প্রজন্মের জাগরন।

অনেকই হয়ত ভাবছেন জাতী হিসাবে আমারা জীবনের সবচেয়ে সুসময় এসে উপনীত হয়েছি । ফিরিয়ে আসছে তারুন্যের গৌরব, বাংগালীর অহংকার আর মুক্তিযুদ্ধের দৃঢ় চেতনা। দেশের চলমান হৈ হুল্লা ও মিডিয়ার দিকে তাকেলে তাই মনে হয়।

তবে ইলেকশন বছরের এ মিডিয়ার হাইপে না পড়ে একটু সিরিয়াসলি চিন্তা করলে দেখা যায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কিন্তু অনেকটা তার বিপরীতে ধাবিত হচ্ছে । অবস্থা সত্যিই খুব গুরুতর ও এতই খারাপ যে কোন ব্যক্তির পক্ষে খোলাখুলিভাবে সত্য কথা বলা বড়ই কঠিন এবং অনেক সাহসের ব্যাপার। মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের অধিকার ছিনিয়ে নিতে চলছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। আসলে দুর্বৃত্ত কবলিত রাজনীতিকে চিরস্থায়ী করে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ব্যবস্থাকে ঠিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে চলছে বিভিন্ন কৌশল ও ষড়যন্ত্র। আর সে পরিকল্পনায় যোগ দিয়েছে এক শ্রেণীর সেকুলার ইসলাম বিদ্ধেষী মহল ও গনবিছিন্ন্ নাস্তিক বামপন্থীরা। নাটের গুরু হচ্ছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট গ্রুপ ও কায়েমি স্বার্থবাদী “সুশীল সমাজ” ও অবৈধ অর্থের বিত্তশালী পুঁজিবাদী গুষ্টির মালিকানার মিডিয়া।

এরাই আমাদের নূতন প্রজন্মকে উত্তেজিত করে ও তাদের আবেগকে ভিন্ন পথে ধাবিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।তারা আজ বাংলাদেশের যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে তা বুঝতে হলে ঠাণ্ডা মাথায় নিম্নের কথাগুলা বিবেচনায় আনা দরকার। আমি জানি যারা আজ ক্ষমতার মোহে অন্ধ, দলবাজ, স্বার্থপর ও প্রপাগন্ডার প্রতারনায় লিপ্ত কিংবা পরিস্থিতির কারণে ভীত তাদের কারো কাছে এ কথাগুলার কোন মূল্য নাই তবু লিখছি সেই সাইলেন্ট মেজরিটির জন্য যারা এগিয়ে আসলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।

ওরা কেন এসব করে?

মস্কো-পন্থি (লেনিনিস্ট/স্ট্যালিনিস্ট) বামপন্থি দলের সাথে ইসলামী দলের সংঘাত প্রায় সব মুসলিম দেশেই দেখা যেত এবং মস্কো-এর কিবলা শেষ হলে আদর্শের দ্বন্দ্ব শেষ হয়নি। (১৯৮০ দশকে শেষের দিকে সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়লে এবং ১৯৮৯ বার্লিন-ওয়াল ভেঙ্গে দুই জার্মানী একত্র হলে প্রতীকী অর্থে মস্কোপন্থি কমিউনিস্টদের লেজ কেটে পড়ে এবং তারা ‘এতিম’ হয়ে যায়।) বাংলাদেশে ১৯৯০এর দশক থেকে একবিংশের প্রথম দশকের মধ্যে বামপন্থিরা বাঙ্গালী জাতীয়তাকে কেন্দ্র করে তাদের আদর্শে এক নতুন চেতনা ঘটায়, যা আজ উগ্রবাদী থেকে ফ্যাসিবাদে রূপান্তরিত হতে দেখা যায়।

প্রত্যেক আদর্শের নবায়ন বা নতুন আদর্শিক চেতনা ইতিহাসকে পুনর্ব্যাখ্যা করে। অতীত থেকে নিজেদের জাস্টিফিকেশন পেতে চায়। নিজেদেরকে ইতিহাসের স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে তাদের বিরোধীদেরকে সেই ব্যাখ্যার ‘বাইরে’ রাখতে চায়। তখন চলে জাস্টিফিকেশনের খেলা। শুরু হয় ‘আমরা/তারা’ আলোচনা-যুদ্ধ ও ট্যাগিং। ‘আমরা’ হলাম ‘মূল’ আর ‘তারা’ হল ‘বাইরের’। আমরা হলাম বিজয়ী আর ওরা হল পরাজয়ী এখানে বাম-পন্থিরা হতে চায় স্বাধীনতা যুদ্ধের মা-বাপ, আর তারা ছাড়া সবাই ফালতু ও ভণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরুধী! তাদের কাছে এবিএনপিসহ বাকী সব মুক্তিযোদ্ধারাও হতে পারেন সেই the Other (‘তারা’)অর্থাৎ বাইরের লোক, স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার জেনারেল জিয়া ও কাদের সিদ্দিকীর মত দেশপ্রমিক মুক্তিযুদ্ধারাও রাজাকার হতে সময় লাগে না।

যেহেতু একাত্তরকে কেন্দ্র করে বামপন্থি চেতনা নতুন রঙে রঙিন হচ্ছে তাই একাত্তরেই তাদের আদর্শের সেই মৌলিক উপাদানগুলো পেতে হবে যেমন সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিতভাবে গৃহীত হওযার চেতনা সৃষ্টির প্রচেষ্টা। ( আমরা এই পর্যায়ে এগুলোর বিপক্ষ নিচ্ছি না), কিন্তু এখানে কিছু সমস্যা থেকে যায়। ইতিহাস বলে এই উপাদানগুলোকে কেন্দ্র করে ১৯৭০ সালের ইলেকশন হয়নি। জাতি এই উপাদানের ভিত্তিতে আ’লীগকে ভোট দেয় নি। ভোট দিয়েছিল ছয় দফার ভিত্তিতে। সুতরাং নতুন চেতনায় এই উপাদানগুলোকে ‘আবিষ্কার’ করতে হবে, ছোট জিনিসকে বড় করতে হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রবাহকে জেনারেলাইজ করে সেটা দেখাতে হবে। একাত্তরে যখন যুদ্ধ বাধে এবং মুজিব নগরে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় সেখানেও সেই উপাদানগুলো ছিল না। যুদ্ধ এই উপাদান ঘিরে সংঘটিত হয়নি। কিন্তু এটাকেও সেই একই ভাবে ‘ঐতিহাসিক চেতনায়’ দেখাতে হবে। সুতরাং এখন ইতিহাস বিকৃত করার প্রয়োজন কাদের? যদিও বাংলাভাষা একাত্তরের আগেও ছিল। পাকিস্তানের আগেও ছিল। ব্রিটিশের আগেও ছিল। বাঙালীও একাত্তরের আগে ছিল। পাকিস্তানের আগেও ছিল। কিন্তু গনবিছিন্ন্ বামপন্তী কমিউনিস্ট এবং তাদের সহযোগী ইসলাম বিদ্ধেষী নাস্তিক ব্লগারদেরকে নিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের উসকানি দিয়ে ফ্যসিস্ট মানষিকতার বীজ বপন করে যাচ্ছে তাদের স্বার্থে ।

এ অবস্থায় দেখা যাবে রাজনৈতিক স্বার্থে বিরামহীন প্রচারণায় কয়েক লক্ষ লোকের পক্ষে আত্মঘাতী হঠকারী পথে নিয়ে আসতে তেমন কঠিন কাজ নয়। হয়তো অনেকে বলতে চাইবেন ১৬ কোটির একটি দেশে কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম হলেই বৃহত্তর জনগুষ্টির প্রতিফলন বুঝায় না। সাইলেন্ট মেজরিটি তথা নীরব সংখ্যাগরিষ্ট জনসাধারন এসব চায়না অতএব চিন্তার কারন নাই। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় একটা সমাজকে নষ্ট করতে মুষ্টিমেয় লোকই যথেষ্ট । তেমনি সমাজের “মোবার এন্ড শেইকার” অল্প সংখ্যকই হয়। অতএব সময় থাকতে সর্তক না হলে পুরা জাতী ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিমজ্জিত হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। ব্রাহ্মণাবাদি ও আধিপত্যবাদীদের “ডিভইড এন্ড রুল” নীলনকশার বাস্তবায়নের সহযোগী ইসলাম বিদ্বেষী বামপন্থীরা নূতন প্রজন্মেকে সে দিকেই নিতে চায়।

এ দেশে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছে তা বোধহয় খুব কম লোকই বুঝতে পারছে। দু:খের বিষয় যারা কিছুটা বোধগম্য হচ্ছেন তারাও জামাতকে দুষারুপ করে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন! সেদিন বেশী দূরে নয় বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে প্রকাশ্যে কথাবার্তা বলা হবে দেশদ্রোহীতার শামিল।

শাহবাগ “গণজাগরণের” তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক দেখা গেলেও দীর্ঘকালীন প্রতিক্রিয়া যে কি হতে যাচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। সরকারি দলের অনেকে ভিতরে ভিতরে অনুভব করলেও বাহিরে বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

তরুণ প্রজন্মের আবেগকে পূঁজি করে বিদ্বেষ ও অশ্লীলতার বীজ বপন জাতির জন্য মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার চেয়েও হবে ভয়াবহ!

· দু:খজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার ৪২ বছরেও অফুরন্ত সম্ভাবনাময় আমাদের এই দেশটিতে তরুণ প্রজন্মের প্রতিভাকে গড়ার কাজে যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। শুনেছি সাম্প্রতিক এক surveyতে দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের যুবসমাজের শতকরা ৩০% নাস্তিকতায় বিশ্বাস করে এবং এরা শুধু নাস্তিকতায়ই বিশ্বাসী নয় সেই সাথে চরম ইসলাম বিদ্ধেষী এবং তা করা এখন এক ধরণের ফ্যসন হয়ে গিয়েছে তরুণদের মাঝে!

· মানবতা-বিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচারের ক্ষেত্রে কারো দ্বিমত তথা বিরোধিতা নেই। আমরা চাই ন্যায়বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক। কিন্তু সরকার এ ব্যপারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

আমি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে সাফাই দিবার উদ্দেশ্য নিয়ে এ ব্লগ লিখছিনা কিংবা তাদের নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত বা কর্মপদ্ধতির ছাফাই গাওয়ারও ইচ্ছা নাই বরং বাংলাদেশে চরম ফ্যসিষ্ট মানসিকতা এবং “ইসলাম ফোবিয়া”,“এন্টি-সেমেটিজম” জাতীয় রোগেরমত “জামায়াত ফোবিয়ার” মানসিক রোগ সৃষ্টির কাজে যে কিছু লোক নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দেশের ভিতর আধিপত্য-বাদের “ডিভাইড এন্ড রোল” এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে যাচ্ছে তা সমর্থন করা যায় না। তাই তো আজ তরুনদের কন্ঠে শুনা যায় নৈরাজ্যের স্লোগান:

“জামাতের চামড়া

উপড়ে ফেলব আমরা”

“একটা দুটা শিবির ধর

সকাল বিকাল নাস্তা কর”

ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন আসামীদের বিচারের রায় দেবার সময় বিচারকদেরকে জামাত বিরোধী শাহবাগের “গণজাগরণের আবেগকে” বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানিয়েছেন! কি সুন্দর কথা! নিশ্চয় অনেকের কাছে ভাল লাগবে বলেই তিনি তা বলেছেন। তবে আসলেই এসব ভাল লক্ষণ কিনা তা চিন্তার বিষয়। ট্রান্সফারেন্সী ইন্টারন্যাশনেলের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেছেন “চাপ দিয়ে রায় অদায় করা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হবে না”। যার প্রমান অবশ্য ইতিমধ্যে ট্রাইবুন্যলের ৩য় রায়ে অর্থাৎ দেলওয়ার হুসেইন সাইদীর ফাসী দেয়ার কারনে দেখা যাচ্ছে। ফ্যসিষ্ট মানষিকতা নিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিলেই বাংলার জয় হয়ে যায় না। বাংলার জয় তখনই হবে যখন এ দেশ থেকে অন্যায় অবিচার ও হিংসা বিদ্ধেষ দূরিভুত হলে। বিচার বিভাগকে তার নিজশ্ব অইনি প্রক্রিয়ায় চলতে দিলে, মানুষের জানমাল ও ইজ্জত, মানবধিকার এবং অন্ন বস্ত্রের ও বাসস্থানের নিরাপত্তা নি:শ্চিত করলে।

শান্তিপূর্ন অবস্থানের নামে এক জায়গায় জড়িত হয়ে হিংসাত্মক শ্লোগান দিয়ে একত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বা যে কোন বিচারাধীন লোকদের বিচারের ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করন করা, বিচারকের উপর চাপ সৃষ্টি করা, নিজেদের ইচ্ছা মাফিক রায় দিতে বাধ্য করা এবং মানুষের আবেগকে পূঁজি করে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করাকে অনেকে বলেন এটা নাকি আরব বসন্ত? অথচ আরবের নতুন প্রজন্মের স্লোগান ছিল “আস্ শাব ইসকাত আল নিজাম” অর্থাৎ জনতার একই দাবী শাসকগুষ্টি কবে যাবি? (অন্য কথায় প্রচলিত সৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন) । যদিও ইতিহাসের কোথায়ও কোন আন্দোলন ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এবং পৃষ্টপোষকতায় এরকম হওয়ার নজীর নেই। একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের মূল হোতা ১৯৫জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা খুবই রহস্যজনক! তাছাড়া বাংলাদেশের সমসাময়িক মারাত্মক সকল ইস্যু যেমন সীমান্তে ফেলানি হত্যা থেকে শুরু করে পদ্মাসেতুর দুর্নীতি, শেয়ার মার্কেট, হলমার্ক কেলেন্কারি, প্রতিনিয়ত গুম হত্যা, সাগর রুনি হত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষন, মানবাধিকার লঙ্গন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ দলের ছাত্রদের অরাজকতা, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি সহ অসংখ্য ইস্যুতে তাদের নিরব থাকা অবাক করে।

অবশ্য বাংলাদেশের বসন্তের হাওয়াকে যারা শুধূ জামাত প্রতিরোধের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় শেষ পর্যন্ত তাদের সে আশা পুরণ হবে কি না তা ভবিষ্যতই বলতে পারে। অন্যদিকে নাস্তিক ঘরানার ওয়েব সাইটগুলা ইতিমধ্যে তাদের নিচের দাবীগুলা বাস্তবায়ন করার দাবী তোলছে:

– রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবী

– সংবিধান থেকে বিসমিল্লা তুলে দেয়ার দাবী

– ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতির অপসারণ

একাত্তরে উভয় পক্ষে বহু হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। উভয়ের পক্ষের বহু লক্ষ মানুষের গায়ে এখনও তাজা জখম। বামপন্থীদের ও তাদের সহযোগী অসৎ শাসক গুষ্টির কাজ হয়েছে সে জখমে মরিচ লাগানো। এরা বিচারের পরিবর্তে একাত্তরের ক্ষতে মরিচ লাগিয়ে দেশে বিভক্তি ও রক্তপাত বাড়াতে চায়। অন্য দিকে সরকার বিরোধী প্রতিবাদে জামাত শিবিরের কর্মকান্ডও ইসলামের নামে গ্রহনযোগ্য নয়। সত্যি বলতে কি জামাত শিবির তাদের প্রতি বর্তমান শাসকগুষ্টির আক্রমনের মোকাবেলায় তাদের চলমান আন্দোলনকে শুধুমাত্র ক্যডার ভিত্তিক প্রতিবাদ করা ছাড়া বৃহত্তর জনতার সাথে সম্পৃক্ত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রতিবাদ মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে পাখিরমত মানুষ হত্যার যে হুলি খেলায় প্রশাসন মেতে উঠেছে তা কোন অবস্থায় গ্রহনযোগ্য নয়। যার ফলে সরকার না চাইলেও সাধারন মানুষের সহানুভুতি কিন্তু এখন তাদের দিকে দাবিত হচ্ছে।

হিডেন এজেণ্ডা বুঝতে হবে

পুঁজিবাদী সভ্যতার বর্তমান নেতা আমেরিকা যেমন তাদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে ‘দুশমনের’ প্রয়োজন, তেমনি কমিউনিস্ট আদর্শ ও তার প্রোপাগান্ডার রাজনীতিতে ‘দুশমনের’ প্রয়োজন, ঘৃণার টার্গেটের প্রয়োজন,প্রোপাগান্ডাতে এগুলো একান্ত মৌলিক বিষয়। কিন্তু মস্কো ধন-তান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করার ফলে এখন ধন-তন্ত্র ও গণতন্ত্রকে দুশমন করে বাংলায় সেই আন্দোলন ঠিকিয়ে রাখা যাবে না, আবার ‘সরাসরি’ ইসলামকে টার্গেট করলে দেশের আম-জনতা তাদের হাড্ডি ভেঙ্গে দেবে, তাই জামাতকে প্রতীক করেই ইসলামী প্রতীকা দিতে আক্রমণের প্রতারণা করে আসছে। জাফর ইকবাল হিজাব বোরখার বিপক্ষে কথা বলে তার সাথেও জামাত শিবিরকে জড়াতে দেখা যায়। আজ কোথাও একটি প্রজাপতি মরলেও জামাত টানতে তাদের দেরি হয় না। এদের মিথ্যার কোন হিসেব নিকেশ নেই এবং তাদের মিথ্যা সত্য ভাবার লোকজনেরও অভাব নেই।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকে বিশেষ করে পাকবাহিনীর অত্যাচরের ও গণহত্যার পূর্বে এদেশের আলেম সম্প্রদায় এবং তখনকার অনেক রাজনৈতিক দল পাকিস্তান ভাঙ্গতে চায়নি, এদের সাথে জামাত নামক অতি ছোট্ট দলও ছিল যারা অখণ্ড পাকিস্তান দেখতে চেয়েছিল কেননা তাদের এবং অন্যদের দৃষ্টিতে, উপমহাদেশের ভৌগলিক অবস্থানিক পরিপ্রেক্ষিতে, শক্তিশালী ভারত ও ভারতীয় ব্যবসায়ী করপোরেশগুলোর মোকাবেলায় এই ছোট্ট দেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না বরং পাকিস্তান ভাঙ্গার সাথে সাথে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তাদের ব্যবসার বাজারে পরিণত হয়ে যেতে পারে, এটাই ছিল তাদের অনেকের ভয়। কিন্তু ঘটনা যা’ই হোক একটি স্বাধীন দেশে প্রত্যেক নাগরিকই দেশের ব্যাপারে স্বাধীন মত পোষণ করার অধিকার রাখে এবং সেই অধিকার সকল পক্ষেরই ছিল।

জামাতের নেতাদের উপর হাজারো অভিযোগ এনে গত দশ-বারো বৎসর ধরে তাদের ছবি শুয়োরের পিছনে,কুকুরের পিছনে, অন্যান্য পশুদের মুখে-পিছে দাড়ি-টুপি সংযোগ করে এবং সেগুলোর নিচে কোন জামাত নেতার নাম উল্লেখ করে গাল-মন্দসহ সব ধরনের মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চলে আসছে। এগুলো কৌশলের সাথে করা হচ্ছিল যাতে কেউ কিছু বললেই উত্তর আসবে, ‘ওরা জামাতি’ ও “স্বাধীনতা বিরোধী”।

কিন্তু এখানে যে দাড়ি-টুপির অবমাননা হচ্ছে, সেই অবমাননা ‘জামাতী-প্রতীকীতেই’ সারিয়ে নেয়া হয়। একজন আলেমকে পায়ের বুটে মোচড়ে দিয়ে তার পিছনে জামাত জড়িয়ে দিয়ে গণ-উল্লাসে মেতে ওঠাতে অতি সংগোপনে আরেকটি কাজ ‘প্রতীকীতে’ সম্পন্ন করা হয় আর তা হল ‘এই শ্রেণী’ এমন যাদেরকে মোচড়ানও যায়। এমনটি বাংলার বুকে এই প্রথম হল এবং এর সাথে মুসলমান নামধারীরাও থাকল। অতএব সম্মানিত পাঠকদের যারা লিন্চিং (lynching) সর্ম্পকে সামান্যতম ধারনা রাখেন তাদের বুঝতে পরার কথা দেশের পরিবেশ বিশেষকরে বিচার ব্যবস্থা আজ কোন দিকে যাচ্ছে।

এ সংগ্রাম ইসলামের বিরুদ্ধে নয়

ইন্টানেট ব্লগ জগতে যারা যান তারা জানেন ইদানিং কিভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃনা বিদ্ধেষ ছড়ানো হচ্ছে। আজকে যে ইসলামকে ধ্বংস করতে, এর বিপক্ষে নিকৃষ্টতম প্রোপাগান্ডা করতে যারা রাতদিন কাজ করছে তারা চায় সমাজে ইসলামিক মুল্যবোধ, ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়ন বা সে লক্ষ্যে পৌছাতে যে কোন প্রচেষ্টা, আলোচনা বন্ধ হয়ে যাক অথবা ঘরের কোণে কোণঠাসা হয়ে থাক।

নতুন প্রজন্মকে যা জানতে হবে

বাংলাদেশ বিপদে পড়েছে রাজনীতির ময়দানে চলমান সংঘাতের কারণে। বাংলাদেশের শত্রুপক্ষ তো সেটিই চায়। দেশকে যারা আধিপত্যবাদের জালে আবদ্ধ করে রাখতে চায় তারা চায় বাংলাদেশ দ্রুত একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক। এদেশে সংঘাত শুরু হলে অস্ত্র বিক্রির বাজারও বাড়বে।

নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে দুষমনদের সে লক্ষ্যে পূরণে কারা সে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে গুড়িয়ে দিয়ে কারা অতীতে ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত করেছিলেন। দেশ সে যাত্রায় বেঁচে যায়। কিন্তু দুশমন তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। দেশ-ধ্বংসী সংঘাতকে আরো তীব্রতর করার কাজে নিয়োগ করেছে বামপন্থী ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পক্ষের বিশেষ একগুষ্টিকে যা তথ্য সহকারে অনেক পূর্বে বিদেশী পত্রিকায় (ইকোনমিষ্ট) প্রকাশ হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে এরা কারা? আর তখনই হবে প্রজন্মের জাগরণের সফলতা। তাই প্রয়োজন তারুণ্যের জাগরণকে বামপন্থীদের হাইজ্যাক করা থেকে রক্ষা করা। আর সে জন্য প্রয়োজনে জড়ো হতে হবে ভিন্ন চত্বরে।

উপসংহারে আমাদের প্রজন্মকে বলতে চাই আপনাদের শক্তিকে সঠিক কাজে ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন সরকারী পাহারায় কোন বিপ্লব আসে না। ইতিহাস স্বাক্ষী “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা” গ্রন্থের লেখক সেক্টর কামান্ডার মেজর আব্দুল জলিল স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে আধিপত্যবাদীদের লুটপাটের বিরুধীতা করার কারনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দীর মর্যাদা লাভ করেন! সত্যিকার অর্থে যদি কোন পরিবর্তন আনতে চান এবং একাত্তরের শহীদদের প্রতি সঠিক সম্মান দেখাতে চান ও মানবতাবিরুধী অপরাধের বিচার চান তবে আপনাদের আন্দোলনের লক্ষ্যের পরিধিকে আরো বাড়াতে হবে তখনই বুঝতে পারবেন কে আপনাদের বন্ধু আর কে দুশমন? একটি বিশেষগুষ্টির নিজশ্ব এজেন্ডা বাস্তায়নে এক জায়গায় জড় হয়ে দেশে একদলীয় শাসন ক্ষমতা বাস্তবায়নের সহায়তা করাকে যারা দ্বিতীয় মুক্তি যুদ্ধ বলেন তারা মুলত মহান মুক্তি যুদ্ধের অবমাননা করেন। রাজনৈতিক বিরোধিতার মানে কি স্বাধীনতার বিরোধিতা?

এই দেশটি আওয়ামী লীগের নয়। এই দেশটি বিএনপির নয়। এই দেশটি জামায়াতের নয়। এই দেশটি আমাদের সবার (যদিও সাজেদা চৌধুরীর মতে দেশটি আওয়ামী লীগারদের!) আমাদের অবস্থান হতে হবে এক দলীয় শাসনের বিরুদ্ধে, সব নিপীড়ন ও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার বিরোদ্ধে এবং গণতন্ত্র, পরমত সহিণ্সুতা, মানবাধীকার ও জনকল্যানের পক্ষে।

তবে মনে রাখতে হবে জামায়াত কোন তুলসি পাতায় ধোয়া দল নয়। এ দলের লোকেরাও বাংলাদেশে জন্মেছে তাই “মেইড ইন বাংলাদেশের” যত দূর্বলতা আছে তার অনেক কিছু তাদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। তবে তাদের আদর্শের সাথে আপত্তি থাকতেই পারে এবং সে আদর্শের বিরুদ্ধে উত্তম আদর্শ দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে গুলি করে বা হিংসাত্মক স্লোগান দিয়ে তা সম্ভব নয় তাতে শুধু প্রাণহানি ও ধ্বংশ ছাড়া কিছু হবে না। এই বাস্তবতা যত দ্রুত দেশের মিডিয়া এবং ক্ষমতাসীনদের মাঝে জাগবে ততই মঙ্গল দেশের জন্য।

“হুজুগে বাঙ্গালির” চারিত্রিক বৈশিষ্টের এই দেশে যারা দেশের সংবিধান বিরোধী এবং দেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিপক্ষে, নাগরিক অধিকারের বিপক্ষে কথা বলবে বা তার প্রতিবাদ করলে কেউ যদি তার পিছনে লেভেল দিয়ে, অথবা তাকে ভয়ের সুপ্ত ইঙ্গিত দিয়ে স্তব্ধ করতে চায়, তবে সেই লেভেল ও সুপ্ত ইঙ্গিতকে অতিক্রম করে রাষ্ট্রের সেই মূল্যবোধের কথা বলা থেকে বিরত না হওয়াই স্বাধীন দেশের নাগরিক অধিকারের অংশ বলে মনে করি। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক ও মুসলিম হিসাবে একজন মুমিনের দায়িত্ব হচ্ছে গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে না গিয়ে যা অন্যায় ও অবিচার তা দেখলে তার বিরুদ্ধে কথা বলা।

আজ সন্ত্রাস, আতন্ক ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মধ্যামে দেশ যে এক বিদ্ধংশী গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে তা সরকার উপলব্ধী করতে না চাইলে এবং তার সমাধানে সঠিক ব্যবস্থা, শক্তি দিয়ে নয় বরং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে না করলে সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন অবশ্যই জাগবে আমরা যাব কোথায়? তখন দেখা দিবে জনতার বিদ্রোহ!

Loading


Comments

প্রজন্মের জাগরন। — 4 Comments

  1. ভাই সালাম,
    আপনার লেখা সাথে আমার কিছু অবজারবেশন দিয়ে দিলাম। গত ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়,যার উদ্দেশ আবদুল কাদের মোল্লা মূলধন এবং সমস্ত অন্যান্য অভিযুক্ত 1971 যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়। শাহবাগে আন্দোলন নির্দিষ্ট চাহিদা সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সমথন জানায়, যারা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রকৃতির লোকেরা।স্বাধীনতার পর থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারে অনুযায়ী রাষ্ট্র,নতুন শক্র হচ্ছে বত্মান জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।সরকার জামায়াত নিষিদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে। কে এই থেকে উপকার হবে?রাজনৈতিক,কারেণ জামাত তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং তার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মৈত্রী একটি আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।কয়েক বছর ধরে, একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে জামাত আর্থিকভাবে খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে।একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে জামাত একটি ছায়া সরকার হিসাবে উদ্ভূত হয়েছে।জামায়াত সব সবচেয়ে সব সেক্টরে ছিল তার উপস্থিতি উন্নত ব্যাংকিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, ওষুধ, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, মিডিয়া, গার্মেন্টস, কাগজ, চামড়া, লোহা এবং ইস্পাত, সিমেন্ট, ড্রাগ এবং ওষুধপত্র ইত্যাদি,এবং জামাতের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ২৪৪.৮৭$ মিলিয়ন, এবং পেইট আপ ক্যাপিটাল পরিমাণ ১২২.৫৩$ মিলিয়ন সঙ্গে একটি যা বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাংলাদেশে ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক. এটা আমানতের পরিমাণ ৪,১৭৬.৪৪$মিলিয়ন এবং একটি শেয়ার বিনিয়োগ সহ ৩,৯৪৩.33$ মিলিয়ন বিনিয়োগ আছে।শাহবাগ থেকে জামাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বয়কট ও জাতীয়করণে দাবি করা হয় এবং এর মধ্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত।কেন শাহবাগে জামাত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, বয়কট এবং জাতীয়করণে দাবি তোলা হয়?কেন এটা তাদের বিষয়সূচি হয়? কে বেনিফিট হবে এর থেকে?কেননা তাদের একমাত্র এবং প্রধান দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধী বিচার।
    শাহবাগকে জিজ্ঞাসা করা উচিত বৃহত্তম রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কেন বয়কট দাবি করা হয় না?সোনালী ব্যাংক লিমিটেড অবৈধভাবে টাকা হয় ২৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য দায়ী।শাহবাগকে আমি আমার উত্তর দিয়ে দিচ্ছি, শাহবাগ তুমি হচ্ছে সেই সুবিধা ভোগী মানুষদের জয়গান করতে যারা ব্যাংকিং ব্যবস্থার ফাঁক জন্য বেনিফিটে।এবং শ্রম দিতেছ সুবিধাভোগী পাশ এবং দূষিত সংসদীয় পুঁজিবাদী বাহিনী জন্য। শাহবাগ তুমি কি জানো ৫৯৬ কোটি টাকা, যা চেক ছাড়া ২০০৬ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে তুলা হয়েছিল হয়েছিল। পরে এই টাকা গুলা আত্মসাৎ করা হয়েছিল।অভিযোগ রয়েছে যে,তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস সভানেত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এর সাথে জড়িত। শাহবাগ, তুমি দূষিত সংসদীয় পুঁজিবাদী বাহিনী জন্য শ্রম দিতেছো।এছাড়াও শাহবাগে একটি প্রধান সংবাদপত্র, দৈনিক আমার-দেশ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি এবং এর বয়কট দাবি. এই সমস্ত মিডিয়া গ্রুপ প্রো বিরোধী সংবাদ মাধ্যম হিসাবে অধিকাংশই পরিচিত .শাহবাগের এসব দাবি কি গণতন্ত্র জন্য হুমকি নয়?
    মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মিডিয়া একটি পূর্ব শর্ত এবং গণতন্ত্রের জন্য খুবই অপরিহার্য। শাহবাগ,কারা লাভবান হবে এইসব মিডিয়া কে বয়কট করে এবং এসব মিডিয়া অনুপস্থিতে? শাহবাগে,কেন আপনি এইসব মিডিয়া বয়কট দাবি করা হয়?শাহবাগ, তুমি কি বিভিন্ন মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা শীল?
    শাহবাগ, ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অঙ্গীকার এবং কার্যকারিতা বিরাট ফারাক অবস্থান করতেছ। শাহবাগকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।কিন্তু বাস্তবতার দিকে তাকালে এটি একটি স্বাধীনতার যুদ্ধের সুবিধাভোগী এবং দূষিত সংসদীয় পুঁজিবাদী যুদ্ধ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করতেছে। শাহবাগ থেকে জামাতকে নির্বাসন দাবি করা হচ্ছে,কিন্তু কে এই নিষেধাজ্ঞা থেকে লাভবান হবে? একথাও ঠিক যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর গ্র্যান্ড জোট এর বেনিফীটে হবে। গত সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ৩.১৮৬.৩৮৪ ভোট যা মোট ভোট পেয়েছেন ৪.৬% এবং তারা সংসদে শুধুমাত্র ২ সীট পেয়েছে। যদিও জামাত হয় সংসদে সংখ্যালঘু, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব দেওয়া হয়. কারণ সম্ভবত, একটি চার পার্টি জোটের সঙ্গে তাদের জোট। যদি এই দলকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নির্বাচন মুক্ত করা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এটি সমর্থন হারাবে।এবং রাজনীতি চলমান ধারায় জামাতের স্থান জাতীয় পাটি নেবে এটা পরিকল্পিত ছিল।এবং বিএনপি হয়ে যাবে তৃতীয় বিরোধী দল।শাহবাগ আপনি কি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন কেন আমি পরিবারতন্ত্র রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিরুদ্ধে? কারণ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ঘোলা পরিবেশ তৈরি করে সাধারণ মানুষের জন্য।সাধারণ মানুষ ক্রমাগত যুদ্ধ করে যাচ্ছে তাদের দৈনন্দিন রুটি জন্য।এবংএসব সাধারণ জনগণ সঙ্গে একটি ক্রিয়াহীন সিস্টেম যা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে যাচ্ছে বছর পর বছর।যদি দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন বন্ধন না করতে পারি তাহলে তারা শাসন এবং নিপীড়ন করে যাবে চিরকাল পর্যন্ত । শাহবাগে, তুমি একজন প্রকৃত বিপ্লব না করে একটি মিথ্যা বিপ্লব করে যাচ্ছ। সমাজের বাস্তব বোঝা সাধারণ জনগণরা নয়, কিন্তু কর্পোরেট লোকেরা।শাহবাগ তুমি জানো কি জানো বাস্তবতা গণতন্ত্র বাংলাদেশে মধ্যে অবর্তমান? শাহবাগে,তুমি বাংলাদেশ Tahrir বলে দাবি করা।Tahrir ছিল প্রো-গণতন্ত্র এবং pro people জন্য শাহবাগে, তুমি দূষিত সংসদীয় পুঁজিবাদী স্থান।

  2. “যে তারুন্যের শক্তিকে অপশাসকদের ভয় পাবার কথা , সমীহ করার কথা – উলটো তারাই কিনা একে সগর্বে পেলেপুষে বড় করছে , এ সমীকরণ ই বলে দেয় এ তারুন্য এখনও তৈরি নয় , দেশের গুরুভার বইবার তরে । বাঙ্গালির হুযুগেপনার দৃষ্টান্ত রেখে তারুন্যের এ জমায়েত শাসক দলের মোক্ষম হাতিয়ার পরিণত হল বাস্তবে । আবেগের ক্রন্দনাস্রুতে হত বিহবলতা তৈরি হতে পারে , তবে অচলায়াতনের বাঁধ ভাঙ্গতে প্রয়োজন মুষল ধারার প্রবল বর্ষণ।”

    সহমত ১০০% । ধন্যবাদ মন্ত্যবের জন্য।

  3. এত বিশদ লেখা পড়তে পড়তে যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ হয়ে ছিলাম কতক্ষন । আজকে দেশকে ঘিরে তরুণদের যে ভাবনা তার পুরটাই সৎ । আমাদের তারুন্যে আমরা সংগঠিত হতে পারিনি , তাই বলে চেতনারিক্ত ছিলাম না । তবে প্রজন্মের সাময়িক তফাৎ , তথ্য প্রযুক্তি , বিশ্ব যোগাযোগ  – সর্বোপরি নৈতিকতার নতুন সংজ্ঞা চেতনার প্রজাতিগত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে । আর নৈতিক মূল্যবোধ জাতি গঠনের ভিত্তি । এই ভিত্তিটাকে কত ঠুনকো করা যায় তারই যেন অলিখিত প্রতিযোগিতায় মেতে আছে আমাদের নেতৃ বৃন্দ । অনিয়ম ই যেন নিয়ম , মেনে নেয়া যেন নিয়তি । নিঃস্পৃহ থেকে , অভিসম্পাত দিয়ে , উপেক্ষা করে কিংবা বিরক্তি বোধ করে মেনে নিয়ে যে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে তার এভাবে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের ন্যায় জ্বলে ওঠা কাকতাল মাত্র । কেননা গভীর চেতনা বোধ থেকে উৎসারিত আন্দোলন হয় মৌলিক পরিবর্তন মুখী , যে পরিবর্তন সুদীর্ঘ কালের জমে থাকা সমষ্টি গত স্বপ্নের বাস্তবায়ক । যে তারুন্যের শক্তিকে অপশাসকদের ভয় পাবার কথা , সমীহ করার কথা – উলটো তারাই কিনা একে সগর্বে পেলেপুষে বড় করছে , এ সমীকরণ ই বলে দেয় এ তারুন্য এখনও তৈরি নয় , দেশের গুরুভার বইবার তরে । বাঙ্গালির হুযুগেপনার দৃষ্টান্ত রেখে তারুন্যের এ জমায়েত শাসক দলের মোক্ষম হাতিয়ার পরিণত হল বাস্তবে । আবেগের ক্রন্দনাস্রুতে হত বিহবলতা তৈরি হতে পারে , তবে অচলায়াতনের বাঁধ ভাঙ্গতে প্রয়োজন মুষল ধারার প্রবল বর্ষণ। প্রচলিত রাজনৈতিক দলের মত হরতাল বিরোধী কর্মসূচী শুধু হাস্যকরই নয় – ছেলেমানুষি কুপমুণ্ডকতা । হঠাৎ পেয়ে বসা মিডিয়ার অতি প্রচার ও প্রশ্রয় আত্মধারনাকে গগনচুম্বী করলেও বাস্তবতা সত্যিই সকরুণ । এদের পা মাটিতে নামাটা খুব দেরিতে হয়ে যাচ্ছে কি ? 

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *