কবে হবে এ মানষিকতার পরিবর্তন?

আপনারা হয়তবা জানেন ইউরোপ আমেরিকায় এখন মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং তা শুধু পাক ভারত ও বাংলাদেশীদের আগমনে নয় বরং পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের মানুষ এসে বসতি করছে। তাই এখানে ডাইভার্স মুসলিম কমিউনিটি গড়ে উঠছে। মুসলিমরা এসব দেশে নিজেদের ধর্মীয় অধিকার এবং সমাজে সম্মানজনক অবস্থায় নিজেদের অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। আর তাদের অবস্থানকে অবশ্যই সফলকাম করে এ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে হবে  ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যাদের ব্যক হোম বলতে কিছু থাকবেনা। কেননা তাদের যে দেশে জন্ম হয়েছে আর যেখানে বড় হয়েছে সেটাই  হবে তাদের দেশ। সে দেশে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসে যাতে জীবন যাপন করতে পারে সেটাই হচ্ছে বড় জরুরি বিষয় এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ও আচার আচরণের ফুট-প্রিন্ট তো সে সমাজে রাখতেই হবে। আর তা  কখনই সম্ভব হবে না যদি বিভিন্ন মাজহাবের ও সকল মতের মুসলিমদেরকে নিয়ে একতাবদ্ধ না হলে।

কিন্তু দু:খের বিষয় হল এটা স্বীকার করতে হবে বর্তমানে এখানে প্রতি বছর রমজানের চাঁদ ও  ঈদ  বিভিন্ন দলে  বিভক্ত হয়ে যেভাবে পালন করা হয় তা কোন অবস্থাতে ঐক্যের বার্তা বহন করেনা। আবহাওয়ার কারণে দেখা খালি চোখে চাঁদ দেখা সম্ভবও হয় না। তাই যে যার মতে রোজা রাখছে বা রাখতে বাধ্য করানো হচ্ছে বিভিন্ন  মসজিদ কমিটির নিজস্ব সিদ্ধান্তে। হেলাল কমিটি নামে একটি কমিটি আছে গুজরাটি তাবলিকি ভাইদের পরিচালিত এবং তাদের উপর অনেকের অনাস্থা কারণ সঠিকভাবে চাঁদ দেখা নিয়ে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ?  সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল ঈদ হবে কিনা তা জানতে তাদেরকে ফোন করে রাত্রে ১২টা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত জানা যায় না কারণ তাদের মুরব্বির রায় আসে নাই। এদিকে বেচারা কর্মজীবী ঈদের দিনে দেখা গেল কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। তার পক্ষে আগে থেকে শিওর না হওয়ায় এসব দেশের শাসনতন্ত্রের ধর্মীয় কারণে ছুটি নেয়ার মৌলিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হচ্ছে না। তাই দেখা যায় একি শহরে কেউ গ্লোব্যল মুনসাইটিং এর পক্ষে সৌদি আরবকে ফলো করছে,  কেউ ফিকাহ কাউন্সিলের কথামত বৈজ্ঞানিক ক্যলকুলেশনে রোজা রাখছে, আর কেউ তাদের মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তনুসারে পরের দিন থেকে রোজা রাখছে। তবে যারা গ্লোবেল মুনসাইটিং বা ইসলামের প্রাণকেন্দ্র  মক্কাকে ফলো করেন তারা এবং যারা  ফিকাহ কাউন্সিলের নির্দেশে চলেন তাদের মধ্যে কোন তফাৎ হয়না অর্থাৎ তারা সবাই একি সাথে রোজা ও  ঈদ পালন করেন।

বিজ্ঞান প্রদত্ত তথ্য হচ্ছে চাঁদ সব সময় পশ্চিমা দেশের আগে আসার কথা কথা যদিও অনেক সময় খালি চোখে দেখা নাও যেতে পারে কিন্তু সৌদি আরবে দেখা গিয়েছে সে খবর আসলে কানাডাতে তা অনুসরণ না করার কোন যুক্তি নাই। তাই প্রশ্ন হল সৌদি আরবে যদি শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হয় আর  বাংলাদেশে যদি হয় শনিবার থেকে তখন কানাডার ভারতীয় হুজুররা যদি কানাডার মানুষকে শনিবার থেকে রোজা রাখতে বলেন তাহলে কি ঠিক হল? এবারও যারা মক্কা ও ফিকাহ কাউন্সিলের অনুসরণ করছেন তারা রোজা রাখছেন শুক্রবার থেকে আর তাবলিকি জামাতের লোকেরা  গুজরাটিরা রাখছেন শনিবার থেকে!

প্রশ্ন হচ্ছে “খালি চোখে চাঁদ দেখা” যদি ইবাদতের অংশ হয় তাহলে কয়জনইবা এসব দেশে চাঁদ দেখতে সক্ষম হবে? আর আল্লাহ তার বান্দাকে এ সুযোগ থেকে কেনবা বঞ্চিত রাখবেন?  আসলে  রাসুল (স:) চাঁদের ব্যাপারে শিওর হওয়ার জন্য চাঁদ দেখে রোজা রাখতে ও ঈদ করতে বলেছেন। এখন আধুনিক বৈজ্ঞানিক ক্যলকুলেশন যদি নির্ভরযোগ্য নয় বলে বিশ্বাস করেন বা কোন মুসলিম দেশে চাঁদ দেখার খবর পেয়েও তা বিশ্বাস না করেন তাহলে তো কিছু করার নাই! তবে হয়তবা পুরা নাসা বা ওয়ার্ল্ড এস্ট্রোনমি অবজারবারেটরী যখন মুসলিমদের দখলে আসবে তখন হয়তবা সে সব ভাইয়েরা মানলে মানতেও পারেন!  আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখেন। মনে পড়ে সেই হাদিসের কথা একবার কোন এক যুদ্ধ থেকে ফিরার পথে রাসুল (স:) সাহাবীদেরকে বলেছিলেন আসরের নামাজ মদিনায় গিয়ে পড়তে কিন্তু দেখা গেল কিছু সাহাবী সফরের সময় নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় মদিনা যাওয়ার আগেই পড়ে ফেললেন। পরে নবীকে যখন প্রশ্ন করা হল যারা রাস্তায় নামাজ পড়েছিলেন তারা কি ভুল করেছেন? হুজুর বললেন উভয় দলই ঠিক। আরেকটা হাদিসে জানাযায় একবার সিরিয়া থেকে এক লোক মদিনায় এসে রাসুলকে (স:) জানালেন যে তারা মদিনার একদিন আগে ঈদ করেছেন এবং হুজুর বললেন আমরা যদি সে খবর আগে পেতাম তাহলে আমরাও সে দিন ঈদ পালান করতাম। আরেক বর্ণনায় প্রকাশ একবার মরুভূমির এক বেদুইন এসে রাসুল(স:) কে জানাল যে সে চাঁদ দেখেছে তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন তুমি কি এক আল্লাহতে এবং রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর? উত্তরে বেদুইন বললেন হাঁ। রাসুল তখন বেলালকে (রা:) ডেকে ঈদের ঘোষণা দিতে বলেন। আরেক ঘটনা শেখ আহমেদ কুট্টি টরন্টোর আই আইটির ইমাম  সাহেব আমাকে বললেন একবার আনাস (রা:) কিছু মুসলিম যুবকদেরকে নিয়ে মদিনার কাছে মরুভূমিতে চাঁদ দেখতে বাহির হন। হঠাৎ তিনি আওয়াজ দিলেন চাঁদ দেখে ফেলেছেন বলে কিন্তু তার সাথের ছেলেরা কেউ তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ দেখতে পাচ্ছিল না  তখন এক ছেলে আনাস (রা:) চোখ ও মুখের উপর হাত দিয়ে ডলা দিয়ে বলল এখন দেখেন। তখন তিনি আর চাঁদ দেখতে পাচ্ছেননা বললেন! আসলে বয়স্ক মানুষ হয়তবা বাতাসে তার চোখের উপর চুল জাতীয় কিছু পড়ায় দৃষ্টি ভ্রম হয়েছিল। তাই কেউ যদি খালি চোখে চাঁদ দেখাকে বর্তমান উন্নত বৈজ্ঞানিক ক্যলকুলেশনের চেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য মনে করেন তাহলে আমার বলার কিছু নাই।

যারা চাঁদের ব্যাপারে বিজ্ঞান মানতে রাজি না অথচ নামাজের সময়ের ক্যালেন্ডার তৈরিতে বিজ্ঞানের সাহায্য কেন নেন? এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন সূর্যের গতি ফিক্সড আর চাঁদেরটা নাকি তা না এবং তারা বলেন নামাজের সময়ে একটা রেইস্জ বা পরিসীমা থাকে তাই এতে কোন সমস্যা নাই। অথচ আমরা জানি বিজ্ঞানের আসল স্রষ্টা আল্লাহ কোরআনে বলেন চাঁদ ও সূর্য একটা নিজস্ব অক্ষ-পথে নির্দিষ্ট গতিতে চলছে।

সে যাক, তাদের আসল কথা হল চাঁদের বেলায় বিজ্ঞান মানার দরকার নাই এমন কি এতে যদি মুসলিম উম্মাহর একতা ও সংহতি প্রকাশের সুযোগ পায় বা আধুনিক কর্মব্যস্ততার জীবনে বিশেষ করে যারা পশ্চিমা দেশে বসবাস করেন তাদের বেলায় ঈদ পালনে কিছুটা সুবিধা হয় তাতেও না। তাদের মত হল ছুটির নেবার সুবিধার সাথে ঈদের কি সম্পর্ক আর মুসলিম সংখ্যালঘু দেশে থাকলে সামাজিক পর্যায়ে মুসলিমদের এক সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠান  পালনের এত কি দরকার? দু:খের বিষয় হল এধরনের বস্তিবাসী বা গেঁটো মানসিকতায় পীড়িত মতপ্রকাশকে  শরীয়ত-সম্মত বলে দাবী করেন। তারা এলাকা ভিত্তিক খালি চোখে চাঁদ দেখাই একমাত্র  শরিয়ত সম্মত পন্থা বলে  দাবী করেন। এ ব্যাপারে তারা ইবনে আব্বাস (রাঃ) ঈদ পালনের ঘটনাকে উল্লেখ করে তা ইসলামী ফিকাহর বাধ্যতামূলক নিয়ম হিসাবে মানতে বলেন। আর সে জন্যই হেলাল কমিটি গঠন করা হয় (মূলত বাংলাদেশ, পাক ভারতীয় কিছু হানাফি মজহাবের দাবীদার হুজুরদেরকে দিয়ে) যারা সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের এলাকায় কখন রোজা রাখবেন বা কখন ঈদ করবেন। এখন দেখা যাক এই হেলাল কমিটির হুজুররা কিভাবে তাদের সিদ্ধান্ত করেন? উদাহরণ হিসাবে আমি কানাডায় কি হচ্ছে তা বলছি আর বাংলাদেশ বা পাক ভারতে কিভাবে হয় তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না তবে হয়তবা একই পদ্ধতি অনুসরণ হয়।

স্থানীয় বা লকেল মুনসাইটিং বলতে কতটুকু দূরত্বের পরিসীমাকে লকেল হিসাবে বিবেচনা করা হবে সে প্রশ্নের উত্তরে তারা আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বে বলতেন তা হচ্ছে শুধু মাত্র টরন্টো এরিয়া তার কয়েক বছর পর তা বড়িয়ে পুরা কানাডা করা হল তারপর সে সীমানা বাড়িয়ে আমেরিকার কিছু অংশও জোড়া হল আর এখন শুনা যায় সাউথ আমেরিকা পর্যন্ত নাকি তা করা হয়েছে! অর্থাৎ তাদের মতে এই এরিয়ার মধ্যে চাঁদ নজরে আসলে রোজা রাখা বা ঈদ করা যাবে। ভাল কথা। এখন যদি তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় যে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) সে ঘটনায় জানা যায় মদিনা ও সিরিয়ায় একই দিনে ঈদ পালিত হয় নাই। মদিনা ও সিরিয়ার দূরত্ব হবে ২ হাজার কিলোমিটার বা তার কাছাকাছি।

দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বের জন্য যদি মনে করা হয় ইবনে আব্বাস (রাঃ) সিরিয়ার চাঁদ দেখাকে মদিনার জন্য সঠিক মনে করেন নাই তাহলে আমাদের হেলাল কমিটির হুজুররা কি ভাবে তাদের সিদ্ধান্তকে শরিয়া ভিত্তিক মনে করেন? যেখানে কানাডার এক অন্টারিও প্রদেশই হল বাংলাদের দশগুণ বড়।  চাঁদ দেখার পরিসীমা নির্ধারণের এ অধিকার ওনাদেরকে কে দিল? তারা বলবেন এটা হচ্ছে visible horizon এ ব্যাপার সবাই বুঝবেন না। তাই নাকি, তাহলে প্রশ্ন সিরিয়া ও মদিনা কি ভিন্ন visible horizon রেখায় অবস্থিত? বিজ্ঞান তো বলে visible horizon রেখা টানা হয় পূর্ব পশ্চিমে তাহলে মদিনা ও সিরিয়া তো উত্তর দক্ষিণে । (সিরিয়ার আরেক নাম “বালাদ শ্যাম”)। কোন শরীয়ার ভিত্তিতে আপনারা চাঁদ দেখার পরিধি ইচ্ছামত বাড়াচ্ছেন আর কমাচ্ছেন?

এবার আসি বাংলাদেশের ব্যাপারে ত্রিপুরাতে ঈদ পালন হচ্ছে কারণ ইন্ডিয়াতে  চাঁদ দেখা গিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে  যেহেতু দেখা যায় নাই তাই বাংলাদেশে ঈদ পালন করা হবে না কারণ বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ তবে ইংরেজেরা ভারতকে ভাগ না করে দিলে বাংলাদেশেও ঈদ হতে পারত? তার মানে দাঁড়াল সাম্রাজ্যবাদী প্রভুরাই আমাদের ফিকাহ পরিবর্তন করতে সক্ষম। হযরত আনাস (রাঃ) সময় মদিনা সিরিয়া একই দেশ ছিল অর্থাৎ আরবদেশ দেশের বর্তমান মানচিত্র তখনকার মত ছিল না?

এবার আসা যাক ইসলামের মহান ইমামরা কি বলেন?  ইসলামের চার ইমামের মাঝে একমাত্র ইমাম শাফী ছাড়া সবারই মত চাঁদ দেখার খবর পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে আসলে রোজা ও ঈদ করার পক্ষে। (সুত্র লিংক)
সবচেয়ে আশ্চর্য, যারা লকেল সাইটিং এর পক্ষে সবচেয়ে স্বোচ্চার তারা কিন্তু শাফি মাজহাব অনুসরণ করেননা বরং নিজেদেরকে খাটি হানাফি মাজহাবের অনুসারী বলে দাবী করেন!

পরিশেষে বলতে চাই আমাদের উচিৎ “যে যাই বলুক, তাল গাছটা আমার” এই মনোবৃত্তি পরিহার করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রতি সতর্ক হওয়া দরকার । আর খেয়াল রাখতে হবে আমাদের মাঝে মতান্তর যেন মনান্তরে না পৌছায়।  আল্লাহ মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দেন সে দোয়া করি আর সে সাথে প্রত্যাশা রইল সময়ের সাথে সাথে এবং বাস্তবতার নিরিখে বিশ্বজুড়ে একই দিন বা তারিখে ঈদ পালনে মুসলিম সমাজ ঐক্যবদ্ধ হবে। এতে কোন হাদিসও লঙ্ঘন হবে না বা আগের কালের প্রথাকে ভুল বলতেও হবেনা সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তা করা সম্ভব হবে। শুধু আমাদের বুঝার পরিবর্তন আনতে হবে। ঐতিহাসিক অনেক ঘটনা প্রয়াগের প্রেক্ষাপট যে এখন ভিন্ন তা বিবেচনা করতে হবে।

Loading


Comments

কবে হবে এ মানষিকতার পরিবর্তন? — 2 Comments

  1. এস্ট্রনমি /গননা ব্যবহারের পক্ষে ইসলামী ব্যখ্যা শুনতে ইমাম হামিদ সিলমীর বক্তব্য শুনেন:

    Global Moonsighting কিভাবে গননা করা যায় বুঝতে হলে ড: খলেদের নিচের ভিডিও দেখতে পারেন:

