুপির অবমাননা দেখেছেন এবং সর্বোপরি পিছনে ও প্রকাশ্যে দাগী নাস্তিকদের আনাগোনা, উপস্থিতি, বক্তৃতা, নেতৃত্ব, ফাসেক-ফুজুরি কথা-বার্তা দেখেছেন। উল্লেখিত ফিরিস্তি আলেমদের বিবৃতিতে এসেছে। আমরা যেসব ফাসিক নাস্তিকদের ভাল করে চিনি তাদের উপস্থিতি দেখেছি, সমর্থন দেখেছি, (বাহির থেকে) তসলিমা, দাউদ হায়দরসহ সবার সমর্থন ওখানে ছিল। আলেম সমাজের কাছে সঠিকভাবেই তাই গোটা শাহবাগ আন্দোলন নাস্তিক্যবাদী ‘প্রতীকীতে’ ধরা দিয়েছে এবং তারা সঠিকভাবেই শাহবাগী আন্দোলনকে নাস্তিক বলেছেন। If the entire movement of atheists, hypocrites, and some unwary epitomised in Shahbugh, Rajib epitomised them all. Nifaq, kufor and faith appeared so visibly that it left no scope for a fourth place. যারা ‘রাজীবের মত’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিল আমি তাদের অনেকের মন্তব্য দেখে ‘আমিন’ বলেছি। তাদের আশা পূর্ণ হলে ওদের হাশর নশর রাজীবের সাথেই হবে। (المرء على دين خليله فلينظر أحدكم من يُخَالِل ‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনেই (ধর্মে) থাকে। সুতরাং এক ব্যক্তিকে দেখতে হবে সে কার সাথে বন্ধুত্ব করবে’ অর্থাৎ যে ব্যক্তির বন্ধুবান্ধব ফাসেক, ফাজের, নাস্তিক, সেক্যুলারিষ্ট সে মূলত ওদের দ্বীনেই।)

    (২-খ) আজ সত্য এসেছে। শাহবাজ পরাজিত হয়েছে। সাঈদীর নাম। আমি ১৯৭৯/৮০ সাল থেকে সাঈদীকে ইংল্যান্ডে এসে ওয়াজ করতে দেখেছি। পোষ্টারে দেখেছি তার নাম দেলোয়ার হুসেইন সাঈদী। উপস্থাপকেরা তাকে দেলোয়ার হুসেইন সাঈদী বলে উপস্থাপন করেছেন। সরকার পক্ষের কথা ছিল দেলু রাজাকার ১৯৮৬ সালে দেলওয়ার হুসেইন সাঈদী নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। ওখানেই প্রথম মিথ্যা। তার নামের ব্যাপারে সব দলীলই ‘সাঈদী’ ধারণ করে আছে। সে শিকদার হল কীভাবে? তার দোষ হচ্ছে জামাতে সংযোগ এবং কাফির মোনাফেক এবং কমিউনিস্ট দলগুলোর বিপক্ষে কথাবার্তা। নামের কিছু অংশ এক কাগজে একভাবে এবং অন্য কাগজে অন্যভাবে –এমন বাস্তবতা কোটি কোটি লোকের ব্যাপারে পাওয়া যাবে। লক্ষণীয় তার নামের শেষাংশে সবখানেই সাঈদী আছে, শিকদার নয়। পাসপোর্টেও সাঈদী।

    (৩-ক) নারী নেতৃত্ব ও সাঈদী। এবারে তার থিওলজিকাল দুই একটি অভিমতের কথা উল্লেখ করি। এগুলো বিচারের সাথে সম্পর্কিত নয়। সাঈদী নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে কথা বলেন কিন্তু দেখা যায় তার দল খালেদার দলের সাথে জোট-বাধা। সাঈদীদের সাথে অনেকে হয়ত ঢালাওভাবে নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে কথা বলতে দ্বিধা-বোধ করবেন কেননা নেতৃত্বের পরিসর অনেক ব্যাপক। স্কুলের প্রধান, সংগঠনের প্রধান, কোম্পেনীর প্রধান, প্রজেক্টের প্রধান সবাই তাদের আপন আপন স্থানে নেতৃত্বের পরিসরে। আপনি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেই কি বেছে বেছে সকল নারীদেরকে চাকুরিচুৎ করে ফেলবেন, না নেতৃত্বের বিভিন্ন পরিসর দেখবেন এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাবেন। আপনি যদি কোথাও চাকুরী করেন এবং সেই স্থানের নেতৃত্ব যদি কোন মহিলার হাতে থাকে তবে আপনি কি চাকুরী ছেড়ে চলে আসবেন, বা আপনি কি ইতিপূর্বে এর উপর আমল করে ফেলেছেন? নেতৃত্ব কি কাওম-প্রধানের সাথের বাস্তবতা, না সর্বব্যাপী বাস্তবতা -এসব কথা আলোচিত হতে হবে। তাছাড়া যারা নারী নেতৃত্বের দেশে বসবাস করেন তারা সবাই সেই নেতৃত্বের আওতাধীন। তারা সেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য যদি কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে বসে বসে ফতোয়ার কথা বলেন এবং নির্বাচনের দিন নারী নেতৃত্বের বক্সে ভোট দেন তবে এর চেয়ে হাস্যকর অবস্থান আর কী হতে পারে? ‘ইসলামী রাষ্ট্রে নারী নেতৃত্ব নেই’ শুধু এতটুকু কারণেই তাদেরকে রাজনীতিতে নামতে হবে, কিন্তু তা না করে যদি চুপসে চুপসে নারী নেতৃত্ব মানা হয় তবে কিয়ামত পর্যন্ত পরিবর্তন আসবে না।

    (৩-খ) নারী নেতৃত্ব ও সাঈদী। সাঈদীকে বাংলা টিভিতে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি এবং আপনার দল নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে অথচ আপনারা খালেদার সাথে একজোট -এটা কেমনে হয়? (এই ইন্টার্ভিউটা হয়ত এখনো ইউটিউবে পাওয়া যেতে পারে।) উত্তরে সাঈদী যা বলেন এবং যতটুকু আমি স্মরণ করতে পারি তার এবারত এরূপ: আমরা বিএনপি নামক একটি দলের সাথে জোট করেছি, যে দল একজন নারীকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করেছে, আমরা করিনি। জোট না বাঁধলেও তো বাংলাদেশে নারী নেতৃত্ব বিরাজিত, সবাই সেই বিরাজিত নেতৃত্বের অধীন। আমরা কিছু কমন উদ্দেশ্য সামনে রেখে এক সাথে কাজ করতে জোট করেছি। এর উদাহরণ ধরুন এম যে আমরা এক স্থান থেকে আরেকটি স্থানে যেতে রাস্তায় নেমেছি। সেখানে আরও কিছু লোকজনকে পেয়েছি যারা সেই অভিলক্ষ্যে যাত্রা করছেন। এখন রাস্তায় যদি কিছু বাধা বিঘ্ন আসে, কিছু গাছ-বাঁশ সেই রাস্তা বন্ধ করে দেয়, তখন কী করা হবে? এমতাবস্থায় কার দলে নারী নেতৃত্ব আর কার দলে পুরুষ এই বাদাবাদিতে নেমে গেলে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা দূর হবে না, কারো পক্ষে গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হবে না। আমাদের জোট হচ্ছে এমনই অভিলক্ষ্যে। আমরা আলাদা দল, তারা আমাদের উদ্দেশ্য-বিধেয় জানে। তারাও আলাদা দল, আমরাও তাদের উদ্দেশ্য-বিধেয় জানি। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস কমন যা একত্রে করা যেতে পারে। আমাদের অবস্থানগত উদাহরণ এমনই।

    (৩-গ) জামাত। সাঈদী একপাশে রেখে জামাতের কথায় আসলে জামাত ‘স্বাধীনতার বিপক্ষে’ ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার বিপক্ষে যাওয়া কোন ‘অপরাধ’ নয়। একথা আমি আমুতে আরিফ জেবতিকের বিপক্ষে লিখতে গিয়ে উল্লেখ করেছি এবং কয়েকবার সদালাপেও মন্তব্য করেছি। যারা জামাতের বিপক্ষে তাদের যদি জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পড়েন? বলবে, না। কেন? বলবে, ওরা মিথ্যাচার করে, মিছামিছি লেখে, তিলকে তাল করে। জিজ্ঞেস করুন তারা কি এগুলো এই কয় বৎসর ধরে করছে, না এটা সব দিনই করে আসছে? বলবে, সব দিনই করে আসছে। দৈনিক সংগ্রামকে discredit করার পর আপাতত ঐদিন কথা বাদ দেন। অন্য কোনো একদিন সেই যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গে আসুন। একপর্যায়ে দৈনিক সংগ্রামের দিকে নেন। তখন দেখবেন যে কাগজকে সে discredit করেছে, একাত্তরের প্রসঙ্গে দৈনিক সংগ্রামের ক্রেডিবিটি হঠাত তুঙ্গে ওঠেছে। আমি এপর্যন্ত দৈনিক সংগ্রাম নিয়ে যাদেরকে লাফালাফি করতে দেখছি এবং উদ্ধৃতি দিতে দেখেছি, তাদের অধিকাংশ উদ্ধৃতিতে যুদ্ধাপরাধের সাথে কোন সম্পর্ক দেখি নি। যেখানে ইনক্রিমিনেটরি কথা সেখানে সত্যায়নের প্রয়োজন। একটি মিডিয়ায় শত শত লোক কাজ করে, এবং বিশেষ করে ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতির পক্ষে ছিল তাদের মুখপত্র ছিল ‘সংগ্রাম’ এবং যুদ্ধাবস্থায় তাদের পক্ষের কথাই বলেছে। সংগ্রামের উদ্ধৃতি যা প্রমাণ করে তা হল জামাত ও জামাতের নেতারা বাংলাদেশ চাননি অখণ্ড পাকিস্তান চেয়েছিলেন। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। কিন্তু একথা তো প্রমাণের দরকার নেই। তারা তা আজও স্বীকার করছে। এবং এটা কোন অপরাধ নয়।

    (৩-ঘ) জামাত। জামাত ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা যদি যদি এই কাজের উপযুক্ত না হয় তবে আমরা অন্য ইসলামী দলে যোগদান করে সেই কাজ করব। কিন্তু কারো দল পছন্দ না হয়, তবে আমরা আরেকটি দল গঠন করব। অপরের অনুপযুক্ততা আমাদের খিলাফত বিমুখ হওয়ার কোন যুক্তি নয়। আপনি/আমি যদি ইসলামে রাষ্ট্র নেই বলে বিশ্বাস করি, তবে সেই ধারণা অতীত থেকে এপর্যন্ত কীভাবে যুক্তিযুক্ত হল তা দেখাতে হবে এবং প্রচার করতে হবে। আবার যেসব দল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করার করার পরিবর্তে নিজেদের যুদ্ধ নিজেরাই করব। ইসলামের সকল দলের মধ্যে আজ ঐক্যের প্রয়োজন। আমরা যারা এই বিদেশ থেকেও এই ঐক্যের পক্ষে কাজ করছি, তাদের কথা হচ্ছে নিজেদের ময়দানে কাজ করতে থাকুন, কেউ কারো দলে যাবার দরকার নেই –কেবল বিরোধীতা না করলেই হয়। আমার/আপনার কিছু বলার থাকলে সেই দর্শন কি –তা’ই সবার সামনে প্রকাশ করব, কোন দলকে বিষোদ্গার করলেই আমাদের নিজেদের স্থান স্পষ্ট হয় না।

    (৩-ঙ) স্বাধীনতা বিরোধ। আমাদের সিলেট এলাকায় যদি কেউ আজ দু/এক কোটি টাকা খরচ করে এমন এক অভিমত প্রতিষ্ঠা করে নেয় যে নন-সিলেটী আমাদের বনসম্পদ চুরি করছে, মৎস্য সম্পদ চুরি করছে, আমাদের থানাগুলোতে ঘোষ দিয়ে অসি হয়ে এসে গ্রেফতার বাণিজ্য করছে, এক লণ্ডনীর বিরোদ্ধে আরেকজনের অভিযোগ উৎসাহিত করে ঘোষের বাণিজ্য করছে, আমাদের বিদেশি উপার্জিত টাকা আমাদের এলাকায় খরচ হচ্ছে না, আমাদের বিদেশিরা বিমান বন্দরে নামতেই নাজেহাল হতে হয়, অপদস্থ হতে হয়, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়, ঘোষের দুয়ার পাড়ি দিয়ে বাইরে আসতে হয়, প্রশাসনের কাজে আমাদের লোকজন কাজ পায়না, discriminate করা হয় –সুতরাং নারায়ে তকবীর! আমরা ওদের থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম, তাই যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়। এ ক্ষেত্রে আমি সিলেটের অধিবাসী হিসেবে আমার কি কিছু বলার নেই? আমি যদি বলি এদেশকে ভাঙতে চাই না। আপনাদের বক্তব্য ভুল, আমাদের মধ্যে সমস্যা আছে কিন্তু এজন্য আলাদা হওয়ার দরকার নেই। আমরা যত ক্ষুদ্র হব, ততই শক্তিহীন হব। সিলেটের ভূখণ্ড কোনো দেবতা নয়, এর জন্য আলাদা হওয়া জরুরিও নয়। কিন্তু মনে করুন পার্শ্ববর্তী নানান রাজনীতির মোকাবেলায় দৈবাৎক্রমে সিলেট স্বাধীন হয়ে গেল। আর আমি এবং আমার পক্ষের সবাই এখন স্বাধীনতার দুশমন হয়ে পড়লাম, আমাদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষের রাজনীতি শুরু হল এবং কয়েক যুগ পরের প্রজন্ম যাদের ইতিহাস জানা নাই, আইন জানা নেই, নাগরিক অধিকার সম্পর্কে অবগত নয়, তারা আমাদের বিপক্ষ নিলো –এমতাবস্থায় যা হবে তা’ই বর্তমানে বাংলাদেশে হচ্ছে, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে। আজ উচিত দেশ গড়ার দিকে তাকানো। ঘৃণা বিদ্বেষ ফেরিওয়ালাদের প্বার্শস্থ করার। কিন্তু এই ফেরিওয়ালারা ইসলামী রাষ্ট্রের মোকাবেলায় সেক্যুলার আদর্শ জিয়ে রাখতে চায়, তারা এটা কখনও বাদ দেবে না। জামাত হচ্ছে একটা convenience। এরই সাথে কিছু আবেগ সংশ্লিষ্ট করে ওরা ইসলাম আদর্শকে বাইরে রাখতে চাইছে।

    (৩-চ) কিন্তু ফেরিয়ালাদের কারণে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে। তা হল ইসলাম বিদ্বেষী যে পক্ষ অতীতে গোপনে গোপনে কাজ করত তারা বিগত বছরগুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিপক্ষে কাজ করেছে এবং শাহবাগে সো-ডাউন (showdown) করতে এসেছিল, আর এতেই তারা আলেম ওলামাদেরকে জাগ্রত করে দিয়েছে। আলেমরা তাদেরকে চিনে ফেলেছেন। তাদের বিচারকে প্রহসনের বিচার বলেছেন। বিএনপি আগেই এটাকে বর্জিত বলে উল্লেখ করেছে। আলেমরা আগামী ইলেকশনকে আস্তিক নাস্তিকের ইলেকশন হবে বলে উল্লেখ করেছেন। আ’লীগের বামপন্থি, নাস্তিক কমিউনিস্ট, ইসলাম বিদ্বেষী সকল নাস্তিক –এই মহলগুলো আর গোপন নয়। তাদের শাহবাগ পরাজিত হয়েছে। এখন ময়না তদন্তের রিপোর্ট বিভিন্ন মহল লিখছেন, ভারত থেকেও! ফ্যাসিস্ট পক্ষের ঘৃণার রাজনীতি উৎখাতের সূচনা হয়েছে। এটাই শাহবাগের রেজাল্ট, মিথ্যাচারের রেজাল্ট, প্রোপাগান্ডার রেজাল্ট, পরাজয়ের রেজাল্ট।

    পরিশিষ্ট সংযোগের পরামর্শ

    আপনার এই লেখাটির সাথে ট্রাইব্যুনাল চলাকালীন দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী বক্তব্যসমূহ রেখেছেন বিশেষ করে ‘ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক শেষে বক্তব্য (০৬.১২.২০১২)’ এবং ‘ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরুর দিন বক্তব্য (১৮.১১.২০১২)’ পরিশিষ্ট করে সংযোগ করলে পাঠকের জন্য বর্ধিত পটভূমি আসত।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *