জামায়াত নিষিদ্ধ : বিজেপি সমাচার এবং তসলিমার ফাঁসিঃ

মুজিব শাসনামলে ব্যাপক সন্ত্রাসের জন্য দায়ী কারা, বর্তমান নানা বিতর্কে বিতর্কিত সরকার সেটা জানে। এখন তাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা আর সব দোষ জামায়াতের। একমাত্র এ ধরনের সরকারের পইে সন্ত্রাসকে গণতন্ত্রের সাথে গুলিয়ে ফেলা সম্ভব। বিরাজমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে জামায়াত নিষিদ্ধ করলে সন্ত্রাস নির্মূল হবে এই নিশ্চয়তা কি সরকার দেবে? শুধু নিশ্চয়তা দেয়ার পরই এই কাজে হাত দেয়া উচিত। জোরেশোরেই বাজছে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ো এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করার ঢোল। ২০ দলীয় জোটকে সন্ত্রাসী দল নামে অপপ্রচার চালিয়ে ব্যাপকহারে লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার জন্য জোট সরকারের গলায় সন্ত্রাসের তকমা ঝুলিয়ে দিয়ে পথ পরিষ্কার করা শেষ। গায়ের জোরে ক্ষমতা দখলের পর থেকে কৌশলে খালেদা জিয়াকে বারবার আন্দোলনে যেতে বাধ্য করে একই সাথে আন্দোলনে বাধা দিয়ে নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সফল ‘গেইম থিওরি’। পেট্রলবোমা মারা কিংবা রেললাইন উপড়ে ফেলার সাথে জড়িত আওয়ামী কর্মীরা ধরা পড়লেও কাঠগড়ায় হাজির করা হচ্ছে অন্যদের। এই কয় বছরে কোনো অভিযোগের নিরপে প্রমাণ হয়েছে? রিমান্ডে নিয়ে জোর করে যা বলায়, মিডিয়ার সামনে সেটাই বলতে হয়। সন্ত্রাসের অজুহাতে বিরোধী কর্মীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রবণতা এতটাই প্রবল যে, ফাঁসি দিতে গেলেও সাী লাগে না। গ্রেফতারকৃতদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে তাদের সাথে উকিল বা স্বজনদের অনুপস্থিতির বিরুদ্ধে বহু লিখেছি। বলছি, বদি কিংবা শামীম ওসমানদের মতো আইনপ্রণেতারা যে দেশে, সেই দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী লাগে না (দ্র: প্রথম আলো ১৮ জুন ২০১৫)। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেদিন বলা হলো, মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য খালেদার ওপর প্রতিশোধ নেবে সাধারণ মানুষ, তার পরেই নেত্রীর গাড়িবহরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সন্ত্রাসীরা, উদ্দেশ্য তাকে খতম করা। কিন্তু বরাবরের মতোই সরকার আবারো প্রচার করল এগুলো জামায়াতের কাজ। অবৈধ মতা দখল সামাল দিতে, দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসের ট্রামকার্ড খেলাই এখন আওয়ামী রাজনীতির একমাত্র পুঁজি। সন্ত্রাসের সাম্রাজ্যে আওয়ামী লীগ এখন গিনেস বুকের যোগ্য বলে প্রমাণ।

লক্ষণীয় যে, ৭ বছরে দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো যত রিপোর্ট প্রকাশ করল, সন্ত্রাসের সব ক’টা আঙুলই সরকারের দিকে। রিপোর্টগুলো বিস্তারিত ওয়েবসাইটে। উদাহরণস্বরূপ, ১ জুন ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত ‘অধিকার’ নামক সংস্থারটির প্রতিবেদনে যা এসেছে, প্রকৃত সন্ত্রাসের চিত্রটি পরিষ্কার। অপরাধের উৎস যে জামায়াত-শিবির নয়, দীর্ঘ এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রমাণ। যাদের বিরুদ্ধে সরকারের এত অভিযোগ, রিপোর্টে জামায়াতের বিরুদ্ধে একটি বাক্যও নেই। বরং ‘ব্লগার হত্যা’ উপশিরোনামে কথিত আনসারুল্লা বাংলা টিমের কথা একবার উল্লেখ করে কথিতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ব্লগার হত্যা। বুঝলাম অধিকারের সাথে সরকারের দা-কুমড়া সম্পর্ক; কিন্তু অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তদন্তেও সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ কেন? অর্থাৎ জামায়াত নয়, সন্ত্রাসের গোড়া অন্য কোথাও।

ক্ষমতায় থাকার গেইম থিওরি

মানবপাচার, মাদক ক্রাইসিস, বেকারত্ব, ক্রসফায়ার… ক্রাইসিসে আক্রান্ত ৫৬ হাজার বর্গমাইলে সত্যিই কি জামায়াত-বিএনপি ছাড়া ক্রাইসিস নেই? অর্থাৎ সরকার বলতে চাইছে, জামায়াত নিষিদ্ধ এবং বিএনপির সঙ্গ ছাড়া করলেই বাংলাদেশ হবে সুইজারল্যান্ড। ২০ দল আর তালেবানকে এক পাল্লায় তুলেছে আওয়ামী লীগ। সন্ত্রাসকে এভাবেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বুশের পথেই হাঁটছে তারা। চার দফা মতায় থাকা সত্ত্বেও ৩০ লাখ শহীদের তালিকা করার ভয়ে ভীত কেন আওয়ামী লীগ? এর অর্থ, ২০ দলকে ধ্বংস করতে সন্ত্রাস তাদের একটি অপপ্রচার মাত্র। মানবজমিন, ১৩ জুন, ‘জামায়াতকে বিএনপির লাল বার্তা’ প্রতিবেদনে প্রকাশÑ জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে দেশ-বিদেশে বিএনপির ওপর চাপ। বাস্তবতা এই, জামায়াত-শিবির না থাকলেও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সমস্যা কোথাও যাবে না; কারণ ২০ দল নয়, সমস্যা ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’। ‘দলের মধ্যে গডফাদারদের রাজত্ব ব্যাপকহারে মিডিয়ায়’। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের খবর কে না জানে? এমপি পিনু খানের মাদকপুত্রটি দুই রিকশাওয়ালাকে হত্যা করে নাৎসীবাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দিলো। অথচ এদের হাতেই দেশ? আমাদের প্রধান শত্র“ মেধাহীনতা। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো নেতারা সরকারের সাথে গলা মিলিয়ে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য পরামর্শ দেয়ার আগে আয়নায় নিজেদের মুখ দেখেন না। আন্দোলনের ডাক দিলে কোথাও দেখা যায় না; বরং দল ভাঙার গোসাই। তবে আন্দোলনের সময়ে একমাত্র জামায়াত-শিবিরের কয়েকজনকে রাস্তায় দেখা যায়, অতঃপর সাংবিধানিক অধিকার চর্চার অপরাধে যাদের গন্তব্যস্থল হয়Ñ ক্রসফায়ার কিংবা রিমান্ড। বিএনপির ঘরের শত্র“ বিভীষণ। জামায়াতকে লালকার্ড কেন, বেগুনিকার্ড দেখালেও বিএনপির উত্তরণ হবে না, কারণ অসুখের ওজন হাতির সমান আর ডাক্তারের সাইজ মশা। বেগম জিয়াকে বলছি, সত্য বলার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। মির্জা ফখরুল একজন সন্ত্রাসী এবং গার্বেজট্রাকে আগুন দেয়ার অভিযোগে মামলা… আওয়ামী লীগ প্রমাণ করল, এরা থাকলে এ দেশে আর কোনো সন্ত্রাসীর প্রয়োজন নেই। এই শব্দটি দলের গর্ভজাত সন্তান এবং এটাকেই দেশ-বিদেশে ক্যাশ করছে আওয়ামী লীগ।

সন্ত্রাস নিয়ে ঢালাও মন্তব্যের আগে বিষয়টি জানতে হবে। বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে যেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি করল সরকার, এটাই সন্ত্রাসের চরম দৃষ্টান্ত। উদ্দেশ্য, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে বিএনপিকে দুর্বল করার মাধ্যমে ২০৪১ সালের রূপকল্প পূরণ। বাস্তবে ‘রূপকল্প’টি ভুয়া। বরং আমজনতার ভোটাধিকার হত্যা করে ইরানের শাহের রূপকল্পের মতো নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতার গেইম থিওরি।

সহিংসতা এবং…

মানবজমিনের লালবার্তায় উল্লিখিত, ‘গত জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলে… বিএনপির উচিত জামায়াত ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম থেকে নিজেদের দূরে রাখা। ওই সময়ে সংঘটিত সহিংসতার নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইদানীং সন্দেহের চোখে দেখছে জামায়াতকে। এ দিকে সম্প্রতি ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ও জামায়াত নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিএনপি… পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর আনুষ্ঠানিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ভারত গণতন্ত্রের পক্ষে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। তার এই বক্তব্যও জামায়াত বিষয়ে একটি ইঙ্গিত ছিল বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।’ আমরা জানি, ২০ দলকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের লাল খাতায় রাখার কারণ, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা; কিন্তু সহিংসতার উৎস যে অবৈধ মতা দখল, বিষয়টি জেনেও ক্রমেই কেন এড়িয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা? সহিংসতা বিষয়ে দেশে-বিদেশে আওয়ামী লবি এবং গুজবের উত্তাপে, মিথ্যা বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাদের মন্তব্য আমাকে বিস্মিত করেছে। ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যত সহিংস ঘটনা, প্রত্যেকটির জন্য সন্দেহাতীতভাবে দায়ী সরকার। কারণ, ভোট ডাকাতি না করলে সহিংসতা ঘটত না। তা ছাড়াও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে স্পর্শকাতর বার্ন ইউনিটের দৃশ্য প্রচার করে সরকার প্রমাণ করল আওয়ামী লীগ আপাদমস্তক একটি সন্ত্রাসীনির্ভর দল। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও পশ্চিমারা পুরোপুরি অবজ্ঞা করে বরং সন্ত্রাসের জন্য ইতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে দিয়েছে। একতরফা ২০ দলের ওপর দোষ চাপানো ভুল হয়েছে। উল্টো তাদের চাপে বিরোধী দল প্রায় নিষ্ক্রিয়। আর এই সুযোগই নিলো আওয়ামী লীগ। ঢাকায় রাষ্ট্রদূতদের হাতে সহিংসতার বহু প্রমাণ তারা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে কেন? অথচ খালেদা জিয়া নিজে তথ্য-উপাত্ত রাষ্ট্রদূতদের হাতে দিয়েছেন। এই ভুল তারা বারবারই করেন। এসব কারণেই বিশ্বজুড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সন্ত্রাস। একমাত্র ভারত ও ভুটান ছাড়া সব দেশই কেন নির্বাচন পর্যবেণ বর্জন করেছিল, এই সত্য কী করে এড়িয়ে যাবে? ৫ জানুয়ারিকেন্দ্রিক সন্ত্রাসের ঘটনা সামান্য নয় বিধায় এখনই সামাল দেয়া উচিত। আমরা চাই না, বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা ঘটুক।

তসলিমা এবং সন্ত্রাস

একেই বলে গোদের ওপর বিষফোঁড়া। ৭ জুন তারিখে ঘটল এক বিস্ময়কর ঘটনা। মোদি সরকার জামায়াতকে সন্ত্রাসের খাতায় রেখে খালেদাকে গণতন্ত্রের পথে যাওয়ার বার্তা দিলেন। উল্টো সন্ত্রাসের অভিযোগে মোদিকেই ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ২০০২ সালে গুজরাট গণহত্যার জন্য মার্কিন আদালতে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের তকমাটি শুধু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কপাল থেকে উঠে গেল। সন্ত্রাসের ব্যাখ্যা বহু। ২০ ট্রাক অস্ত্র এবং বর্ধমানের ঘটনার জন্য খালেদাকে মোদির সন্দেহ; কিন্তু মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য হত্যার ব্যাখ্যা কী? নিশ্চয়ই এর সাথে খালেদার সম্পর্ক আছে বলে দাবি করবে না দিল্লি। প্রশ্ন, আসল সন্ত্রাসী কারা?

সন্ত্রাস নিয়ে বললে বিজেপি বিষয়ে কিছু বলতেই হয়। ৫০ ও ৬৪-এর পর এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় দাঙ্গার জন্য ১০০ ভাগ দায়ী বিজেপি। বাবরি মসজিদজনিত দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ও সম্পদের যে অপূরণীয় তি, এ জন্যও দায়ী বিজেপি। ৫০-এর দাঙ্গার কারণ কাশ্মির নিয়ে যুদ্ধ, ৬৪-এর দাঙ্গার মূলে শ্রীনগরের হজরত বাল ঘটনা, ৯২-এর জন্য দায়ী বাবরি মসজিদ। বলছি, ‘আজ যারা সীমান্ত চুক্তিকে বার্লিন দেয়ালের সাথে তুলনা করল, তারাই ঘটিয়েছিল ৯২-এর দাঙ্গা, যাকে আমি ৯/১১-এর সাথে তুলনা করছি। বার্লিন দেয়ালের সাথে তখনই তুলনা চলে যখন বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত ও রক্তাক্ত কাঁটাতারের দীর্ঘ সীমান্ত বেড়াগুলো তুলে নেবে দিল্লি। সীমান্তে মানুষ হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনবে এবং ফেলানী হত্যার বিচার করবে। এর আগে বার্লিন দেয়ালের কৃতিত্ব দাবি করা একটি বালখিল্য মাত্র।’ বিশ্বজুড়ে মোদির বার্লিন ওয়াল দাবি রীতিমতো হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।

৯২-এর ঘটনা সন্ত্রাস আইনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্ত্বেও বিষয়টি লোকচু থেকে উধাও কেন? মসজিদকেন্দ্রিক মৌলবাদের উত্থানে দুই দেশেই ভয়াবহ দাঙ্গা ও গণহত্যার কথা অবশ্যই মিথ্যা নয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে মৌলবাদীদের রাস্তায় নামানোর সাথে সমান জড়িত বিজেপি এবং তাদের এজেন্ট তথাকথিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের কুকীর্তি ইতিহাসের সাী। শুধুই কি মসজিদ ভাঙা? অভিযোগ, তসলিমাকে দিয়ে ‘লজ্জা’ বইটি লিখিয়ে বিভিন্ন ভাষায় তর্জমা করে লাখ লাখ কপি বিলিয়েছে সারা ভারতে। (সব তথ্য ওয়েবসাইটে)। ফলে দুই দেশেই আগুনের মতো ছড়িয়ে গেল ৬৪-এর তুলনায় আরো ভয়াবহ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। তলে তলে ‘তসলিমা নাসরিন’কে দিয়ে মৌলবাদীদেরকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রাস্তায় নামানো হলো। এটা তাদের পরিকল্পিত এজেন্ডা। কারণ ভালো কিংবা মন্দ, একমাত্র তারাই বজায় রেখেছে অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন। রাজপথে লাখ লাখ উত্তেজিত মানুষগুলোকে সামলাতে তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট কিনটন ও খালেদা মিলে তসলিমাকে নিরাপদে সুইডেনে পাঠিয়ে দিলেন। আজ এত বছর পরেও বিজেপি ও নাসরিনের সৃষ্ট ত দুই বাংলায়। আমরা কেজিবি, আইএসআইয়ের কথা বলি; কিন্তু এই গুপ্তচরের ব্যাখ্যা কী? বিজেপির সাথে ষড়যন্ত্র করে মৌলবাদের উত্থান ঘটনানোর মাধ্যমে গণহত্যা ও সন্ত্রাস উসকে দেয়া, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ দেশজুড়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি… আওয়ামী লীগের উচিত বরং তসলিমাকে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার বিচার করে প্রাপ্য শাস্তি দেয়া। কারো ফাঁসি হলে, একমাত্র তসলিমারই হওয়া উচিত। ‘‘কারণ, তার ‘লজ্জা’ বইটির জন্য না হলে, ৯২-তে মৌলবাদীরা রাস্তায় নামত না এবং এই হারে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটত না।’’ তার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগের সাী আমজনতা, যাদের বেশির ভাগই এখন পর্যন্ত জীবিত।

বলছি, যে আটটি সংগঠন মিলে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল, প্রধান সারিতে বর্তমান সিনিয়র নেতা এল কে আদভানি ও অটল বিহারী বাজপেয়ির সব তথ্য মিডিয়ায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা বোধহয় বাজপেয়ি, আদভানিদের নোংরা অতীত মনে রাখতে চান না বলেই বাবরির ঘটনা সত্ত্বেও তাদেরই হাতে মুক্তিযুদ্ধের পদক তুলে দেয়ার মতো বিস্ময়কর। ৯২-এর সাম্প্রদায়িক ঘটনায় ৬৮ জন অভিযুক্তের অন্যতম আদভানি ও বাজপেয়ির বিরুদ্ধে সরাসরি মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। মসজিদ ভাঙার আগের দিন বাজপেয়ির দেয়া উত্তেজিত বক্তৃতা এখন পর্যন্ত ইউটিউবে। বিশ্বাস না হলে দেখতে পারেন। ‘বিনির্মাণের বদলে সুপ্রিম কোর্ট আমাদেরকে মসজিদে ভজন-কীর্তন করতে বলেছে… স্তম্ভটি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।’ কলামিস্ট কুলদীপ নায়ার তার ‘বিয়ন্ড দ্য লাইন’ বইটিতে বিজেপির কুকীর্তি লিখে বলেছেন, ‘মসজিদ ভাঙার জন্য দায়ী অটল বিহারী বাজপেয়ি।’ তা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসী কারা? এতেই প্রমাণ হলো, জামায়াত কোনো সন্ত্রাসী দল নয়, বিএনপির সঙ্গ ছাড়াও অপ্রয়োজনীয়। আবারো বিজেপির ছত্রছায়ায় ব্লগার হত্যাকে পুঁজি করে পশ্চিমে তসলিমার মিশন পরিষ্কার নয়।

বুশের প্রত্যাবর্তন?

৭০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ কেন্দ্র করে আমেরিকা সৃষ্টি করল তালেবান। দফায় দফায় হোয়াইট হাউজে বৈঠক। এখন তারাই তালেবান ঠেকাতে হিমশিম। ইরাক আক্রমণ ছিল বুশ প্রশাসনের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ষড়যন্ত্র, যার সাথে জড়িত জাতিসঙ্ঘও। বুশের প্রতিরামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড দেরিতে হলেও স্বীকার করলেন ইরাক আক্রমণ ছিল ভুল। আইএস-আল শাবাব উৎপত্তির কারণও সেটাই। এখন এরা একে অপরের চোখে সন্ত্রাসী। প্রতিদিন ৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমা ফেলতে হচ্ছে ইরাকে। বলছি, বুশের চক্রান্তই বিশ্বমানচিত্রে সন্ত্রাস উত্থানের জন্য দায়ী। আমাদের বেলায়ও বুশের ভুল হচ্ছে না, নিশ্চয়তা নেই বরং অবৈধ সরকারের কর্মকাণ্ডে পরিষ্কার, ৫ জানুয়ারি সামাল দিতে ওই পথেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ।

এই দফায় মতায় আসামাত্র ইরাক থেকে সৈন্য তুলে নেয়ার ঘোষণা প্রেসিডেন্ট ওবামার। আর এই সুযোগেই শূন্যস্থান পূরণ করল আইএস। বলছি, যাদের সঠিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল সারা বিশ্বের নিরাপত্তা, তারাই যখন এই ধরনের ভুলগুলো করে, তখন অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়; যেমনÑ ইরাক-আফগানিস্তানে গণহত্যা। আমাদের বেলায় যত দিন পর্যন্ত বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠা না হবে, তত দিন পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে।

পশ্চিমাদের কুকীর্তি সামাল দিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল হামিদ কারজাই কিংবা মালিকীদের মতো গৃহপালিত সরকার, যাদের মাধ্যমে সন্ত্রাস বরং বেড়েছে। পাকিস্তান-আফগান জুড়ে সন্ত্রাসের জন্য দায়ী পশ্চিমারা। বাংলাদেশের বেলায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট একই ভুল করছে। তারা আসল জায়গায় নজর না দিয়ে দোষ চাপাচ্ছে ২০ দলের ওপর। ফলে পাইকারি সন্ত্রাস এবং প্রতিবারই আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি আরো তুঙ্গে উঠছে। হরতালের ডাক দেয় ২০ দল, নাশকতা করে সরকারের এজেন্ট, যত দোষ নন্দ ঘোষ। নির্বাচন-পরবর্র্তী সংঘর্ষে দেশী-বিদেশী প্রতিবেদনের অভাব নেই এবং সবার আঙুল সরকারের দিকে। অর্থাৎ সন্ত্রাস এখন আর ২০ দলের নয়, বরং আওয়ামী লীগের সম্পদ।

এবার মূল কথা। নিকট-অতীতেও আমেরিকা শাসন করত বিশ্ব, কিন্তু ওবামার নেতৃত্বে পররাষ্ট্রনীতির ভয়াবহ বিপর্যয়ে নেতৃত্বের হিসাব পাল্টাচ্ছে। ওবামার দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির শিকার দণি-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন প্রভাব অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এমনটি অতীতে কখনোই হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এই অঞ্চলের মোড়ল বানিয়ে দিলো মোদিকে। তিনিও বিশ্বনেত্রীর মতোই বিশ্বনেতা হওয়ার স্বপ্নে পাগল। এখন মোদির সিন্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের হিসাব-নিকাশ। বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ভূতাত্ত্বিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে মোদির শত্র“-মিত্র বাছার সময় এখন। দিল্লির প্রয়োজনেই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে জোরজবরদস্তি কানেকটিভিটি। চীন-ভারত কিংবা চীন-আমেরিকার সমস্যা শুরু হলে ২০ ট্রাক কেন, কত ট্রাক যাবে, দেখার বিষয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের শিা একটাই, সব উগ্রপন্থীরই একটি নির্দিষ্ট আদর্শ থাকে এবং যুদ্ধ শেষে তালেবানরা সে পথেই গেছে। ভারত সীমান্তজুড়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব এবং দেশটির অভ্যন্তরে সক্রিয় স্বাধীনতাকামীরা। ভারতের মানচিত্র রায় যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশকে দিল্লির পকেটে প্রয়োজন এবং ঝড়ের বেগে সীমান্ত চুক্তির এটাই কারণ। প্রধানমন্ত্রী মোদিজীÑ কখনোই রিগান কিংবা গান্ধী কোনোটাই নন, বরং ধর্মীয় আদর্শতাড়িত উগ্রপন্থী দলের নেতা। ৩০-এর দশক থেকেই তাদের শরীরে সন্ত্রাসের দাগ। একই সাথে মনে রাখা প্রয়োজন, ২০১৪ সালে কংগ্রেসকে সীমান্ত বিলটি লোকসভায় কিছুতেই তুলতে দেয়নি বিজেপি; বরং কংগ্রেসের হাত থেকে টেনেহিঁচড়ে, চেয়ার ছুড়ে বিলটি নিয়ে রাস্তায়। কিন্তু এখন? ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার। এক জোটের বিরুদ্ধে আরেক জোট। সীমান্তে হামেশাই গুলির আওয়াজ। পিছিয়ে নেই মিয়ানমার, বাংলাদেশের গুলি-গালাজ। সুবিধাবাদী দেশগুলোকে সাথে নিয়ে মোদির সন্ত্রাসবিরোধী হিসাব-নিকাশ, এই অঞ্চলে আরেকটা ‘যুদ্ধবাজ বুশ’-এর প্রত্যাবর্তন ঘটাবে কি না, দেখার বিষয়। মোদি  ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধরদের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়ায় শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

সারমর্ম

বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পরামর্শটি একেবারেই অবান্তর; বরং আওয়ামী লীগের ক্রনিক ভারতনির্ভরতাই সন্ত্রাস উসকে দেয়ার প্রধান কারণ। অতিমাত্রায় ভারতনির্ভরতা ত্যাগ না করলে সন্ত্রাস কোথাও যাচ্ছে না।

ইমেইল : [email protected]

ওয়েবসাইট : http://www.minafarah.com

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *