দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামের কৌশল

ইসলাম দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষম কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর ভাবতে গেলে এক দিকে মনে হয়- প্রশ্নটি সঠিক নয়। কেননা, ঐতিহাসিক বিচারে যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব- ইসলাম যখন বিস্তার লাভ করেছিল, তার খিলাফতের যখন প্রসার ঘটে, তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য উৎখাত হয়ে গিয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, এমন সময় পার হয়েছে যখন জাকাত নেয়ার লোক ছিল না। জাকাত নেয়ার লোক কখন থাকে না? যখন কোনো সমাজে দারিদ্র্য থাকে না। কিন্তু আজকের আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজ কি এই দাবি করতে পারবে যে, সাহায্য নেয়ার কেউ নেই? এর থেকে বোঝা যায়, ইসলামের ইতিহাস অনেক গৌরবোজ্জ্বল আর এই অর্থে শ্রেষ্ঠ যে, সে দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এই দাবি পুরোপুরিভাবে পশ্চিমা বিশ্ব এখনো করতে পারবে না।

এই প্রসঙ্গে এ কথা বলতে হয় যে, ইসলামের লক্ষ্য হলো জনকল্যাণ। ইসলামের শ্রেষ্ঠ আলেমগণও তাদের পুস্তকাদিতে এই কল্যাণের কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে ইমাম গায্যালী, ইমাম শাতিবি, ইবনুল কাইয়ুমের কথা উল্লেখ করা যায়। ‘মাকাসিদ আল-শরিয়াহ’ অর্থাৎ শরিয়াহর লক্ষ্য হচ্ছে জনকল্যাণ। জনকল্যাণ হচ্ছে, যা কিছু ঈমান বা বিশ্বাস, বুদ্ধিবৃত্তি, প্রাণ বা জীবন, মাল বা অর্থনীতি, ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য কল্যাণকর, সেগুলোকে তারা বলেছেন প্রকৃত জনকল্যাণ। আর যা কিছু এসবকে নষ্ট করে অর্থাৎ জীবনের কল্যাণ, অর্থ বা অর্থনীতি কিংবা মালের কল্যাণের বিরোধী হবে, যা কিছু ঈমানের পরিপন্থী হবে, যা কিছু মানুষের বুদ্ধি-বিবেক নষ্ট করে দেয় সেগুলোকে ‘মাফাসিদ’ বা অকল্যাণ বলে গণ্য করা হবে। (দ্রষ্টব্য : ঈমাম গায্যালী, আল-মুসতাসফা, ১ম খণ্ড; ইবনুল কাইয়ুম, ই’লাম আল-মুয়াক্কিয়িন, তৃতীয় খণ্ড)।
আমরা লক্ষ করেছি, আধুনিক যুগে যারা ইসলামি অর্থনীতি নিয়ে লিখেছেন, যেমন ড. ওমর চাপরা, ড. ফাহিম খান, ড. মনওয়ার ইকবাল, প্রফেসর খুরশীদ আহমদ, ড. তরিকুল্লাহ খান, ড. নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকী, ড. মনজের কাহাফ এবং অন্য বড় বড় ইসলামি অর্থনীতিবিদের কথা যদি বলি তাহলে দেখব, তারা যে ইসলামি অর্থনীতির দার্শনিক ভিত্তি খাড়া করেছেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে আদল বা ন্যায়বিচার। তারা কুরআন বিশ্লেষণ করে বলেছেন, কুরআনে প্রায় এক শ’ আয়াত আছে যেখানে আদল, জাসটিস, ইনসাফ বা ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। আবার এক শ’ আয়াত আছে, যেখানে জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তারা বোঝাতে চাচ্ছেন, মোটামুটি প্রায় দুই শ’ আয়াতে ইনসাফ করার কথা বলা হয়েছে।
তারা বলেছেন, ইনসাফ করার মূল তাৎপর্য হচ্ছে, মানুষের প্রয়োজন মেটাতে হবে। ইংরেজিতে তারা বলেছেন Need fulfillment করতে হবে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, ইসলামি শরিয়তের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কল্যাণ। আবার ইসলামি শরিয়তের যে দর্শন, অর্থনীতির যে দর্শন সেখানেও রয়েছে জাসটিস বা ন্যায়বিচার। আর জাসটিসের অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে প্রয়োজন মেটানো। জাসটিসের এ ছাড়াও অনেক তাৎপর্য আছে। কাজেই যে অর্থনীতির দর্শনে রয়েছে নিড ফুলফিলমেন্ট বা প্রয়োজন পূরণ করা, এটা কী করে বিশ্বাস করা যায় যে, সেই অর্থনীতি দারিদ্র্য বিমোচন করতে চায় না এবং তা দূর করার কর্মকৌশল দেবে না?
এখন প্রশ্ন হলো- ইসলামি অর্থনীতি দারিদ্র্য দূর করার জন্য কী পদ্ধতি গ্রহণ করেছে? কী কৌশল গ্রহণ করেছে? অর্থনীতিতে এভাবেই ইসলাম তার কৌশল ও কর্মপদ্ধতিকে সাজিয়েছে যে, মানুষ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করবে- এটা হবে শরিয়তের সীমার মধ্যে। সে রোজগার করবে। নিজের সম্পত্তির ওপর তার অধিকার রয়েছে এবং থাকবে। ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক যে মালিকানা হয়, তা তার থাকবে। সে স্বাধীনভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প গড়তে পারবে।
এ কথা সত্য, ইসলামি অর্থনীতিতে এমনভাবে স্ট্রাকচার করা হবে, যাতে মানুষ নিজেরাই তাদের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব। তারপরও যারা কোনো কারণে রোজগার কিংবা প্রয়োজনীয় আয় করতে পারবে না, তাদের দায়িত্ব ইসলামি ব্যবস্থায় পরিবার বা আত্মীয়স্বজনদের ওপর বর্তায়। আবার তারাও যদি সে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির দায়িত্ব পড়বে রাষ্ট্রের ওপর।
এখানে একটা পার্থক্য রয়েছে- ইসলাম যেটাকে ওয়েলফেয়ার স্টেট বা কল্যাণ রাষ্ট্র বলেছে, এর সাথে পাশ্চাত্যের কল্যাণ রাষ্ট্রের পার্থক্য রয়েছে। পাশ্চাত্যে ওয়েলফেয়ার রাষ্ট্রে (যেমন সুইডেন) যদি কোনো লোক নিজে তার ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর চলে যায়। এর ফলে সেখানে একটা খারাপ দিক দেখা দেয়- তা হলো, রাষ্ট্রের ওপর অনেক বেশি বোঝা বাড়ে। আর রাষ্ট্রের ওপর যদি বোঝা বেড়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রকে সেটা মোকাবেলা করার জন্য জনগণের ওপর বেশি ট্যাক্স বসাতে হয় এবং রাষ্ট্রকে অনেক বেশি ঋণ করতে হয়। আর ঋণ নিলে পাশ্চাত্যের সিস্টেমে সুদ দিতে হয়। কাজেই দেখা যায়, বাধ্য হয়ে ঋণ নিতে হয়, তার ওপর সুদও দিতে হয় অথবা ট্যাক্স আরোপ করতে হয়। না হলে দুটোই করতে হয়। ফলে কিছু দিন এভাবে চলে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একটা পর্যায়ে যাওয়ার পর এটা আর চলে না, স্থবির হয়ে যায়। এটা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
এ জন্য পাশ্চাত্যের ওয়েলফেয়ার ইকনোমি বা জনকল্যাণ রাষ্ট্রগুলো ক্রমেই পিছু হটছে। ক্রমেই তারা পিছিয়ে আসছে জনকল্যাণমূলক প্রোগ্রাম থেকে। এগুলোকে তারা কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু ইসলাম এ বিষয়টিকে এভাবে মোকাবেলা করছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি নিজে আয়-রোজগার করতে না পারে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবেই তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর পড়বে না; বরং তা তার পরিবারের ওপর পড়বে; তার ছেলে, বাবা বা ভাইয়ের ওপর পড়বে। কিংবা অন্য কোনো আত্মীয়ের ওপর পড়বে। আর রাষ্ট্র দেখবে যে, তারা এ দায়িত্ব পালন করছে। এখানে যদি কেউ বেআইনি কাজ করে, তাহলে এ জন্য রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে, তাকে বাধ্য করতে পারবে। এর জন্য তার ওপর আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকবে। কিন্তু এসব কিছু করার মতো তার যদি কেউ না থাকে, কেবল তখনই তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরে পড়বে।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, পাশ্চাত্যের ওয়েলফেয়ার সিস্টেমে রাষ্ট্রের ওপর যে বিরাট দায়িত্ব চলে আসে তার তুলনায় ইসলামের ওয়েলফেয়ার রাষ্ট্রে দায়িত্ব কমে আসে। ফলে ইসলামের ওয়েলফেয়ার রাষ্ট্র More sustainable, অর্থাৎ এটা বেশি কার্যকর। এটাকে কার্যকর করা সম্ভব। এটা পাশ্চাত্যে দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব হয় না বলেই সেখানে ওয়েলফেয়ার সিস্টেম ধসে পড়ছে। নর্থ ইউরোপ, ব্রিটেন, আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায় এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে তারা পুরনো ক্যাপিটালিজম সিস্টেমে ফিরে যাচ্ছে কিংবা যেতে বাধ্য হচ্ছে।
এই ওয়েলফেয়ার সিস্টেম যেটার কথা ইসলাম বলছে, তার মধ্যে জাকাত একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের যে কর্মসূচি তার মধ্যে জাকাত একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
জাকাতব্যবস্থার সাথে সাথে ‘ওয়াকফ’ তার ভূমিকা পালন করবে। আমাদের ওয়াকফ সিসটেম ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এটাকে নষ্ট করে ফেলেছি। কিন্তু আমরা জানি, ইসলামের ইতিহাসে ওয়াকফর বিরাট ভূমিকা ছিল, যেটা বর্তমানে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা তা অস্বীকার করতে পারি না। সেটাকে আমাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে। এক সময় ইসলামে যে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, তা মূলত এক দিকে জাকাত আর এক দিকে ওয়াকফর কারণে। এমন সময় গেছে যখন সবাই চাইত, কিছু না কিছু সম্পত্তি আল্লাহর পথে দিয়ে দিতে। সেটা দিত বলেই সেই সময় সব স্কুল ফ্রি চালানো সম্ভব হতো। ওয়াকফর কারণে সব ইউনিভার্সিটি ফ্রি চালানো হতো; অর্থাৎ গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই। ওয়াকফর কারণেই সব চিকিৎসা ফ্রি চালানো হতো। পথিক কিংবা আগন্তুকদের জন্য যে সরাইখানার ব্যবস্থা ছিল, তাও ওয়াকফ সম্পত্তির মাধ্যমেই ফ্রি চালানো সম্ভব হতো।
তেমনিভাবে ওয়াকফকে একটি দীর্ঘ সময় ধরে পুনর্গঠন করার কথা জনগণকে বোঝানো দরকার। জনগণ যদি এটা বুঝতে পারে এবং যদি সত্যিই আগের দিনের যেভাবে আল্লাহর পথে দান করত, সেভাবে প্রত্যেক ধনীই যদি ওয়াকফ করে যান তাহলে ব্যাপকভাবে সমাজে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও উন্নয়নে এই ব্যবস্থা একটা ভূমিকা রাখতে পারে।
যা-ই হোক, দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে জাকাতের ভূমিকা থাকবে, যা আগেই উল্লেখ করেছি। সেই সাথে ওয়াকফ ভূমিকা পালন করবে। নতুনভাবে, নতুন করে আমাদের ওয়াকফ চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা জানি, ইসলাম ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সংগঠিত করার কথা বলে। এটা সুদভিত্তিক হবে না। এটা মুদারাবাভিত্তিক, মুশারাকাভিত্তিক হবে; মুরাবাহাভিত্তিক হবে। ব্যবসাভিত্তিক হবে। এখানে শোষণের সুযোগ কম থাকবে। যদিও এ কথা এখনো পুরোপুরি বলা সম্ভব নয় যে, ইসলামি ব্যাংকিং তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে। আর এ দাবি এখন করাও সম্ভব নয়। ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণে ইসলামি ব্যাংকিংকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলামি অর্থনীতিবিদগণ বলেছেন, ইসলাম যে সামাজিক বিপ্লব চায়, অর্থনৈতিক বিপ্লব বা পরিবর্তন চায়, সেই পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা, এই কাজের জন্য অর্থ লাগবে এবং অর্থ আদান-প্রদান হবে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সুতরাং ব্যাংককেই এই ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে গেলে আমাদেরকে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর যেসব কাজ হয়েছে, তাত্ত্বিক কাজ হয়েছে এবং তার লক্ষ্য সম্পর্কে যেসব কাজ হয়েছে, তার পলিসি সম্পর্কে যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলো আমাদের পড়তে ও জানতে হবে।
তেমনিভাবে, ইসলামি রাষ্ট্র তার রাজস্ব নীতিকে (Fiscal Policy) কাজে লাগাবে। রাজস্ব নীতিতে আয় ও ব্যয়ের নীতিগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগাবে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্রে ব্যয়ের নীতির ব্যাপক পরিবর্তন হবে। যেমন- ঢাকা শহরে যারা রাস্তাঘাটে থাকে (এর মধ্যে নারীর সংখ্যা অর্ধেক) তাদের জন্য কি আমাদের বাজেট থেকে এক-দুই বছর ৫০০ কোটি টাকা করে বের করতে পারি না? আমরা কি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে এদেরকে আবার শহর থেকে যার যার গ্রামে নিয়ে গিয়ে পুনর্বাসন করে দিতে পারি না? কিন্তু এর জন্য দরকার আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে Determined Policy।
এখানে ইসলামের যে ব্যয়নীতি (Expenditure Policy), তার একটা বিরাট ভূমিকা আছে। কিন্তু আমরা সেগুলো করতে ব্যর্থ হচ্ছি। সেগুলো আমাদের করতে হবে। তেমনিভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে মনিটরিং পলিসি এটাতে ইসলামের আলোকে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। কারণ, সেন্ট্রাল ব্যাংক প্রতি বছরই নতুন অর্থ বাজারে ছাড়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ। এটা একটা ক্রিয়েটেড মানি। এতে নতুন অর্থের সৃষ্টি হয়। এই অর্থ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়। সেন্ট্রাল ব্যাংকের এই নতুন অর্থের জন্য যেহেতু কোনো খরচ করতে হচ্ছে না, এর জন্য তাকে কোনো জিনিস বেচতে হচ্ছে না। এটা একদমই ‘আকাশ থেকে পাওয়া’ অর্থই বলা যায়। এটা নোট প্রিন্টের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ব্যাংক প্রতি বছর বাজারে ছাড়ে। সেই টাকা যদি সরকারকে দেয়ার সময় বলে, এটা শুধু জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে, দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যয় করতে হবে, তাহলে এর মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবর্তন সম্ভব। এ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে কর্জ বা বিনা সুদে দিতে পারে। এ ব্যাপারে ড. ওমর চাপরা তার Towards A Just Monetary System গ্রন্থে আলোচনা করেছেন। এর থেকে বোঝা যায়, ইসলামি অর্থনীতিতে ব্যয়নীতি, ক্ষুদ্রানীতির একটা বিরাট ভূমিকা থাকবে। এসব পলিসি ব্যবহার করে আমাদের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যা দারিদ্র্য নিরসনে সাহায্য করবে। যাকে আমরা Hardcore Poverty বলি, তা কম ছিল কিংবা ছিল না। দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ তারা গড়তে পেরেছিল। একেবারেই শুরু থেকে ইসলাম সিস্টেমটিকে আস্তে আস্তে গড়ে তোলে যদিও শুরুতে কিছু দারিদ্র্য ছিলই। কিন্তু উমাইয়া, আব্বাসীয়দের সময় থেকে তা কার্যত সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। আর এ কথা আগেই উল্লেখ করেছি, ইসলামে এমন এক সময় গেছে যখন জাকাত নেয়ার কোনো লোক পাওয়া যায়নি। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো আজো এ দাবি করতে পারবে না যে, সাহায্য নেয়ার লোক তাদের সমাজে নেই।
যে সরকারই থাকুক সেই সরকার যদি ইসলামকে অগ্রাধিকার দেয় এবং কমিটেড হয় আর সেই সাথে জনগণ যদি তা গ্রহণ করতে রাজি হয়, তাহলে আমার মতে- ইসলামের চেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের আর কোনো ভালো আদর্শ হতে পারে না।

পুর্ব প্রকাশিত: নয়া দিগন্ত 

Loading

Comments are closed.