কান্না এবং মজলুমদের সাথে আমার অন্তহীন ছুটে চলা

 বেশকিছুদিন আগে আবেগজনিত চিন্তা থেকে বাংলিশ অক্ষরে ফেসবুকে একটা নোট লিখেছিলাম। আজ ওটাকে নিজেই সম্পাদনা করে বাংলা অক্ষরে আবারো লিখছি। আর  ভাবছি আমার স্বচেতনার কথা। বিপ্লবের সাথে আমার একাত্ব হয়ে থাকা একান্ত অনুভুতির কথা। আমার কেন যেন মনে হয় এই আজকের আমি এবং আমার জন্মের পরের আমি যেন সব নয়।  যখন কোন ঘটনা পড়ি  বা ইতিহাস জানি, মনে হয় ইতিহাসের চরিত্রগুলোর সাথেই আমি একাকার। এটাকে সাইকোলজিতে হয়তো ফ্যান্টাসি বলে; কিন্তু আমার চিন্তা ফ্যান্টাসির মত আনন্দদায়ক নয়। বড় বেশি কান্নার। আর ছুটে চলা দেশ থেকে দেশান্তরে। আজ লিখছি সেই কষ্টকর চিন্তাগুলোর কথাই।

হাফেজ ওমর আল মুখতার লিবিয়ার বিপ্লবী নেতা। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক সেই বিপ্লবী দেখছিলেন মুসলিনী বাহিনীর অত্যাচার। একদিন লিবিয়ার মানুষের উপর ঐ জালিম বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হাতে অস্ত্র উঠিয়ে নিলেন। লিবিয়ার দুর্গম অঞ্চলের প্রকৃতি ছিল তার মুখস্হ। মুসলিনীর বাহিনী সবল হলেও শুধু পাহাড়ি অঞ্চলে ঘাঁটি বানিয়ে ওমর আল মুখতার ২০ বছর যুদ্ধ করেছিলেন। যখন মুসলিনী বাহিনী তাকে বন্দী করে তখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে ক্লান্ত এক সেনাপতি। মুসলিনী বাহিনী তার বয়স বিবেচনা না করে কোন দয়া না দেখিয়ে তার অনুসারীদের সামনেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। সকল অনুসারীরা যখন হায় হায় মাতম করছে আমিও যেন সেই মাতমের মাঝে আছি। আমিও যেন দ্বীপ্তোজ্জল বৃদ্ধ ওমর মুখতারকে ফাঁসির দড়ি গলায় পরতে দেখছি।

ইতিহাসের আরেক খলনায়ক হিটলার যখন লাখো মানুষ কে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করছে, কি আশ্চর্য হয়ে অনুভব করি আমাকেই যেন ধরে নিয়ে গেছে। আমিও যেন মরছি দম বন্ধ হয়ে সকলের সাথে।

ব্রিটিশ উপনিবেশের সময়কালে ভগৎ সিং যখন বীর-দর্পে সাথীদের নিয়ে ফাঁসী বরণ করে নিলেন, আমিও যেন অপেক্ষা করছি শেষ রাতে জেল গেইটের বাইরে এক নজর এই বীরকে দেখব বলে। মাষ্টার দা সূর্যসেনের সেই অভিযানে আমি যেন প্রীতিলতার জায়গা নিয়েছি।

আমি যেন নেতাজির সাথে ছুটে চলছি পান্জাব হয়ে আফগানিস্তান, জার্মান হয়ে সিঙ্গাপুর আজাদ হিন্দ ফৌজে আমিও জঙ্গলে মিশে যাচ্ছি, গেরিলা হামলা করছি।

সেই যে বিখ্যাত আমেরিকান জার্নালিস্ট জন রীড এর দুনিয়া কাঁপানো দশদিন সফর আমিও যেন ঘুরছি রাশিয়ার শহরে শহরে পরিবর্তনের মাঝে ছোট ছোট দল দল গুলোর অন্তর্ঘাতী লড়াই ও একতা যেন দেখতে পাচ্ছি। আমিও যেন দুনিয়ার দেশে দেশে রাশিয়াকে নিয়ে উত্তেজনা ও অনুসরণ করার প্রতিজ্ঞা দেখতে পাচ্ছি ।   PLACE YOUR AD HERE PLACE YOUR AD HERE   বিপ্লবী চে গুয়ে ভারা যখন প্রিয় মোটর বাইক ও বন্ধুকে সঙ্গী করে ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলো বেড়াচ্ছে আমিও যেন চলছি পিছু পিছু। আর সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্ত চে-আর ফিদেল এর দেখা, কিউবার স্বাধীনতার লড়াই আমিও মিশে আছি ছায়ার মত। আমিও কিউবাতে থাকিনি চলে গিয়েছি বলিভিয়ার রনাঙ্গনে। চে’ কে যখন সমাজতন্ত্রের শত্রুপক্ষ আমেরিকান সিআইএ’র ষড়যন্ত্রে মেরে ফেলা হয়, হায়েনারা যখন তাঁর কর্তিত হাত নিয়ে উল্লাস করে, তখন দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের মত আমিও ডুকরে কাঁদি।

বাংলার আকাশে যখন আরেক চে-র উদয় হয় আমিও যেন মুগ্ধ হয়ে শুনি তার কথা; সেই মহান বিপ্লবী নেতা সিরাজ শিকদার এর হত্যার পর শেখ মুজিব যখন হুঙ্কার দেয় কোথায় আজ সিরাজ শিকদার!!!আমি হায় হায় করে কেঁদে উঠি। কয়দিন পর যখন সেই মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, সেনা সদস্যরা যখন বীর-দর্পে আমার ই চোখের সামনে দিয়ে রামপুরা টিভি সেন্টার দখল করে, আমি তখনও কাঁদি।

আমেরিকার বিপ্লবী নেতা ম্যালকম-এক্স কে যখন হত্যা করে খুনিরা আমি হায় হায় করে কাঁদি। সেই বিপ্লবীর বজ্র-কন্ঠ আমার কানে আজও প্রতিধ্বনিত হয়। আর মানুষের নাগরিক অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করা নেতা মার্টিন লুথার কিং কে যখন মেরে ফেলে আততায়ী, আমি চোখের জলে বুক ভাসাই।

জিয়াউর রহমানকে যেদিন হত্যা করে আমি তখন ও কাঁদি। তার লাশ না পাওয়া পর্যন্ত খাওয়া পর্যন্ত গলা দিয়ে নামেনি। আজ ও চোখে ভাসে মানিক মিয়া এভিনিউর জন সমুদ্র, গাছে গাছে উঠে  জিয়ার শেষ যাত্রার কভারেজ করতে সাংবাদিকদের প্রচেষ্টা।

কেন যেন গুহায় লুকানো বৃদ্ধ অসহায় সাদ্দাম হোসেনকে আমেরিকা কর্তৃক দেয়া ফাঁসিতেও আমি কেঁদেছি। এই যে সেদিন এক-কালের লিবিয়ার বীর, কর্নেল গাদ্দাফির করুণ মৃত্যু আজো আমার বুকে বাজে। গাদ্দাফি আফ্রিকাকে স্বয়ং সম্পুর্ণ বানাতে চেয়েছিলেন। এটাই হয়ত তার অপরাধ ছিল। তাই হিরো কে জিরো বানিয়ে সিআইএ তাকেও মেরে ফেলল।

তিউনিসিয়ার স্ট্রীট ভেন্ডার নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করল। সেই আগুনে সেই শুধু মরল না পুরা আরব বিশ্বে আগুন লাগল। মুক্তিকামী মানুষের সাথে আমিও যেন ছুটে গেলাম তাহরির স্কয়ারে । তারপর এল আবার করুন ট্রাজেডি রাবেয়া স্কয়ার। আমার কান্না আর মুক্তির লড়াই যেন শেষ হয় না। আমি এখনো লড়ছি মার্কিনীদের এই দেশে সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার আদায় এর জন্য।

মন আমার চলে গেছে আমার নিজদেশে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে মুক্তিকামি মানুষের পাশে ।আমিও যেন লড়াই করছি জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে মজলুমের সাথে, বুক ভরে স্বাধীনতার নিঃশ্বাস নিতে আর মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার বিপ্লবে।

পূর্ব প্রকাশিত : শেখনিউজ ডট কম

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *