বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাঃ অনিয়ম ও প্রতিকার (প্রথম পর্ব)

ব্যক্তির সমষ্টিই সমাজ। আমি সেই সমাজেরই অংশ। যে সমাজে বাস করছি সেই সমাজের উন্নয়ন আমার স্বপ্ন। সমাজের যেকোন অনিয়ম অসংগতি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। ইচ্ছা হয়; সুযোগ পেলে সমাজটাকে বদলিয়ে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি। সমাজের প্রতি সেই দায়বদ্ধতা থেকেই নিজের কিছু ইচ্ছা, অভিপ্রায় ও মতামত উপস্থাপন করে সমমনা পাঠকেদের সাথে তা শেয়ার করার মানসে মাঝে মাঝে কিছু লিখি। তাতে সমাজের সামান্যতম উপকার হলেও নিজেকে ধন্য মনে করি। আমার এই লেখা যাদের নজরে এলে আর তা আমলে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলে দেশ ও সমাজের উপকার হতে পারে, জানি না তাদের কেউ এ লেখা পড়বেন কি না। আর পড়লেও তা আমলে আনবেন কি না। তবু আমার পাঠকদের সাথে শেয়ার করার মানসেই এই নিবন্ধের অবতারণা।

বহুদিন যাবতই বিষয়টা নিয়ে লিখব ভাবছি। কিন্তু নানান অসংগতি ও ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার দরুণ বার বার উদ্যোগ নেয়া সত্বেও লিখাটি শেষ করতে অনেক সময় লেগেছে। অবশেষে আর ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে লেখাটা কোন রকম শেষ করেই পোস্ট করে দিলাম। প্রথমেই বলে নিচ্ছি ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার দরুণ এখানে কোন তথ্য উপাত্ত না দিয়ে বরং আমার বিবেচনায় চিহ্নিত কিছু তাত্বিক ও প্রায়োগিক পরামর্শ এবং মতামত উপস্থাপন করেছি মাত্র। বলছি না যে, আমার সকল মতামতই শতভাগ নির্ভুল বা সাফল্য দেবে তবে বিশ্বাস; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে যদি তা থেকে অন্ততঃ কিছু বিষয়ও বিবেচনায় আনেন তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অনেকটাই উন্নয়ন করা সম্ভব।

বলা যায়; আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকা সহ ছোট বড় সকল শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাই অদক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণ – এক রকম ‘লেজে গোবরে’ অবস্থা বিরাজ করছে। এর ফলে প্রতিদিন লক্ষ কোটি কর্মঘন্টার অপচয় সহ জ্বালানীর অপচয় (মানেই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সহ আর্থিক ক্ষতি), দূর্ঘটনা ও মুমুর্ষ রোগীর জীবনহানীর মত দুঃখজনক ঘটনা অহরহই ঘটছে। এইসব অপচয়, জীবনহানি ও সম্পদহানির সঠিক পরিসংখ্যানে না গিয়েও বলা যায় যে অদক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দরুণ প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের মত উন্নয়নকামী গরীব দেশে এই অপচয়টুকু সাশ্রয় করতে পারলেও পরোক্ষভাবে বিশাল আর্থিক উন্নতি নিশ্চিত করা যেত।

সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে; কোন সমস্যার সমাধান কল্পে সবার আগে চাই – সমস্যা নিরূপণ করা। আর যথার্থ সমস্যাটি নিরূপণ করতে পারা মানেই সমস্যার অর্ধেক সমাধান হওয়া। তাই সবার আগে চেষ্টা করব সমস্যগুলোকে চিহ্নিত করার। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আসুন দেখি আমাদের সমস্যাগুলো কি কি? এই সমস্যাগুলো বিশ্বের প্রতিটি মানব সমাজেই কমবেশী বিরাজমান তবে যে জাতি সেসব সমস্যাকে আমলে নিয়ে যথাযথ সমাধানের পথ খুঁজেছে তারা কমবেশী সার্থকতা অর্জন করতে পেরেছে, যারা করেনি বা পারেনি তারাই পিছিয়ে আছে। তারা সত্যিই দূর্ভাগা জাতি। জাতি হিসাবে আমরা যদি সভ্য বলে দাবী করি তাহলে চিহ্নিত সমস্যগুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তরীক হতেই হবে।

কর্মোপলক্ষে দুই যুগেরও বেশী কাল ধরে পৃথিবীর নানান দেশের শতাধিক শহর-বন্দর ঘুরে দেখা সহ আপন হাতে গাড়ি চালানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ জ্ঞানের আলোকেই আমি নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। আশা করি ভোক্তভোগী মহল চিহ্নিত সমস্যাগুলো সম্পর্কে একমত হবেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাসমূহ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যথাসম্ভব নিরসনে ব্রতী হবেন। নগর পরিকল্পনা সহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহে শত শত বিজ্ঞ ব্যবস্থাপক, পরিকল্পনাবিদ, পূরকৌশলী, পূর্ত ও যন্ত্রকৌশলী রয়েছেন। যারা স্ব-স্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের বিজ্ঞ মেধা ও বিবেচনায় উপযুক্ত সমাধানে ব্রতীও আছেন। তথাপি মনে হয়, তাদের কারোরই আপন হাতে রাস্তায় গাড়ি চালানো সহ সাধারণ মানুষের জীবনধারায় লব্ধ আটপৌড়ে প্রাত্যহিক জীবন সংগ্রামে উদ্ভূত সমস্যাসমূহ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা খুব কমই আছে। তাদের অনেকেই হয় তো দেশ বিদেশ পরিভ্রমণও করেছেন কিন্তু উন্নত দেশের রাস্তার বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে আমাদের দেশের পার্থক্যটা খুব কমই নিরুপণ করে উঠতে পারেন। কারণ সকল পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য যেমন তাত্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন তেমনি স্থান ও কালের ভিন্নতায় বাস্তবতার প্রেক্ষিতে লাগসই উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।

অনুমিত হয় যে; আমাদের দেশের পরিকল্পনাবিদদের প্রথমোক্ত জ্ঞানটি যথাযথ থাকলেও শেষোক্ত বাস্তব অভিজ্ঞতায় তারা যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী না ও হতে পারেন। সেক্ষেত্রে যে বিষয়টার উপর বেশী গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন তা হল প্রতিনিয়ত বাস্তব অভিজ্ঞতা মোকাবেলা করা সংশ্লিষ্ট ভোক্তা বা উপকারভোগীদের প্রাত্যহিক জীবনধারায় লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সমাধানের পথ খোঁজা। তার জন্য মাঠ পর্যায়ে যতটুকু পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের প্রয়োজন তা বোধ হয় আমাদের দেশে অপ্রতুল। স্বভাবতঃই পলিসি মেকারগণ তাদের অফিসে বসে সাধ্যমত যেসব পরিকল্পনা আঁটেন বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তা বাস্তবসম্মত বা লাগসই হয়না ফলে গৃহীত পদক্ষেপের খুব সামান্যই বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়।

ট্রাফিক ও জনপথ ব্যবস্থাপনার সাথে সংগত কারণেই বহু প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকে৷ এর কোনটির গুরুত্বই কোন অংশে কম নয় অথচ বাস্তবে দেখা যায় এই সকল আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়হীনতাই ইস্পিত লক্ষে পৌঁছার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবে এদেশে সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কোন প্রতিষ্ঠানই কাঙ্খিত মাত্রায় সক্ষম নয়৷ তাই সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংস্থাসমূহের গৃহীত পদক্ষেপে কখনোই ভাল ফল আসেনা অথবা সঠিক হয়না৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রাস্তাঘাটের পরিকল্পনা সংস্কার ও দেখভালের দায়িত্ব কোথাও পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন, কোথাও সড়ক ও জনপথ বিভাগ আবার কোথাও তা স্থানীয় সরকারের অধীন। তার মাঝে কোথাও আবার রেলপথের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে। সেই সাথে জড়িত রয়েছে বিদ্যূৎ, টেলিফোন, গ্যাস, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংস্থাসমূহ।

রাস্তাঘাটের উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারে রেলপথ সহ গ্যাস, বিদ্যূৎ, টেলিফোন, পানি বা পয়ঃনিষ্কাশন সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সমন্বয় খুব কমই দেখা যায়। যার ফলে একই রাস্তায় উল্লেখিত সংস্থা সমূহের কাজ কমবেশী প্রায় সারা বছরই লেগে আছে। যে কারণে রাস্তা সমূহে সারা বছরই বার বার কাটা-ছেঁড়া খোঁড়া-খুড়ির কাজ কখনোই ফুরায়না আর নিয়ম থাকলেও কাজ শেষে কোন সংস্থাই যথাযথ সংস্কারের কাজটি শেষ করেনা। অথবা কোন সংস্থা যথাযথ শেষ করতে না করতেই কিছুদিনের মধ্যেই অন্য কোন সংস্থা আবার খোঁড়া-খুড়ির কাজটি শুরু করে দেয়। এভাবেই সারা বছর উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা-ঘাট সমূহে খোঁড়া-খুড়ির কাজ লেগেই থাকে। আর সেসব কাজ করতে তারা কখনোই জনদূর্ভোগের কথা বিবেচনায় আনার কথা ভাবেই না।

এত সবের পরও আছে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদারদের দৌড়াত্ব। দেখা গেল একই রাস্তায় বছর দেড়েক আগে পয়ঃ নিস্কাশনের জন্য আগের দুই ফুট ব্যাসের পাইপের স্থলে তিন ফুট ব্যাসের পাইপ প্রতিস্থাপন করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছিল। কার্যাদেশে মেয়াদ যা ই থাকুক না কেন দেখা গেল এক দেড়বছর জনদূর্ভোগ ঘটিয়েও কাজটি শেষ হলনা্। ভাঙ্গাচোরা রাস্তাটি সংস্কার না হতেই আবার কার্যাদেশ হল। ওই তিন ফুট ব্যাসের পাইপ সরিয়ে এবার সাড়ে তিন ফুট ব্যাসের পাইপ বসাতে হবে, তো উন্নয়নের নামে শুরু হল আবার খোঁড়া-খুড়ি। কোন রাস্তা হয়তো সিটি কর্পোরেশন শেষ করল তো কিছুদিনের মধ্যেই গ্যাস কর্তৃপক্ষ শুরু করল আবার খোঁড়া-খুড়ি। তারপর আসবে অন্য কোন সংস্থা। এভাবেই চক্রাকারে একের পর এক সংস্থাসমূহ উন্নয়নের নামে যাচ্ছেতাই কর্ম করে চলেছে ফলে যান বাহনের চলাচল তো বাধাগ্রস্থ হচ্ছেই এমন কি সাধারনের নির্ভীঘ্নে পায়ে হাঁটার সুযোগটাও বন্ধ হচ্ছে। ভোক্তভোগী মহলের ধারণা; এসব পরিকল্পনার বেশীর ভাগই যত না উন্নয়নের জন্য গৃহীত হয় তারও বেশী রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদারদের ব্যবসাকে পৃষ্ঠপোষকতা করাই হল মূল উদ্দেশ্য। একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ঠিকাদাররা সচরাচর রাজনৈতিক বিবেচনায়ই কার্যাদেশগুলো পেয়ে থাকেন।

এমতাবস্থায়, রাস্তার সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও জনপথগুলোকে সুশৃঙ্খল করতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে সংশিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় সাধন পূর্বক জনদূর্ভোগ কমানোর কথা বিবেচনায় রেখে সংস্থাসমূহের সমন্বিত উদ্যোগে একযোগ সকল উন্নয়ন কাজ করা যায় তেমন লাগসই প্রযুক্তি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাস্তাঘাটের পরিকল্পনা ও উন্নয়নে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ট্রাফিকিং এ নিয়োজিত পুলিশ বিভাগেরও সমন্বয় চাই। কারণ নিরাবাচ্ছিন্ন সচল ট্রাফিকিং এর জন্য রাস্তাঘাট কেমন হওয়া চাই তা নির্ধারণ করবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। যেমন, দুইয়ের অধিক রাস্তার সংযোগস্থলে যানবাহনগুলো বাম গন্তেব্যে অনায়াসে যেতে না পারার কারণে রাস্তায় অযথা ট্রাফিক আটকে থাকে। অথচ ওইসব মোড়গুলোতে বাম গন্তেব্যে অনায়াসে যাবার ব্যবস্থা থাকলে এবং সে সব সংযোগস্থলের মোড়গুলো পরিস্কার থাকলে মোটেই কোন ট্রাফিক জট থাকত না। তার জন্য বাম গন্তেব্যে ধাবমান গাড়ির গতি সচল রাখতে প্রতিটি মোড়ে অর্ধ বৃত্তাকার বাইপাস সংযোগ লেন থাকা ও তার আগে পিছে কোন গাড়ি থামার সুযোগ না দেয়া সহ দোকানপাট জনিত মানুষ ও স্থাপনার জটলা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

তিন বা চার রাস্তার সংযোগ স্থলের কোণায় অবস্থিত প্লটসমূহের সকল ইমারত বা স্থাপনার জন্য নির্মাণ বিধি প্রনয়নে নিয়োজিত সংস্থাসমূহকে এমন বিধি প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে যেন সেইসব ইমারত বা স্থাপনা রাস্তার সংযোগ কোণ থেকে বেশ দূরে থাকে। যেন প্রয়োজনে রাস্তা পরিবর্ধণ ও বাম গন্তেব্যের জন্য অর্ধ বৃত্তাকার বাইপাস লেন অনায়াসে তৈরী করা যায়। উল্লেখ্য যে, বড় বড় রাস্তার ওই সব কোণগুলোতে অবস্থিত বেশীর ভাগ স্থাপনা ও প্লটগুলোই কোন না কোন সরকারী সংস্থার মালিকানায় রয়েছে। কাজেই সেসব কোণে অনায়াসেই বাম গন্তেব্যের জন্য বাইপাস লেন তৈরী করা যায়। ছোট রাস্তার মোড়ে অবস্থিত যেসব ব্যক্তি মালিকানায় প্লট ও স্থাপনা রয়েছে সেসব প্লটে নতুন স্থাপনা তৈরীর ক্ষেত্রে রাজউক বা সংশ্লিষ্ট তদ্রুপ সংস্থার কঠোর বিধি নিষেধ থাকা চাই।

স্থানাভাবে এই পর্বে শুধু চিহ্নিত সমস্যাগুলোই উল্লেখ করা হল। আশা রাখি আগামী পর্বে বিশদ আলোচনা ও সম্ভাব্য সমাধানের সুপারিশ করব। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আমার বিবেচনায় পাওয়া মোটামুটি সমস্যাগুলো নীচে তুলে ধরছিঃ

  • অপরিকল্পিত নগরায়্ন
  • অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা স্থাপন
  • অপরিকল্পিত বাসস্থান ও রাস্তাঘাট
  • রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে অপরিকল্পিত হাটবাজারঃ
  • অপরিকল্পিত ও অনিরাপদ লেভেল ক্রসিং
  • একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহনের চলাচলঃ
  • যানবাহন চলাচলের রাস্তায় হাটবাজার সহ মানুষ ও গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ
  • দোকানপাট, নির্মাণসামগ্রী/যাত্রীসেবা দানকারী যানবাহন কর্তৃক ফুটপাথ এবং রাস্তার বৃহদাংশ দখলে রাখা
  • সেবা খাতের সংস্থাসমূহের সমন্বয়ের অভাব
  • যত্রতত্র রাস্তাগুলোতে সেবাখাতের নির্বিচার খুঁড়াখড়ি এবং যথাযথ সংস্কার না করেই দীর্ঘদিন ফেলে রাখা
  • অবৈধ ত্রুটিপূর্ণ বা আনফিট যানবাহন
  • যানবাহন চালকদের অদক্ষতা ও গাফিলতি
  • পথচারীদের অসতর্ক এবং খামখেয়ালী চলাফেরা, আন্ডারপাস অথবা ফুট ওভারব্রীজ ব্যবহারে অনীহা
  • আন্ডারপাস ফুট ওভারব্রীজ ভিখারী ছিনতাইকারী ও হকারদের দখলে থাকা
  • ফুট ওভারব্রীজে উঠানামার সিঁড়িগুলোর ভুল ডিজাইন
  • পথচারীকে আন্ডারপাস বা ফুট ওভারব্রীজ ব্যবহারে বাধ্য না করা
  • তিন বা ততোধিক রাস্তার মোড় এবং সেখানে অবস্থিত স্থাপনাগুলো অপরিকল্পিত ভাবে ডিজাইন করা
  • তিন বা ততোধিক রাস্তার মোড়ে যাত্রী উঠানামা বা যাত্রীর অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা
  • তিন বা ততোধিক রাস্তার মোড়ে ঝাকিয়ে বসা দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা
  • জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুপাতে সংর্কীর্ণ এবং ভাঙ্গাচোরা ফুটপাথ
  • ট্রাফিক পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণ, সততা, দক্ষতা ও সহিঞ্চুতার অভাব
  • ট্রাফিক পুলিশের বেতন ভাতা, কর্ম পরিবেশ, কর্মঘন্টা, কাজের চাপ ও মানসিক চাপ
  • ট্রাফিক পুলিশের অবৈধ/অনৈতিক উপার্জনের স্বার্থে দোকানপাট/যানবাহনকে প্রশ্রয় দিয়ে জ্যাম বাধিয়ে রাখা

স্বচ্ছন্দময় নিরাপদ নাগরিক জীবন নিশ্চিত করা সহ জাতীয় অপচয় রোধ করা ও সুষ্ঠু সুন্দর ট্রাফিকিং এর স্বার্থে প্রত্যেকটি বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানকে পরষ্পরের সাথে এমনভাবে সম্পর্কিত থাকতে হবে যেন প্রত্যেক সংস্থাই মানব শরীরের বিভিন্ন অংগ৷ শরীরের সুস্থ্যতার জন্য যেমন প্রত্যেক অংগেরই সুস্থতার প্রয়োজন, তেমনি ট্রাফিক বা সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সুস্থতা ও কার্যকারীতা  জরুরী৷ প্রায়শই দেখা যায় গাড়ির ফিটনেস প্রদান কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও উদাসীনতার দরুণ রাস্তায় চলাচলকারী বেশীর ভাগ যানবাহনই মান বহির্ভূত বা অযোগ্য। অথচ মাঝে মাঝে ঘটা করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রোধের অঙ্গিকার বা ঘোষনা আসে। কার্যতঃ তা খুব একটা জনস্বার্থে কাজ করেনা যতটা না ট্রাফিক পুলিশের অনৈতিক বাড়তি পয়সা কামানোর কাজে লাগে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রোধ করা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পাঁচটা কাজের একটা অংশ মাত্র৷ সূতরাং, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সুস্থতার জন্য সরকারের এতদসংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই সর্বাংশে সুস্থ বা ‘ফিট’ হতে হবে৷ দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কের জন্য – “এখানে ক্লিক করুনঃ”

Loading

অনিরুদ্ধ বুলবুল

About অনিরুদ্ধ বুলবুল

ব্যক্তির সমষ্টিই সমাজ। আমি সেই সমাজেরই অংশ। যে সমাজে বাস করছি সেই সমাজের উন্নয়ন আমার স্বপ্ন। সমাজের যেকোন অনিয়ম অসংগতি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। ইচ্ছা হয়; সুযোগ পেলে সমাজটাকে বদলিয়ে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি। সমাজের প্রতি সেই দায়বদ্ধতা থেকেই নিজের কিছু ইচ্ছা, অভিপ্রায় ও মতামত উপস্থাপন করে সমমনা পাঠকেদের সাথে তা শেয়ার করার মানসে মাঝে মাঝে কিছু লিখি। তাতে সমাজের সামান্যতম উপকার হলেও নিজেকে ধন্য মনে করি।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *