পেশাদারীত্ব (Professionalism)

আমজাদ সাহেব প্রচন্ড দ্বায়ীত্ব পরায়ন একজন মানুষ। একটি সরকারী অফিসে চাকরী করেন। অল্প ক’দিন পর অবসরে যাবেন। কোন দিন কর্মক্ষেত্রে কোন কাজে তার দ্বায়ীত্ববোধ ও নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন আসেনি। সরাটা জীবন শুধু কাজ আর কাজ ছিল তার চিন্তা চেনায়। পারা প্রতিবেশী আত্বীয় স্বজন কার সাথে তার তেমন একটা সম্পর্ক নেই। কাজের বাইরে খুব একটা কথা না বলার কারনে তার কথা বলার কোন মানুষ নেই। এমনকি পরিবারের সবার সাথেও তার কথা হয় খুবই কম। ছেলে মেয়ে টাকা দরকার হলে এসে চায়। স্ত্রী সংসার খরচের টাকা চায়। এর বাইরে কোন কথা বালার মত কিছু খুজে পায়না আজমল সাহেব। বাড়ীতে যতক্ষন থাকেন হাতে একটি বই থাকে। অফিসে তার জুনিয়র অনেক কলিগ তাকে খুব একটা ভাল চোখে দেখেনা। কারন পুরানো চিন্তা চেতনার আজমল সাহেবের সাথে তাদের অনেক বিষয় এ মতের অমিল থাকলেও বসের কথা মত কাজ করতে হয়।

এদিকে বাসায় আজমল সাহেবের স্ত্রী বকুল সংসার, ছেলে মেয়ে, কিংবা স্বামীর চেয়ে নীজেকে নিয়েই বেশী ব্যাস্ত। সারাদিন টিভি সিরিয়াল, বিউটি পার্লার কিংবা কারনে অকারনে মার্কেটে মার্কেটে ঘোরা তার নিত্য দিনের কাজের রুটিন। ছেলে রুমেল আর মেয়ে রুনা ইউনিভার্সিটেতে পরা শুনার চেয়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সময় কাটাতে বেশী ব্যাস্ত।

অবসরের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে আজমল সাহেব ততই নিজের অবসর জীবন নিয়ে চিন্তিত হচ্ছেন। কিভাবে সে সময় কাটাবে? সবাইতো তাকে একজন অসামাজিক মানুষ ভেবে কাছে ঘেষে না। ইদানিং সে মানুষের সাথে মেশার ও কথা বলার খুব চেষ্টা করলেও কেউ তার কাছে ভীরছে না। এমনকি নীজের পরিবারের সদস্যরাও মনে হচ্ছে তাকে এড়িয়ে চলছে। প্রফেশোনালিজম তাকে সবার কাছ থেকে যে অনেক দুরে নিয়ে গেছে তা এখন প্রচন্ড ভাবে অনুভব করছেন আজমল সাহেব। নিজেকে এখন পৃথীবির সবচেয়ে একা মানুষ মনে হচ্ছে তার।

আজমল সাহেব অফিসের বসের কাছে অবসরের সময় আরেকটু বাড়াবার কথা বলেছেন কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অন্য কোন বেসরকারী অফিসেও ঘুরেছেন যাতে অবসরে গেলেও নতুন কোন কাজে লাগা যায়। কারন কাজ ছারাতো তার অন্য কোন সাথী নেই। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বয়সের কারনে তাকে নিতে কোন কম্পানি রাজী হয়নি।

একদিন তার মাথায় একটি প্লান আসল। সংসারে নীজের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করার প্লান। আশে পাশে কোথাও লুকিয়ে থাকবেন। আর একজন কে দিয়ে খবর নিয়ে জানবেন সংসারে তার হারিয়ে যাওয়ার কারনে সৃষ্ট অবস্থার আপডেট, যাতে বুঝা যাবে সংসারে সবার মাঝে তার অবস্থান। যেই ভাবা সেই কাজ। সেচ্ছায় হারিয়ে গেলেন আজমল সাহেব। সকাল থেকে সন্ধ্যা হল কার মাঝে তাকে নিয়ে কোন চিন্তার ছাপ পাওয়া গেল না। রাত ও পেরিয়ে গেল স্ত্রী একাবার খবর নিলেও তেমন উদ্বিগ্ন নন। বেড়িয়ে গিলেন তার কাজে। আর ছেলে মেয়েরা তো তাদের মত ব্যাস্ত। আজমল সাহেব সব খোঁজ পাচ্ছে আর হতাশা বাড়ছে।

একদিন দু’দিন যেতে যেতে সংসারের সবাই আজমল সাহেব কে খুব গভীর ভাবে ফিল করতে লাগল। নানা জায়গায় খোঁজ নিচ্ছে। টিভি, সংবাদপত্র পর্যন্ত খবর পৌছে গেছে। এলাকার সবাই জেনেছে। অনেকেই নিয়মিত খোজ নিচ্ছে। গ্রাম থেকে আত্বীয় স্বজনও আসছে। এলাকায় ব্যাপারটা একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এদিকে আজমল সাহেব সব খোজ পাচ্ছেন আর অবাক হচ্ছেন। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রকম আবেগ প্রবনও হয়ে যাচ্ছেন। সেযে সংসারে এত প্রয়োজনীয় তা ভাবে অন্য রকম এক ভাল লাগা তাকে আলোড়িত করে। সংসারে ফিরে আসে আজমল সাহেব। এলাকার সবাই তাকে দেখতে এসেছে। ছেলে মেয়ে বাবাকে ফিরে পাওয়া আর স্ত্রীর স্বামীকে কাছে পাওয়ার আবেগ, কন্না, আজমল সাহেব কে নতুন এক জীবনের সন্ধান দেয়। প্রফেশনাল জীবন থেকে নতুন জীবনে পায় আজমল সাহেব।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *