পাকিস্তানে নতুন সমীকরণ, বেকায়দায় নওয়াজ শরিফ

পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সরকার চরম বেকায়দায় পড়েছেন। পাকিস্তানের সর্বস্তরে দুর্নীতি এত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে সাধারণ মানুষের জীবন চরম বিপর্যস্ত। পিপলস পার্টি সরকারের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে এবং সে অবস্থার মুক্তি আশায় যদিও নওয়াজ শরীফ সরকারের কাছে দুর্নীতিমুক্ত একটি সুষ্ঠু প্রশাসনের আশা করেছিলেন অনেকে কিন্তু তার কোন লক্ষণ এ পর্যন্ত দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে নতুন সরকার। বিগত ১৫ মাস হলো সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ঢুকেছেন শরীফ কিন্তু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তার নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়োগ করায় জনমনে দেখা দিয়েছে অসন্তুষ্টি। অনেকেই এখন হতাশা প্রকাশ করছেন। তাই গত দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসলামাবাদে কয়েক হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদ করছে।

সরকার পক্ষের অনেকে মনে করেন শরীফের পদত্যাগের দাবী এক ধরনের একগুঁয়েমি চাওয়া এবং তাদের মতে এতে সমাজকে আরও বিভক্ত করবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করবে এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনীর শক্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। যদিও সেনাবাহিনী বলছে, তারা ক্ষমতার বাইরে থাকতে চায়। অবশ্য পাকিস্তান পিপলস পার্টির তুলনায়  প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দুর্নীতির রেকর্ডও কম নয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর অর্ধেক সময় সেনাবাহিনীই তো দেশ পরিচালনা করেছে এবং দুর্নীতির রেকর্ড তাদেরও কম নয়। খুবই কঠিন সমস্যার মোকাবেলা করছে পাকিস্তান- ভঙ্গুর অর্থনীতি, তালেবানের সন্ত্রাস, সীমান্তে গুলি বিনিময়ের পর ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি।
বর্তমানের শরীফ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দু’জন। একজন সাবেক ক্রিকেট লিজেন্ড দেশের যুব সমাজের কাছে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টির নেতা ইমরান খান। তিনি একটি নতুন নির্বাচন চান। আর অন্যজন বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরি।  
আন্দোলনকারীরা ২০১৩ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে শরীফের পদত্যাগের সাথে নতুন নির্বাচন চান। তাদের দাবী যেহেতু সরকারি কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে তাই কমপক্ষে সে সব জায়গায় পুনরায় ভোট গনণা হউক। তবে নির্বাচনে শরীফ জালিয়াতি করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে অনেকেই সেটা মনে করেন না। কারণ ওই নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল নিরপেক্ষ সরকারের হাতে। তখনকার সরকারি দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি সেই ফলাফল নিয়ে আজ অবধি কোনো কেন প্রশ্ন তোলেনি? উপরন্তু শরীফ সরকারকে সমর্থন করছে। ইমরান খানকে এ প্রশ্ন করায় তার জবাবে তিনি বলেন দুর্নীতির মাঠে এরা সবাই একে অপরের বন্ধু তার প্রমাণ জারদারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এত অভিযোগ থাকা স্বত্বেও নওয়াজ শরীফ সরকারের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত তার কোন তদন্ত বা বিচারের কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

ইমরান খান তার এ আন্দোলনকে আজাদী মার্চ নামকরণ করেছেন। বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন।

 ইমরান খান আজাদী মার্চ শুরু করার সাথে সাথে তাহরুল কাদরিও তার ভক্তদেরকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরির ধর্মীয় নীতির ব্যাপারে অনেকের আপত্তি থাকলেও তার রাজনৈতিক কথাবার্তা বিশেষকরে গরীব মানুষের স্বার্থের দাবী সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন সৃষ্টি করছে। অবশ্য পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এখনও ইমরান খান কিংবা কাদরি কাউকেই তাদের এ আন্দোলনে সমর্থন করে নাই। অতএব নওয়াজ শরীফের সরকার বিরোধী এ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফলকাম হবে কিনা সে বিষয়ে অনেকই সন্দিহান আছেন। তবে এ আন্দোলনের সফলতা দ্রুত নজরে না আসলেও একথা স্বীকার করতেই হবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নীতিগত পরিবর্তনের একান্ত প্রয়োজন। দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্রের মোকাবিলায় ইমরান খানের মত  দুর্নীতি বিরোধী  দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন নেতার দরকার। গণতন্ত্র ও শাসন-তান্ত্রিক ধারাবাহিকতার আড়ালে যে নোংরামি, অপকর্ম ও দুর্নীতি চলছে রাজনীতিতে তার অবসান দরকার।  অনেকটা বাংলাদেশের মত তফাৎ শুধু এখানকার যুব সমাজের কাছে কোন ইমরান খান নাই।

Imran Khan Speech at PTI Azadi March -1st September 2014

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *