কোরানে নামাজ

হাদিস বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কোরান অনুসরন করার কথা বল্লেই , অবধারিত ভাবেই যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় তা হলো – হাদিস না থাকলে নামাজ কিভাবে পড়ব? কোরান থেকে দেখিয়ে দিন নামাজ কিভাবে পড়তে হবে?

কোরানে নামাজ কিভাবে পড়তে হবে তার খুটিনাটি বর্ণনা নেই এটা যেমন সত্য , তেমনি হাদিস থেকে নামাজ শিখতে গেলে বিভ্রান্তি যে আরো বাড়বে সেটা ও তেমন সত্য।

তাহলে নামাজ কিভাবে পড়তে হবে , সেটা বলতে আল্লাহ কি ভুলে গিয়েছেন? (নাউজুবিল্লাহ) নাকি আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে? কোরানে যে ‘সালাতের‘ কথা বলা হচ্ছে তার অর্থ কি নামাজ? নাকি এ দুটি ভিন্ন কোন বিষয়? অথবা নামাজ সালাতের একটি ক্ষুদ্রতর অংশ , এমন কি হতে পারে?

কোরানে সালাত নিয়ে কি বলেছে , সেটা জানার আগে চলুন হাদিস নামাজ নিয়ে আমাদের কি শেখাচ্ছে সেটা জেনে নেই-

ওজু

– হজরত আনাস বলেছেন: রসূল প্রতিবার নামাজের আগে ওজু করতেন। (বুখারি) – হজরত ইবনে আব্বাস বলেছেন: রসূল কিছুক্ষন ঘুমালেন – মসজিদে গেলেন ও ওজু ছাড়া নামাজ পড়লেন। (বুখারি) – রসূলের সাহাবারা ঘুম থেকে উঠে ওজু না করেই নামাজ পড়তেন। (মুসলিম)

ফরজ গোসল

– হজরত উসমান বলেছেন: যদি কেউ বীর্যপাতের আগেই পুরুষাঙ্গ বের করে নিয়ে আসে , তাহলে সে যেন পুরুষাঙ্গ ধৌত করে ও ওজু করে। (গোসল করা লাগবে না) (বুখারি) – প্রবেশ করালেই ওজু করা বাধ্যতামূলক। (মুয়াত্তা) – রসূল বলেছেন: যখন কেউ স্ত্রীলোকের পায়ের মাঝে বসে জোরে ঠেলে , বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল বাধ্যতামূলক। (মুসলিম) – উব্বি বিন কাব রসূলকে জিজ্ঞাসা করলেন , ” যদি কেউ সহবাস করে কিন্তু বীর্যপাতের আগেই বের হয়ে আসে , তার কি গোসল করা লাগবে? তিনি উত্তর দিলেন , ” তার উচিৎ ওজু করে প্রার্থনা (pray) করা।

খাওয়ার পরে ওজু

– রসূল বলেছেন: আগুনে রান্না করা কোন কিছু খাওয়ার পরেই নুতন করে ওজু কর। (মুসলিম) – ইবনে আব্বাস বলেছেন , ” রসূলুল্লাহ ছাগলের ঘাড়ের রোস্ট খাওয়ার পরে ওজু না করেই নামাজ পড়লেন। (মুসলিম)

তাকবীর

– হজরত বিলালকে আদেশ করা হয়েছিল আজানে দুই তাকবীর এবং ইকামাতে এক তাকবীর বলার জন্য। (মুসলিম) – এখন মসজিদে ইকামতের সময় ও ২ তাকবীর বলা হয়। হয়তো বা ইকামতের সময় ২ তাকবীর বলার হাদিস ও আছে। হাদীস অনুসারীরা ভাল বলতে পারবেন।

নামাজে সুরা ও দোয়া পড়া-

– নামাজে সুরা ফাতিহার পরে আর কিছু পড়া লাগবে কি না , এমন প্রশ্নের জবাবে আবু হুরাইরা বল্লেন , যে কোন সুরা পড়াই ভাল , কিন্তু শুধু মাত্র সুরা ফাতিহা পড়াই যথেষ্ঠ। (মুসলিম) – ফিকহের সকল ইমামগনের মত হলো শধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়লে নামাজ হবে না।

– হজরত উমর “সুভানাকাল্লাহুম্মা—-” জোরে জোরে পড়তেন।(মুসলিম) – ইমামগণ আমাদের “সুভানাকাল্লাহুম্মা—-” মনে মনে পড়তে বলেছেন। – হজরত আনাস বলেছেন ,” আমি রসুলুল্লাহ , আবু বকর , উমর এবং উসমানের পিছনে নামাজ পড়েছি। তারা আল-ফাতিহা দিয়ে নামাজ শুরু করেছেন , “সুভানাকাল্লাহুম্মা—-” দিয়ে নয়। (মুসলিম)

– যখন মসজিদে নববিতে মিম্বার তৈরি হলো , রসূল এর উপরে উঠলেন , কিবলার দিকে ফিরলেন , তাকবীর দিলেন , লোকজন সারিবদ্ধ হলো। আবৃত্তির (recitation) পরে উনি হাটুর উপরে রূকুতে গেলেন , তারপর মিম্বার থেকে নেমে আসলেন , মাটিতে সিজদা দিলেন , তারপর আবার মিম্বারে উঠলেন। তিনি আবারো রূকুতে গেলেন এবং তারপরে মাটিতে নেমে এসে সিজদা দিলেন। (বুখারি) (এমনভাবে নামাজ পড়ার কথা আগে কখনো শুনিনি বা দেখিনি , আপনারা শুনেছেন?)

– রসুলুল্লাহ তার মেয়ে ‘জয়নাবে’র ছোট্ট মেয়ে ‘আমামা’কে তুলে নিয়ে (কোলে নাকি ঘাড়ে – জানি না) নামাজ পড়া শুরু করলেন। যখন সিজদায় গেলেন , তিনি তাকে মাটিতে নামিয়ে রাখলেন এবং যখন উঠলেন তাকে (‘আমামা’) আবার তুলে নিলেন। (বুখারি)

– যদি কেউ নামাজীর সামনে দিয়ে যায় , তাকে থামাও। যদি সে না থামে , তাকে হত্যা কর কারন সে শয়তান। (বুখারি) -আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন , ” আমি একটি মেয়ে-গাধায় চড়ে মিনায় গেলাম। রসুলুল্লাহ নামাজ পড়াচ্ছিলেন। আমি কয়েকজন নামাজির সামনে দিয়ে যেয়ে গাধার পিঠ থেকে নামলাম ও নামাজে যোগ দিলাম। কেউ প্রতিবাদ করেনি।(বুখারি) – হজরত সাদ বিন আবি ওয়াকাস নামাজের চলাকালীন সামনে দিয়ে যেতেন। (মুয়াত্তা) – নামাজ চলাকালীন কেউ সামনে দিয়ে গেলে নামাজের ক্ষতি হয় না। (মুয়াত্তা) – রসুলুল্লাহ বলেছেন , ” সামনে দিয়ে স্ত্রীলোক , গাধা বা কুকুর গেলে নামাজ ভেঙ্গে যায়। (মুসলিম) – হজরত আয়েশা বলেছেন ,”তোমরা (হাদিস বর্ণনাকারীগণ) আমাদেরকে গাধা ও কুকুর বানিয়েছ। আল্লাহর কসম! রসুলুল্লাহ যখন নামাজ পড়তেন , তখন আমি তার সামনে কম্বলের উপরে শুয়ে থাকতাম।(মুসলিম)

– বুখারিতে ৪ টি হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে: রসূল রূকুতে যাওয়ার আগে ও আত্তাহিয়াতু পড়ে ওঠার সময় কান পর্যন্ত দুই হাত তুলতেন। (আমাদের দেশের মুসলমানেরা কেন হাত তোলে না? তাহলে কি তারা বুখারির হাদিস মানে না?)

-রসূলুল্লাহ কোন ওজর ছাড়াই বা ভ্রমন না করলেও যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তেন। (মুয়াত্তা , মুসলিম)

– মুয়াবিয়া বিন হাকাম রসূলের সাথে নামাজ পড়ছিলেন। এক নামাজী হাঁচি দিলেন এবং আমি প্রথামতো “ইয়ারহামাকাল্লাহ”বল্লাম। নামাজ শেষে রসূল বল্লেন ,”নামাজের ভিতরে মনুষ্য কথার অনুমতি নেই। (মুসলিম) – একদা নামাজ পড়া অবস্থায় রসূলের সামনে শয়তান আসল এবং তিনি ৩ বার বল্লেন , “তোমার উপরে আল্লাহর অভিশাপ”। (মুসলিম) (হতে পারে , রসূলের কথা মনুষ্য কথা নয়)

– বৃষ্টির জন্য দো’য়া করার সময় ছাড়া আর কোন সময় রসূল হাত তুলতেন না। (বুখারি) – যে কোন দো’য়া করার সময় তিনি হাত তুলতেন।(সুত্র এত বেশি যে উল্লেখ করলাম না)

– রসুলুল্লাহ জুতা পায়ে দিয়ে নামাজ পড়তেন। (বুখারি , মুসলিম, নিসায়ি)

– সাহাবারা তীরবিদ্ধ জায়গা থেকে রক্ত পড়তে থাকা অবস্থায় নামাজ পড়তেন। (বুখারি , মুসলিম , ইবনে মাজাহ ও আরো অনেকে) – শরীরের কোন জায়গা থেকে রক্ত বের হলে নামাজ ও ওজু দুটোই বাতিল হয়ে যায়। ( বুখারি , মুসলিম , ইবনে মাজাহ ও আরো অনেকে)

– হজরত আনাস বলেছেন , “রসূল পুরো নামাজ খুবি অল্প সময়ে পড়তেন। (মুসলিম) – রসূল সেই ইমামদের বকতেন , যারা লম্বা সময় ধরে নামাজ পড়াতেন। (মুসলিম) – হজরত আনাস বলেছেন ,” রসূল রুকুর পরে এত দীর্ঘ সময় স্থীর ভাবে দাড়িয়ে থাকতেন যে মনে হোত তিনি সামনে বাড়তে ভুলে গেছেন। সিজদার সময়ও একি অবস্থা হোত। (মুসলিম) – আবু সায়িদ খাদরি বর্ণনা করেছেন: রসুলুল্লাহ এত দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ পড়াতেন যে ধরা যাক দুপুরের নামাজ শুরু হলো। এক লোক বাকী কবরস্থানে হেটে গেল , বাড়িতে ফিরে এসে ওজু করে মসজিদে গিয়ে দেখতে পাবে তখনো তিনি প্রথম রাকাত পড়াচ্ছেন। (মুসলিম)

এছাড়াও বুখারি ও মুসলিমে নামাজের বিভিন্ন পয়েন্টে কোন দো’য়া পড়তে হবে , তা নিয়ে পরস্পর বিরোধী অসংখ্য হাদিস পাওয়া যায়।

এই হলো হাদিস থেকে নামাজ শিক্ষা।

১) ঘুমের মধ্যে নাক ডাকলে , আপনার ওজু করা লাগবে না। দুঃখিত , ওজু করা লাগবে।

২) রান্না করা খাবার খেলে ওজু ভেঙ্গে যায় কিন্তু ছগলের রোষ্ট খেলে ওজু ভাঙ্গে না।

৩) রক্ত পড়লে নামাজ ও ওজু বাতিল হয় না। দুঃখিত , বাতিল হয়।

৪) বীর্যপাত না হলে গোসল লাগবে না। দুঃখিত , লাগবে।

৫) আপনি জোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে পারবেন। দুঃখিত , একত্রে পড়তে পারবেন না।

৬) দো’য়ার সময় হাত তুলুন। না না , দো’য়ার সময় হাত তুলবেন না।

৭) রুকুতে যাওয়ার আগে ঘাড় পর্যন্ত দুই হাত তুলুন। না না , হাত তুলবেন না।

৮) বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। আপনি এমনটি করতে পারেন না।(ফিকহ)

৯) নামাজের সময় ঈমাম সিড়ি বেয়ে ওঠা নামা করতে পারে। আদৌ নয়।(ফিকহ)

১০) নামাজে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়াই যথেষ্ট। দুঃখিত , যথেষ্ট নয়।

১১) নামাজের শুরুতে ‘সুভানাকাল্লাহুম্মা’ পড়া যায়। না না , যায় না।

১২) নামাজের ভিতরে আপনি শয়তান বা অন্য কাউকে অভিশাপ দিতে পারেন। না না , কখনো না।

১৩) আত্তাহিয়াতুর পরে যে কোন দো’য়া পড়তে পারেন। না , শুধুমাত্র এইটা আর এইটা।

১৪) নামাজের সময় যেই সামনে দিয়ে যাবে , মানা করলে না শুনলে তাকে হত্যা কর। শুধুমাত্র হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও সাদ বিন আবি ওয়াকাসকে ছাড়া।

১৫) স্ত্রীলোক , গাধা ও কুকুর সামনে দিয়ে গেলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। তবে তোমার স্ত্রী নামাজের সময় তোমার সামনে জায়নামাজে শুয়ে থাকলেও নামাজ বাতিল হবে না।

সহীহ হাদীস অমান্য না করে আপনি কিভাবে নামাজ পড়বেন , সেটা আপনিই ঠিক করুন। আমার পক্ষে এই ধাঁধার সমাধান করা দুরূহ ব্যাপার।

পরের পর্বে কোরান নামাজ নিয়ে কি বলে , সেটা নিয়ে আমার ধারনা জানাব ইনশাল্লাহ।

.


Comments

কোরানে নামাজ — 2 Comments

  1. কোরআনের বুঝার জন্য হাদিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *