রমজানে রোজা রাখা, সেহেরি ও ইফতারের বিধান-

আল-কোরআনে (২:১৮৫) নং আয়াতে রমজানে সারা মাস ব্যাপী রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-
সূরা বাকারা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(২:১৮৫) অর্থ- রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে অবতীর্ণ করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্যে হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্যে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এর মধ্যে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ্য কিম্বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে সহজ করতে চান; তোমাদের জন্যে কঠোরতা/ সংকীর্ণতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার জন্য আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
……………………………………
রমজান মাসে কখন রোজা শুরু ও শেষ করতে হবে সে সম্পর্কে হাদিছের বক্তব্য-
Narrated Ibn `Umar:I heard Allah's Messenger (ﷺ) saying, "When you see the crescent (of the month of Ramadan), start fasting, and when you see the crescent (of the month of Shawwal), stop fasting; and if the sky is overcast (and you can't see it) then regard the month of Ramadan as of 30 days."
Reference : Sahih al-Bukhari 1900
In-book reference : Book 30, Hadith 10
USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 31, Hadith 124

হাদিছের বক্তব্য অনুসারে চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও শেষ করতে হবে। আর কোন কারণে যেমন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় চাঁদ দেখা সম্ভব না হলে ৩০ দিন রোজা পূর্ণ করতে বলা হয়েছে।
…………………………………….
আল-কোরআনে রাতে পানাহার করতে বলা হয়েছে এবং কতক্ষণ পানাহার করা যাবে সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-
সূরা বাকারা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০২:১৮৭) অর্থ- হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হও এবং অনুসন্ধান কর যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন, আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিলিত হইও না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।
…………………………………….
হাদিছে রাতের শেষ ভাগে অর্থাৎ দেরিতে সেহেরি খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং ফজর সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার কিছু সময় পূর্বে (৫০ আয়াত পাঠ করতে যে সময় লাগে) সেহেরি খাওয়া সমাপ্ত করার কথা বলা হয়েছে। আর ইফতার করার ব্যাপারে অযথা দেরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাতের শুরুতে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই অর্থাৎ সূর্য ডোবার পর পরই ইফতার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং সময় মত দ্রুত ইফতার করাকে সরল পথে থাকার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে-
Narrated Anas: Zaid bin Thabit said, "We took the Suhur with the Prophet (ﷺ) . Then he stood for the prayer." I asked, "What was the interval between the Suhur and the Adhan?" He replied, "The interval was sufficient to recite fifty verses of the Qur'an."
Reference : Sahih al-Bukhari 1921
In-book reference : Book 30, Hadith 30
USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 31, Hadith 144
……………………………….
Narrated Sahl bin Sa`d: Allah's Messenger (ﷺ) said, "The people will remain on the right path as long as they hasten the breaking of the fast."
Reference : Sahih al-Bukhari 1957
In-book reference : Book 30, Hadith 64
USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 31, Hadith 178
……………………………….
Narrated `Umar bin Al-Khattab: Allah's Messenger (ﷺ) said, "When night falls from this side and the day vanishes from this side and the sun sets, then the fasting person should break his fast."
Reference : Sahih al-Bukhari 1954
In-book reference : Book 30, Hadith 61
USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 31, Hadith 175
……………………………….
এবার আল-কোরআনে প্রদত্ত নিচের আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করি-
সূরা আশ-শামস (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৯১:০১) অর্থ- শপথ সূর্য ও তার প্রভাতী প্রভার/ কিরণের,
(৯১:০২) অর্থ- শপথ চন্দ্রের যখন তা তাকে (সূর্যকে) অনুসরন করে,
(৯১:০৩) অর্থ- শপথ দিবসের যখন তা তাকে (সূর্যকে) প্রকাশিত করে,
(৯১:০৪) অর্থ- শপথ রাতের যখন তা তাকে (সূর্যকে) গোপন/ আচ্ছাদিত করে,

আল-কোরআনে (৯১:০৩, ০৪) নং আয়াতে দিবসের শুরু ও রাতের শেষ এবং রাতের শুরু ও দিবসের শেষ সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে “সূর্য প্রকাশিত হওয়া অর্থাৎ সূর্যোদয়কে” এবং “সূর্য আচ্ছাদিত হওয়া অর্থাৎ সূর্যাস্তকে” মানদণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (০২:১৮৭) নং আয়াতে রমজানের রোজা পালনের জন্য রাতেরই শেষ প্রান্তে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের বেশ কিছু সময় পূর্বে রাতের কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করার কথা বলা হয়েছে। আর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে। তাই অনেকে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত ইফতার করা উচিত নয় বলে মনে করেন। কিন্তু হাদিছে দেরিতে ইফতার করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ইফতার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ অনেকেই হাদিছের এই বক্তব্যকে কোরআনের নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক মনে করেন। যেহেতু (৯১:০৪) নং আয়াতে সূর্যাস্তের পর পরই রাতের সময় শুরু হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং সূর্যাস্তের পর পরই অন্ধকার ছেয়ে যাবার আগেই ইফতার করার বিষয়ে হাদিছে যে তাগিদ দেয়া হয়েছে তার সাথে রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ন করা সম্পর্কিত আল-কোরআনের নির্দেশটি মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করলেই রাত পর্যন্ত রোজা রাখার হক আদায় হয়ে যায়। কিন্তু এরপর রোজা ভাঙ্গার জন্য ইফতার করতে অযথা দেরি করলেই বরং আল-কোরআন ও হাদিছের নির্দেশনার প্রতি শৈথিল্য প্রদর্শন করা হবে। (Copy from sotto)

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *