সময়ই একদিন জানিয়ে দিবে কে সঠিক কে ভুল

ভূমিকা

যদিও এখানে কিছু  আলোচনা হবে  মাহদি ও ঈসা (আ:)-আগমন নিয়ে একটু পরে , তবে শুরুতে বলে রাখি যে আজকের লিখাটি একান্তই সাধারণ মাত্রার কিছু কথা — এখানে উচ্চমার্গের কোন বক্তব্য হবে না। এই সাথে আরও দুটি কথা যোগ করে বলতে চাই যে সঠিক তথ্যভিত্তিক জ্ঞানের ভিত্তিতে বিশ্বাসের শক্তিই আলাদা।  আর এ বিশ্বাসের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে কেউ যখন কুরআনকে বুঝতে চেষ্টা করে তখন তার সামনে খুলে যেতে পারে জ্ঞান অন্বেষণের এক অসীম দিগন্ত। আর অন্বেষণের এই ধারা জারি রাখাতেই নিহিত থাকে অপরাপর দিগন্ত উন্মোচনের অফুরন্ত সম্ভাবনা। এ কথাগুলো সামনে রেখে অনেক বিষয়ের সাথে মাহদি ও ঈসা (আ:) -আগমনকেও  এভাবে দেখা যায়।

জ্ঞানের ক্রম-অন্বেষণই হচ্ছে নিজেদেরকে এবং নিজেদের সমাজকে কালের সাথে সমন্বিত-করণের পথ। এই মহৎ কর্ম সাধন করতে জ্ঞানীকে অনন্য ধরণের এক পাঠশালায় ছাত্র হয়ে আমরণ পড়ে থাকতে হয়, নতুবা জ্ঞানীর সৃষ্টিশৈলীতা থাকে না,জ্ঞান বন্দী হয়ে পড়ে কোন এক অতীতে,এবং সাথে সাথে সমাজেও নেমে আসে বন্ধ্যত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞানও পড়ে থাকে পিছনে। এই অবস্থাটি সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় অবিচার, কেননা এতে সমাজ-মানস বন্দী হয় গতানুগতিকতায়, চলে আসা সনাতনী চিন্তায়। এটিই এক বন্দীদশা।

পবিত্র কুরআন, যা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের ভিত্তি, কিন্তু বর্তমান মুসলিম সমাজে ধর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে কুরআনকে খুব কমই সে উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় । দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে কুরআনের শুধু মৌখিক উচ্চারণ ও আবৃত্তি শেখা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যে কুরআনকে ব্যবহার করা হয় না। মাদ্রাসাগুলোতে যেখানে কুরআন শরীফ বোঝার সম্ভাব্যতা উপায় ছিল সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই তা শেষ করে দিয়েছে!

হাদিসের বর্ণনাগুলো কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। জাগায় জায়গায় শিক্ষার প্রাথমিক মনোনিবেশ হয়েছে বিভিন্ন মাজহাব গঠনের মূলনীতির প্রাধান্যের উপর — কাদের তুলনায় কাদের শ্রেষ্ঠত্ব অধিক –এই সংগ্রামে। ফলে ইসলামকে একটি মানবিক ধর্ম হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পরিবর্তে তাদেরকে ধর্ম থেকে দূরে সরে যেতে তরান্বিত করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

উপরের কথাগুলো বলার অনুপ্রেরণা পেয়েছি আধুনিক ইসলামী স্কলার জনাব জাভেদ আহমেদ ঘামিদির কিছু বক্তব্য শুনে। এই প্রেক্ষিতে ভাবলাম এখানে পাঠকদের সাথে আরও কিছু শেয়ার করি।

প্রত্যেক মানুষ তার জ্ঞানের ভিত্তিতেই বিশ্বাস জন্মায়  – বেলা শেষে বিশ্বাস যার যার। এই স্থানে এসে মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেকই তাদের নিজেদের কবরে যাবে, সুতরাং ঝগড়া, দানাদানি, হানাহানির দরকার নেই। যারা নিজেদের বিশ্বাস অপরের উপর চাপাতে চায়, এবং যারা কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়, তারাই নানান সমস্যার সৃষ্টি করে।

ধর্ম-দার্শনিকদের (religious philosophers) অনেকের কথা হচ্ছে সামাজিক নানান জটিল অবস্থার প্রেক্ষিত থেকেই শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক অমুক আসবেন, তমুক আসবেন ইত্যাদি কথাবার্তা। এটিই  আবার কেউ যখন নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন করতে কী করা যায়, বা কী করা উচিৎ তা শিখতে চায়না, তখনই চলে আসে এই সব বিশ্বাস।

আজকাল অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিরা ঈমাম মাহদী ও হযরত ঈসা (আ:) এর আগমনের বিষয়ের ব্যাপারগুলো এভাবে দেখে থাকেন। তারা কুরআনের আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করতে আহবান করেন,এবং মানুষকে প্রচলিত ধারণা থেকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে প্রেরণা দেন। কিন্তু এ ধরণের পদক্ষেপকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রথার কেউ কেউ  “ফিৎনা” হিসাবে দেখেন, আর কেউ কেউ অন্ধকার থেকে বহির্গমনের পথ বা আলোর পথ হিসাবে দেখেন। এখন এ চৌরাস্তায় কারা সঠিক আর কারা নির্ঘাত ভুলের উপর তা সময়ই জানিয়ে দেবে – ঝগড়ার দরকার নেই, ফতোয়াবাজিরও দরকার নেই।

ইমাম মাহদীর আগমন

আমরা জানি যে সিরিয়ান যুদ্ধ বিগত অনেক বৎসর থেকে চলে আসছে, এবং বিশেষ করে এই যুদ্ধ ও আরব-মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দুরবস্থার প্রেক্ষিতে প্রথাগত সনাতনী কিছু আলেমগন মাহদীর আগমন অত্যাসন্ন বলে উল্লেখ করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দিন-তারিখ ব্যতিরেকে একদম সঠিক সালেরও উল্লেখ করছেন। তিনি এসেই এই দুরবস্থার পরিত্রাণ ঘটাবেন!

সিরিয়ান যুদ্ধ আর মাহদীর আগমনী নিয়ে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ইউসুফ আল-কারদাওয়ী একটি টিভি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন,

“ইমাম মেহদীর আগমন উপলক্ষের হাদিসগুলো নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এমন কিছু লোক রয়েছেন যারা এসব হাদীসকে [কিছু কিছু হাদিসকে] হাসান হিসাবে গণ্য করেছেন, কেউ কেউ সহিহ হিসাবে বিবেচনা করেছেন, এবং কিছু আলেম এগুলোর সবই প্রত্যাখ্যান করেছেন। যে সকল আলেম এই সমস্ত হাদিসকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাদের মধ্যে হলেন আল্লামাহ আলে-মাহমুদ আল কাতারি (آل محمود القطري عبد الله)। কাতারে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনের [সম্ভবত: ১৯৮০ সালে] উদ্বোধনী ভাষণে আল্লামা আলি-মাহমুদ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে,নবী (সা:) এর পরে আর কোন প্রত্যাশিত মাহদী নেই।

শায়খ আল-আলবানি তাকে প্রচলিত ব্যাখ্যা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, [তবে ব্যর্থ হয়েছেন]। তারপরে তিনি শায়খ আল-আনসারী, শায়খ আল-গাজালী এবং আমাকে তাঁর সাথে [আলে-মাহমুদের কাছে] কথা বলার এবং বিষয়টি সম্পর্কে তাকে বোঝানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তবে সেটিও কার্যকর হয়নি।

বুখারী বা মুসলিম হাদিস গ্রন্থের কোথা্ও মাহদী সম্পর্কে কোন হাদীস নেই এগুলি সবই তিরমিযী,আবু দাউদ প্রমুখ বইয়ে আছে এবং ইবনে খালদুন এই সবগুলোকে (হাদিসকে) দুর্বল বলে মনে করেছিলেন। কাজেই এই হাদীস থেকে আপনি কোনও রায় দিতে পারবেন না।”  আরেকটি আলাদা সাক্ষাতকারে ড. কারদাওয়ী বলেন, ‘আমি মাহদীর আগমনীতে বিশ্বাস করি না।’

যারা বিশ্বাস করেন যে মাহদি অবশ্যই আসবেন বা আসছেন এবং  এই অপেক্ষায় আছেন, তারা এসব স্কলারদের উপর বিশেষ করে ডঃ ইউসুফ আল কারদাওয়ীর উপর খুবই ক্ষিপ্ত!

আমেরিকার আধুনিক ইসলামী স্কলার ইয়াসির ক্বাদি সম্প্রতি মেহেদী সম্পর্কে একটি সুদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন যা ইউটিউবে পাওয়া যায়। তিনিও ঘুরেফিরে  ‘প্রচলিত ব্যাখ্যাকেই গ্রহণ করেছেন।  তবে তিনি একথাও বলেন যে, মাহদির আগমন হবে শেষ জামানায় এবং যখন সেই আগমন হবার, তখনই তা হবে। তবে কেউ যেন সেই আগমন নিয়ে নাটকের স্ক্রিপ্ট না বানায়, অর্থাৎ নিজেই মাহদি হওয়ার স্বপ্নে না পড়ে। যারাই তা করতে চেয়েছে, তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেই আব্বাসী আমল থেকে শুরু করে ৭০ দশকের শেষে সৌদিতে এবং অতিসম্প্রতি সিরিয়াতে আইসিসের উত্থানেও এই ভাবনা জড়িত ছিল যদিও বাগদাদি নিজেকে মেহদী না বলে খলিফা বলেছে। সিরিয়ার যুদ্ধের শুরুতে সৌদি তথাকথিত কিছু আলেমদেরকে দেখা যেত ইউটিউবে মেহেদি আগমনের হাদিস দিয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে ।

হযরত ঈসা (আ:) এর কাহিনী

সাধারণত বিভিন্ন বর্ণনায় যা বলা হয়ে থাকে তা হল ঈসা (আ:)কে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ¬- সশরীরে জীবিত অবস্থায়। ঈসা (আ.) চতুর্থ আসমানে রয়েছেন। কিয়ামতের পূর্বে তিনি দুনিয়ায় আসবেন হজরত মুহাম্মাদ (স.) এর উম্মত হয়ে (যখন ইমাম মাহদীরও উপস্থিতি থাকবে আরব দেশে)। অতঃপর তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবেন এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর রওজার পাশেই তাঁর দাফন হবে। “কিন্তু কুরআনের কোথায়ও এ বিষয়ে “সুস্পষ্ট করে” কোন উল্লেখ নাই যে ঈসা (আ:)কে জীবিত অবস্থায় সশরীরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং এ কথারও কোন ভিত্তি নাই যে তাঁকে আবার আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠাবেন মৃত্যুবরণ করাতে!”

এটি আমার কথা নয় এটি আসলে বলেছেন আধুনিক ইসলামী স্কলার জাভেদ আহমেদ ঘামিদি ।

যারা উর্দু বুঝেন তাদের জন্য খুবই যুক্তি পূর্ণ বিস্তারিত কথা আছে নিচের ভিডিওটিতে। যা সত্যিই চিন্তার খোরাক জাগায়। তবে যারা বুঝেননা তাদের জন্য অতি সংক্ষেপে নিচে কয়েকটি লাইন লিখছি আশা করি ধারণাটা পেয়ে যাবেন।

তাঁর কথা হচ্ছে, “জীবিত তুলে নেওয়ার কোন কথা বা বাক্য কুরআনে নাই বরং যে বাক্য সবার মৃত্যু বা ওফাতের বেলায় ব্যবহৃত হয় সে রকম শব্দই স্পষ্টতরে ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা ইমরান (৩:৫৫) আয়াতে বলা হয়েছে

إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

إِنِّي مُتَوَفِّيكَ = আমি তোমাকে মৃত্যু দেব
وَرَافِعُكَ = তোমাকে নিজের দিকে তুলে নেব।

জাভেদ সাহেবের ব্যাখা হচ্ছে مُتَوَفِّيكَ এর পরে যেহেতু وَرَافِعُكَ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তাতে বুঝা যায় ওনার দেহের কথাই বলা হচ্ছে । কারণ ইহুদিরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে যে তাঁকে অসম্মান ও নিপীড়ন করে হত্যা করবে এবং সে উদ্দেশ্যে ওনি কোথায় আছেন জেনে সে দিকে যাচ্ছিল তখন  إِنِّي مُتَوَفِّيك বলে তার মৃত দেহকে তুলে নেয়াটাই তো স্বাভাবিক ছিল এবং আল্লাহ সে কথাই বলেছেন। কারণ দেহটি সেখানে পড়ে থাকলে সে মোবারক দেহকে ইহুদিরা অসম্মান, অপব্যবহার ও লাঞ্ছিত করত।

এবার রইল পৃথিবীতে ফিরত আসার কথা?

সেটিও কুরআনে নাই, একেবারে খালি!  আচ্ছা যদি মনে করা যায় তাকে জীবন্ত উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৃথিবী থেকে একজন নবীকে তুলে নিয়ে যদি আবার পৃথিবীতে পাঠাবেন, সেটি তো একটি বিরাট বিষয় মানব জাতীর জন্য।  এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করে জানাবেননা কিংবা এ বিষয়ে অস্পষ্ট বা মুতাশাবিহাত ধরনের কোন বাক্যও কোরআনে থাকবে না! তা কি করে হয়?

এদিকে আমরা দেখছি  কিয়ামত পর্যন্ত ঈসা (আ:)কে নিয়ে আল্লাহর কি পরিকল্পনা তাও  কুরআনে  যেখানে জানিয়েছেন সেখানেও ফিরত পাঠানোর এ বিষয়টির কোন কথা নাই।

“.. আর যারা তোমার অনুগত রয়েছে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের উপর জয়ী করে রাখবো (সুরা ইমরান ৩:৫৫)। [আর ঈসা (আ:) এর দেহকে তার শত্রুদের হাত পর্যন্ত লাগতে দেন নাই] আল্লাহ জানিয়ে দিলেন (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৫৭) যে তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি; কিন্তু তাদের এইরূপ বিভ্রম হয়েছিল। তাছাড়া রোজ কিয়ামতের দিন,”যখন আল্লাহ বলবেন, হে মরিয়ম তনয় ঈসা, তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর? ঈসা বলবেন, তুমিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ। কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই। নিশ্চয়ই তুমি অদৃশ্য সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত।” (৫:১১৬) এখনেও তো তিনি বলতে পারতেন তিনি দ্বিতীয়বার গিয়ে কি বলেছেন?

আমরা জানি হাদিস শাস্ত্রে ইমাম মালিক (রহ.)কে বলা হয় উজ্জ্বল নক্ষত্র, হাদিস সংকলনে অগ্রনায়ক তাঁর হাদিসের সাধনা, সংগ্রহ ও সংকলন ছিল বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এজন্যই তাঁর সংকলিত গ্রন্থকে বলা হয়, ‘‘ইমাম মালিকের মুয়াত্ত্বা গ্রন্থ।’’  ঈমাম বুখারির আগে তিনি হাদিস লিখেছেন কিন্তু সেখানে এর কোন উল্লেখ নাই!  আর এটা এমন নয় যে কেউ এ কথা বলতে পারবে যে ইমাম মালিক এ বিষয়টি ভুলে গিয়েছেন বা এড়িয়ে গেছেন কেননা এটি ভুলে যাওয়ার বা এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ই নয়।

অবশ্য এক জায়গায় নবীর এক স্বপ্নের রেওয়ায়েতে কথা লিখেছেন যে নবী এক রাতে স্বপ্নের মাঝে দেখতে পেয়েছিলেন দজ্জাল ও ঈসা (আ:) এক সাথে কাবা ঘর তোয়াফ করছেন। সেই স্বপ্নের কাহিনী বর্ণনার সময়ও ঈসা (আ:) ফিরে আসার কোন কথা নাই!

পরিশেষে, যে কথাটি আমি বলতে চাই তা হল মাহদি ও ঈসা (আ:)আসবেন আমাদেরকে উদ্ধার করতে -“এট দি এন্ড অফ টাইম” – অর্থাৎ আখেরি জামানায়।  এ বিষয়ে যেহেতু বিভিন্ন মত বিদ্যমান তাই কার মতের ভিত্তিতে বলা হবে ‘কোন কাল শেষ কাল?’ আলামতের পাঠ তো বিভিন্নভাবে নেয়া যায়। তাই এই সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের উচিত নিজের দিকে তাকনো। আমাদের নিজের কেয়ামত যে দৌড়ে আসছে সেটি তো সঠিক –তা কী নয়? দুনিয়ার কেয়ামত কবে আসবে তা কেউ জানেনা। এমনকি নবীকেও সে প্রশ্ন করলে কুরআনের আয়াত এসেছে, “ক্বুল ইন্নামা ইলমুহা ইন্দাল্লাহ।” আপনি বলুন, এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে (সুরা আহজাব)।

এখানে আরেকটা জিনিস খেয়াল করা উচিত যে এ পৃথিবীকে সৃষ্টিই করা হয় নাই অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের পরিকল্পনায়। এ পৃথিবী সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানুষকে পরীক্ষা করা অর্থাৎ পৃথিবীর উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের অবস্থানটি কোথায় তা পরীক্ষা করতে। আমরি কি শান্তি ও অবিচারমুক্ত একটি সমাজ গড়তে এগিয়ে আসতে পারি কী না, সেটি যাচাই করতে।  মহান আল্লাহ বলেন: “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন – কর্মের বা আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি মহা শক্তিধর, অতি ক্ষমাশীল।”[সূরা আল-মুল্‌ক, আয়াত: ২]।

এই হল ড. কারদাওয়ী ও ঘামেদি সাহেবের চিন্তার প্রেক্ষিতে আমার উপস্থাপনা। আমি জানি এতে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে এবং এই দ্বিমত তাদের অধিকার, যেমনটি  শেখ কারদাওয়ী  ও ঘামেদি সাহেবদের এবং আমরা অনেকে সেই একই অধিকার রাখি।

রেফারেন্স:
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ
কোরআনের আলোকে ঈসা (আ.)–এর আবির্ভাব

লেখকের অন্যান্য লিখাগুলো…

 

Comments are closed.