  2. লোকালি খলি চোখে চাঁদ দেখাই ঈদ করার পক্ষে ইবনে আব্বাসের হদিসের ব্যপারে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়:
    ******************
    “কুরাইব তাবেঈ বলেছেন, যে হারিসের কন্যা (লুবা-বা) তাকে শাম প্রদেশে সম্রাট মুআবিয়ার নিকট পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর আমি শামে এসে তাঁর প্রয়োজন সমাপন করলাম এবং আমার শামে থাকা অবস্থায় রমযানের নতুন চাঁদ উদয় হল এবং আমি বৃহস্পতিবারের দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখলাম, তারপর মদিনা আসলাম; অতঃপর আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা (রামাযানের) চাঁদ কবে দেখেছ? আমি বললাম, জুমুআ রাত্রিতে; পুনরায় বললেন যে, তুমি নিজে দেখেছ? আমি বললাম, জি হ্যাঁ এবং অন্যান্য লোকেও দেখেছে এবং মুআবিয়া ও শামবাসীরা রোযা রেখেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমরা কিন্তু শুক্রবারের দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি, অতএব আমরা রোযা রাখতেই থাকব। ৩০-এ পর্যন্ত কিংবা ৩০শের পূর্বে ২৯শে চাঁদ দেখা পর্যন্ত। আমি বললাম, আপনি কি মুআবিয়ার চাঁদ দেখা ও তাঁর রোযা রাখার উপর নির্ভর করতঃ রোযা ও ঈদ করবেন না? ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, না; এটাই আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আদেশ দিয়েছেন যে আমরা আপন দেশের লোকের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করব; অন্যান্য দূর দেশবাসীদের চাঁদ দেখাকে আমরা যথেষ্ট মান্য করব না।”[মুসলিম শরিফ]
    **************************
    এবার দেখুন সুবিজ্ঞ মুহাদ্দেসীনে কিরাম এবং হানাফী, হাম্বলী ও মালেকী মাযহাবের ইমামগণ অত্র হাদিসে পাককে দলীল হিসেবে গ্রহণ না করে হাদিসটির নিম্নরূপ জবাব দান করেছেন-
    ১। অত্র ফাতওয়ার ১০ পৃষ্ঠায় “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল” শিরোনামে পবিত্র মিশকাত শরীফের ১২৭ ও ১৭৪ পৃষ্ঠা থেকে যে তিনটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তার দ্বারা প্রমাণিত যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম একজন মরুচারীর সংবাদকে ভিত্তি করে নিজে রোযা রেখেছেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। দূরদূরান্ত থেকে আগত একটি কাফেলার সংবাদের ভিত্তিতে ৩০শে রমযান মনে করে রাখা রোযা নিজে ভঙ্গ করেছেন এবং অন্যদেরকেও ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছেন।
    তাহলে যেখানে শরীয়ত প্রবর্তক নিজেই অন্যের সংবাদ গ্রহণ করে রোযা রেখেছেন এবং ঈদ করেছেন। সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সংবাদ গ্রহণ করলেন, কি করলেন না তা কোন যুক্তিতেই দলীল হতে পারেনা।
    ২। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র আমল বিষয়ক উক্ত হাদীস তিনটি হাদিসে মারফু। (মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা ও কাজ), আর কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীস হচ্ছে হাদিসে মাওকুফ। (সাহাবীগণের কথা ও কাজ) অতএব অছুলে হাদীস বা হাদীস ব্যাখ্যার মূলনীতি অনুযায়ী হাদিসে মারফুর মোকাবিলায় হাদিসে মাওকুফ কখনও দলীল হতে পারেনা।
    ৩। হাদিসে কুরাইব (রাঃ)-এর মধ্যে هكذا امرنا النبى صلى الله عليه وسلم এবং فلانزال نصوم حتى نكمل ثلثين اونراه বিশেষ উক্তি দু’টি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নয় বরং অত্র উক্তিদ্বয় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিজস্ব উক্তি। তাই কোন সাহাবীর নিজস্ব উক্তি কখনই কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত এবং মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নির্দেশ ও আমলের বিপরীতে দলীল হতে পারেনা।
    ৪। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু তার উক্তিদ্বয় দ্বারা মূলত ইঙ্গিত করেছেন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর বাণী- لاتصوم حتى تروه ولاتفطرو حتى تروه এবং صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته এর দিকে। আর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর এ বাণীর আমল উম্মতগণ কিভাবে করবেন তা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম নিজ জীবদ্ধশায়ই আমল করে দেখিয়ে গেছেন। তাহলো সকলকে চাঁদ দেখতে হবে না বরং কিছু সংখ্যকের দেখাই অন্যদের দেখার স্থলাভিষিক্ত হবে। অতএব ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উক্ত উক্তিদ্বয় দ্বারা নিজ নিজ এলাকায় চাঁদ দেখে আমল করতে হবে এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়।
    ৫। ছহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনায় কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চাঁদ দেখার স্বীকৃতি মূলক শব্দ نعم رأيته “হ্যা আমি চাঁদ দেখেছি” কথাটির উল্লেখ থাকলেও তিরমীযী সহ অন্যান্য বর্ণনায় কুরাইব (রাঃ) নিজে চাঁদ দেখেছেন এরকম শব্দের উল্লেখ নেই। ফলে অত্র হাদিসটি مضطرب বা মূল ভাষ্য কম-বেশী হওয়ায় স্পষ্ট মারফু হাদিসের বিপরীতে কখনই দলীল হতে পারেনা।
    ৬। আল্লামা শাওকানী (রঃ) তার লিখিত “নাইলুল আওতার” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত কুরাইব রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সংবাদ এবং শামবাসীর চাঁদ দেখাকে গ্রহণ না করা এটা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিজস্ব ইজতিহাদ। যা সার্বজনীন আইন হিসেবে প্রযোজ্য নয়।
    ৭। আল্লামা ইবনু হুমাম (রঃ) ফতহুল কাদীরে এবং আল্লামা ইবনু নাজীম (রঃ) বাহরুর রায়েক-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, পরিষ্কার আকাশে পবিত্র রমযানের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার জন্য শরয়ী পদ্ধতি হচ্ছে ৪টি। একঃ দু’জন আকেল, বালেগ ও স্বাধীন মুসলিম সাক্ষ্য দিবে, দুইঃ উক্ত গুণে গুণান্বিত দু’জন, অনুরূপ দু’জনের চাঁদ দেখার প্রতি সাক্ষ্য দিবে। তিনঃ অনুরূপ গুণে গুণান্বিত দু’ ব্যক্তি চাঁদ দেখায় কাজীর ফয়সালার প্রতি সাক্ষ্য দিবে। চারঃ চাঁদ দেখার খবর মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচার পেয়ে দৃঢ়তার পর্যায়ে এমন ভাবে পৌঁছে যাবে যাকে মিথ্যা বলে ধারণা করা যায়না।
    কিন্তু শামবাসীর চাঁদ দেখার সংবাদ কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক অত্র চার পদ্ধতির কোন পদ্ধতিতেই ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট উপস্থাপিত হয়নি। তাই শরয়ী বিচারে তিনি উক্ত সংবাদ গ্রহণ করেননি।
    ৮। আল্লামা ইবনু ক্বুদামাহ্‌ (রঃ) তার মুগণী কিতাবে এবং শাইখুল হিন্দ হোসাইন আহমদ মাদানী মায়ারিফুল মাদানিয়া-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, যদিও ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আলোচনা হয়েছিল রমজানের চাঁদ দেখা নিয়ে কিন্তু এর প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া পড়ছিল অত্যাসন্ন ঈদুল ফিতরের উপর। কারণ উক্ত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুরাইব রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু রমযানের শেষের দিকে শাম থেকে মাদিনায় এসে ছিলেন। আর শরীয়তের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমপক্ষে দু’জনের সাক্ষী ছাড়া রোযা ছেড়ে ঈদ করা যায়না। তাই ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ না করে বলেছিলেন- هكذا امرنا النبى صلى الله عليه وسلم এবং فلانزال -نصوم حتى نكمل ثلثين اونرا
    —– (দেখুনঃ তানযীমুল আশতাত, খন্ড-২, পৃঃ-৪১, মিফতাহুন্নাজ্জাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৪৩২,মায়ারিফুল মাদানিয়া, খন্ড-৩, পৃঃ-৩২-৩৫)
    ৯। হযরত ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আমলকে দলীল গ্রহণ করে, যে সকল পূর্ববর্তী আলেমগণ এলাকা ভিত্তিক আমলের সপক্ষে মতামত দিয়েছেন তারা প্রায় সকলেই একথা বলেছেন যে, নিকটবর্তী দেশ বা অঞ্চলে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে না। এক স্থানের দেখা দ্বারাই সকল স্থানে আমল করতে হবে। আর যদি চাঁদ দেখার দেশটি চাঁদ না দেখার দেশ থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে যার যার দেখা অনুযায়ী আমল করতে হবে। একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে সকলের নিকটই একথা সূর্যালোকের মত পরিষ্কার যে, এক দেশের চাঁদ দেখার সংবাদ অন্য দেশ থেকে গ্রহণ করা না করার দিক থেকে ঐ সকল সম্মানিত ওলামাই কিরাম পৃথিবীকে নিকটবর্তী ও দূরবর্তী এ দু’ভাগে ভাগ করার কারণ হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। তাদের যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তাদের এ মতামত ঐ যুগের জন্য যুক্তিযুক্ত এবং যথার্থ ছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী সম্মানিত ওলামাই কিরামের ঐ মতামত বর্তমানে দু’টি, কারণে গ্রহণ যোগ্য নয়।
    এক: যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে বর্তমান পৃথিবীর বিপরীত মেরুর দেশ দু’টিও তাদের যুগের পাশাপাশি অবস্থিত দু’টি জেলা শহরের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং আজকের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরবর্তী দেশ বলতে আর কোন কথা নেই।
    দুই: তারা যে ওজর বা বাধ্যবাধকতার কারণে এ মতামত দিয়েছেন আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় সে ওজর সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
    ১০। চার মাযহাবের সুবিজ্ঞ ইমামগণের প্রত্যেকেই হাদীস শাস্ত্রে গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। অতএব কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীস তাদের জানা ছিলনা এমনটা ভাবা যায়না। তাই তারা জেনে বুঝেই রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর আমলমূলক হাদীসের উপর ফাতওয়া দিয়েছেন যা সার্বজনীন আইন হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আর তারা কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীসকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে গণ্যকরে পবিত্র কুরআন, হাদীস এবং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমলের ভিত্তিতে ফাতওয়া দিয়েছেন যে, “চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পৃথিবীর যে কোন স্থানে প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সমগ্র পৃথিবীতে এক কেন্দ্রিক তারিখ গণনা করতে হবে এবং একই দিনে সকলের উপর আমল করা জরুরী হবে।”
    প্রসংগত উল্লেখ্য যে, ইমাম যায়লায়ী (রহঃ) ৬ষ্ঠ স্তরের ফকীহ। তাই তিনি মুজতাহিদ ফিদ্‌ দ্বীন নন বরং একজন মুকাল্লিদ। অতএব একজন মুকাল্লিদ হিসেবে নিজ ইমামের সিদ্ধান্তের অনুসরণই তার জন্য যুক্তিযুক্ত। তিনি নিজেই وهو قول اكثر المشائخ বলে স্বীকার করেছেন যে বেশীর ভাগ ফকীহ উক্তমত গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তার সমসাময়ীক সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে চাঁদ উদয়ের সংবাদ দেয়া-নেয়ার সমস্যার সমাধান কল্পেই তিনি নিকটবর্তী দেশ এবং দূরবর্তী দেশ অনুসরণের ফাতওয়া দিয়েছিলেন। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন অসুবিধা না থাকায় সম্মানিত ইমামগণের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক মূল সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমলের কোন বিকল্প নেই।
    ১১। যদি সমস্ত বাহাছ তর্ক পরিহার করে হাদিসে কুরাইব-এর ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নেওয়া হয় এবং কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকহের উল্লেখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোযা, ঈদ, কুরবানীসহ চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট ইবাদাত সমূহ সমগ্র বিশ্বে একই দিনে অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন সব জটিল সমস্যার সৃষ্টি হবে যার কোন সমাধান নেই। নিম্নে এরকম প্রধান প্রধান কিছু সমস্যা তুলে ধরা হল-
    এক: বাংলাদেশে বর্তমান প্রচলিত আমলের কারণে পবিত্র রমযানের প্রথম দিকের এক বা দুই দিনের রোযা আমরা কখনই পাইনা। কারণ মাসয়ালা মতে আমাদের এক বা দু’দিন পূর্বেই পবিত্র রমযান মাস শুরু হয়ে যায়। এটা জেনেও আমরা ঐ এক বা দু’দিন ফরয রোযা রাখিনা।
    দুই: মাসয়ালা অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীতে যেদিন পহেলা শাওয়াল হিসেবে ঈদ পালন হয় আমরা সেদিন ২৯ বা ৩০ রমযান হিসেবে রোযা রাখি। অথচ সর্ব সম্মত মতে ঈদের দিনে রোযা রাখা হারাম। জেনে শুনে ঐ দিন রোযা রাখা জায়েজ মনে করলে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির ঈমান চলে যাবে। কারণ সে হারামকে হালাল মনে করে কার্য সম্পাদন করেছে।
    তিন: বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রতিদিনই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বহু লোক যাতায়াত করছে। এ ধারাবাহিকতায় মধ্য প্রাচ্যসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রোযা শুরু করে বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে ঐ ব্যক্তির রোযা হবে ৩১ বা ৩২টি। আবার বাংলাদেশে রোযা শুরু করে অন্য দেশে গিয়ে ঈদ করলে ঐ ব্যক্তির রোযা হবে ২৭ বা ২৮টি। অথচ হাদীস শরীফে বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯-এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। তাই পবিত্র ইসলাম ধর্মে ২৭, ২৮ অথবা ৩১, ৩২টি রোযার কোন বিধান নেই। বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব কোরিয়াতে ঈদের নামায পড়ে এসে দেখেন বাংলাদেশে আরও একদিন রোযা বাকী। এধরনের সমস্যার সমাধান কখনই সম্ভব নয়।
    চার: হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী তাকবীরে তাশরীক বলা শুরু করতে হবে আরাফার দিনের ফজর নামায থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে উক্ত তাকবীর বলা শুরু করা হয় এখানকার স্থানীয় ৯ই জিল-হাজ্জ। যে দিন সারা পৃথিবীতে ১০ বা ১১ জিল-হাজ্জ। ফলে ঐ দিনটি আরাফার দিনতো নয়ই বরং আরাফার দিনের পরের দিন বা তৎপরবর্তী দিন। তাহলে ফলাফল দাড়ালো বাংলাদেশের স্থানীয় তারিখ অনুসরণের কারণে আমাদের পাঁচ বা দশ ওয়াক্ত নামাজের ওয়াজিব তাকবীর ছুটে যাচ্ছে। আবার শেষ দিকে গিয়ে এমন এক বা দু’দিন তাকবীর বলছি যখন আমলটির ওয়াজিব আর বাকী নেই।
    পাঁচ: যে সকল সম্মানিত ভাইয়েরা একাধিক পশু কুরবানী দেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশের স্থানীয় ১১ ও ১২ জিল-হাজ্জ তারিখে কুরবানী দিয়ে থাকেন। কিন্তু কুরআন, সুন্নাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐ সময় সারা বিশ্বে ১৩ বা ১৪ জিল-হাজ্জ। (যদি চাঁদ দেখায় ২দিনের তারতম্য হয়)। তাহলে ফলাফল দাঁড়ালো তাদের দু’দিনের কুরবানী-ই বিফলে যাচ্ছে। কারণ কুরবানী করার সময় ১০ থেকে ১২ জিল-হাজ্জ। ১৩ ও ১৪ জিল-হাজ্জ কুরবানী করা যায়না।
    ছয়: রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, আরাফার দিনে রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর উপর এ বিশ্বাস রাখি, ঐ দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ পাক রোযাদারের পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ্‌ ক্ষমা করে দেন।
    —– (মুসলিম শরীফ, খন্ড-১, পৃঃ-৩৬৭)
    পবিত্র হাদীস ঘোষিত এ মহান পূন্য লাভের আশায় অগণিত মুসলিম নর-নারী বাংলাদেশের স্থানীয় ৯ জিল-হাজ্জ রোযা রাখেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ঐ দিন মক্কা মোয়াজ্জেমা সহ সারা বিশ্বে ১০ বা ১১ জিল-হাজ্জ। অর্থাৎ কোন ভাবেই ঐ দিনটি আরাফার দিনতো নয়ই বরং কুরবানীর দিন বা তাশরীকের প্রথম দিন। যে দিন গুলোতে রোযা রাখা চার মাযহাবের সকল ইমাম ও আলেমের ঐক্যমতে হারাম। তাহলে ফল হল স্থানীয় চাঁদ দেখার হিসেবে একটি নফল রোযা রেখে হারামে নিমজ্জিত হচ্ছেন অগণিত মুসলিম নারী-পুরুষ।
    সাত: পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল মি’রাজ এবং লাইলাতুল বারায়াত আল্লাহর নিকট এক একটি সুনির্দিষ্ট রাত। যা সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্য একই রাতে সংগঠিত হয়। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন দিন এ রাত গুলো নির্ধারণ করার ফলে এসকল রাতের ফযীলত থেকে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যখন সংবাদ পৌঁছেনি তখন স্থানীয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এসব পর্ব পালন ওজর হিসেবে যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে ওজর নেই।
    আট: আল্লাহ পাক এরশাদ করেন “নিশ্চয়ই আমি এ কুরআনকে নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে।”
    —– (সুরাহ আল ক্বদর)
    পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর আল কুরআন ঘোষিত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আমরা যারা একদিন পরে রোযা শুরু করি আমরাতো কখনই ঐ রাত পাইনা। কারণ আরব বিশ্বে যেদিন বেজোড় রাত আমাদের দেশে সেদিন জোড় রাত। তাদের বেজোড় রাত হিসাবে ক্বদর হলে আমরা কখনই ক্বদর রাত পেতে পারিনা। কারণ এ রাত তো একটিই। যা অঞ্চলের ভিন্নতায় কয়েক রাত মেনে নেয়া হাস্যকর বৈকি?
    সুত্র: http://newmoonbd.com/

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *